লিখেছেন – অধ্যাপক, ডা. অর্কপ্রভ সেনগুপ্ত
হিন্দু শাস্ত্রে আছে নারী নাকি দেবীর রূপ । আর সেই নারী আজ বাংলার সন্দেশখালি তে সম্মানের, সন্ত্রাসের বিচার চাইছে । ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মমতা ব্যানার্জি । দেশ বিদেশে যার নাম ছড়িয়ে পড়েছে নানা কারণে । সেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে আজ নারী সুরক্ষার নামে প্রহসন চলছে ।
যদিও এই বিষয়টি বিতর্কিত কিন্তু রাজনৈতিক রং লাগানোর পর সন্দেশখালির ঘটনা কিন্তু শুধুমাত্র আর এই রাজ্যে আটকে নেই । এই ঘটনার আঁচ এখন দেশজুড়ে পড়েছে । জাতীয় তপশিলি কমিশন ইতিমধ্যেই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে । তবে কি বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হতে চলেছে ?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে সন্দেশ খালির ঘটনা আগে ভালো মতো বুঝতে হবে ।
দেখুন সন্দেশখালীর ঘটনার সূত্রপাত শেষ শাহাজান নামক এক তৃনমূল ব্লক সভাপতির বাড়িতে ইডির আচমকা রেড কে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত । সেই থেকে খবরের শিরোনামে সন্দেশখালি । একে একে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন কিন্তু আজ ও অধরা সেই শেখ শাহজাহান । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় গেলো শাহজাহান ? কেনই বা এতদিন থেকে তার খোঁজ পাচ্ছে না পুলিশ থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তাবর তাবর অফিসাররা ?
সন্দেশখালির ঘটনা
রাজনৈতিক চক্রান্ত হোক বা গুরুতর অপরাধ, এই ধাঁধার উত্তর পাওয়াটা কিন্তু বড্ড জরুরি । যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা, সেখানে মেয়েরা সুরক্ষিত থাকবে এটাই প্রত্যাশিত কিন্তু তার পরিবর্তে সন্দেশখালির মেয়েদের, ঘরের বউদের রাতের অন্ধকারে ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো । এটা কোন সভ্য জগৎ মেনে নিতে পারে ? গত কয়েকদিন যাবৎ সন্দেশ খালির মহিলারা রাস্তায় লাঠি হাতে নেমে আন্দোলন করছে ? কেন ? কিসের আশায় ?
এই আন্দোলন এক দিনে তৈরি কিন্তু হয়নি । দীর্ধদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্থানীয় মহিলাদের অনেকেই জানিয়েছেন । শেখ শাহাজানের ডান – বাম হাতের অনেকেই সন্দেশ খালির মহিলাদের মধ্য রাতে ডেকে পাঠাতো পার্টি অফিস বা অন্যান্য জায়গায় । অনেকেই জানিয়েছেন তারা শারীরিক, মানসিক ভাবে নিগ্রহ করতো সেইসব মহিলাদের ওপর । সুন্দরী ও অল্প সুন্দরী মহিলাদের আলাদা আলাদা গ্রূপে ভাগ করে ডেকে পাঠানো হতো এবং যাদের যাদের পছন্দ হতো তাদের বসিয়ে রেখে বাকিদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো । ভাবতে পারছেন এই আধুনিক সমাজেও এই ধরনের পাশবিক ঘটনা আজও ঘটে চলেছে ?
Sandeshkhali Incident News
এবারে অনেকেই প্রশ্ন করবেন কেন ডেকে পাঠানো হতো তাদের বা ডাকলেই সেই মহিলারা যেত কেন ?
কেন ডেকে পাঠানো হতো সেই প্রশ্নের উত্তর কারোরই বুঝতে বাকি নেই । যদিও অনেকেই বলছেন শেখ শাহাজান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা পিঠে খাওয়ার জন্য ডেকে পাঠাতো সেইসব মহিলাদের । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পিঠে খাবার জন্য পরের বাড়ির ঘরের বউকে ডেকে পাঠানোর মানে কি ? তাও আবার মধ্যরাতে ?
শুধুমাত্র পিঠে খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে কেউ মধ্যরাতে মহিলাদের ডেকে পাঠায় না, এটা বুঝতে বাকি নেই কারোরই । এর পেছনে লুকিয়ে থাকে নোংরা, অসভ্য মানসিকতা ।
মহিলাদের অনেকেই জানিয়েছেন, যেতে না চাইলেই বাড়িতে এসে স্বামী ও বাড়ির অন্যান্যদের মারধর করতো । ফলে ভয়ে যেতেই হতো সেই নারকীয় যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে ।
দেশ যেখানে প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছে গেছে সেখানে এই ঘটনা কতটা গর্হিত সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো শব্দ আমার জানা নেই ।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানান রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গেছে । তৃণমূল – বিজেপি – সিপিএম কেউ বাকি নেই একে অপরকে দোষারোপ করতে । কিন্তু মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকার তৃণমূলের তাই উত্তরটাও তাদেরকেই দিতে হবে । কিন্তু বাস্তব ঘটনা হলো, তৃণমূল সরকারের নেতা থেকে মন্ত্রী সকলেই বারবার একই কথা বলে চলেছেন যে, বাকি রাজ্যে কি হচ্ছে দেখুন ? মনিপুর দেখুন, সিপিএম জমানায় কত সন্ত্রাস হয়েছে সেটা দেখুন …ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
Sandeshkhali Incident In Bengali
আপনার ছেলে দোষ করলে আপনি নিজের ছেলেকে শাসন করবেন নাকি পরের বাড়ির ছেলেকে ? সিপিএম কি করেছে বা মণিপুরে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে তরজা না করে আগে বাংলার মহিলাদের সুরক্ষার দিকটি দেখলে ভালো হয়না ? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা তিনি নিজে এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে সন্দেশখালির মহিলাদের ওপর নিকৃষ্টতম অত্যাচারের জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি প্রদান করুন এটাই তো কাম্য ।
পরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভোটে জেতা গেলেও আইনের শাসন হয়তো আনা যায়না । সোনার বাংলা সোনার মানুষ দিয়ে তৈরি হয় । সেখানে শিবু হাজরা বা শেষ শাহাজানের মতো দানবদের দমন করাটা সরকারের কাজ । বিরোধীরা আন্দোলন করবেই, আপনি সেই সুযোগটা দেবেন কেন ? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ঘটনা আজও কিন্তু কেউ ভুলে যায়নি । ভুলে যায়নি তাপসী মালিকের ওপর হওয়া অত্যাচারকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন । তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন, এক টুকরো আগুন কিভাবে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ।
আরো পড়ুন,
ক্রিকেট মাঠে সরফরাজের সঙ্গে বোরখা পরা মেয়েটি আসলে কে ? জানুন তার পরিচয়
সুকান্তকে দেখতে হাসপাতালে সৌরভ, রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে
সবশেষে, সোনার বাংলায় শান্তি ফিরে আসুক । বাড়ির মেয়েরা, ঘরের বউরা নির্ভয়ে চলাফেরা করুক সমস্তু রাজনৈতিক দলের কাছে এটাই আর্জি । বাংলার নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক আর মানুষ রূপী পশুদের শাস্তি হোক, গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে এটাই কাম্য ।