Best Bengali Short Story
প্রতিবেশী
– সুদীপ রায়
……………………
মালপত্র, বৌ, বাচ্চা নিয়ে বিকাশ যখন শিমুলতলায় নতুন বাড়িতে এসে পৌঁছুল তখন বেলা দুটো। কোলকাতা থেকে ভোর ছটায় রওয়ানা হয়েছিল। রাস্তায় একটা ধাবায় মধ্যাহ্নভোজ সেরেছে। বিকাশ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। নতুন ট্রান্সফার হয়ে শিমুলতলায় এল। বাড়ি নিয়েছে নতুন পাড়ায়। দুসপ্তাহ আগেই এখানে এসে বাড়ি ঠিক করে রেখে গিয়েছিল। সুন্দর কলোনী, শুধু একটু নির্জন এই যা। বাড়িওলা দেওঘরে থাকেন। ব্যাঙ্কের দুজন পিয়ন এসে মালপত্র নামিয়ে বাড়ির ভেতরে সেট করে দিয়ে গেল। আজ রাতে ভাতে ভাত। কাল রবিবার। বাড়িঘর একটু গুছিয়ে নেওয়া যাবে। কালও খালি ডিমের ঝোল ভাত। পরশু থেকে হেঁসেল ঠিকঠাক চালু হবে।
আসার পরদিনই দোতলা থেকে এক ভদ্রলোক নিচে নেমে এসে আলাপ করলেন। নাম দীপক সরকার। শিমুলতলায় চালের কারবার। একাই থাকেন । গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে থাকে। অমায়িক ভদ্রলোক। নিজেই রান্নাবান্না করেন। দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেবেন কিনা জিজ্ঞেস করলেন। বিকাশ হেসে বলল তার দরকার নেই, রান্নার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। দীপক বাবু সেদিনই দু সপ্তাহের জন্য দেশের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। অনুরোধ করে গেলেন দোতলার দিকটা একটু নজর রাখতে।
আরো পড়ুন, মজার হাসির ছোট গল্প
একটি মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প 2023
বিকেলে বৌ, ছেলেকে নিয়ে একবার চারপাশটা দেখার জন্য বেরুল বিকাশ। কিছুদুর যেতেই উলটোদিক থেকে আসা এক দম্পতির সঙ্গে দেখা হল।
‘নমস্কার, এদিকে নতুন মনে হচ্ছে।‘ ভদ্রলোক উৎসুক চোখে বিকাশ, অপর্ণাকে জিজ্ঞেস করলেন।
‘হ্যাঁ, গতকালই এ শহরে এসেছি। নমস্কার, আমি বিকাশ দত্ত, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।‘
‘আমি অপরেশ সেন, রিটায়ার্ড গভারনমেন্ট অফিসার আর ইনি আমার স্ত্রী নন্দিতা।‘
বিকাশ অপর্ণার সঙ্গে ওনাদের আলাপ করিয়ে দিল।
পরে আরো দুদিন ওঁদের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হল। একটু অন্তরঙ্গতাও হয়ে গেলো। অপরেশ, নন্দিতারা নিঃসন্তান, শিমুলতলার ভটচাজপাড়ার পুরনো বাসিন্দা। রোজ ইভিনিং ওয়াক করা ওনাদের অনেকদিনের অভ্যেস।
সপ্তাহ দুয়েক পরে বিকাশ আর অপর্ণা যখন মোটামুটি সেটলড হয়ে গেল তখন ঠিক করল দোতলার দীপক সরকার আর অপরেশবাবুদের একদিন রাতে ডীনারে নেমন্তন্ন করে আলাপটা একটু ঘনিষ্ঠ করে নেওয়া ঠিক হবে। নতুন জায়গা। পুরনো বাসিন্দাদের সঙ্গে চেনাশোনা রাখা ভাল।
ঠিক হলো আগামী শণিবার রাতে ওনারা দুজনেই আসবেন ডীনারে। দীপকবাবু ওইদিনই রাত এগারোটার বাসে ফিরে যাবেন গ্রামের বাড়িতে।
শণিবার সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ অপরেশ আর নন্দিতা সেন বিকাশের বাড়িতে হাজির হলেন। চায়ের সঙ্গে টা দিয়ে আড্ডা শুরু হল। দীপকবাবুর তখনো দেখা নেই। আধঘন্টা পরে দীপকের ফোন এল। চালের আড়তে কাজে আটকে গেছেন। একটু দেরি হবে। ক্ষমা চেয়ে নিলেন উনি বিকাশদের অসুবিধেয় ফেলার জন্য।
Famous Bengali Short Stories
আধঘন্টা পরে আবার ফোন, দীপকের রাস্তায় গাড়ি ব্রেকডাউন।
‘আমার কোনো ঠিক নেই স্যার কখন পৌঁছুব। আপনি বরং আপনার অন্য গেস্টকে নিয়ে ডীনার করে ফেলুন। আমাকে আজ মাফ করে দিন।‘
‘তা হয় না। টেক ইট ইজি। আপনি আসুন আপনার জন্য আমি আর অপর্ণা অপেক্ষে করব। আমার অন্য গেস্ট দুজন যদি অপেক্ষা করতে পারেন ভাল, তা নাহলে ওনাদের ছেড়ে দেব।‘
ঠিক নটার সময়ে অপর্ণা ডীনার সারভ করে দিল অপরেশ আর নন্দিতাকে। সাড়ে নটার সময়ে ওঠার আগে অপরেশ জিজ্ঞেস করল ‘দীপকবাবু থাকেন কোথায়, কী করেন’
‘উনি চালের কারবারি। থাকেন আমাদের এই বাড়িরই দোতলায়। একাই থাকেন। বৌ, বাচ্চা পাশের গ্রামের বাড়িতে থাকে।‘
বিকাশের কথা শুনে অপরেশ সেন বেশ অবাক হয়ে গেলেন, বললেন
Best Bengali Short Stories PDF
‘কী বললেন আপনার এই বাড়ির দোতলায় থাকেন ? সে কী ? এ বাড়ির দোতলায় তো বাচ্চু সরকার থাকত, হ্যাঁ … বাচ্চু তো চালের কারবারই করত। ভালো নাম জানি না। আমরা ওকে বাচ্চু নামেই জানতাম। তা বাচ্চু তো আজ তিন মাস হল রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। তার পরে যতদূর জানি, এ বাড়ির দোতলায় নতুন কোনো ভাড়াটে আসে নি। কিরকম দেখতে বলুন তো ?‘
‘বেঁটে খাটো, এক মুখ দাড়ি, ডাণচোখের নিচে একটা জড়ুল।‘
‘আরে কী সব্বোনাশ। এ তো বাচ্চুই। কিন্তু তা কী করে সম্ভব। সাবধানে থাকবেন মশায়।‘
অপরেশ আর নন্দিতা একরকম যেন পালিয়েই বাঁচলেন।
Short Emotional Story In Bengali
অপরেশ, নন্দিতা চলে যেতেই বাড়ির বাইরে একটা জীপ এসে দাঁড়াল। জীপ থেকে নেমে এল দীপক সরকার।
‘দেরি করে ফেললাম স্যার। খুব দুঃখিত। আমাদের প্রোফেশনটাই এমন। চলুন খাওয়া সেরে নিই। আমার বাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।‘
বিকাশ কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। কিন্তু এঁকে দেখে মোটেই ভৌতিক কেউ মনে হচ্ছে না।
হুড়োহুড়ি করে খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে যাবার আগে দীপক সরকার জিজ্ঞেস করলেন
‘আপনি আজ আর কাকে ডেকেছিলেন স্যার ?”
‘ভটচাজপাড়ার অপরেশ সেন আর তাঁর স্ত্রী নন্দিতা সেনকে। অপরেশবাবুকে হয়তো আপনি চিনবেন। রিটায়ারড সরকারি অফিসার।‘
বিকাশের কথা শুনে দীপকবাবু হাঁ হয়ে গেলেন, বললেন
‘সে কী, তা কী করে সম্ভব ? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো স্যার ? ওনারা দুজনে তো গত বছর উত্তরাখণ্ডে ভুমিকম্পে মারা গেছেন। সেই দুর্ঘটনার সময়ে তীর্থযাত্রায় ওনারা কেদারনাথে ছিলেন।সাবধানে থাকবেন স্যার। আমি চলি।‘
আরো পড়ুন,