সেরা ভালোবাসার গল্প – Best Valobashar Golpo – Bengali Love Story

sudiproy877
8 Min Read

অনেক দিন পর শুভব্রত সেদিন সুমির বাবাকে দেখতে গিয়ে, সুমিকে দেখলো, যেন বিষণ্ণতার প্রস্তর মূর্তি। শুভব্রত এখন কলকাতার নামকরা ডাক্তার। মাঝে মাঝে এসে নিজের গ্রামের মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে যায়। এবার এসেছে দোলের ছুটিতে। যেদিন এসেছে, সেদিন ই শুনলো সুমির বাবার খুব শরীর খারাপ ।দেরী না করে চলে এসেছে ওর বাবাকে দেখতে। গ্রামের সবাই জানে শুভব্রত এখন কলকাতার নাম করা ডাক্তার। এখন আর কেউ ওকে হেলাফেলা করতে পারে না। একটা সময় ওকে অপমানিত হয়ে, এ গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। সব যেন এই সেদিনের কথা।

ভালোবাসার গল্প

পলাশ রাঙা ভালোবাসা

একই গ্রামে বেড়ে উঠেছে সুমিতা আর শুভব্রত। সুমিতাকে এক কথায় দস্যি মেয়ে বললেও কম বলা হয়। ওর দস্যি পনায় গ্রামের এমন কোন লোক নেই যে ভোগেনি। কেউ কিছু বলতে পারতো না, কারণ সুমিতা ছিল গ্রামের একমাত্র প্রতিভাশালী বনেদি শঙ্কর ব্যানার্জির মেয়ে। সকলে শঙ্কর ব্যানার্জিকে মানতো। গ্রামের যেকোন সমস্যায় সকলে একযোগে ওনার শরণাপন্ন হতো। সেই হিসেবে সুমি যতই দস্যি পনা করুক না কেন, কেউ নালিশ জানাতে আসতো না আর এতে সুমি আরো নির্ভীক হয়ে গিয়েছিল।

শুভব্রত একই গ্রামে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছে, ছোটবেলা থেকেই শুভ লেখাপড়ায় খুব ভালো। বেশ কয়েক বার শঙ্কর ব্যানার্জি নিজে ওর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছে ওর মেধার জন্য। ধীর-স্হীর শুভব্রত শুরু থেকেই দস্যি সুমির প্রতি একটা অদ্ভুত আকর্ষণ বোধ করতো। সুমির কাছে শুভ ও কয়েকবার হেনস্থার শিকার হয়েছে। কলকাতার কলেজে যেত শুভ। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। গ্রামের পথঘাট এমনিতেই কাদায় ভরা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা মাঠের পাশ দিয়ে যেতে হতো। সুমি গ্রামের কিছু ছেলেমেয়ের সঙ্গে খেলছিল, যদিও খেলার সাথীরা ওর থেকে অনেকটাই ছোট ছিল। হঠাৎ একটা কাদামাখা বল সজোরে এসে শুভর পিঠে এসে লাগলো। শুভর পরনের সাদা শার্ট কাদায় মাখামাখি। শুভ ঘুরে দেখলো – সব বাচ্চাদের সঙ্গে সুমি দাঁত বের করে হাসছে। এটা দেখে রাগ হলেও শুভ কিছু না বলে, বাড়ি ফিরে গেল শার্ট বদলানোর জন্য। আর কি বলবে !! সুমির জন্য ওর মনের ঘরে একান্ত গোপন জায়গা তৈরি হয়ে গেছে অনেক আগেই।

গভীর ভালোবাসার গল্প

সময় তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলে। একসময় শুভ গ্রামের লোকের কানাকানিতে শুনতে পেল সুমির বিয়ে ঠিক হয়েছে। কথাটা শোনার পর থেকে মনে মনে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়লো শুভ। ও ওর মাকে জানালো, সুমিকে নিয়ে ওর মনের কথা। শুভর বাবা-মা ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। গ্রামের একমাত্র বনেদি বাড়িতে কি করে ছেলের সম্বন্ধের কথা নিয়ে যাবে !! কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা-মা অসাধ্য সাধন করতে পারে। তাই অনেক দ্বিধা সংশয় নিয়ে শুভর বাবা-মা শঙ্কর ব্যানার্জির কাছে গেল শুভর সম্বন্ধ নিয়ে। শঙ্কর ব্যানার্জি ওদের মুখে পুরো কথা শোনার আগেই চরম অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। নিজের প্রভাবের গর্বে গর্বিত ছিলেন শঙ্কর ব্যানার্জি।

আরো পড়ুন, এতটা ভালোবাসি 4

বাবা-মায়ের অপমানে শুভ যেন মরমে মরে গেল। নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে কয়েকদিন পর গ্রাম ছেড়েছিল শুভব্রত। ওর বাবা-মা বাধা দেয় নি। নিজের চেষ্টায় কলকাতায় থেকেই পড়াশোনা করতে লাগলো। মাঝে মাঝে সুমির কথা মনে পড়লে উদাস হয়ে যেত।

নিউ ভালোবাসার গল্প

এদিকে শঙ্কর ব্যানার্জি দুটো গ্রাম ছেড়ে এক বনেদি পরিবারে সুমির বিয়ে ঠিক করেন। সুমিকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করেন না। সুমি পরে শুভর এক তুতো বোনের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল ওর প্রতি শুভর অনুভূতির কথা। তার পর থেকে না চাইতেও শুভর চিন্তা ওর মনে কেন আসতো, তা ও নিজেও বুঝতো না। এর মধ্যে শঙ্কর ব্যানার্জির ঠিক করা পাত্রের সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়ে গেল। কলকাতায় বসে শুভব্রত এ খবর শুনলো। ভেতরটা ওর পাথরের মতো কঠিন হলো। বাবা-মা ছাড়া আর কোন পিছুটান নেই শুভর।

বিধাতার খাতায় কার হিসেব যে কিভাবে লেখা থাকে কেউ জানে না। বছর খানেক পর দু’দিনের জ্বরে সুমির বর মারা গেল। শঙ্কর ব্যানার্জি সুমিকে শ্বশুরবাড়ি রাখলেন না, নিজের কাছে নিয়ে এলেন। সুমিকে দেখে এখন কেউ বুঝতে পারে না, ও কতোটা দস্যি মেয়ে ছিল। শুভ্র বস্ত্র পরিহিতা এক প্রস্তর মূর্তির মতো থাকে। ওর নীরব উপস্থিতি কেউ বুঝতেই পারে না। শঙ্কর ব্যানার্জি অসহায় ভাবে মেয়ের অবস্থা দেখেন। ভেতরে ভেতরে উনি ভেঙে পড়েছেন।দিনে দিনে ওনার প্রভাব ও কমে এসেছে। একমাত্র মেয়ের শ্বেতশুভ্র উপস্থিতি কোথাও যেন ওনাকে ক্ষয় করে ফেলছে। সুমির এ অবস্থার জন্য তিনি নিজেকে দায়ী করেন। এই সব ভেবেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প

শুভ নিজের কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে। কিন্তু তবু কখনো কখনো সুমির কথা ভেবে বুকের মাঝে রক্তক্ষরণ হয় আর এটা সে ভালো করে টের পায়। দোলের আগে গ্রামে ফিরে যখন শঙ্কর ব্যানার্জিকে দেখতে গেল, তখন সকলকে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শঙ্কর ব্যানার্জি। তখন শুভ প্রতাপশালী শঙ্কর ব্যানার্জি নয়, একজন অসহায় বাবাকে দেখেছিল। দু’হাত জোড় করে শুভর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি, আর শুভকে সুমির কথা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। শুভব্রত ভাববে কি !! কথাটা শুনেই তো ওর মনে এক আকাশ পলাশ ফুল ফুটে উঠলো। পলাশের রক্তিম রঙে রাঙা হয়ে আজ ও সুমির নাম ওর মনের গোপন ঘরে লুকোনো আছে। একজন ডাক্তার হিসেবে নিজের কাজ করে, অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে শঙ্কর ব্যানার্জি কে শুভ বললো, “আমি জানাবো আপনাকে।” বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে শঙ্কর ব্যানার্জির বলা কথা জানাতেই ওনারা অতীতের সব অপমান নিমেষে ভুলে গিয়ে সম্মতি দিলেন। কারণ এতোদিন পর ওনারা শুভর সেই উজ্জ্বল মুখমণ্ডল দেখতে পেলেন। একটা সুখের দীপ্তি ওর মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল।

আরো পড়ুন, আমাদের ভ্যালেন্টাইন্স ডে

দোল পূর্ণিমার দিন সকালে মিষ্টি আর আবির নিয়ে শুভব্রত গেল শঙ্কর ব্যানার্জির বাড়ি। আগে নিজের পেশাগত কর্তব্য করে নিল। দেখলো আগের থেকে শঙ্কর ব্যানার্জি ভালো আছেন। আজ অদূরে সুমি পাথরের মূর্তির মতো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শঙ্কর ব্যানার্জি আর শুভব্রতর মধ্যে আগের দিনের কথোপকথন কিছুই জানে না সুমি। শুভব্রত শঙ্কর ব্যানার্জির পায়ে আবির দিয়ে নমস্কার করে বললো আমি রাজি কিন্তু সুমির মত নেওয়া প্রয়োজন। শঙ্কর ব্যানার্জি নীরবে সম্মতি জানিয়ে ঘর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলেন।

বউ এর সাথে রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

একটু ইতস্তত করে শুভ এগিয়ে গেল সুমির দিকে। তারপর শঙ্কর ব্যানার্জি আর ওর মধ্যে হওয়া কথা সব জানালো। মাথা নিচু করে শুনে গেল সুমি। বুকের ভিতর তোলপাড় করছে এক অব্যক্ত অনুভূতি, যার নাম সুমি জানে না। শুভ অস্ফুটে জিজ্ঞাসা করলো ,” তুমি গ্রহণ করবে আমাকে ? ” শুভর ভেতরটা উত্তেজনায় কাঁপছে। এতদিনের আকাঙ্খা কি পূর্ণ হবে – এই ভেবে। অপলক তাকিয়ে রয়েছে শুভ সুমির দিকে। সুমি আলতো করে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিল। একমুহূর্ত দেরী না করে শুভব্রত নিজের সঙ্গে আনা লাল আবির সুমির গালে মাথায় মাখিয়ে দিল। চমকে চোখ তুলে সুমি তাকালো শুভর দিকে। শুভ মুগ্ধ হয়ে দেখলো তার একান্ত আপন মানবীকে। আর সুমির মুখ যেন ভালোবাসার পলাশরঙ আর আবিরের লাল রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

আরো পড়ুন, শেষ ভালোবাসা – Real Valobashar Golpo

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.