ক্রিসমাস কবিতা 2023: রাত পোহালেই বড়দিন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন উদযাপন করবে গোটা বিশ্ব। এই বিশেষ দিনে বড়দিন উপলক্ষ্যে এক বিশেষ কবিতা আপনার জন্য ।
ক্রিসমাস কবিতা 2023
৷৷ পঁচিশে ডিসেম্বর ৷৷
……………………………………………
গীর্জাতে আজ ঘন্টা বাজা
প্রার্থনা করি আয় ৷
মেরীর কোলে ছোট্ট যীশু
চোখ দুটি মেলে চায়
দু’চোখে তাঁহার স্নেহের সুধা
অন্তরে গাঁথা প্রেম ৷
খুশি ঝল্ মল্ , হেসে খল্ খল্
ধন্য বেথেলেহেম ৷
হিমের প্রদেশে কোন্ দূর দেশে
সমুদ্রে ওঠে ঢেউ ৷
আজ বড়দিনে আসলো যে শিশু
নামটি জানো কি কেউ ?
ভালোবাসা দিয়ে আলো জ্বেলে যান
মুছিয়ে অন্ধকার ৷
সেই ছোট শিশু ভগবান যীশু
তিনি প্রভু সবাকার ৷
বিদ্ধ ক্রুশেতে অবিচল যিনি
ক্ষমার বার্তা মুখে ৷
বিস্মিত আজও বিশ্ববাসী
শ্রদ্ধাতে মাথা ঝুঁকে ৷
আজ শুভ দিন, এলো সেই দিন
যীশু রূপে ঈশ্বর ৷
ছন্দে – ছড়ায় বন্দনা গাই
পঁচিশে ডিসেম্বর ৷
শুভ বড়দিনের শুভেচ্ছাবার্তা, স্ট্যাটাস, মেসেজ 2023
কবিতা তো হলো, এবার বড়দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ ছোট গল্প রইলো আপনার জন্য ।
বড়দিনের কবিতা
মেরি ক্রিসমাস
__”মেরি ক্রিসমাস তুতুল। তুমি সারাদিন ভালো হয়ে থাকবে আর বেশি দুষ্টুমি করবেনা বুয়ার সাথে। আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে তোমাকে নিয়ে রেস্তোরাঁতে খেতে যাব কেমন!” একটা চিরকুটে নিজের বছর দশেকের মেয়ে তুতুল ওরফে আর্শিয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো লিখতে লিখতে নিজের অজান্তেই এই ভরা শীতেও দুই চোখে ঘন শ্রাবণধারা ঘনিয়ে আসে শ্রবণার। তুতুল তখনও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। চিরকুটটা ওর মাথার কাছে রেখে অফিসে বেরোনোর জন্য তৈরি হতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় ও। কিন্তু পোড়া মন পাড়ি দেয় বছর বারোর আগের অতীতে।সেলুলয়েডের চলমান রিলের মত উঁকি মারতে থাকে ফেলে আসা দিনগুলোতে।
আরো পড়ুন,
Christmas Wishes Messages In Bengali 2023 (বড়দিনের শুভেচ্ছা এসএমএস)
বড়দিনের ছবি, ফটো, শুভেচ্ছাবার্তা 2023
এই শহরেরই এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বেরোবার পর ও আর নীল মানে নীলাদ্রি দুজনেই তখন দুটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। অবশ্য পড়াকালীন সময় থেকেই ছটফটে, প্রাণবন্ত শ্রবণার প্রেমে পড়ে নীলাদ্রি। সেই প্রেম পূর্ণতা পায় এমনই এক বড়দিনে এসে। বাহারি আলোয় ঢাকা পার্কস্ট্রিটের এক রেস্তোরাঁতে খেতে গিয়ে সটান পকেট থেকে এনগেজমেন্ট রিং বের করে পরিয়ে দিয়েছিল নীলাদ্রি শ্রবণাকে। মাসকয়েক পরে প্রজাপতির অমোঘ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল দুটি হৃদয়। তারপর কোল আলো করে এলো তুতুল। দিব্যি সবকিছু ভালোই চলছিল কিন্তু সুখের সংসারে গভীর অসুখ দানা বাঁধলো যখন নীলের কোম্পানিতে আর্থিক মন্দা দেখা দেবার কারণে ওর চাকরিটা গেল। বেকার অবস্থায় খিটখিটে স্বভাবের হয়ে পড়তে থাকল ও।নতুন কাজ খোঁজারও কোনো তাগিদ ছিলনা নীলের মধ্যে।অন্যদিকে শ্রবণা তখন ব্যস্ত ওর কাজ নিয়ে। ক্রমাগত বাড়তে থাকল অশান্তি। কখনো শ্রবণার অফিসের বসকে নিয়ে নীলের সন্দেহ তো কখনো ওর রাত করে ফেরা নিয়ে তর্কাতর্কি। বছর দুইয়ের ছোট্ট তুতুলও প্রতিদিন মা, বাবার এই ঝগড়া দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল।শেষমেশ সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছিল শ্রবণা। তুতুলকে একটা সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যত দেবার জন্য ও বাড়ি ছেড়ে চলে এসছিল। তারপর ওদের আইনগত বিচ্ছেদটাও হয়ে যায়।
সেইথেকে একা মা হিসেবে শ্রবণার লড়াই শুরু।ওর সবটা জুড়ে এখন তুতুল। ছুটির দিনে ও চেষ্টা করে বাড়িতেই সময় কাটানোর।এবারেও শ্রবণা ভেবেছিল বাড়িতেই থাকবে, মেয়ের পছন্দের কেক বানাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা অ্যাসাইনমেন্ট এসে যাওয়াতে ওকে আজকের দিনেও বেরোতে হচ্ছে তুতুলকে নিজের মা অনুপমাদেবীর দায়িত্বে রেখে। আর কতই বা করবে মা ওর জন্য।যদিও মা বলেন,”ওসব নিয়ে তুই চিন্তা করিসনা। আমি যতদিন আছি সামলে নেব। কিন্তু আমি চলে যাবার পর কী হবে তোর? নতুন করে কিছু ভাবা যায়না?”
__”থাক মা ওসব কথা।”; মাকে একপ্রকার চুপ করিয়ে দেয় শ্রবণা।বছরপাঁচেক হল ওর বাবাও গত হয়েছেন। সেই থেকেই শ্রবণা অফিসে বেরিয়ে যাবার তুতুল ওর আদরের বুয়া মানে দিদার কাছেই থাকে। যাইহোক আপাতত সব ভাবনা মুলতুবি রেখে বেরোয় ও। গাড়িতে উঠে ভালো করে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে ব্যাকসিটে গা এলিয়ে দেয় ও। এমনসময় মুঠোফোনটা বেজে ওঠে, শ্রবণা দেখে রুপমের ফোন।
__”কি ম্যাডাম কি প্ল্যান আজ? ভাবছিলাম বিকেলে একবার তোদের বাড়ি যাব। তুতুলের জন্য ওর পছন্দের কিছু উপহার নিয়েছি”;রুপম বলে।
__”না তেমন বিশেষ কিছুই প্ল্যান নেই। এখন অফিসে যাচ্ছি একটা জরুরি কাজে। আর আমার বাড়ি এসে কী করবি তুই? আমি বিকেলে ফিরেই তুতুলকে নিয়ে বেরোব। তাছাড়া বহুবার বারণ করেছি তো ওসব কিনতে!”; একটু অভিমানী কণ্ঠে শ্রবণা বলে ওর ছোটবেলার বন্ধু রূপমকে।
__”তুই এটা বুঝিস না কেনো আমার মা, বাবা গত হবার পর থেকে ভীষণ একা হয়ে গেছি। শিল্পী মানুষ আমি,কখন কোথায় থাকি জানিনা। তবে ছন্নছাড়া এই জীবনটায় মাঝেমাঝে বড় ইচ্ছে করে ছোটশিশুদের গায়ের গন্ধ মেখে থাকতে, একটা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। সেই টানেই বারবার ছুটে যাই তোদের কাছে।”
__”দেখ তোর এই পাগলামির জন্য যাদবপুরে আমাদের পুরনো বাড়ি বেচে দিয়ে নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে নরেন্দ্রপুরে চলে আসতে হল।পাড়াপ্রতিবেশীরা এগুলো ভালো চোখে দেখেনা”;কাটাকাটা ভাবে বলে শ্রবণা।
__”আচ্ছা তুই না চাইলে যাবনা আমি। চল রাখি, তুই নিজের খেয়াল রাখিস”;এই বলে ফোনটা রেখে দেয় রুপম। জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখে শ্রবণা। অফিস প্রায় এসে গেল। সানগ্লাসটা ঠিক করে নিতে নিতে ও ভাবে,”রূপ রাগ করলে করুক। তবু ওর প্রস্তাবে দুর্বল হলে চলবেনা। তুতুল কী ভাবে নেবে কে জানে ওদের সম্পর্কটাকে কে জানে! তাছাড়া বন্ধুত্বের গণ্ডি পার করলে যদি রুপম স্বামীর অধিকারবোধ দেখাতে শুরু করে তখন? তার থেকে দূরে থাকাই ভালো।
সারাদিন আর এসব নিয়ে ভাবার সময় পায়না শ্রবণা। বিকেল পাঁচটা ফিরে ও দেখে এক অন্য দৃশ্য।গোটাবাড়ি বেলুন, রিবন, ক্রিসমাস ট্রি, বাহারি আলোয় সাজানো। রুপম আর তুতুল ড্রইংরুমে সোফায় বসে একমনে খেলছে। আর মা ব্যস্ত রান্নাঘরে, ভাজাভুজির গন্ধ ভেসে আসছে।
__”কিরে তুই এখানে?”,শ্রবণা জিজ্ঞাসা করে।
__”বন্ধু ডাকলে না এসে থাকা যায় নাকি? কি বলো তুতুলরানী”;রুপম বলে।
__”আচ্ছা”;বলে পাশের ঘরের দিকে পা বাড়ায় শ্রবণা। মনে জমা হয় অভিমানের মেঘ। তবে কি তুতুল ওর একাকীত্ব থেকে রুপমকে বেশি ভরসা করতে শুরু করেছে? ওর এসব ভাবনার মাঝেই ঘরে ঢোকে তুতুল।
__”মা তুমি রাগ করেছ তোমাকে না জানিয়ে রূপ আঙ্কেলকে বাড়িতে ডেকেছি বলে। একটা কথা অনেকদিন ধরে ভাবছি তোমাকে বলা হয়নি। আজ বলব।”
__”কী কথা বল…”শ্রবণার গলা জড়িয়ে এবার তুতুল বলে,”এবার থেকে যদি তুমি, আমি, রূপ আঙ্কেল,বুয়া আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি কেমন হয়? স্কুলে পেরেন্ট টিচার মিটিংয়ের সময়,তারপর নানা অনুষ্ঠানে আমার সব বন্ধুদের বাবা কোনো না কোনোসময় উপস্থিত থাকে। বড় ইচ্ছে করলেও আমার তো তুমি ছাড়া কেউ থাকেনা। তাছাড়া নিজেও দেখেছি রূপ আঙ্কেল আসলে তুমি কতটা খুশি থাক।”
চমকে উঠে শ্রবণা। ছোট হলেও তুতুলের কথাবার্তাতে পরিণতির ছাপ সুস্পষ্ট। মায়ের মনের অন্তরমহলে ঢুকে পড়েছে কোন অদৃশ্য যাদুবলে। কবে এত বড় হয়ে গেল ওর আদরের ধন?
__”এবার আশা করি তোর মনের মধ্যে চলা সব প্রশ্নমালার উত্তর পেয়ে গেছিস তুই।”;রুপম বলে ওকে।
ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় শ্রবণা। কে বলে বড়দিনে সান্টাক্লজ শুধু ছোটদেরই উপহার দেয়? ছোটরাও অনেকসময় বড়দের ইচ্ছেপূরণের সান্টা হয়ে আসে ঠিক যেমন ওর মেয়ে তুতুল।
__”কী ভাবছিস এতো?”;রুপম এসে দাঁড়ায় ওর পাশে।
__”ভাবছি–আজ হোকনা রং ফ্যাকাশে/তোমার আমার আকাশে/চাঁদের হাসি হোকনা যতই ক্লান্ত/ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত”;আর সেটা সম্ভব হয়েছে আমাদের আত্মার আত্মজা তুতুলের জন্য।চল এবার ঘরে যাই”;রুপমকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে আসে শ্রবণা। অনাবিল হাসি, মজাতে ভরে ওঠে জীবনের জলসুখ ছবিরা। খাতায় কলমে মাতৃত্ব দিবসে মেতে হবার থেকে আজ যে শ্রেষ্ঠ মাতৃত্বের উপহার পেল শ্রবণা সেটাই যে ওর পরম প্রাপ্তি।।।
(সমাপ্ত)
60 টি সেরা বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তা, ছবি, স্ট্যাটাস