অ্যাশ-ট্রে উপহার দিয়ে মেয়েটি বলেছিলো
-” যখন’ই স্মোক করবি,এটাকে ব্যবহার করবি..আমায় ছুঁয়ে বল….করবিতো?”
টোল ধরানো নরম গাল’খানি টিপে রজত বলেছিলো:
“করবো রে পাগলী,করবো।”
আস্তে-আস্তে স্মোক করা কমলো রজতের।
ঘরের বাইরে বেরোলে ধূমপান করা হতোইনা প্রায়। কারণ বাইরে বেরিয়ে,প্যান্টের পকেটে শুধু শুধু একটা অ্যাশ-ট্রে বহন করে চলা’টা নিরর্থক। রজত এক কথা মানুষ। কথা দিয়ে কথার খেলাফ করাটা তার কাছে পাপ,নিকৃষ্ট ।
খোলা আকাশের নিচে অমন ভাবে বোকার মতো একহাতে অ্যাশ-ট্রে ধরে,তাতে ছাই ফেলাটা নিছক’ই হাস্যকর।
বড়দের রোমান্টিক গল্প
তবে ঘরে বসে সুখটানে ঘাটতি হতোনা রজতের। সেক্ষেত্রে অ্যাশ-ট্রে টিও ব্যবহার করতো সে সহজেই।
সেদিন ঘরে সে একলা I খোলা জানালা দিয়ে মৃদু হাওয়া শীতল করেছে ঘরটাকে I
রজত সাদা কাগজে লিখছে ভিন্ন এক জীবন নাটক I
তার বাঁ হাতের দুই আঙুলে বন্দী জ্বলন্ত সিগারেট। ছাইগুলি নিশ্চিন্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল তাদের পরিচিত আশ্রয়ে; সেই অ্যাশ-ট্রে’তে ।
এমন সময় একমুঠো সাহচর্য গায়ে মেখে প্রবেশ করলো পিয়ালী I
এসে বসলো সে রজতের পাশে।
ওর গায়ের গন্ধ’টা রজতের ভীষণ পরিচিত,প্রিয় ..অনেকটা নিকোটিনের মতো।
তবে সেই অর্থে কোনোদিন’ও স্পর্শের ঘনিষ্ঠতা হয়নি তাদের।
কারণ সে ভাবে কেউ’ই ভেবে দেখেনি তারা, নিজেদের সম্পর্কের সমীকরণ’টি অন্য ভাবে ।
হয়তো বিপরীত লিঙ্গের এইরূপ নির্ভেজাল বন্ধুত্বে,অব্যক্ত চাহিদা’গুলো মুখফুটে কেউ’ই প্রকাশ করতে পারেনা I
ঠাট্টা তামাশা,গালিগালাজ, সবকিছুই চলতো দুজনার মধ্যে..তবে দস্যিপনার ধৃষ্টতা দেখায়নি কেউ’ই ।
বড়দের জন্য গল্প
কথায় কথায়,একটি ঠাট্টার মূল অনুসরণ করে, ঢোলে পড়লো পিয়ালী, রজতের কাঁধে।
রজত গম্ভীর স্বরে বললো –
“বিরক্ত করিসনা !”
কথাটি শুনে যেন আরও রসদ পেয়ে গেলো পিয়ালী ..
বললো –
“আজ তোকে কিছুতেই লিখতে দেবোনা !”,
অবাক হয়ে গেলো রজত I
প্রশ্ন করলো:
–“কেন?”
কোনো উত্তর এলোনা পিয়ালীর তরফ থেকে I
আবার মাথা নুইয়ে দিলো সে ছেলেটির কাঁধে।
দুষ্টুমিষ্টি হাসিতে অভিবাদন জানাচ্ছিল মেয়েটি I বা হয়তো, উপহার দিতে চাইছিলো অন্তহীন আসকারা ।
স্পর্ধা দেখালো রজত…
পিয়ালির একমাথা চুলের গোছ টেনে তাকে কাছে আনলো সে।একদম’ই তৈরী ছিলোনা পিয়ালী। ব্যাথা পেয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো সে ।
মেয়েটির চোখের মণিদুটো দেখছিলো রজত,প্রাণ ভরে।
দৃষ্টি অপলক..কাঁপছে মাঝে মধ্যে ।
হাতের আঙ্গুলগুলি অনেকটা আলগা করে দিলো রজত ..দূরত্ব কমেছে অনেকটা দুজনার I
ফ্যাল’ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল দুজন একে অন্যের দিকে।বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমেছে পিয়ালীর কপালে I
শারীরিক প্রেমের গল্প
ওর উষ্ণ নিঃশ্বাসে বিভোর হয়ে যাচ্ছিলো রজত
চোখ বন্ধ করে নিয়েছে পিয়ালী I কোনো এক অতিচুম্বকীয় আকর্ষণে ধেয়ে যাচ্ছিলো,বয়ে যাচ্ছিলো রজত।
ছেলেটির অশান্ত ঠোঁট স্পর্শ করলো তার বান্ধবীর জোড়া ঠোঁট’কে I
জাপ্টে ধরলো পিয়ালী রজত’কে । একটি নিঃস্বাস ফেলে ,আরো বেশ কয়েকবার চুম্বনের সিলমোহর বসালো রজত ,পিয়ালীর নরম ঠোঁটে ।
কম্পমান স্বরে ফিসফিসিয়ে পিয়ালী বলেছিলো -“ছাড় আমাকে প্লিজ,একদম না আর !”
রজত যেন শুনেও শুনলনা I পিয়ালীর নরম কোমর’খানি জড়িয়ে, মুখ রাখলো সে,তার গলার কিছুটা নিম্নে।
কেঁপে উঠলো মেয়েটির শরীর।
আরো পড়ুন, ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প (ফুলশয্যার রাত)
সহসা অপ্রত্যাশিত ভাবে ছন্দপতন ঘটালো,একটা মোবাইলের অস্বস্তিকর রিংটোন !
ঘাড় ঘুরিয়ে কয়েক মুহূর্ত পিয়ালী তাকিয়েছিলো পাশে সোফায় রাখা ওর মুঠোফোন’টার দিকে Iআলগা করলো রজত তার বাহুবন্ধন।
যেন সম্বিৎ ফিরলো মেয়েটির । রজত’কে ছেড়ে চটপট নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন’টা রিসিভ করলো সে।
কথা বলতে বলতে ধীর পায়ে সে চলে গেলো, ঘরের এক কোনে।
ভেসে আসছিলো অন্য প্রান্ত থেকে অস্পষ্ট কিছু কথা..
আর এপার থেকে যা শুনতে পেলো রজত,পিয়ালীর মুখে।
–“আমি ঘরেই আছি I
—“না না! আসলে শরীরটা ভালো নেই।”
–“নাগো, তেমন কিছু না, তুমি চিন্তা কোরোনা।”
–” আচ্ছা পরে কথা বলি? মোবাইলে একদম চার্জ নেই…রাখলাম।”
–“ওঃ ইট্স ওকে .. মিস ইউ টু ডিয়ার। “
ফোন’টা ডিস্কানেক্ট করে তাকালো পিয়ালী,রজতের দিকে।
ছেলেটির অনুমান ঠিক’ই ছিল I কল করেছিল বিভাস I পিয়ালীর মনের মানুষ,তার বয়ফ্রেন্ড।
অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে ছিল রজত I
পিয়ালীর চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল..
কেউ’ই বুঝতে পারছিলোনা তাদের সাথে আসলে কি ঘটেছিলো !– ‘নিছক’ই দুর্ঘটনা?’ হরমোনাল চাহিদার প্রতিফলন? নাকি বোকা’বোকা সুপ্ত ‘ভালোবাসার বহির্প্রকাশ ?
শরীরের গল্প
রজত চেষ্টা করলো এগিয়ে যাওয়ার.. কিন্তু পিয়ালী চোখের জল মুছে’ই দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো।
পেছন থেকে চিৎকার করে ডাক দিলো ছেলেটি, কিন্তু পিয়ালী ফিরলোনা।
সেদিন রাতে বিছানায় ছটফট করেছিল রজত I
যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ঘুম’কে কাছে টানতে পারছিলোনা সে। বারবার বিকালে ঘটে যাওয়া মুহূর্ত’গুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছিল তার।
একটা নিছক মুহূর্ত এতদিনের বন্ধুত্বের ফাটল ধরাতে পারে,তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলোনা I
ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো তার।
আরো পড়ুন, সেরা ভালোবাসার গল্প
বিভাস আর পিয়ালীর সম্পর্ক হাতে গোনা কয়েক মাসের। পিয়ালী নিজের প্রেমিক সম্পর্কে রজতের কাছে কিছুই গোপন করেনি,ভীষণ বিশ্বাস করতো সে রজত কে…হয়তো নিজের থেকেও বেশি।
যেদিন লাজুক হেসে মেয়েটি রজত’কে তার বিভাসের সাথে সম্পর্কের কথা জানায়, সেদিন না জানি কেন বুকের বাঁ’দিকটা চিন’চিন করে উঠেছিল তার। বুঝতে পারেনি অবুঝ ছেলেটি তার যথাযত কারণ I
হয়তো আজ সে কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছে..
তার’ই তো বান্ধবী, কত আনন্দ,ভাব ও ঝগড়ার সাক্ষী তারা দুজনে। তাহলে কিসের এতো সংশয় ? মন’কে অনেক বুঝিয়ে ফোন করলো রজত।
বোধয় ফোন’টা ধরে বুকের মাঝে রেখে দিয়েছিলো পিয়ালী I সে অপেক্ষায় ছিল কোনোকিছুর জন্য। প্রথম রিং হয়ে গেলো টানা। দ্বিতীয় রিং হতেই,কল রিসিভ করলো মেয়েটি I
ফোনের দুই প্রান্ত স্তব্ধ।
ধীর গলায় রজত বললো- “ডিনার হয়েছে?”
মৃদু স্বরে উত্তর এলো– “হুমম।”
আবার নির্বাক কথোপকথনের পরিবেশ I
একটু নিজেকে সামলিয়ে পিয়ালী বললো:
“কাল একটু দেখা করতে পারবি? দুপুরে কফিশপে,যদি তোর সময় হয়? “
কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রজত বললো:
” দুপুরে কফিশপে? এতো রোদ ঠেঙিয়ে ! তুই আমার বাড়িতেই আয়না !…..
(হঠাৎ অজান্তেই মনের আকাঙ্ক্ষা’টি প্রকাশ করে ফেলছিলো সে প্রায় )
মানে বলছিলাম……! যদি তোর অসুবিধা না থাকে।”
অবর্ণনীয় অনুরাগের ভঙ্গিতে মেয়েটি আস্তে করে বলেছিলো:
–“আচ্ছা বাবা ! যাবো..এখন ঘুমো দেখি !”
ফোন রাখলো রজত। পিয়ালীর পরিত্যেক’টি কথা বলার আঙ্গিক,রজতের ভীষণ ভাবে চেনা।
সেদিন সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি ছেলেটি।
দুপুর গড়িয়েছে I
বারান্দার ধারে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পায়চারি করছে রজত,. না জানি কি বলবে তাকে পিয়ালী ! যদি বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজ’ই ছিন্ন করে সে চলে যায়?
গতকাল রাতের কথা শুনে একদম’ই তা মনে হয়নি যদিও I
গতকাল দুপুরে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছিলোনা পিয়ালী’কে। তার দেহের ঘ্রাণ যেন ভোলার নয়। কেনো যে মনের দুর্বলতার কথা এতদিন বুঝতে পারেনি সে !..
এতটা তৃপ্তি লুকিয়ে ছিল মেয়েটির স্পর্শে,তা যেন তোলপাড় করছিলো রজত’কে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
সেই বেলার দিকে একটা ম্যাসেজ পেয়েছিলো পিয়ালীর মোবাইল থেকে;
লেখা ছিল —-‘ঠিক সময় চলে যাবো..সবটা হয়তো গুছিয়ে বলতে পারবোনা,বুঝে নিস্।”
বারংবার ইনবক্সে লেখাগুলি পড়ছিলো রজত,আর ভেসে উঠছিলো পিয়ালীর মিষ্টি মুখখানি তার রাতজাগা চোখের সামনে।
ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গেলো মুহূর্তের ছন্দে । কিন্তু পিয়ালী এলোনা।
বাড়ির পাশে রাস্তায়,পথ চলতি মানুষের পায়ের শব্দে সে,বার-বার উঁকি দিচ্ছিলো:’এই বুঝি পিয়ালী এসেছে !’
কিন্তু না..তা আর হলোনা.. ছেলেটি শেষ পর্যন্ত পায়নি সেদিন আর তার বান্ধবীর দেখা।
তারপর থেকে রজত আর কোনোদিন’ও মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি..
কিছু-কিছু নিবিড় সম্পর্কের শেষটা কখনো কখনো রয়ে যায় অমীমাংসিত।
Boroder Romantic Golpo
“এ বাবা ! এভাবে গল্প’টা অসম্পূর্ণ অবস্থায় শেষ করে দিলেন?”
আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন লেখক’বাবুর এক পুরানো ভক্ত।
মুচকি হেসে পাণ্ডুলিপি’র পাতাগুলি গুছিয়ে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন,জনপ্রিয় লেখক শ্রী রজতাভ সেন।
সোফায় ল্যাদ খেতে খেতে লেখক মহাশয় বললেন -“কেনো বাগচী’বাবু, আপনার অখুশি হওয়ার কারণ?”
ভ্রু কুঁচকিয়ে বাগচী মহাশয় বললেন-
“সেকি মশাই,আপনি নিজে কারণটা বুঝতে পারলেননা? নারী-পুরুষের একটি অসামান্য সমীকরণ,যা কিনা প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই শেষ? তাছাড়া, দুটো চরিত্র’কেই তো আঁধারে রেখে দিলেন চিরতরে..আর
ক্লাইম্যাক্সে রেখে দিলেন জমাটবাঁধা আঁধার।
না না! এ আপনার বড্ডো অবিচার !”
–“ধরুন..ভিন্ন স্বাদের একটি অসমাপ্ত গল্প..পাঠকদের ইচ্ছে হলে গ্রহণ করবে,নতুবা নিরাশ হয়ে ফেলে দেবে আঁস্তাকুড়ে….তার বেশি তো কিছু হবেনা!”
নিজের মেজাজি আঙ্গিকে,পায়ের উপর পা তুলে, মিষ্টি হেসে বলে উঠেছিলেন রজতাভ’বাবু।
বাকি কথা শেষ করে সেদিনের মতো বিদায় নিয়েছিলেন বাগচী’বাবু।
জানালা খুলে ঘর অন্ধকার করে সিগারেট ধরালেন লেখকবাবু I বিকালের পড়ন্ত আলো শেষ বারের মতো বিদায় জানাচ্ছিল ঘরটাকে I
রজতাভ-বাবু চিন্তা করছিলেন,মিস্টার বাগচীর কথাগুলি ফেলে দেওয়ার মতো নয়..
‘সত্যি’ই তো.. এভাবে অসম্পূর্ণ থাকবে গল্পটি? ‘.
সেদিন বিকালে রজত পিয়ালীর দেখা পেয়েছিলো..তবে একটু ভিন্ন ভাবে I অধৈর্য অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল সে.. বাস রাস্তার মুখে দেখেছিলো মানুষজনের জটলা I
খবর পেয়ে শিউরে উঠেছিল তার সর্বাঙ্গ।
দেখেছিলো পিচ রাস্তায় চাপ -চাপ রক্ত।
পাগলের মতো কাঁদতে-কাঁদতে ছুটে ছিল স্থানীয় নার্সিংহোমে..
দেখেছিলো সাদা কাপড়ে মোড়া পিয়ালীর রক্তাক্ত মৃতদেহ I ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসা বাস’টি তছনছ করে দিয়েছিলো সেদিন রজতের স্বপ্ন’টিকে I পথ-দুর্ঘটনায় চিরতরে বিদায় নিয়েছিল মেয়েটি।
তারপর অনেক সময়ের জল গড়িয়েছে,কেটেছে শীতবসন্ত…
এসেছে লালিত্যের ছোঁয়া। এসেছে বহু প্রলোভন। কিন্তু কোনো কিছুই আর সেভাবে পরিবর্তন করতে পারেনি রজত’কে।
লেখক রজতাভ বাবু ওরফে রজত.. আজ’ও নিজের বান্ধবীর থেকে উপহারস্বরূপ পাওয়া সেই অ্যাশ-ট্রে’টি ব্যবহার করেন I
পিয়ালী যেন আজ’ও তার পাশে আছে,তার সাথে জড়িয়ে আছে স্মৃতি হয়ে I
বহুবছর পর আরও একবার ভিজে গেলো লেখক মহাশয়ের দু’চোখ।
গল্প : “অপ্রকাশিত”
আরো পড়ুন, টুকরো প্রেমের অনুগল্প
বড়দের গল্প (নিষিদ্ধ ঘর সংসার)