বড়দের রোমান্টিক গল্প (অস্তমিত আলো) | Boroder Romantic Golpo

Samaresh Halder
8 Min Read

( প্রাপ্ত’মনস্কদের জন্য )

বড়দের রোমান্টিক গল্প

সুজয়ের সাথে নীলা’র আলাপচারিতা শুরু হয়েছিল, একদম অন্যরকম ভাবে I
সেদিন রাতে মেসবাড়ির ছাদে কিছুতেই স্থির রাখা যাচ্ছিলোনা সুজয়’কে I
সহসা হাত থেকে ললিপপ চলে যাওয়া,বাচ্চার মতোই ফুঁপিয়ে,কঁকিয়ে চোখের জল ফেলছিলো সে সর্বহারার মতো I সঙ্গী’সাথীরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারছিলোনা I
গোধূলি’লগ্নে শ্রেয়া’কে একটি পার্কে এক তৃতীয় ব্যক্তির সাথে অতি-অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে গা’গুলিয়ে উঠেছিল সুজয়ের I
অল্প দিনের উঠতি সম্পর্ক হলেও, শ্রেয়ার প্রতি যেন এক অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়েছিল সে I
হয়তো সেই কারণেই,অপ্রত্যাশিত আঘাতের মাপকাঠি’টা তার ক্ষেত্রে ছিল অনেকটাই বেশি Iলাজুক যুবকটিকে এই কয়েক মাসে রীতিমতো হাবুডুবু খাইয়ে ছেড়েছিলো সুযোগ-সন্ধানী মেয়েটি I
ঘুরতে বেড়িয়ে যখন শ্রেয়া নিজে থেকে তার হাতে হাত রাখতো, তখন যেন এক অদম্য ভালোলাগা গ্রাস করতো সুজয়’কে I তার চোখে’মুখে ফুটে উঠতো অসীম পরিতুষ্টি..
তবে ঐটুকুই ! তার বাইরে কোনো অতিস্পর্শের ধৃষ্টতা কিছু ঘটেনি তাদের মধ্যে I
মনে-মনে ছেলেটি নিজেকে ভুলে,সর্বস্ব দিয়ে ফেলেছিল তার প্রেয়সীকে।

Boroder Romantic Golpo

Loading...

মন ভাঙার পর,কেমন যেন অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিলো সুজয় I
সারাদিন নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতো সে ছোট্ট ঘরটার মধ্যে I রাতের পর রাত আকাশের তারা গুনে,কোনোরকমে আধপেটা খেয়ে বারোটা বাজাচ্ছিল সে শরীরের I
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জরুরি ক্লাস’গুলি ভুলতে বসেছিল সে I ব্যাচের বন্ধুরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারছিলোনা I
শেষমেশ এক সিনিয়র মহানুভব দাদার হস্তক্ষেপে ব্যাপারটা কিছুটা আয়ত্তে এলো I


এক সন্ধ্যায় প্রায় টানতে-টানতে, নিয়ে যাওয়া হলো তাকে,এক নিষিদ্ধ পিরিতের পরিসরে I
পাকা মেঝের বারান্দায়,যেন গিজ’গিজ করছিলো বিভিন্ন বয়সের হরেক-রকম রসময়ী,মনমোহিনী’রা I
চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিলো সুজয়ের… গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো তার I
পান চিবোতে চিবোতে এগিয়ে এলেন, পোড়’খাওয়া রুপালি বৌদি I
তারপর অভিবাদন জানিয়ে ডান’চোখ টিপে বললেন :
–“নতুন মনে হচ্ছে ! তা কেমন চাই?
সুজয়ের শিরদাঁড়া দিয়ে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো..
সুজয়ের কাঁধে হাত রেখে,জ্বলন্ত সিগারেট’টি ঠোঁট থেকে নামিয়ে,ভাবুক আঙ্গিকে সিনিয়র মহানুভব দাদাটি বললেন:
–” আমি ঠিক করবো,কে আমার ভাইটিকে খুশি করবে আজ !”
অদূরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে এক রূপবতী যৌবনা জুল-জুল করে তাকিয়ে ছিল সুজয়ের দিকে । পরনে লং স্কার্ট, ও টাইট ফিটিংস টি-শার্ট..
চোখে একঝলক চোখ পড়তেই সুজয় যেন বিস্ময়ে ডুবে গেলো.. মন’টা মোচড় দিয়ে উঠলো তার ।
বাহু তুলে নির্দ্বিধায় তর্জনীর ইশারায় নির্বাচন করলো সে নীলা’কে I
হাসির রোল উঠলো চতুর্দিকে ।
রুপালি বৌদি অপ্রীতিকর হাসির ফোয়ারা তুলে বললেন :
–“বাপরে বাপ ! এ ছেলের চয়েস আছে বলিহারি !


গল্পের পরবর্তী দৃশ্য I
রুপালি বৌদির নির্দেশে,নীলা এগিয়ে এসে হাত ধরলো সুজয়ের..
তারপর তাকে নিয়ে চললো বারান্দার শেষপ্রান্তের ছোট ঘরটার দিকে ।
হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো সুজয়ের । তির্যক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে ছিল নীলার দিকে ।
কেমন যেন মোহিত হয়ে গিয়েছিলো সে নীলার মুখটি দেখে । শ্রেয়ার সাথে যেন এক অবিশ্বাস্য সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলো সে নীলার মুখাকৃতির ।


ইচ্ছেমতো নীলার তরতাজা শরীর’টা উপভোগ করছিলো সুজয় ।লাজুক ছেলেটির মধ্যে হঠাৎ করে যেন এক অব্যক্ত উন্মাদনা ভর করেছিল ।
সরীসৃপের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সে নীলার নোনতা শরীরটার উপর ।
নীলাও রীতিমতো উপভোগ করছিলো তার দুষ্টুমি । সুজয়ের খোলা বুকে নরম ঠোঁটের স্তবক বসিয়ে তাকে ঘন-ঘন উত্তেজিত করতে একচিলতে’ও কার্পণ্য করছিলোনা মেয়েটি ।
ঘামে স্নাত শরীরে অতলে তলিয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে দুজন দুজনকে আঁকড়ে ছিল আদর্শ প্রেমিক প্রেমিকার মতো ।
পরের দিন থেকে যেন জীবনের মানে’টাই পাল্টে গিয়েছিলো সুজয়ের কাছে..ফুরফুরে হয়ে উঠেছিল তার জমে থাকা অবসাদ’গুলি ।
সময়সুযোগ পেলেই সে নীলার কাছে যেত,হাসি ঠাট্টা করতো,গপ্পো করতো,ভাগ করে নিতো জীবনের ফেলে আসা ভালোমন্দ টুকরো টুকরো স্মৃতি’গুলি ; আর সবশেষে ডুবে যেত কামনা’ বাসনার অথৈ জাহ্নবীতে ।


একরাতের আন্তরিক শয্যায়,সুজয়ের বুকে খুনসুটি করতে-করতে নীলা প্রকাশ করলো তার পরিত্যক্ত মনের গোপন কথাটি ।
—“আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে চলো বাবু ! এখানে আমার ভালো লাগছেনা !”
নীলার সাথে মেলামেশা করাটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো সুজয়ের ।
সে কোমর জড়িয়ে কাছে টানলো নীলা’কে ।
আজ যেন নীলা’কে একটু অন্যরকম লাগছিলো,তার চোখের ভাষা ছিল ভিন্ন ।
নীলার কোঁকড়ানো ঘন পরিপাটি চুলটা,এলোমেলো করে দিয়ে,ঘাড়ে শুকনো ঠোঁটের নোনা সিলমোহর বসিয়ে সুজয় ফিসফিসিয়ে বললো :
–“অনেক দূর ! তোকে অনেক দূরে নিয়ে কোথাও লুকিয়ে রাখবো সোনা পাগলী !”
দুচোখ বন্ধ করে সুজয়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলো নীলা ।
নিকটের মানুষটিকে নিজস্ব ভঙ্গিমায় আদর করতে-করতে সুজয় স্পর্শ করলো মেয়েটির নরম খোলা পিষ্ঠ’দেশ ।
কয়েকমুহূর্ত পর সহসা,অস্বস্তিতে ঝাঁঝিয়ে উঠলো সুজয় !
শোভা পাচ্ছিলো নীলার পিঠের বিভিন্ন অংশে মৃদু আঁচড় ও কালসিটের দাগ I
যেন যন্ত্রণায় দগদগে হয়ে উঠলো সুজয়ের হৃদপিন্ড I শিউরে উঠলো সে ।
-“এসব কি রে নীলা?”
মেয়েটির চোখে চোখ রেখে সুজয় প্রশ্ন ছুড়লো ..
নীলা পাশ ফিরে শুয়ে বললো:

  • “ওসব কিছু নয়গো বাবু “
    কিন্তু নাছোড়বান্দা সুজয় কিছুতেই স্থির হতে পারছিলোনা..অগত্যা নীলা’কে বলতে হলো সহজ করে তিক্ত স্বাভাবিক সত্যি’টা ।
    –“চার-পাঁচ দিন হলো,এক মাঝ-বয়সের খদ্দের আসছে আমার কাছে, জানিনা কেন সে কাজ করার সময় খুব হাত চালায় আমার শরীরের উপর,বোধয় ওরম করে মজা পায় খুব,আমি বারণ করি কিন্তু শোনেনা ।”
    রাগে ফেটে পড়লো সুজয়…কড়া গলায় সে বললো:
    –“তুই আমাকে কিছু বলিসনি কেন?”
    মাথা নিচু করে নীরব রইলো নীলা ।
    –“তুই রুপালি বৌদি’কে কিছু বলিসনি এই ব্যাপারে?”
    আবার প্রশ্ন করলো সুজয় ।
    আধো-আধো কণ্ঠে ছেলেটিকে শান্ত করার চেষ্টা করলো নীলা ।
    -“তুমি শান্ত হয়ে যাও বাবু ! আমার ভয় লাগছে তোমাকে দেখে… বৌদি’কে জানিয়েছিলাম । বৌদি বলেছে,খদ্দের ভগবানের মতো..কিছু মনে করতে নেই! তাছাড়া উনি যখন টাকা বেশি দিচ্ছেন তাহলে ক্ষতি কি!”
    নীলার দুচোখ বেয়ে ফিনকি দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো অশ্রুধারা !

আরো পড়ুন, ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প (ফুলশয্যার রাত)


উত্তেজিত হয়ে সুজয় বলে উঠলো :
–“লোকটাকে দেখিয়ে দিবি আমায়,তারপর …..”
কথার মধ্যেই তাকে থামিয়ে দিলো নীলা I
সুজয়ের চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে মেয়েটি প্রশ্ন করলো :
–“তুমি এতো ভালোবাসো আমায়?”
ছেলেটি দৃঢ়তার সাথে সাবলীল উত্তর দিলো:
–“ভীষণ I”
-:”তাহলে আমাকে নিয়ে চলো না কোথাও ! ,আমার ভালো লাগছেনা এখানে একদম ।”
সহসা এমন অপ্রস্তুতকর উক্তি শুনে যেন হোঁচট খেলো সুজয়..নিরুত্তর রইলো সে কিছুক্ষণ ।
সজোরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নীলা ।
কিছুতেই থামছিলোনা তার প্রতীকী কালজয়ী হাসি । সুজয় বোধয় সেই হাসির অর্থ খুঁজে পাচ্ছিলো একটু-একটু করে ।
নতমস্তক রইলো সে কেবল’ই ।
সুজয় কে মৌন’দেখে নীলা বলে উঠলো:
–“আমি চাইনি কোনো ছাদ, চাইনি কোনো আশ্রয় ! চাইনি মাখামাখি ..চেয়েছিলাম একটু ভালোবাসা…যা হবে শুধুই আমার..আমার নিজের । সেদিন রাতে যখন আমায় জড়িয়ে তুমি বার’বার ঘুম চোখে শ্রেয়ার নাম করছিলে,সেদিন বুঝেছিলাম তোমার ভালোবাসার মানে !”
আত্মরক্ষার স্বার্থে কিছু বলার চেষ্টা করেছিল সুজয়, কিন্তু পেরে ওঠেনি তা গুছিয়ে প্রকাশ করতে ।


[ গল্পের অন্তিম দৃশ্য ]
মেঝেতে এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বস্ত্র’গুলি তুলে নিস্ত্বব্ধে পড়ে ফেললো যুবকটি ।
দরজা খুলে বাইরে বেরোতে যাবে, এমন সময় মৃদু কণ্ঠে ডাক দিলো নীলা..
থামলো সুজয়..তবে পেছন ফিরে তাকানোর ক্ষমতা তার পাঁজরে ছিলোনা একচিলতে’ও I
অন্তর্বাসের স্ট্র্যাপ আটকাতে-আটকাতে নীলা মুচকি হেসে বলে উঠলো :
-“কাল থেকে আমাদের নতুন রেট চালু হচ্ছে, যা ছিল তার থেকে মাত্র পঞ্চাশ টাকা বেশি I”


আরো পড়ুন, প্রেমের গল্প রোমান্টিক


Share This Article