বাংলা সেরা ছোট গল্প অনলাইন (ছদ্মনাম)| Bengali Short Story Online 2024

sudiproy877
5 Min Read

‘যাহা রহস্যে ঘেরা,যাহা গোপন: তাহাই নাকি সুন্দর….অনাচ্ছাদিতের বা অনাবৃতের প্রতি আসক্তি যায় কমে I’
জনপ্রিয় প্রবীণ লেখক, মৃগাঙ্ক সেন’এর ইন্টারভিউ’টা কভার করে এখন বাড়ির পথে; প্রতিশ্রুতিশীল-কর্মঠ, তরুণী সাংবাদিক, বিদিপ্তা ঘোষ।

বাংলা সেরা ছোট গল্প অনলাইন


কর্মজীবন ছাড়াও মৃগাঙ্ক সেনের ব্যক্তিগত জীবনে চলার পথে- তাঁর ওঠানামা,আনন্দ-বেদনা, সাফল্য ও নিরাশাগুলি বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রশ্ন করে উন্মোচন করতে পেরেছে মেয়েটি । সাক্ষাত্‍কার পর্ব চলাকালীন বিদিপ্তার হৃদয়ে খেলা করছিল আনন্দের এক অদম্য উচ্ছ্বাস। নিজের প্রিয় লেখকের সাথে এত কাছে থেকে বার্তা বিনিময় করার অভিলাষা ছিল তার বহুদিনের।
‘কোনো ব্যর্থ প্রেমিকের মন-ভাঙার যন্ত্রণা হোক, বা শিশুমনের অলীক কল্পনা,
প্রতিহিংসার অনলপিণ্ড হোক, বা এক আকাশ
বারিসিক্ত ত্যাগ।’ -মানব মনে অবস্থিত চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলির চিত্রণে, মৃগাঙ্কের কলম এককথায় অদ্বিতীয় । তাইতো এখনও তাঁর জন্য যেকোনো আবহে বরাদ্দ করা থাকে পাঠকমহলের বুকভরা অনুরাগ। তাঁর সৃষ্টি অবলম্বন করে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুটি সিনেমা সাড়া ফেলেছে সর্বত্র । সেই সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তরের পালা সম্পন্ন করে ইন্টারভিউ’টা সংক্ষিপ্ত করেছিলো, সাংবাদিক বিদিপ্তা ঘোষ ।
বিদায় নেওয়ার আগে প্রিয় লেখক মহাশয়ের চরণ স্পর্শ করে শ্রদ্ধা দেখিয়েছিলো মেয়েটি। সাথে-সাথেই তার মাথায় হাত রেখে স্নেহের আশিস্ দিয়েছিলেন প্রবীণ মানুষটি।

আরো পড়ুন, একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প

অনেক কথাই হলো, তবুও অতলে চাপা পড়ে রইলো বেশ কিছু কথা। এদিক-ওদিক শোনা যায় তাঁর যৌবনের কিছু টুকরো অস্পষ্ট প্রণয়বিয়োগের খবরাখবর, যা তিনি সযত্নে গোপন রেখেছেন আজও। কৌতূহলী বিদিপ্তা নানাবিধ প্রকারে প্রচেষ্টা করেও লেখকের সম্পর্কে যথার্থ তথ্য উন্মোচন করতে পারেনি আজ। তাঁর জীবনের বেশকিছু অধ্যায়,তাঁর ছদ্মনামের মতই চেনা অচেনার আলো আঁধারে ঘেরা।


‘পানী‘ ছদ্মনামে নিজের অধিকাংশ লেখা প্রকাশ করেছেন লেখক মশাই।
মুচকি হেসে বিদিপ্তা প্রশ্ন করেছিলো:
-“আচ্ছা ! ‘পানী’ অর্থাৎ আমরা অনেকেই পান করার যোগ্য বা হয়তো ওই সংক্রান্ত কিছু বুঝি…অন্তত বানান দেখেতো তাই’ই মনে হয়। তার কারণ,‘পানীয়‘ শব্দের অস্তিত্ব বাংলা অভিধানে আছে। ‘পানির’ অর্থ বাংলা ভাষায় থাকলেও সেভাবে ‘পানী’ শব্দের তেমন সুস্পষ্ট অর্থ আছে বলে আমার জানা নেই। যদিও বাংলা ভোকাবুলারি’তে, তেমন অগাধ জ্ঞান আমার নেই.. তাই যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।”
কপালে ভাঁজ ফেলে সদাহাস্য মুখে উত্তর এসেছিলো:
-“এটি নিতান্তই মনের খেয়ালখুশি আর কি!”

বাংলা শ্রেষ্ঠ ছোট গল্প


বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে টিভির পর্দায়, আগামীকালের টেলিকাস্টের ব্যাপারে এডিটরের সাথে মুঠোফোনে কথোপকথন সারলো বিদিপ্তা।
রাত এগারোটা ।
আপাতত মা-বাবার সাথে ডিনার এনজয় করে, বেডরুমের বিছানায় ক্লান্ত শরীরটাকে আরাম দিচ্ছে মেয়েটি। তার মস্তিষ্কে ঘোরাঘুরি করছে বিকেলের স্মরণীয় মুহূর্তগুলি।
-“কিরে বললিনা’তো? তোর ফেভারিট মানুষটি সম্পর্কে। আজ মৃগাঙ্ক সেনের সাথে তোর অফিশিয়াল মিট ছিলোনা !”
মাকে জড়িয়ে মনের উদ্দীপনা প্রকাশ করলো মেয়েটি । তার ঘরের শেল্ফে উঁকি দিচ্ছিলো, লেখক মৃগাঙ্কের লেখা কিছু বই।
সমস্ত ঘটনাবলী মায়ের সাথে ভাগ করে নিলো বিদিপ্তা।
মায়ের কোলে মাথা রেখে মেয়েটি বলে উঠলো:
“সবটাই-তো শুনলে । একটা না পাওয়া যেনো রয়েই গেলো জানো !.. না জানি কেনো মনে হলো, ওনার হাসিমুখের নেপথ্যে আছে কোনো বেদনা..যার হদিশ পেলামনা কিছুতেই। কোনো বৈবাহিক বাঁধনে তিনি নিজেকে জড়াননি, এমনকি তার কারণটিও স্পষ্ট করলেন না। আর ওনার ছদ্মনামের বিষয়টাও এড়িয়ে গেলেন।”

আধুনিক ছোট গল্প


মেয়ের কোঁকড়ানো চুলে বিলি কাটতে-কাটতে বয়স্ক ভদ্রমহিলাটি বললেন:
-“জানিস মা ! প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে বিঁধে থাকে একটা পরাজয়ের যন্ত্রণা । যেটা তার একান্ত নিজের । সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, অনেকে আবার সেই বেদনাগুলিকে নিজের জমানো সম্পদ মনে করে আর তাই, ভালোবেসে সেগুলি গোপন করে রাখে। ভাবে সেগুলি তার সারাজীবনের অমূল্য সঞ্চয় ।”
মায়ের কথা শুনতে-শুনতে নির্বাক হয়ে দুচোখ বন্ধ করে বিদিপ্তা। ঘুমের দেশে রওনা দেওয়ার আগে তার শুধু একবার মনে হয়েছিলো, ‘এই কথাগুলি এর আগেও কোথাও যেনো সে শুনেছে.. বা হয়তো পড়েছে।’
ঘরের উজ্জ্বল আলোটা নিভিয়ে, ডিমলাইটের সুইচ অন করলেন বিদিপ্তার মা, নীপা দেবী।
মনটা তাঁর বড্ড উদাস। একটা প্রকাণ্ড অপরাধবোধ তাঁকে দীর্ঘকাল যাবৎ গিলে খাচ্ছে ।
প্রবীণ স্বনামধন্য লেখক মৃগাঙ্ক মশাই আজও তাঁর মনের মানুষের নামটা উল্টো করে নিজের ছদ্মনাম হিসাবে ব্যবহার করেন। যৌবনে নীপার সাথে কাটানো নিবিড় মুহূর্ত গুলি তাঁর কাছে আজও হৃদয়ের ধুকপুকানির মতো আপন।
নীপা দেবীর আজ চোখে অথৈ সমুদ্র..ঠোঁটে নির্লিপ্ত হাসি।
তার মনটা যেনো বলে উঠলো:
-“তুমি আমাকে নিষেধ করেছিলে নিজের সামনে আসতে.. কিন্তু আজ আমি এসেছি.. তুমি চিনতে পারনি। আমার তনয়ার চোখে দেখেছি, তোমায় সামনে থেকে আপাদমস্তক । তোমার স্বাভাবিক ক্ষোভ,রাগ, আক্ষেপ’গুলি ছেঁকে নিয়ে, পড়ে থাকা প্রেমটুকু চৈত্র শেষে মেখে নিলাম সর্বাঙ্গে ।”


পড়লেন গল্প : ‘ছদ্মনাম’

ছোট গল্প বাংলা (গন্তব্য)

ভালোবাসার ছোট গল্প (প্রেম)

Share This Article

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.