সম্প্রতি বাংলার রাজনীতিতে নতুন নতুন সমীকরণ যোগ হচ্ছে । একদিকে যেমন লোকসভা ভোটে দিল্লি দখলের লড়াইতে সামিল হয়েছে জোরাফুল থেকে পদ্ম । অন্যদিকে সোশাল হোক কিংবা মেনস্ট্রিম মিডিয়া কিংবা পাড়ার চায়ের দোকানের সকাল সকাল আড্ডাটা হলো কার কার চাকরি গেলো ?
WB SSC Recruitment Scam
দুদিন আগেই কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের দাপটে চাকরিচ্যুত প্রায় ২৬ হাজার । যদিও সংখ্যাটা ২৫ হাজার ৭৫৩ জন ।
এখন প্রশ্ন হলো কি হবে এই রায়ের ? সত্যিই কি চাকরি হারাবেন এই ২৫ হাজার ৭৫৩ জন মানুষ ?
এই প্রশ্নটি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে ?
যদিও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার জেনেছি নানা জনের নানা মত । আইনজীবী থেকে সাধারণানুষ অনেকেই বলছেন এত বড় দুর্নীতিতে যারা অভিযুক্ত কিংবা যারা সত্যিই যোগ্য তাদের খুঁজে বের করাটা অনেকটা খড়ের গাদায় সুচ খোজার মতো । আবার একাংশ বলছেন বাংলাতে দুর্নীতি রোধে এই যুগান্তকারী রায় সত্যিই প্রশংসনীয় ।
কয়েকমাস আগেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনেকটা একইরকম রায় দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী । শেষ পর্যন্ত সেটা কার্যকর হয়নি । সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সেটা এখন ঝুলে রয়েছে ।
তবে কি এই রায়ের ক্ষেত্রেও সেই রকমই হবে ?
আজ সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন । যদিও সুপ্রিম কোর্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখেন অতীতের অনেক মামলায় সেটা দেখা গেছে । বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থেকে এসএসসির চেয়ারম্যান চাকরি হারাদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন তার কয়েক শতাংশ যদি বেকার চাকরি যোগ্য যুবক যুবতীদের পাশে দাঁড়াতেন তাহলে সমীকরণটা বোধহয় একটু অন্যরকম হতো ।
আরো পড়ুন,
এসএসসির প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল, বেতন ফেরতের নির্দেশ আদালতের
হাই কোর্টের রায় ঘোষণার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় কলকাতা হাইকোর্ট । কিন্তু এই দীর্ঘ মামলা চলাকালীন সরকারিভাবে কোনরকম বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি তাকে । স্কুল সার্ভিস কমিশন ও আদালতে যোগ্য প্রমাণ দিতে অসমর্থ ।
তাহলে কি হবে যোগ্য চাকরি প্রাপকদের ? সকলেই ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন এমনটা তো নাও হতে পারে । আসলে নিয়োগ দুর্নীতির শেকড় এতটা গভীরে যে তার উত্তর পাওয়াটা মুশকিল । পরীক্ষার OMR শিট নেই, নেই যথাযথ কোন উত্তর । সেই সঙ্গে সঠিক তালিকাও নেই । তাহলে কিভাবে সম্ভব যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করাটা । আসলে এই কাজটা কিংবা এই দায়টা আসলে বর্তমান সরকার কেউ নিতে হবে ।
২০১৬ র নিয়োগের পর অনেক চাকরি প্রাপক লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন, গাড়ি করেছেন । এই রায়ের পর যারা চাকরি হারাবেন তাদের ভোগান্তি যে চরমে উঠবে তা বলাই বাহুল্য । ১২ শতাংশ সুদ সমেত বেতন ফিরিয়ে দেওয়াটা বেশিরভাগ চাকরি হারাদের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে পড়বে । সামাজিক অবস্থান কিংবা ব্যাংকের EMI, আর্থ সামাজিক যৌথ চাপে অনেকেই যে দিশেহারা হয়ে পড়বে এর সব দায় কিন্তু বর্তায় সরকারের কাঁধে ।
আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন আগামীতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ও যে আবার এইরকম রায় আসবে তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে ।
স্কুল সার্ভিস কমিশন আর রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট কি পদক্ষেপ নেয়, সেই দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য ।
লোকসভা ভোটের ডিউটি ও রয়েছে অনেক এই চাকরি হারা শিক্ষক ও কর্মীদের সেই দিকেও নজর থাকবে আমাদের ।
তবে ইতিহাস সাক্ষী আছে, সমাজ ব্যাবস্থার অবক্ষয় রোধে যুগে যুগে এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । দেখা যাক, এবারে সেই পথে বাংলা হাটে কিনা ?