ভালোবাসার ছোট গল্প (প্রেম) | Valobashar Choto Golpo

Samaresh Halder
10 Min Read

শাড়িটা খুলবো?”, আমি ইতস্তত করে বললাম। জেনি ঘোমটা দিয়ে ঠায় বসে আছে। নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিচ্ছে না মনে হচ্ছে দেখে। আমি আবার বললাম, “ খুলবো?”। মেয়েটা চুপ করেই থাকলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে জবাবের আশায় তাকিয়ে থাকলাম। দিলই না জবাব। গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস আমার গলা চিরে বের হয়ে গেল। বাসর রাত সম্পর্কে যে ধারণাগুলো মনের কল্পনায় ছিল সেগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যেতে থাকলো। ছোটবেলা থেকে বাসরঘরে নর-নারীর আদিম উপাখ্যানের ধারণা পাওয়া আমি হঠাৎ করে ভেঙ্গে পড়লাম।

ভালোবাসার ছোট গল্প কাহিনী

জেনি এখনও মাথা নিচু করে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুমের দিকে যেতে যেতে ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললাম, “শুয়ে পড়।”, একটু থেমে আবার বললাম, “ আর হ্যাঁ, কাপড়টা বদলে নিয়ো। তোমার স্যুটকেসটা খাটের ঐ কোণার নিচে আছে, ওখান থেকে কোনো একটা পড়ে নিয়।” জেনি সামান্য মাথা নাড়ালো। আমি বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। দরজাটা আটকিয়ে দিলাম। বেসিনের সামনে যেয়ে দাড়ালাম। ভেসিনে উপরে দেয়ালে বিশাল আয়না। আমাকে দেখা যাচ্ছে সেখানে। ঘামে তেলতেলে হয়ে আছে মুখটা। চুলে হাত বোলালাম, আঠাআঠা হয়ে আছে। টেপ খুললাম। শো শো শব্দে পানি পড়ছে বেসিনের গায়ে। পানির ছিটে মুখে এসে লাগছে। সারাদিন ভালো ধকল গেছে। বসেই ছিলাম সারাক্ষণ, কিন্তু তাও ঘেমে নেয়ে একেবারে একাকার হয়ে গেছি।

টেপের পানিতে অনেকক্ষণ হাতের থাবা দুটো ভেজালাম। একসময় শীতের পরে বসন্ত আসতো। এখন আর আসে না। এবছরের শীত প্রায় কেটে গেছে, বসন্তের পরিবর্তে ভ্যাঁপসা গরম পড়তে শুরু করেছে। আরামই লাগলো ঠান্ডা পানিতে হাত দুটো ধরে থাকতে। মনে হোলো, ভেতরের অশান্তি তো কিছুটা কমলো।

রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প কাহিনী

Loading...

টেপের পানি বন্ধ করে দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে গায়ের জামা খুলতে শুরু করলাম। আয়নার আমির সাথে আমার আমির চোখাচোখি হতেই একটা লজ্জা, হতাশা বুকে ভেতরে এসে বাঁধল। বৌকে মানাতে পারলাম না! কেন আমি চিরকাল এমন! সামান্য জোর পর্যন্ত খাটাতে পারলাম না নিজের কারো উপরে! নিজের উপরে! কেন?

কাপড় গুলো একপাশে ছুড়ে ফেলে শাওয়ারের নিচে যেয়ে দাঁড়ালাম। অন করে দিলাম শাওয়ারটা। ঝিরিঝিরি করে পানি এসে মুখে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভালো লাগছে আমার, একটু একটু, তবুও ভালো লাগছে। হঠাৎ

জেনি! জেনি কে আমি প্রথম দেখেছি ওদের বাড়িতে। সুন্দরী, ষোড়শী, কেশবতী। চেহারার শিশুসুলভ ভাব এখনও কিছুটা থেকে গেছে। ভালোই লেগেছিলো ওকে আমার। আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, আমার বাবা-মা ও হ্যাঁ করে দিয়েছিল। এক বসাতেই ডেট ফাইনাল। মাঝখানে একদিন আংটিবদল হোলো শুধু। জেনিকে অবশ্য সামান্য অপ্রস্তুত মনে হয়েছিল, কিন্তু, আংটি বদলের সময়ে তো সব মেয়েই কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তাই না? আফটার অল, এটা ওর প্রথম বিয়ে, একটু অপ্রস্তুত তো ও হতেই পারে।

সেরা ভালোবাসার ছোট গল্প

এখনকার বিয়ে গুলোয় যেমনটা হয়, ওমন আমাদের বেলায় হয়নি। না হওয়ার পেছনে কারণ ছিল। জেনির মানসিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না। সদ্য সদ্য গর্ভপাত হয়েছিল, মানসিক ভাবে বেচারি একেবারে ভাঙ্গা তখন। তারপর উপমহাদেশে যেমনটা হয়, খুব তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। আমার সাথে।
মানসিকভাবে আনস্টেবল কারো সাথে সুস্থ কারো বিয়ে হবে এটা নিশ্চয় কোনো মানুষ মনে মনে কল্পনা করবে না। সুতরাং জেনির কপালে আরেকজন মানসিক রোগীর আদরই এসে জুটলো। হ্যাঁ, আমি নিজেও মানসিকভাবে অতটা সুস্থ নই। আজকের আগে অনেক কয়টা বছর এক ঘরে আটকা থেকে জীবন কাটিয়েছি। কেউ আমাকে আটকে রাখেনি, আমি নিজেই ঘর থেকে বের হতাম না। আমি জানি আমার অসুখটা ভয়ংকর। অসম্ভব রকমের ভয়াবহ। খুব ছোটবেলায় এই অসুখের ঘোরে এক ছেলেকে খুন করেছিলাম আমি। আমার এখনও মনে আছে। গোলগাল চেহারার একটা ছেলে, চশমা পড়তো। একদিন… থাক বাদ দেই। ভালো কথা হচ্ছে, সেই খুনের জন্য আমি ধরা খাইনি। ধরা পড়েছিলো সেসময়ে এলাকার উঠতি মাস্তান বাচ্চু ছাদেক। যাবজ্জীবন জেল হয় বেচারার।

Valobashar Choto Golpo Bangla

জেনির বাবা বিশাল ধনী। আমাদের তুলনায় কম, কিন্তু তাও দেশের ভিতরে উনি টপ টেন ব্যবসায়ীদের একজন। মেয়েকে তিনি চাইলেই সুস্থ কারো সাথে বিয়ে দিতে পারতেন। কী জানি কী বুঝে আমার সাথে বিয়ে দিলেন। আমার বাবার বিশাল ধন-সম্পত্তি দেখে? মনে তো হয় না। টাকার জন্য মেয়েকে উলটাপালটা জায়গায় পাঠাবেন, এমন লোভী ওনাকে দেখে মনে হয় না। সম্ভবত উনি নিজের মেয়ের উপর রাগ করে আছেন। হাজার হোক, অনেক আদরের ছোট মেয়ে যদি কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে যেয়ে তিন মাস পরে ফিরে এসে কেচ্ছা কাহিনি শোনায়, তাহলে মেয়ের উপর রাগ করাটাই স্বাভাবিক।

ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প (ফুলশয্যার রাত)

এই রাগের কারণেই বোধ হয় মেয়েকে এবর্শোনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে কোনো ধরণের সময় দেননি। ডাইরেক্ট ধরে বেঁধে আমার মত কারো কাছে বিয়ে দিয়েছেন।

আমার ঘরের বাথরুমের দেয়ালে তিনটা প্লাইউডের তাক আছে। নীচের দুই তাকে বেশ কিছু মন শান্ত রাখার বই আছে। অল্প কিছু গল্পের বইও আছে। তবে সেগুলো পড়তে পারি না আমি। গল্প পড়লে আমার অসুখটা বেড়ে যায়। ভয়ংকরভাবে বেড়ে যায়। আমার ভেতর অসুখ যে আমিটাকে সৃষ্টি করেছে সেটা বেরিয়ে আসে। মস্তিষ্ক দখল করে নিতে চায়। আমার উন্মত্ত্বতা প্রকাশ পায়। বড্ড অসহায় লাগে তখন।

সবার উপরের তাক থেকে লাফবয় প্লাস সাবানটা নিয়ে গায়ে সাবান লাগানো শুরু করলাম। আচ্ছা, বাইরে এতক্ষণে নিশ্চয় জেনি ঘুমিয়ে গেছে। নাকী স্বামীর জন্য জেগে বসে আছে বিছানায়। আমি শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম। স্বামীর জন্য জেগে বসে থাকবে! গশ! আমি দেখছি ভালোই চিন্তা করতে জানি!

গোসোল শেষে তোয়ালে পড়ে বের হয়ে আসলাম বাথরুম থেকে। বিছানার দিকে তাকালাম। খাটটা ফাঁকা, একপাশে শুধু জেনির নববধূ রঙ্গা শাড়িটা ভাজ করে ফেলে রাখা। আমি ঘরের চারদিকে নজর বোলালাম, নাহ এখানে তো নেই। নিশ্চয় বারান্দায় গেছে। এঘরের দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ। বারান্দা ছাড়া আর কোথায় যাবে ও?

আমাদের বাড়ির এই আমার ঘরের বারান্দাটা মোটামোটি ভালোই সুন্দর। সুন্দর বলতে যেনতেন সুন্দর না, ভালো সুন্দর। এই বারান্দায় জোছনা রাতে জোছনা পড়ে, গরমের দিনে দখিণা হাওয়া ঢোকে, আর দিনের বেলায় চাল ছিটিয়ে দিলে মাঝেমধ্যে চড়ুই পাখিরাও উড়ে এসে বসে কিচিরমিচির শুরু করে। তার উপর, এখানে এসে দাঁড়ালে বাড়ির পেছনের পাঁচিলে ঘেরা বাগানটা দেখা যায়। চাঁদের নীল আলোয় অথবা দিনের বেলায় অথবা সবসময়ের জন্যই, তাই জায়গাটা চমৎকার। আমি বেশিরভাগ সময় এই বারান্দাতেই বসে কাটাই। বাবা একটা দোলনা সেট করে দিয়েছে বারান্দায়, ওখানেই বসে বসে মন শান্ত রাখার বইগুলো পড়ি। মাঝে মাঝে চা খাই। ঘরবন্দি জীবনটা একেবারে খারাপও কাটে না। চলে যায়, মোটামোটি ভালোভাবেই কেটে যায় দিনগুলো।

একটা টিশার্ট আর থ্রিকোয়ার্টার পড়ে বারান্দায় চলে আসলাম। ঠিকই ভেবেছিলাম। জেনি এখানেই আছে। নীল রং এর ম্যাচিং সালোয়ার-কামিজ পড়েছে। গায়ের ওড়নাটা কালো রং এর, লাল বর্ডার করা। আমি কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলাম,মানিয়েছে খুব ড্রেসাপটা ওকে। সহসা মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম। থাকুক কিছুক্ষণ একা মেয়েটা। প্রতি চার ঘন্টায় একবার করে ঔষধ নিতে হয় আমার। আমি ঘরের ভেতরে চলে আসলাম।

“ এইযে…”

কানে একটা একটা মিহি কন্ঠস্বর টোকা দিল। আহ! জেনির গলা তো জোস! গান…গান জানে নাকি মেয়েটা? আমি পেছনে মুড়ে আবার বারন্দার মাঝে এসে দাঁড়ালাম। জেনির দোলনায় চুপ করে বসে আছে। জোছনা রং এর আভা ওর মুখের উপর এসে পড়ছে। পরীদের মতো দেখাচ্ছে ওকে!

ভালবাসার দুঃখের ছোট গল্প

আমি আস্তে করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। অনেকক্ষণ কোনো কথা হোলো না। শেষে আমিই ওর দিকে তাকিয়ে উশখুশ করে বললাম, “ ডাকলে যে?”। ও কোনো জবাব না দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। অনেকক্ষণ , বেশ অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকল ও।ব্যাপারটা অস্বস্তিকর, কিন্তু আশ্চর্য তাও আমার তেমন খারাপ লাগছে না!

“ আচ্ছা আপনার বয়স কত?”

বয়স কত! এটা কী ধরণের প্রশ্ন! আমি আমতা আমতা করে বললাম, “ বত্রিশ!”। ও কিছুটা বিস্মিত গলায় বলল, “ আপনাকে দেখে তো এত বয়স্ক মনে হয় না!”। কিছু বলতে যাচ্ছিলাম আমি, ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম। কিছুটা রিলিফও পেলাম। তাহলে, অবশেষে মেয়েটার ঠোঁটে কথা ফুটছে।

“ উম, আপনি আসলে দেখতে সুন্দর। আসলেই সুন্দর।”, জেনি বিস্মিত গলায় বলল। আমি আমতা আমতা করে করে বললাম, “ তুমিও।” জেনি মুচকি হাসি হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে।
“ আপনার মনটা কিন্তু অতটা ভালো না। আমি অত্যন্ত কাওকে বলতে শুনিনি, বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই বলে শাড়ি খুলো! আশ্চর্য মানুষ আপনি। এভাবে বিনয়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে আমি কাওকে দেখিনি। বই আর মুভিতে অবশ্য এরকম ক্যারেক্টার দেখেছি, কিন্তু বাস্তবে কখনও দেখিনি। এটাই কী আপনার মানসিক রোগ? “

আমি স্থির চোখে তাকিয়ে থাকলাম সামনে বসা মেয়েটার দিকে। ভালো বুদ্ধি, বেশ ভালোই বুদ্ধি মেয়েটার! কথা শুনে মনেই হচ্ছেনা কয়দিন আগে এবর্শোনের ভেতর দিয়ে গেছে।

চলবে…..

প্রেম

পর্ব ১

আরো পড়ুন,

রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প

মজার হাসির ছোট গল্প

Share This Article