Bengali Short Story Online Reading (বাংলা ছোট গল্প)

Samaresh Halder
6 Min Read

শিকড়
– অনিন্দিতা

সেদিন আমার অফিস থেকে বাড়ী ফিরতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল ট্রেন লেট থাকায়, হনহন করে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে যদি একটা রিকশা নজরে আসে। এখানে এখনো অটোরিকশা চালু হয়নি, সবে কিছু সাইকেল রিকশা বসতে শুরু করেছে, যাত্রী পায় না বলে কেউ আর রাত পর্যন্ত রিকশা নিয়ে স্টেশনের কাছে থাকে না।

Bengali Short Story Online Reading

কনকনে শীতের রাত জোরে হাওয়া দিচ্ছে তারমধ্যে বৃষ্টি আরম্ভ হলো, মাফলার টা মাথায় ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে জোরে হেঁটে একটা গাছতলায় গিয়ে দাঁড়ালাম। টিপেটিপে বৃষ্টি টা কমে আসতে একটু জোরে হাঁটা শুরু করলাম। হঠাৎ একটা বাচ্চার ক্ষীন কণ্ঠের কান্নার আওয়াজে থেমে দাঁড়িয়ে ইতঃস্তত চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম কান্নার উৎস টা। নাঃ আমারই মনের ভুল, চারিদিকের নিস্তব্ধতা খান খান করে ভেঙে দিয়ে একটা নিশাচর পাখি ডেকে উঠলো। আমি আরও জোরে হাঁটতে লাগলাম, তাড়াতাড়ি হবে বলে শর্টকাট একটা রাস্তা আছে ভাঙা মন্দির টার পিছনদিক দিয়ে আমি সেদিকে চলা শুরু করলাম। এই শীতের রাতে গ্রামটা নিশুতি হয়ে গেছে, শীতটা ও জাঁকিয়ে পড়েছে, সবাই জানলা দরজা খিল বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে, গা টা একটু ছমছম করছে। মন্দির টা বহু পুরনো অনেক দিন সংস্কার হয় না এবড়ো খেবড়ো রাস্তা আগাছায় ভরা। মন্দির টার কাছাকাছি আসতে ক্ষীনকণ্ঠের কান্না র আওয়াজ টা আবারও পেলাম, এগিয়ে গেলাম মন্দির টার দিকে। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে মন্দিরের ভিতরে ঢুকি যাক বাবা একটা লাইট জ্বলছে। আলোতে দেখি তোয়ালে দিয়ে জড়ানো একটি শিশু, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন মানে কয়েক মুহূর্ত তারপরে ই মনের দ্বিধা সরিয়ে দিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে আমার ওভারকোটের মধ্যে তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম। কোটের গরমে আর শরীরের ওম্ পেয়ে বাচ্চা টি কান্না থামিয়ে কুঁকড়ে এলো বুকের মধ্যে, সদ্যজাত নয়, মাস দেড়েক হবে বোধহয়। শিশুটিকে নিয়ে বেরোতে যাব পায়ে হোঁচট লাগলো একটা ছোট ইঁটে। ইঁটটা তুলে ফেলে দিতে গিয়ে দেখি একটা মাঝারি আকারের খাম কৌতূহলে খুলে দেখি একটা কাগজ তাতে লেখা ” হে করুণাময় ঈশ্বর আমার সন্তান কে তুমি রক্ষা করো আমি বড় অসহায় “। খামটি পকেটে নিয়ে বাচ্চাটি বুকে করে হনহনিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম। দরজায় আলতো করে টোকা দিতেই মিলি এসে দরজা খুলতেই আমি ওকে একপ্রকার ঠেলেই ভিতরে ঢুকে পড়লাম। মিলি অবাক হয়ে জরিপের ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ওকে সরিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়ে এসে সব কথা খুলে বলে বলে শিশুটিকে ওর কোলে তুলে দিলাম।

Bengali Short Story

Loading...

আমাদের বছর পাঁচেক হলো বিয়ে হয়েছে কিছু একটা ত্রুটিতে সন্তান আসছে না অনেক ডাক্তার দেখিয়েও। মিলি তো বাচ্চার জন্য আকুল হয়ে ছিলোই, ও যেন হাতে স্বর্গ পেলো। তাড়াতাড়ি বাচ্চাটাকে নিয়ে একটা শালে জড়িয়ে একটু দুধ গরম করে অনভিজ্ঞ হাতে চামচ করে একটু একটু করে খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল,বাচ্চাটা পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি আর মিলি পাশের ঘরে গিয়ে ফিসফিস করে আলোচনা করে ঠিক করলাম আজ ভোর হওয়ার আগেই আমাদের কিছু দরকারী জিনিস পত্র নিয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে দূরে কোনো জনবহুল শহরে চলে যাবো, নয়তো কাল সকালে কাজের মেয়ে এলে পাঁচকান হয়ে গেলে একটা ঝামেলায় পড়ে যাবো। এরপর ফ্রেশ হয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করে আমরা সব কিছু দরকারি জিনিসপত্র একটা বড় সুটকেসে ভরে ফেল্লাম। বিছানায় একটু গা টা এলিয়ে দিলাম ভালো করে শুলাম না কেউ যদি ঘুমিয়ে পড়ি, রাত শেষে বেরোতে না পারলে মুস্কিলে পড়ে যাবো।
______#শিকড় (২)দীপিকা পালিত _
তখনও সূর্য ওঠেনি ভালো করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাচ্চাটাকে বুকে করে অনিশ্চিতেরপথে। স্টেশনে গিয়ে টিকিট কেটে একটা দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে বসলাম মিলি র পরামর্শ মতো তীর্থ স্থানে যাওয়াই ঠিক করলাম। কারণ তীর্থস্থানে সবসময়ই ভীড় কেউ কারুর বিষয়ে বেশি কৌতূহল দেখায় না। দুদিন ধকল করে বৃন্দাবন পৌঁছে বহু কষ্টে একটা বাড়ী ভাড়া পেলাম, বাড়ীর মালিক একজন বিধবা মধ্যবয়সী মহিলা। তাঁকে একমাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে দিতে তিনি মহা খুশী। উনিই লোক ঠিক করে দিলেন দুবেলা রান্না করে দেবে আর ফাইফরমাশ কাজ করে দেবে।

বাংলা ছোট গল্প অনলাইন

একটু নিশ্চিন্ত হয়ে অফিসের বসের সাথে কথা বলে সাত দিনের ছুটির বন্দ্যোবস্ত করে নিলাম। তারপরে বেরোলাম বাচ্চার জামাকাপড় ফুড ঘরের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে। সাতদিন বাদে মিলিকে (বাড়ীওয়ালা) মাসীমার হেফাজতে রেখে কলকাতায় ফিরে গেলাম। সহকর্মী দের বদান্যতায় একজনের বাড়ীর একতলায় ভাড়া পেলাম, খুব আলো হাওয়া সামনে একটা ছোট বাগান আছে কাছেই বাজার। দিন পনের বাদে মিলিকে আর মিঠাই কে কলকাতায় নিয়ে এলাম।

বাচ্চাটার নাম দিয়েছি মিষ্টু মিঠাই বলে ডাকি, ও আমাদের জীবন টা ও মিঠে করে দিয়েছে। দিন যায় মিঠাই এক পা দু পা করে চলে আর নানা কথা কলকল করে বলে যার বিন্দু বিসর্গ ও বোঝা যায় না কিন্তু তার মধ্যেই যেন এক অপার্থিব আনন্দ পেতে লাগলাম। কখনো আমার কোলে কখনো মিলির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিন যায় মিঠাই বড় হতে থাকে স্কুল শেষে কলেজে ঢোকে। খুব ভালো রেজাল্ট করে মিঠাই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়েছে বলে একটু চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলো মিঠাই কিন্তু মিলির পছন্দ নয় বলে বিয়েতে রাজি হয় বাধ্য হয়ে।
আজ মিষ্টুর (সুস্মিতা) বিয়ে হয়ে গেলো এক গা গয়না বেনারসি শাড়ী সিঁদুরে যেন মা দূর্গার মতো লাগছে আমার মিঠাই কে। মা মেয়ের কান্না দেখে আমার চেপে রাখা চোখের জল অবিরল ধারায় পড়তে লাগলো। কি মায়ার বাঁধন, মেয়ে যে ঘরে তো চিরকাল রাখতে পারবো না। ওরা যে পরের ঘর আলো করবে বলেই জন্মায়, মা বাবার বুক শুন্য করে শিকড় ছিঁড়ে যেতে হয় ওদের। কি জানি ওখানে গিয়ে শিকড় পাবে নাকি?

আরো পড়ুন,

ছোট গল্প বাংলা (গন্তব্য)

ভালোবাসার ছোট গল্প

Share This Article