সান্তা ক্লজের গল্প: আজ চব্বিশে ডিসেম্বর। পটলা ওর মায়ের সাথে রায়বাড়িতে কাজে গেছে। রায়বাড়ি খুব বড়লোক। তাই মল্লিকা কাজে যাবার সময় ছয় বছরের ছেলেকে সঙ্গে নেয়। প্রায় দিনই ওদের রাত্রের খাবার কিছু না কিছু বেঁচে যায়। মাঝে মাঝেই পটলাকে রায় জ্যেঠিমা এটা ওটা দেয়। আজ সকালবেলা মায়ের হাত ধরে যাবার সময় পটলা দেখে মোড়ের মাথার দোকানগুলোতে থরে থরে কেক সাজানো আছে। লাল জামা, টুপি ঝুলছে।
সান্তা ক্লজের গল্প
– মা মা দোকানে ওগুলো কি গো?
– কালকে বড়দিন তাই ওগুলো সাজানো হয়েছে।
– বড়দিন কি হয় মা?
– ওই যে সান্তা না পান্তা নামের একটা বুড়ো আছে সে নাকি পিঠে ঝোলা নিয়ে ঘরের দরজায় ছোট্ট বাচ্চাদের জন্য উপহার দিয়ে যায়।
– কি উপহার দেয়?
– সে কি আর আমি এত জানি রে? তবে শুনেছি বাচ্চারা মনে মনে যা চায় তাই দিয়ে যায়।
– সান্তা কি বাচ্চাদের কথা শুনতে পায়?
– মনে হয় পায়।
– তাহলে কালকে সান্তা আমাকেও উপহার দেবে মা?
– না বাবা। আমরা গরিব মানুষ বাবা। সান্তা বড়লোকদের জন্য। গরিবের কুঁড়েতে সান্তা আসবে না।
– কেন মা? আমরা গরিব কেন হলাম মা বলো না?
– ছেলের এই প্রশ্নের উত্তর মল্লিকার কাছে নেই।
– বলো না মা বলে মায়ের হাত ঝাঁকাতে থাকে পটলা।
আমি জানি না। এত বকবক করিস না তো, তাড়াতাড়ি পা চালা, দেরি হয়ে গেলে তোর রায় জ্যেঠিমা আবার বকুনি দেবে।
তখনকার মত পটলা চুপ হয়ে গেল কিন্তু ওই প্রশ্নটা ওর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।
আরো পড়ুন,
বড়দিনের শুভেচ্ছাবার্তা, স্ট্যাটাস ও ছবি
বড়দিনের ছবি, ফটো, শুভেচ্ছাবার্তা 2023
রায়বাড়িতে পটলার বয়সি দুটো বাচ্চা আছে। একজন টুসি আর একজন চিন্টু। ওরা দুজন সকাল থেকে দাদুর কাছে বায়না করেছে সান্তার গল্প শুনবে বলে। পটলার মা বাসন মাজছিলো আর পটলা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সেই দেখে রায় জ্যেঠিমা বলল….
স্যান্টাক্লজ
– এই পটলা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস, যা বারান্দায় যা দেখবি রাগি দাদু রোদে বসে চিন্টু দাদা আর টুসি দিদিকে বড়দিনের গল্প বলছে।
– সান্তার গল্প?
– হ্যাঁ রে যা।
পটলা চুপিচুপি এসে বারান্দার এককোণে দাঁড়ালো। রাগি দাদু ওকে একদম পছন্দ করে না।
– এই পটল ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এদিকে আয়। দাদু আমাদের গল্প শোনাবে।
পটলাকে দেখে রাগি দাদু একটু বিরক্তই হলো।
– দাদু সান্তা কাল কখন আসবে জিজ্ঞেস করলো চিন্টু।
– কাল নয় দাদুভাই আজ রাত্রি বারোটার পরই সান্তা তাঁর ঝুলি নিয়ে বেরোবে বাচ্চাদের গিফ্ট দিতে। তা দাদুভাই তুমি সান্তার কাছে কি চেয়েছো?
– একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, একটা পুলিশ ভ্যান, টেন্ট হাউস, ক্যাডবেরি সব।
– দাদুভাই তোমার গিফ্ট আনতে তো সান্তার ঝোলা উপচে পড়বে।
– দাদু তুমি তো আমার টা শুনলেই না!
– এই তো শুনছি। বলো।
– আমি একটা ডল হাউস, আর একটা বড়ো টেডি চাই।
– বাহ্।
– এই পটল তুই সান্তার কাছে কি চাইবি বললি না তো?
– পটলা উৎসাহ নিয়ে বলল আমি তোমার মতো ওই রকম বড়ো ছবি আঁকার খাতা ও রঙ পেন্সিল চাই। আমার ছবি আঁকতে খুব ইচ্ছে করে।
– ভিখিরীর আবার শখের বলিহারি! পেটে খাবার জোটে না আর এদিকে সান্তার গিফ্ট চাই। সান্তার গিফ্ট পেতে গেলে মা বাপের ক্ষমতা থাকতে হয়। যা ভাগ এখান থেকে।
পটলা মুখ কালো করে সরে গেল ওখান থেকে।
সন্ধ্যেবেলা ঘরে চুপচাপ বসে আছে চিন্টু। বাবা অফিস থেকে আসার সময় ওর জন্য সান্তা ড্রেস নিয়ে এসেছে, ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ঘর সাজানো হচ্ছে ওর কোনদিকে মন নেই। অন্য সময় মা কেক বানালে পঞ্চাশবার রান্নাঘরে ছুটে ছুটে যায় কখন হবে দেখার জন্য, আজ রান্নাঘরের চৌকাঠও মাড়ায়নি।
বিনোদবাবু স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে চিন্টুর?
– আমি কিছু জানি না। সারাদিন মুখ কালো করে বসে আছে।
স্বামী স্ত্রী দুজনেই উপরে ছেলের কাছে গেলেন।
– কি হয়েছে চিন্টু?
– কিছু না।
– দেখ চিন্টু আমাদের তুই না বললে আমরা বুঝব কি করে! আজকের দিনে মন খারাপ করে থাকলে ভালো লাগে?
– বাবা সান্তা কেন গরিবদের ঘরে যায় না?
– মানে?
– মানে সান্তার কাছে আমরা সবাই গিফ্ট চাইলাম, তারপর যখন পটলা গিফ্ট চাইলো তখন দাদু বললো গরিবদের জন্য সান্তা নয়। আচ্ছা বাবা গরিব মানে কি? যারা লোকের বাড়িতে কাজ তারা গরিব?
– কি বলবে কিছু খুঁজে পায় না বিনোদ বাবু।
– বাবা আমাকে একটু বাজারে নিয়ে যাবে?
– কি করবি সন্ধ্যেবেলা বাজারে?
– চিন্টু ওর সুন্দর হাতির মতো দেখতে ভাঁড়টা ভেঙে বললো বাবা এখানে কি অনেক টাকা আছে?
– কেন? কি করবি তুই এই টাকা দিয়ে?
– জানোতো আজ পটলা বলছিলো ও আমার মতো ছবি আঁকার খাতা ও রং পেনসিল চায় সান্তার কাছে। ওরা তো গরিব ওদের বাড়িতে সান্তা আসবে না, তাই যদি আমি গিয়ে চুপিচুপি রেখে আসি তাহলে ও খুব খুশি হয়ে যাবে।
Santa Claus Bengali Story
– ছেলের কথা শুনে বিনোদবাবু ও তার স্ত্রী মন্দিরা অবাক। যে ভাবনাটা ওনাদের ভাবা উচিত ছিল সেটা আজ ওদের বাচ্চা ছেলেটা ভেবেছে। বাবা মা হিসেবে গর্ববোধ হলো।
চিন্টু বাবার হাত ধরে বাজার থেকে বন্ধুর জন্য গিফ্ট কিনে আনল। রাত্রি এগারোটার মধ্যে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লো। এখন রাত্রি বারোটা। চিন্টুর দরজায় শব্দ। ও দরজা খুলে ওর গিফ্ট পেয়ে মহা খুশি। বাবাকে ডেকে বলে….
– বাবা বারোটা তো বেজে গেছে পটলার গিফ্ট পৌঁছে দিতে হবে না?
বাবার কিনে দেওয়ার সান্তার ড্রেস পরে কাঁধের ঝুলির মধ্যে রঙ পেন্সিল, আঁকার খাতা, ও মায়ের হাতে বানানো কেক নিয়ে ছোট্ট সান্তা চলল আরেক বাচ্চার কাছে উপহার পৌঁছে দিতে।
বারোটা বেজে গেছে তবুও পটলার চোখে ঘুম নেই। মল্লিকা ছেলেকে কোনোমতেই বোঝাতে পারছে না যে সান্তা বলে কেউ হয় না, বাবা মা তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য ভালো ভালো উপহার কিনে একটা থলেতে করে দরজার বাইরে রেখে দেয় আর সকালে ঘুম থেকে উঠে বাচ্চারা যখন ওই ব্যাগটা দেখতে পায় তখন ভাবে রাত্রেবেলা সান্তাক্লজ এসে ওদের দিয়ে গেছে। পটলাকে উপহার কিনে দেওয়ার মতো সাধ্য ওর মার নেই। কাল বিকেলে ওকে রায় বাড়িতে নিয়ে যাবে হয়তো ওখানে একটু কেক জুটলেও জুটতে পারে। কিন্তু পটলা কোনো কথা শুনবে না।
আমি বলছি তো মা সান্তাক্লজ আসবে। তুমি দেখবে এই বছর ঠিক আসবে। রাত এগারোটার থেকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়েছিলো সান্তার অপেক্ষায়। শেষে সাড়ে বারোটার সময় ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ঘরে ঢুকেছে।
এখন রাত্রি একটা বাজে। পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন। এই শীতের রাত্রে সান্তাক্লজ পটলার ঘরের দরজায় কড়া নাড়াতে লাগলো। সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায় পটলার।
– মা, মা, ওঠো, দেখো সান্তাক্লজ এসেছে।
– এত রাত্রে কোথায় সান্তাক্লজ পাবি? স্বপ্ন দেখছিলি, ঘুমিয়ে পড়।
এমন সময় আবারও কড়া নাড়ার আওয়াজ।
এত রাত্রে দরজায় আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যায় মল্লিকা। আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা খুলে দেখে রায় বাড়ির বিনোদ বাবু দাঁড়িয়ে আছে আর সাথে ছোট্ট সান্তাক্লজ।
– দাদাবাবু আপনি? আর এটা?
– ইশারায় মল্লিকাকে চুপ করিয়ে দেন বিনোদবাবু।
– সান্তাক্লজকে চোখের সামনে দেখে অবাক হয়ে যায় পটলা।
– সান্তা তুমি এসেছ?
– তোমাকে উপহার দিতে হবে না! দাঁড়াও বলছি তোমার কি চাই? কী চাই, কী চাই বলে গালে হাত দিয়ে ভাববার চেষ্টা করে। ওহঃ হ্যাঁ তোমার তো রঙ পেন্সিল আর খাতা চাই তাই না?
– ওমা সান্তা তুমি এটাও জানো।
– সান্তারা সব জানে।
– লিটল সান্তা তার থলে থেকে উপহার বের করে পটলার হাতে তুলে দেয়।
– পটলার আনন্দ আর ধরে না। কত্তো গিফ্ট।
মল্লিকা ছোট্ট সান্তার গালে আদর করে দিয়ে বলে তোমার মত সান্তা যেন সব পটলার জীবনে আসে।
ছোট্ট সান্তা তার বন্ধুর ইচ্ছেপূরণ কিরতে পেরে মনের খুশিতে বাবার সাথে বাড়ির পথ ধরলো।
Merry Christmas 🎄🥞
আরো পড়ুন,
Christmas 2023 Funny Status, Quotes, Wishes
ক্রিসমাস কবিতা 2023| বড়দিনের কবিতা