Ekti Misti Premer Choto Golpo – একটি মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প
2023
Loading...
একটি মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প
এক টুকরো সুখ
কলমে- অভিজিৎ
বুবাই ও মা বলে পড়ার ঘর থেকে এমন ভাবে চিৎকার করে উঠলো যে সুনন্দার হাতে গরম
চাটুর ছ্যাঁকাই লেগে গেলো।
চাটুর ছ্যাঁকাই লেগে গেলো।
আবার শুরু করেছে পড়তে বসে দুই ভাইবোনে ঝগড়া,
রাগে সুনন্দা রুটি ভাজার খুন্তি নিয়েই ছুটে যায় বুবাই আর তিন্নির পড়ার ঘরে।
গিয়েই খুন্তি দিয়েই দুজনকে দুঘা দিয়ে বলল,আবার তোরা পড়তে বসে ঝগড়া শুরু করেছিস,
তোদের না একশোবার না করেছি পড়তে বসে ঝগড়া করবি না। জানোয়ার, জীবনটাকে
একেবারে নরক করে দিলো।
একেবারে নরক করে দিলো।
বকবক করতে করতে সুনন্দা আবার রান্নাঘরে ফিরে যায়।
রানাঘরে ঢুকতেই দেওর হাক পারে বৌদি আমার খাবার হয়ে গেছে?
দুমিনিট দাঁড়াও ঠাকুরপো, আর একটা রুটি ভাজা বাকি আছে,তারপরই দিচ্ছি,
মিলি মানে সুনন্দার ননদ কলেজে যাবে, তাই ভাত খেতে চলে এসেছে।
সকাল ৮ টার মধ্যে নিখিলকে, মানে তার স্বামীকে খায়িয়ে অফিসে
পাঠিয়ে দিয়েছে।
পাঠিয়ে দিয়েছে।
ঘরে অসুস্থ শ্বশুর এরপর শ্বশুরেরটা করতে হবে।
এইতো সুনন্দার বারো বছরের সুখের জীবন।
জীবনটা একেবারে ভাজাভাজা হয়ে গেলো।
এর মধ্যে ছেলেমেয়ে দুটো যদি মানুষ হোত।
সারাদিন শুধু ঝগড়া আর নিজেদের মধ্যে মারামারি, এই নিয়েই চলছে সুনন্দার জীবন।
একেকসময় কান্নায় গলা বুজে আসে।
তবুও বুকে পাথর চাপা দিয়ে সুনন্দা এক ভাবে সংসার চালিয়ে যায়।
নিখিলই সংসারের বড় ছেলে। তাই নিখিলকেই সংসারের বেশী দায়ীত্ব সামলাতে হয়।
শ্বশুর মশাই অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুল টিচার, সামান্য পেনশন পায়, নিখিল
রাজ্য সরকারের সাস্থ্য দপ্তরের একজন সামান্য কেরানি।
রাজ্য সরকারের সাস্থ্য দপ্তরের একজন সামান্য কেরানি।
দেওর অনেক পড়াশুনা করেও চাকুরী পায়নি।তাই টিউশানি করে বাড়ীতেই বসে।একমাত্র ননদ
এম,এ,পড়ছে।
এম,এ,পড়ছে।
হাজার কষ্টের মধ্যেও নিখিল হাসি মুখে সব সামলে নিচ্ছে যে কি ভাবে তা ভেবেই
কূলকিনারা করতে পারেনা সুনন্দা।
কূলকিনারা করতে পারেনা সুনন্দা।
আজ বাবার ওষুধ, তো কাল মায়ের ডাক্তার, পরশু বোনের কলেজের মায়না।
তারপরদিন নিজের ছেলেমেয়ের বায়না,এই ভাবেই নিখিলের জীবন এগিয়ে চলে।
কোন সময় ভাইবোনের উপর কখনো রাগ করতে দেখেননি সুনন্দা।পরিবারই যেনো তার
ধ্যান জ্ঞান।
ধ্যান জ্ঞান।
সুনন্দা আর নিখিলের এক ছেলে আর এক মেয়ে।
মেয়ে বড়,বয়স দশ,ছেলে ছোট বয়স সাত।
কিন্তু সুনন্দা আর পেরে ওঠে না।
একঘেয়ে জীবন। সারাদিন সংসার ঠেলতে ঠেলতেই জীবন শেষ।
নিখিলের মুখের দিকে তাকিয়েই কোনদিন এই সংসার ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার চিন্তা করেনি
সুনন্দা।
সুনন্দা।
শ্বশুর শাশুড়ি দেওর ননদ সবাই নিখিলের উপর ভরসা করে। তাই শত কষ্ট হলেও সুনন্দা
মুখ বুজে সংসার সামলে যায়।
মুখ বুজে সংসার সামলে যায়।
বিয়ের পর মিষ্টি প্রেমের গল্প
Loading...
এহেন সুনন্দার কদিন ধরে খুব শুঁটকি মাছ খেতে ইচ্ছে করছে।আত্মাটা একবারে
ছুটে গেছে। কিন্ত কিভাবে খাবে, এই বাড়ীতে শুঁটকি মাছ
নিশিদ্ধ।
ছুটে গেছে। কিন্ত কিভাবে খাবে, এই বাড়ীতে শুঁটকি মাছ
নিশিদ্ধ।
এবাড়ীর কেউ শুঁটকি মাছ খাওয়াতো দূরে থাক, গন্ধ পর্যন্ত শুকতে
পারে না।
পারে না।
সুনন্দার মা বাবার দেশ ছিল ছিল ঢাকা,মায়ের কাছে জেনেছে ঢাকার মানুষেরা
শুঁটকিমাছ খায়না।
শুঁটকিমাছ খায়না।
মা এত সুন্দর শুঁটকিমাছ মাছ রান্না করতো, যে বিয়ের আগে সুনন্দা সে মায়ের হাতের
শুঁটকিমাছ দিয়ে পুরোটা ভাত খেয়ে উঠতো।
শুঁটকিমাছ দিয়ে পুরোটা ভাত খেয়ে উঠতো।
আরো পড়ুন,
কিন্তু বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ী এসে জানতে পারলো তার শ্বশুর শাশুড়ি ফরিদপুরের
লোক,আর ফরিদপুরের লোকেরা নাকি শুঁটকিমাছ খায় না।
লোক,আর ফরিদপুরের লোকেরা নাকি শুঁটকিমাছ খায় না।
ব্যাস সুনন্দার শুঁটকিমাছও খাওয়া একেবারে ঘুচে গেলো।
কিন্তু কদিন ধরে সুনন্দার ভীষণ শুঁটকিমাছ খেতে ইচ্ছে করছে।
সংসারে প্রতিদিনই রান্না হয় একেকজনের পছন্দের রান্না।
তাই সুনন্দার ইচ্ছে মত রান্না আর হয়ে ওঠে না।
সেদিন রাতের বেলা নিখিল ঘুমিয়ে পড়লে সুনন্দা মাকে ফোন করে।
সে মায়ের সঙ্গে অনেক কথা বলার পর,মাকে বলে, মা জানো আমার না খুব শুঁটকিমাছ খেতে
ইচ্ছে করছে।
ইচ্ছে করছে।
তোমার হাতের শুঁটকিমাছ কতদিন খাইনা।
এবার গেলে একদিন আমাকে একটু শুঁটকিমাছ রান্না করে খায়িও।
ও প্রান্ত থেকে মা বলছে, তুই আসিস, আমি তোকে শুঁটকি মাছ রান্না করে
খাওয়াবো।
খাওয়াবো।
কতদিনতো আসিসনা। একদিন আয়না।
আর যাবো! এই সংসার ঠেলতে ঠেলতেই জীবন শেষ।
কি করে যাই বল? তোমার দুই নাতি নাতনির পড়াশুনা, অসুস্থ শ্বশুর, ননদের
কলেজ,তোমার জামাইএর অফিস,এই করতে করতেই আমার দিন শেষ।
কলেজ,তোমার জামাইএর অফিস,এই করতে করতেই আমার দিন শেষ।
আর কি করে যাবো বল?
নিখিল চোখ বুজে শুয়ে ছিল।
সে তখনো ঘুমায়নি, সে শুয়ে শুয়ে সুনন্দার সব কথা গুলি শুনলো।
সত্যি সুনন্দার জন্য নিখিলের খুব কষ্ট হয়, কিন্তু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে
বৃদ্ধ বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে, ভাইবোনের মুখের দিকে তাকিয়ে সে কিছু করতে
পারেনা।
বৃদ্ধ বাবা মায়ের মুখের দিকে চেয়ে, ভাইবোনের মুখের দিকে তাকিয়ে সে কিছু করতে
পারেনা।
আর একটা মেয়ে যে এতটা ধৈর্য ধরে সংসার সামলাতে পারে, সুনন্দাকে না দেখলে বোঝা
যায় না।
যায় না।
যাইহোক সুনন্দার সব কথাগুলি নিখিল শুনে মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে।
ঠিকই ওদের বাড়ীতে কেউ শুঁটকিমাছ খায়না।
এমনকি রান্নার সময় যে গন্ধটা বেরহয় সেটাও কেউ সহ্য করতে পারেনা।
তাই পরেরদিন শনিবার।
নিখিলের অফিস ছুটি। সে বাজারে গিয়ে কিছুটা শুঁটকিমাছ কিনে এনে লুকিয়ে
রাখে।
রাখে।
আর একমাত্র রবিবারই সুনন্দা দেরী করে ঘুম থেকে ওঠে।
শুধু সুনন্দা নয়, রবিবারটা মোটামুটি সবাই একটু দেরী করেই ঘুম থেকে ওঠে।
ছুটিরদিন বলে।
ছুটিরদিন বলে।
নিখিল রান্নায় এক্সপার্ট। সব রকম রান্নাই করতে পারে।
তাই রবিবার খুব ভোরবেলা সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, সে চুপিচুপি রান্নাঘরে
ঢুকে বেশ জমিয়ে শুঁটকিমাছের তরকারিটা রান্না করে সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই একটা
গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ঢুকে বেশ জমিয়ে শুঁটকিমাছের তরকারিটা রান্না করে সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগেই একটা
গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
যথারীতি একটু বেলার দিকে আস্তে আস্তে সবাই ঘুম থেকে উঠে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে
পড়লো।
পড়লো।
সুনন্দাও রান্নাঘরে গিয়ে চা করে সবাইকে চা দিলো।
নিখিলকেও ডেকে সুনন্দা চা দেয়।
নিখিল চা খেয়ে বাজারে চলে গেলো।
বাজার থেকে নিখিল সবার পছন্দের কই মাছ নিয়ে এলো।
কিন্তু কইমাছ আবার সুনন্দা ভালো খায়না।
তাই কই মাছ দেখেই সুনন্দার মুখটা ভার হয়ে যায়।
সে মুখে নিখিলকে কিছু বললনা ঠিকই,কিন্ত মনটা তার খারাপ হয়ে গেলো বোঝা গেলো।
নিখিল মাছটা সুনন্দার হাতে দিয়ে সুনন্দাকে বলল, অনেকদিন তেলকই খাইনা, আজ বেশ
জমিয়ে একটু তেল কই রান্না কর।
জমিয়ে একটু তেল কই রান্না কর।
দুষ্টু মিষ্টি রোমান্টিক প্রেমের গল্প
সুনন্দা নিখিলের কথামত খুব সুন্দর করে তেলকই রান্না করলো।
রবিবার দুপুরে মোটামুটি সবাই একসঙ্গেই বসে খায়।
কিন্তু আজ নিখিল একটা কাজের অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছে করেই দেরী করলো খাওয়ার সময়টায়।
সে সুনন্দাকে বলল, সুনন্দা তুমি সবাইকে আজ খেতে দিয়ে আমার আর তোমার খাবারটা
আমাদের ঘরে নিয়ে এসো। আমারতো দেরী হচ্ছে,আজ না হয় তুমি আর আমি এক সঙ্গে
আমাদের ঘরে বসে খেয়ে নেবো।
আমাদের ঘরে নিয়ে এসো। আমারতো দেরী হচ্ছে,আজ না হয় তুমি আর আমি এক সঙ্গে
আমাদের ঘরে বসে খেয়ে নেবো।
সেই মত সবার খাওয়া হয়ে গেলে,সুনন্দা তার আর নিখিলের খাবার নিজেদের ঘরে
নিয়ে আসে।
নিয়ে আসে।
সুনন্দা যখন নিজেদের খাবার ঘরে আনতে ব্যস্ত,ঠিক সেই সময় নিখিল
শুঁটকিমাছের বাটিটা খাওয়ার জায়গার একপাশে ঢেকে রাখে।
শুঁটকিমাছের বাটিটা খাওয়ার জায়গার একপাশে ঢেকে রাখে।
সব কিছু নিয়ে আসার পর ওরা দুজনে খেতে বসলো।
নিখিল দেখলো একটা বাটিতে তাকে দুটি কইমাছ দিয়েছে।
সে সুনন্দাকে জিজ্ঞাসা করলো, একি তোমার মাছ কই,তুমি মাছ খাবেনা?
সুনন্দা বলল,না আমি কইমাছ ভালো খাইনা তুমি জানোনা।তুমি ভালো খাও, তাই তোমাকে
দুটো দিলাম।
দুটো দিলাম।
নিখিল এবার আস্তে করে শুঁটকিমাছের বাটিটা ঢাকা দেওয়া অবস্থায় সুনন্দার
সামনে রাখলো।
সামনে রাখলো।
সুনন্দা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি এটা?
নিখিল বলল,খুলেই দেখোনা,কি আছে।
সুনন্দা বাটির ঢাকাটা খুলতেই নাকে এলো সেই সুপরিচিত শুঁটকিমাছের গন্ধ।
সে অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ সেই বাটিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রান্না মাছটা দেখেই তার জীবে জল চলে এলো।
মুহুর্তে তার চোখদুটি আনন্দে চকচক করে উঠলো।
সে তার বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে নিখিলকে জিজ্ঞাসা করলো, এতুমি কোথায় পেলে?
কেনো তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন আমিই রান্না করেছি।
গতকালই আমি তোমার জন্য লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।
তুমি এত ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আমার জন্য শুঁটকিমাছ রান্না করেছো?
সুনন্দার চোখে এখনো ঘোর।
সুনন্দার চোখে এখনো ঘোর।
কেনো সু, তুমি যদি রোজ ভোরবেলা উঠে আমার অফিসের রান্না করে দিতে পারো,তাহলে আমি
কেনো একদিন তোমার পছন্দের রান্না করে খাওয়াতে পারবোনা ? তোমার মা ছাড়াও
তোমাকে আরেকজন তোমার প্রিয় মাছটা রান্না করে খাওয়াতে পারে, বুঝলে।
কেনো একদিন তোমার পছন্দের রান্না করে খাওয়াতে পারবোনা ? তোমার মা ছাড়াও
তোমাকে আরেকজন তোমার প্রিয় মাছটা রান্না করে খাওয়াতে পারে, বুঝলে।
আনন্দে সুনন্দার চোখে জল চলে আসে।
নিখিলের এই ভালোবাসায় সংসারের এই যাঁতাকলের সব যন্ত্রনা কয়েক মুহুর্তের জন্য
ভুলে যায় সুনন্দা।
ভুলে যায় সুনন্দা।
( সমাপ্ত)-
