বয়ফ্রেন্ড টু বিয়ের পিঁড়ি | Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla | Premer Golpo

sudiproy877
11 Min Read

 Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla

-এই শালা কুম্ভকর্ণের বাচ্চা, সকাল হয়ে গেছে কখন, আর কতক্ষন ঘুমোবি?
-হা হা ই ই ই সাত সকালেই আমার বাড়িতে ড্যাং ড্যাং করে কি করতে এসেছিস?
-তুই উঠবি কি না?
-না এখন আমি ঘুমোবো (বলে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে তৃসম)
-তুই উঠবি না তোর ঘাড় উঠবে দেখ তবে…
-আ.. আ.. আ…ওরে ৮০ কিলোর খাসি চিতুর বাচ্চা মরে যাবো তো রে, দমবন্ধ হয়ে আসছে, নাম রে নাম,ও মা গো…
-আমি খাসি, আবার ৮০ কিলো?? আরোই নামবো না, আরো মিনিট পাঁচেক এই ভাবেই থাকব… মাইরি কি নরম রে তুই, হাড়গুলো কি তুলো দিয়ে তৈরি??
-ওরে হনুলুলুর বাচ্চা, আমি ছেলে রে!! সকালবেলা আমার ২০৭ নম্বর হাড়টা বোধয় আর আস্ত থাকলো না রে, নাম রে চিতু নাম।
-আগে ঠিক করে বল আমার ওজন কত আমি খাসি না বল..
-বলছি বলছি, তোর ওজন ৬০ কিলো আর তুই আলিয়া ভাট এর থেকেও সুন্দরী, নাম রে দম বন্ধ হয়ে গেল।

– That’s like a good boy. শোন রে জানোয়ার আমার ওজন ৫৫.৬ কিলো,কালই তো মাপলাম মেট্রো স্টেশন এ গুলে মেরে দিলি?



-আমি মানি না, ওটা খারাপ হয়ে গেছিল তোর চাপে বুঝলি?? আর সাতসকালে আমার ভগবানতুল্য বাবাকে আর রাবণের গুষ্টির লোকের সাথে তুলনা করিস না, বাবার একটা প্রেস্টিজ আছে তো নাকি!!
-আহা গো আমার চুঁকু সোনা, কোথাকার ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির এলেন, কাকুকে যেভাবে উদ্ধার করিস আর বললাম না।
-ওরে মা আমার, তুই আমার বন্ধু না শত্রু? তা এখন কি দরকার তোর আমার সাথে?
-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ভাই সিটি সেন্টার যাবো। ঝপ করে সকালের কাজ কর্ম সেরে আয় মানে ট্যাঙ্কি খালি করে আয়।
-উফফ  ভবিষ্যতটা গেলো বোধহয় আর বাবা হতে পারব না গো উফফ!!
-কিরে ওই ভাবে হাঁটছিস কেনো? কুঁজোর মতো?
-সকালবেলা এমন জায়গায় চাপ দিলি আর কি বলবো?? সেই শালা ক্লাস ওয়ান থেকে জ্বালাচ্ছে উফফ কবে যে শাকচুন্নিটা ঘাড় থেকে নামবে কে জানে??
-আর তুই তো সাধুপুরুষ না?? আমি ছিলাম বলে বর্তে গেলি এজন্মের মতো,এরম বন্ধু পাবি না রে,,লাখে একটা sorry কোটিতে একটা এরকম পাওয়া যায়..   যা না বাপ জলদি, দরকার আছে আজকে।
-হ্যাঁ, ভগবানটা শালা তোর মতো দু এক পিসই তৈরি করে কিন্তু আমার ঘাড়ে কেন??…..শোন, আমার এত সহজে হয় না সময় লাগবে বলে দিলাম, অন্তত ৩০ মিনিট।
-তুই কি পেটের ভিতর বানিয়ে বার করবি নাকি?? জলদি নে নাহলে মেরে তোর কলকব্জা সব ঢিলে করে দেবো।


(বাথরুম এ ঢুকে তৃশম দরজা বন্ধ করে দিল)
বললে বিশ্বাস করবেন না, কি বলবো সেই ক্লাস ওয়ান থেকে জ্বালাচ্ছে।আমার বেস্টফ্রেন্ড, হ্যাঁ মশাই আমার বেষ্টফ্রেন্ড ও।ওর নাম চিত্রাঙ্গদা মুখার্জি, আমি ‘চিতু’ বলে ডাকি। সেই কিন্ডারগার্ডেন থেকে আমাদের বন্ধুত্ব।
ওর সেদিন প্রথম ছিল স্কুলে।ক্লাস টিচার এর সাথে এলেন উনি, ম্যাম আমাদের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন তুমি তৃশম এর পাশে বসবে… ব্যাস আর সেইদিন থেকেই আমার হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে চলে গেলেন, শনির কৃপায় আমার সর্বনাশ সেই দিন থেকেই শুরু হয়েছিল!! কি বক বক করতে পারে বাপ রে বাপ, প্রথম দিন থেকেই বকে বকে কানের মাথা খেয়ে নিতে শুরু করলো।ওর বাড়ি কোথায় ,কে আছে ওদের বাড়িতে,ওকে কে কি নামে ডাকে,ও কি খেতে ভালোবাসে…ইত্যাদি ইত্যাদি, যত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি সে জোর করে শোনাতো,উফফ চুপ করে থাকলে আরো বেশি বক বক করতো।পড়াশোনায় তুখোড় ছিল তাই জন্য কেউ ওর একটা বালও বাঁকা করতে পারেনি।অল্প দিনের মধ্যেই আমার সাথে বেশ, বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।আসলে ও আমাদের পাড়াতেই নতুন তৈরি হওয়া ফ্ল্যাট এ এসে উঠেছিল।প্রতিদিন মা আর কাকিমা একসাথে আনতে যেত আমাদের।আমার মা বলত ওই বজ্জাত মেয়েটা ভালো আর নিজের হাবাগোবা, গোবেচারা ছেলেটা নাকি খারাপ, নিজের ছেলের তো কোনোদিন প্রশংসা করলো না!!!আর কাকিমা বলত না না তোমার ছেলের দোষ নেই, সব দোষ এই আমার পাজি মেয়েটার।এই ভাবেই বন্ধুত্ব হল আমাদের।আমার পাশে কাউকে বসতে দিত না,ভুল করে ওর সাথে কথা না বলে যদি অন্য কারুর সাথে কথা বলতাম ব্যাস আমার জীবন শেষ করে দিত, না না চুপচাপ বসে থাকার বান্দা উনি নন,  কি মারটাই না মারত!!ছোটো থেকেই পেটুক একেবারে।টিফিন পিরিয়ড এর আগেই ওনার খিদে পেত আর ক্লাস এর মাঝেই টিফিন বার করে খেত।কতবার বারণ করেছি দেখ ম্যাম ধরে ফেলবে, খাবার মুখে নিয়েই বলতো  ‘ধপ্তে পাব্বে না’…দিয়ে খাবারটা গিলেই বলতো খাবি তো বল?? আমারও নোলা কম ছিল না, ভালো খাবার দেখলেই লোভ হত খুব আর কাকিমা যা রান্না করে না আজও, লা জবাব!! কোনোদিন লুচি,আলুর মাখো মাখো তরকারি, কোনোদিন চাউমিন,কোনোদিন ডিমটোস্ট  নিয়ে আসতো, কাকিমা বেশি করে দিত আমার জন্য, ও নিজের ভাগেরটা খেয়ে হামলে পড়তো আমার টিফিন এর ওপর, মাও জানত ও খেতে ভালোবাসে তাই বেশি করে দিত।হাই স্কুল এ উঠতেই আমরা আলাদা হয়ে গেলাম, ও গেল গার্লস স্কুল আর আমি বয়েজ তবে আমাদের বন্ধুত্বে কোনো ভাঙন ধরেনি। একটু বড়ো হতেই লোকজন ভাবত আমরা বয়ফ্রেন্ড আর গার্লফ্রেন্ড তবে আমাদের এই নিয়ে কোনো ভাবনাই ছিল না, দিব্যি আমরা আনন্দ করতাম খুনসুটি করতাম।কত প্রেমপত্র যে এল গেল আমার হাত দিয়ে কোনোটাই উত্তর পেলো না।ওকে অন্যের প্রেমপত্র দেওয়ার জন্য উল্টে আমার ভালই হতো, লোকে আমায় খাওয়াতো,বাবা-বাছা করতো…. কিন্তু ও ছাড়নেবালা পার্টি নয়, একা যে খাব তার উপায় ছিল না , পারলে ওকেও আলাদা করে খাওয়াতে হতো। ওর জন্য আমার জীবনে প্রেম করা অধরাই থেকে গেল, না স্কুল লাইফে না কলেজে। একবার  স্কুলে পড়ার সময় একটা গম্ভীর মেয়েকে খুব পছন্দ হলো, মেয়েটারও আমায় পছন্দ ছিল কিন্তু ওই যে বিটকেলটা কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো আর দিল কাঠি করে বলে ‘আমি নাকি খুব গালাগালি দিই, খারাপ ছেলে।’ খুব রাগ হয়েছিল, প্রায় এক সপ্তাহ কথা বলিনি, পরে অবশ্য সরি বলেছিল, কি করবো সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু মেনে নিলাম।প্রচন্ড খেতে পারে কি বলবো ওর এই দক্ষতায় কতজন যে চ্যালেঞ্জ করে হেরে গেল সে নিজের চোখে দেখা।মেয়েরা যে এমন খেতে পারে ওকে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না।তবে গায়ে একটুও মেদ লাগেনি কোনোদিন, এতটাই ফিট ছিল । ক্যারাটেতে দারুণ ছিল, ছুটতেও পারতো দারুণ, কোনোদিন ওকে কেউ রেস এ হারাতে পারেনি।একবার ভিড় বাসে এক ছিঁচকে চোর ওর পার্স চুরি করেছিল, বাস থামিয়ে ছুটে ও ধরে ফেলেছিল তারপর এমন রামপ্যাদানি দিয়েছিল যে চোর প্রায় হেগে মুতে ফেলে এমন অবস্থা।কান ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে পুলিশ এর কাছে দিয়েছিল। স্কুল শেষ হওয়ার পর আমরা বেশ বড়ো হয়ে গেলাম ব্যাস এবার কি কলেজে….. সেখানেও ডাইনিটা আমার ঘাড়ে চেপে বসলো।পড়াশোনায় ভালো ছিল বলে পেল কেমিস্ট্রি আর আমি ইকোনমিকস। আর কি, কলেজে যে কত ছেলের প্রপোজাল ফিরিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই আর প্রতিবার ‘বলি কা বাখরা’ বানাতো আমায়, আমি ওর বয়ফ্রেন্ড এর প্রক্সি দিতাম।ওর জন্য কলেজেও আমার প্রেমটা জাস্ট ফস্কে গেলো।একটা ম্যাথ এর মেয়ে বেশ ভালো মতো ক্রাশ খেয়েছিল আমার ওপর, আমারও ভালো-টালো লাগতো, অফটাইমে একদিন ক্যান্টিনে বসে সবে গুছিয়ে গল্প শুরু করেছি , যাহ শালা কোথা থেকে উদয় হলো কে জানে!! যেই দেখেছে মেয়ের সাথে কথা বলছি ব্যাস বাগড়া দিয়ে দিল। সে আমার পাশে বসে সকলের সামনে cerelac খাওয়া আদুরে baby এর মত  ‘সোনা, এগুলো তো ঠিক না’ বলে এমন বললো মেয়েটা হনহন করে হেঁটে চলে গেলো আর ফিরেও তাকায়নি কোনোদিন। জিজ্ঞাসা করলাম -আমাকে কি তুই প্রেম করতে দিবি না, মানে তোর প্রবলেমটা ঠিক কোথায়?

আরো পড়ুন , Bangla Premer Golpo 
                      মন তুই আমার হবি 

সে এমন কাঁচুমাচু, ইনোসেন্ট  মুখখানা করলো যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না আর আমিও গলে গেলাম।
ওর দৌলতে কলকাতার যত খাবার জায়গা আছে আমার  চেনা হয়ে গেছে আর খাওয়াও। কলেজে ওঠার পর থেকেই ওর কাছে পড়ানোর অফার আসতো,যতই বিচ্ছু হোক না কেন পড়াতো অসাধারণ , এমন অবস্থা যে সময় পেত না আর সেই পোলাপানগুলোকে পাঠাতো আমার কাছে এই জন্য আমারও বেশ ভালো লক্ষী লাভ হতো। নিজে কোনোদিন রান্না করেনি, কাকিমা একবার ওকে বলেছিল আজ ডাল রান্নাটা তুই কর গরম ভাত হচ্ছে ওই ডাল সেদ্ধ করার কৌটোতে ডাল নিয়ে ওর মধ্যে বসিয়ে দে, এতটাই স্ক্রু ঢিলে ওর যে কান শুনতে ধান শুনলো আর শুধু কৌটোর মধ্যে ডাল দিয়ে গ্যাস এ বসিয়ে দিল, তারপর বাকিটা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সে আমরা তো হেসে লুটোপুটি খাই আর ও কি না বলে ‘যাক বাঁচা গেলো, আর কোনোদিন রান্নাঘরে ঢুকতে দেবে না।’ তবে বাজার করতে ছিল এক্সপার্ট, বাড়ির সব বাজার ও করতো, দরদাম কি করে করতে হয় ওর থেকে শেখা উচিত। সে গিয়ে বাজারওলাকে এমন বার খাওয়াবে না বাজার কাকু গলেই জল। বলে সব কিছু গলার জোরে হয় না বৎস বুঝলে।
রান্না করাটা আমার শখ আর সেটার কিভাবে সুফল তোলা যায় ও ভালো জানে, তাই ফেসবুক এ নতুন রান্না দেখলেই লিংক পাঠিয়ে অর্ডার করে দিত, অগত্যা আমাকে বানাতেই হত, মুখের ওপর না বলতে পারতাম না যে আর এটার misuse করত ওই ধিঙ্গি মেয়েটা। কি করতে বাকি রেখেছে ও?? …..(চলবে

আরো পড়ুন, মন ছুঁয়ে যাওয়া বাংলা স্ট্যাটাস

পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি আসছে , সঙ্গে থাকুন …

Google News এ ওয়েবসাইট সাবসক্রাইব করে রাখুন , আর জুড়ে থাকুন বাংলার সবচেয়ে বড় স্টোরি টেলিং ওয়েবসাইটের সাথে …

ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ❤️

Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.