Bengali Short Moral Stories| বাংলা শিক্ষণীয় ছোট গল্প | Read Online Free

নীপা বলল-- তুমি প্যারাটিচার? সামান্য ওয়ান রুমের ফ্ল্যাটটাও তোমার নিজের নয়?এসব কথা তুমি আগে কেন বলোনি?

Samaresh Halder
10 Min Read

Bengali Short Moral Stories


ভালোবাসা
– ছবি ব্যানার্জী

নীপা সদ্য এক কাপড়ে বিয়ে করে এসে সৌরভের ওয়ানরুমের ফ্ল্যাটটা দেখে প্রথমেই একটা জোর ধাক্কা খেল। ডাইনিংএ সোফাসেটের বদলে একটা তক্তপোশ, তোষক আর নতুন চাদর দিয়ে টানটান করে পাতা।তক্তপোশের পাশে দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার।একটা ছোটো সস্তা ডাইনিং টেবিল দুজনের বসার মতো।নীপা পায়ে পায়ে ঘরে এসে দেখল সেগুন খাটের সাত ছয় একটা খাট,আলমারি আর একটা ড্রেসিং টেবিল।সবকটাই সদ্য কেনা আর দামী।

সৌরভ বলল–নীপা আগে চেঞ্জ করে নাও। আলমারিতে তোমার কিছু পোশাক কিনে রেখেছি।কাল তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা লিস্ট করে দিও।আমি ততক্ষণে একটু চা করে আনি।আজ রাতের খাবারটা অনলাইনে আনাবো।

নীপা বলল–কেন তোমার রান্নার মাসী নেই?–না, রান্নার মাসী,কাজের মাসী কেউ নেই।ওদের কাজে রাখার মতো যথেষ্ট টাকা আমি রোজগার করিনা।নীপা বলল–তুমি তো একটা হাই স্কুলের টিচার।একটা বাইরের কাজের মাসী রাখার ও তোমার ক্ষমতা নেই?

আরো পড়ুন,

Bengali Short Stories For Adults

সাহিত্যের সেরা বাংলা ছোট গল্প

সৌরভ বলল–আমি হাই স্কুলের ইংরাজির আংশিক শিক্ষক।ওই চাকরি আর টিউশন মিলিয়ে মাসে আঠাশ হাজার টাকা মতো আমার রোজগার।তার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা এই ফ্ল্যাটের ভাড়া।ওই টাকার মধ্যেই কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হয়।টিউশনি করে আরো কিছুটা রোজগার বাড়াতেই পারতাম।কিন্তু আমাকে চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য কিছুটা সময় নিজের জন্যে রাখতে হয়।

নীপা বলল– তুমি প্যারাটিচার? সামান্য ওয়ান রুমের ফ্ল্যাটটাও তোমার নিজের নয়?এসব কথা তুমি আগে কেন বলোনি?

সৌরভ বলল– তুমি আমাকে বলার কোনো সুযোগ দাওনি।একবার ভেবে দ্যাখো নীপা তোমার আমার আলাপ পরিচয় হয়েছিল এক অটোতে একসংগে তোমার কলেজ আর আমার স্কুলে যাওয়ার পথে।কয়েকদিন টুকটাক কথা বলার পর তুমি নিজে উপযাচক হয়ে আলাপটা ঘনিষ্ট করেছিলে। ওই সামান্য সময়টুকু তোমার সান্নিধ্যের জন্য মনে মনে উন্মুখ হয়ে থাকলেও কখনও নিজের সীমা অতিক্রম করিনি।

তুমি আমার সংগে সিনেমা যেতে চাইলে আমি অ্যাভয়েড করেছি। তিন চারবার তোমার প্রচন্ড আবদারে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গেছি।তুমি বারবার আমার মা বাবার কথা জানতে চেয়েছিলে।আমি বলেছি খুব ছোটোবেলায় আমি বাবা মাকে হারিয়ে মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছি।মা বাবার স্মৃতি আমার কাছে ধূসর। তুমি সেদিন চোখ ছলছল করে আমাকে সহমর্মীতা দেখিয়েছিলে।তোমার সংবেদনশীল মন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমার অবস্থান ও অস্থায়ী চাকরির কথা বারবার তোমাকে বলতে চেয়েছি।কিন্তু তুমি শুনতে চাওনি।আরো মনে করে দ্যাখো তুমি তোমার ভালোবাসার কথা বারবার বললেও আমি কিন্তু একবার ও বলিনি।

নীপা বলল–কিন্তু তুমি তো আমাকে দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে।খাবারের বিল বেশ মোটা অঙ্কের থাকত।নিজে এত কৃচ্ছসাধন করে কি করে খাওয়াতে?

সৌরভ বলল–নীপা ভালো রেস্টুরেন্টে সবাই তো মাঝে মধ্যে খেতে যায়।আর সেটুকু সাধ্য আমার বরাবর থাকবে।আমি তোমার আকাশচুম্বি চাহিদা মেটাতে না পারলেও ছোটো ছোটো চাহিদা খুশি মনেই মেটাতে পারব।দৈনন্দিন জীবনে আমি আয়ের সংগে সঙ্গতি রেখে ব্যয় করি।আমি কৃচ্ছসাধন করিনা।আমি মিতব্যয়ী।আমার খুব ছোটবেলা থেকে পরিশ্রম করা অভ্যেস ছিল।তাই একার জন্য অহেতুক কোনো কাজের মাসী রাখার দরকার মনে করিনি।

— নীপা তুমিই মাত্র চারদিন আগে রেস্টুরেন্টে বসে আমাকে প্রপোজ করেছিলে।আমি সেদিন ও তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম আমার সুন্দর চেহারা আর স্থায়ী চাকরি করি ভেবে তুমি সাময়িক আবেগে প্রপোজ করছ।সবটা জানলে তোমার এই মোহ কেটে যাবে।

Best Short Stories In Bengali

Loading...

তুমি তখন উন্মুখ হয়ে বললে–তুমি কিছু বলবে না? সৌরভ ভালোবাসা কি হিসেব কষে হয়?আমি বললাম–আমাকে সাতদিন সময় দাও।তার আগে আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে।তুমি বললে–আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু মুখে উচ্চারণ করতে তোমার এত দ্বিধা কেন সৌরভ?বললাম-তোমার ভালো চাই বলে।

সৌরভ একটু থেমে বলল–তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে নীপা তুমি প্রপোজ করার ঠিক চারদিন পর তুমি উদভ্রান্তের মতো রেস্টুরেন্টে আমাকে ডেকে বললে–সৌরভ তুমি আমার দায়িত্ব নিতে পারবে?আমি বললাম–কি হয়েছে নীপা?তুমি বললে–বাবা আমার বিয়ে এক জায়গায় প্রায় ঠিক করে ফেলেছে।ওরা বলেছে বিয়ের পর ওরা লেখাপড়া আর চাকরি করাতে কোনো আপত্তি করবে না।

–সৌরভ আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।আমরা কালকেই বিয়ে করব।সৌরভ বলল–কিন্তু নীপা আমার চাকরিটা তো–তুমি আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে বললে–আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।তুমি স্পষ্ট করে বলো তুমি আমার দায়িত্ব নিতে পারবে কি পারবে না?

–সৌরভ বলল–সেই সময় তোমার কথাটা আমাকে সাহস দিয়েছিল।সত্যিই তো ভালোবাসা কি হিসেব কষে হয়?আমি জোর গলায় বললাম নীপা তোমার লেখাপড়া,সুখ দুঃখ,ভরণ পোষণের সব দায়িত্ব আমি স্বচ্ছন্দে নিতে পারব।আমাকে শুধু একটা দিন সময় দাও।

নীপা ওই একদিনে আমি খাট,আলমারি ড্রেসিংটেবিল দিয়ে ঘরটা সাজিয়ে রেখেছিলাম।আমার ঘরে শুধু একটা তক্তপোশ একটা আলনা আর চেয়ার টেবিল ছাড়া কিছু ছিল না। মামা মামির কাছে আমি কৃতজ্ঞ।তারা আমাকে দিয়ে সংসারের অনেক কাজ করিয়ে নিলেও গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত পড়িয়েছেন।আর আমার মায়ের রেখে যাওয়া গয়নাগুলো দিয়েছেন।যেটা মামি ইচ্ছে করলে আমাকে না দিতেই পারত।এম এ পড়ার খরচ আমি টিউশনি করে চালিয়েছি।

–আমি ভেবেছিলাম তুমি সবটা জেনেই আমাকে বিয়ে করেছো। নীপা আমি একবারই এস এস সিতে বসে ভাইভাতে আটকে গেছিলাম।আবারও শুধু স্কুলেই নয়,অন্যান্য চাকরিতে বসার ও প্রস্তুতি নিচ্ছি।আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে।কিন্তু প্রস্তুতি নিলেই যে চাকরি পাব এমন নিশ্চয়তাও কিন্তু নেই।আমি এই সব কিছুই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।

Short Bengali Story With Moral

–নীপা আমি বুঝতে পারছি তোমার আশা ভঙ্গ আর মোহভঙ্গ দুটোই হয়েছে।এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ভালোবাসাও হিসেব কষেই হয়।আমার সব কথা আগে জানলে তোমাকে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হত না। চিন্তা কোরোনা এই ভুলটা ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে।তোমার চেঞ্জ করার দরকার নেই।তুমি বরং তোমাদের বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দাও তুমি বান্ধবীর বাড়িতে আছো ফিরতে একটু দেরি হবে।বিয়েটা মন্দিরে হয়েছে।মন্দিরে প্রতিদিন বিশ পঁচিশটা বিয়ে হয়েই থাকে।কোনো সাক্ষী টাক্ষী থাকে না।তোমার পরিচিত কেউ বিয়েটা দেখেই নি।তুমি সিঁথির সিঁদুরটা বরং ধুয়ে এসো।বাড়ি ফিরে তোমার বাবা মার নির্বাচিত ছেলের সংগে বিয়ে করে সুখি হও।বিশ্বাস করো এটা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।তোমাকে আমি দোষারোপ ও করব না

নীপা বলল–কিন্তু তোমার কষ্ট করে সঞ্চিত প্রচুর টাকা ফার্ণিচার কিনতে শুধু শুধু খরচ হয়ে গেল যে?

সৌরভ বলল–সঞ্চয় তো মানুষ প্রয়োজনেই খরচ করে নীপা।হয়তো এখন প্রয়োজন ছিলনা।কিন্তু ভবিষ্যতে তো প্রয়োজন হবে।ব্যাপারটা আমার কাছে একই।এটা নিয়ে প্লিজ তুমি ভেবো না।হয়তো আমার সবটুকু জেনেই ভবিষ্যতে কেউ সত্যিকারের ভালোবাসার হাতটা একদিন আমার দিকে বাড়িয়ে দেবে।আমি বিশ্বাস করি সৎ পরিশ্রম আর ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই।আমার মতো হাজার হাজার ছেলে মেয়ে তো এভাবেই জীবনকে ভালোবেসে লড়াই করেই বেঁচে থাকে।

আরো পড়ুন,

মজার হাসির ছোট গল্প

ঠাকুরমার ঝুলি রাক্ষসের গল্প নীলকমল

নীপা ফোনটা বের করে বাড়িতে মাকে ফোন করে বলল–মা আমি দুদিন আমার বান্ধবীর বাড়িতে থাকব। ও প্রান্তের উত্তরে বলল–আরে বাবা মণিকাদের বাড়ি।তুমি তো ওকে চেনো।আমি তো কয়েকবার থেকেছি।মণিকা ও আমাদের বাড়ি অনেকবার থেকেছে।ভেবোনা আমি ফোন করব।

ফোনটা কেটে নীপা মণিকাকে ফোন করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে ম্যানেজ করতে বলল।

সৌরভ নীপাকে ফোন করতে দেখে রান্নাঘরে চলে গেল।একটু পরে একটা প্লেটে দুটো রসোগোল্লা আর একটা ডিমের ওমলেট এনে বলল–নীপা তোমার নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে?এটা ধীরেসুস্থে খেয়ে নাও।তোমার বাড়ি ফিরতে দেরি হবে জানিয়ে দিয়েছো তো?আর ঠান্ডা চা টা খেতে হবে না। তোমার খাওয়া হলে আমি তোমার বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় ছেড়ে আসব।

নীপা বলল– সৌরভ আমাদের হাতে মাত্র দুটো দিন সময় আছে। আমি বাড়িতে ফোন করে বলেছি দুদিন আমি বন্ধুর বাড়িতে থাকব।তার মধ্যে আমাদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজটা সেরে ফেলতে হবে।না হলে মন্দিরে বিয়েকে পাত্তা না দিয়ে আমার বাবা ঘেঁটি ধরে বিয়ের পিঁড়িতে

বসিয়ে দেবে।

সৌরভ বলল–নীপা না জেনে আবেগের বশে ভুল করাটা অন্যায় নয়।কিন্তু জেনেশুনে তোমাকে আমি দ্বিতীয়বার ভুল করতে দেব না।একবার রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করলে আইনি ডিভোর্স পাওয়া অনেক হাঙ্গামার ব্যাপার।নীপা বলল–আমি এখানে এসে প্রথমটাই হতাশ হয়েছিলাম ঠিকই।কিন্তু এখন আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।—কিন্তু আমার চাকরি পেতে যদি দেরি হয়,কিংবা যদি স্থায়ী চাকরি না পাই?

Bengali Short Moral Stories PDF

নীপা বলল–তুমি আমাকে একটা বিরাট প্রতিশ্রুতি দিয়েছো।আমার সুখ দুঃখ ভরণপোষণের সব দায়িত্ব তুমি স্বচ্ছন্দে নিতে পারো।এতবড় কথাটা আমি কি করে ভুলে গেলাম বলো তো?দরকার হলে আমি লেখাপড়ার সংগে সংগে টিউশনি করব।আমরা লড়াইটা দুজনে একসংগে মিলে করব।যে মুহূর্তে তুমি একটুও রাগ না করে এই বিয়ে থেকে মুক্তির পথ বলে দিলে ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে তোমার প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান আমার চতুর্গুণ বেড়ে গেল।তবে আমার একটা শর্ত আছে।

সৌরভ বলল–কি শর্ত শুনি।

প্রথম শর্ত হল–তুমি আমাকে বলবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।যেটা তুমি আজ পর্যন্ত কোনোদিন মুখে উচ্চারণ করোনি।সৌরভ বলল–অবশ্যই বলব।পরশু রেজিস্ট্রি করার পর বলব।আজ আর কাল পুরো দুটো দিন তুমি মাথা ঠান্ডা করে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ভাবো।বন্ধুকে সবটা খুলে বলো।

নীপা বলল–তুমি আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছ? এখনও আমাকে বিশ্বাস করছ না?তসৌরভ বলল–নীপা তুমি একজন এডাল্ট মেয়ে।কয়েক মাস পর তোমার বি এ ফাইন্যাল পরীক্ষা।তোমাকে আমি একটুও অবিশ্বাস করছি না।তবুও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিও না। নীপা আগে আমি তোমার একজন হিতৈষী বন্ধু। দুদিন পর রেজিস্ট্রি বিয়ের পর না হয় স্বামী হব।সেদিন আমি গোলাপ ফুল আর আমার সাধ্যমতো উপহার দিয়ে আমার মনের কথা মুখে উচ্চারণ করব।ওই বিশেষ দিনে তুমি নতুন বেনারসী পরবে।আর আমার মায়ের রেখে যাওয়া কিছু গয়না পরিয়ে আমি নিজে তোমাকে সাজিয়ে দেব।এটা কিন্তু আমার তাৎক্ষণিক ভাবনা নয়।এটা আমি অনেক আগেই ভেবে রেখেছিলাম।

আরো পড়ুন,

12+Best Bengali Short Stories Online Reading & Download

টুকরো প্রেমের অনুগল্প

Share This Article