Bengali News: Read the latest news on business, entertainment, tech, sports, automobile, lyrics and many more from World's leading Bengali News Paper Bong Connection
Bengali News: Read the latest news on business, entertainment, tech, sports, automobile, lyrics and many more from World's leading Bengali News Paper Bong Connection
সেবার বড়দিনে কলকাতায় ঠান্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকালবেলা বাইরের বারান্দায় রোদ্দুরে শালমুড়ি দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছি। কাগজে বড়দিনের কেক কোথায় ভালো পাওয়া যায় বেশ বিস্তরে লিখেছে। কেকের খবর তরিয়ে তরিয়ে পড়ছি ,
তখন শুনতে পেলাম আমাদের বাড়ির লোহার গেট খোলার ঠ্যং শব্দ। মুখতুলে দেখি বাড়িতে ঢুকছে নীলু। হাতে একটা ছোট বাজারের ব্যাগ। আমাদের বাড়িটা ছিলো বাজার যাওয়ার রাস্তায়। বেশ টের পেলাম নীলু কিছু খবর দিতে এসেছে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নীলু বলে ,’ দাদা গেছে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে। তাই বড়দিনের বড়াখানার জন্য মাংস কিনতে এসেছিলাম। আমি খালি বলেছিলাম ,’ দুপুরে খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিস বুঝি?’ নীলু মাথা নাড়িয়ে বলে , ‘আজ্ঞে না। কোনো,নিমন্তন্ন নেই। মনে করিয়ে দিতে এসেছিলাম যে তুমি আমায় সন্ধ্যাবেলা পার্ক স্ট্রিটে সাহেবদের
কেক খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছিলে তাতে আমি রাজি। বিকেল চারটেয় বাস স্ট্যান্ডে থাকবো। ‘ এইটুকু বলে নীলু যেমন এসেছিলো তেমনি বেরিয়ে গেলো। আমি ভেবে পাইনা কবে যে আমি ওকে সাহেব পাড়ায় কেক খাওয়ানোর নেমন্তন্ন করেছিলাম। টের পেলাম নীলু আজ বেড়ানোর মুডে আছে।
সান্তা ক্লজ কে ?
বাস স্ট্যান্ডে এসে দেখি নীলু বেশ সেজে গুজে পিঙ্ক কালারের শাড়ি পরে এসেছে। কাঁধে ঝুলছে একটা ঢাউস ব্যাগ। আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি ,’ এতো বড় ব্যাগ নিয়েছিস কেন ?’ নীলু বলে ,’ আজকেতো তোমার ঘাড় ভেঙে কেক খাবোই , আগামীকাল খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতে হবে তো। ‘ আমি বলি ,’ তোর ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে তুই অনেক কিছু নিয়ে চলেছিস সাহেব পাড়ায়। ‘ নীলু উত্তর ,’ মেয়েদের ব্যাগে কি আছে তা নিয়ে প্রশ্ন করাটা মোটেই ভদ্রতা নয়। ‘ আর কোনো প্রশ্ন না করে আমরা দুজনে বাসে উঠে পড়ি।
সান্তা ক্লজের গল্প
সন্ধ্যায় যখন পার্ক স্ট্রিটে নামলাম , দেখি সারা রাস্তা আলোয় ঝলমল করছে। বহু লোকের ভিড়। বেশির ভাগ সপরিবারে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এসেছে। বেশির ভাগ এসেছে সন্ধ্যায় আলোর মেলা দেখতে , তার সঙ্গে এদিক ওদিক ঘুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ি ফিরবে। রাস্তায় হাঁটা দায় । সবার হাঁটাচলায় একটা মস্তির ভাব। সব দোকান পাট সেজেগুজে বসে আছে। আমি নীলুকে বলি ,’চল সামনেই ফ্লুরিস , ওখান থেকে খাওয়া শুরু করি। ‘ বলেই ঘুরে দেখি নীলু নেই , একটু পিছনে ফুটপাথে একটা বাচ্চা ছেলে বাঁশি বিক্রি করছে তার সামনে দাঁড়িয়ে। ছেলেটা যে বাঁশি বেচছে তা খুব ছোট। ঠোঁটে চেপে ফুঁ দিলে প্যাঁ প্যাঁ করে আওয়াজ বেরোয়। নীলু দেখি সেই বাঁশি কিনে মুখে পুরে প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজ করতে করতে আমার সাথে হাঁটা শুরু করলো। আমি বলি , ‘ নীলু আওয়াজ বন্ধ কর। লোকে বিরক্ত হয়ে তোকে মারতে আসবে। ‘ কিন্তু কে শোনে কার কথা। উল্টে নীলু আরো জোরে জোরে ওই বাঁশিতে আওয়াজ দিতে লাগলো।
Loading...
আর একটু হাঁটতেই দেখি একটা বাচ্চা ছেলে রাস্তার ধারে পিতলের কেটলিতে চা বিক্রি করছে। নীলুর ইচ্ছে হলো ভাঁড়ে চা খাওয়ার। ওই ঠান্ডায় অদা দেওয়া চা খেতে বেশ ভালোই লাগলো। চায়ের দাম মেটানোর পর নীলু ওই বাচ্চাটাকে নিজের কেনা বাঁশিটা দিয়ে বলে ,’ এটা বাজাতো দেখি।’ ছেলেটা দেখি মহা খুশি হয়ে তারস্বরে বাজাতে লাগলো। নীলু এবার ওকে বলে ,’ এই বাঁশিটা বাজাতে থাক , দেখবি তোর খরিদ্দারের ভিড় লেগে যাবে। ‘ আমি বলি ,’ যাক বাঁচা গেলো। তোর মুখ দিয়ে আর প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজ শুনতে হবে না। ‘
তারপর দুজনেই হাঁটতে থাকি। নীলু একের পর এক ঝাল মুড়ি , ফুচকা , চাট এই সব দোকানে দাঁড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে আমাকেও ওর সঙ্গে খেতে হয়। আমি যত বলি এই রাস্তায় এতো রেস্টুরেন্ট , চল কোথাও ঢুকে খাওয়া দাওয়া করি। নীলু খালি বলে , ‘সে সব পরে হবে। খাওয়া কি আর পালিয়ে যাচ্ছে নাকি রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ‘ তারপর দেখি নীলু সামনে একটা মাড়োয়াড়িদের খাবারের দোকানে আমাকে নিয়ে ঢুকলো। সেখানে বসে ধোকলা আর দহিবড়া খাওয়া হলো। আমি খালি বলি , ‘ তুই আমাকে টেনে আনলি এতটা দূরে সাহেবপাড়ার কেক খাওয়ার জন্য। আর এখন এই সব দিশি জিনিষ সব খেয়ে চলেছিস। ‘ নীলুর সপাট উত্তর , ‘ যা সব খেলাম তা কোনো,অংশে কেকের
চেয়ে কম সুস্বাদু নয় ,’
দোকান থেকে বেরিয়েই দেখি একটা এংলোইন্ডিয়ান বুড়ি হাত পেতে ভিক্ষা চাইছে। ওই ঠান্ডার মধ্যে পরনে একটা ফুল শার্ট আর স্কার্ট। গরম কাপড় বলতে কান ঢাকা একটা মাফলার। আমি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পিছন ফিরে দেখি নীলু ওই বুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। নিজের ব্যাগ থেকে বার করলো একটা ফুল সোয়েটার। বুঝতে পারলাম নতুন সোয়েটার। নীলু ওই বুড়িকে তাড়াতাড়ি সোয়েটার দিয়ে আমার কাছে চলে এলো। নীলু বলে ‘চলো ফিরে যাই। ‘ আমি বলি এতো তাড়াতাড়ি ফিরবি কেন ?’ নীলু কেমন এক ঘোরের মধ্যে বলে ,’ সান্তা ক্লজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো আর কি চাই। ‘ আমি একটু অবাক হয়ে বলি , ‘ তার মানে। ‘ নীলু হাসতে হাসতে বলে, ‘সান্তা ক্লজ সব সময়ে ছেলে কেন হবে। সান্তা ক্লজ আজ দাড়ি ফাড়ি ছেড়ে , নিজের পিঠের গিফ্ট ভর্তি বস্তা বাড়িতে রেখে এসে ওই বুড়ির বেশে আজ আমাদের দেখা দিলো। আমি ওই সোয়েটার কাল কিনেছিলাম কাউকে বড়দিনে দেওয়ার জন্য। আমার মনে হলো সান্তা ক্লজ ওই বুড়ির বেশে যেন আমার জন্যই এই ঠান্ডায় অপেক্ষা করছিলো’।
হটাৎ নীলু বলে ,’ এই ঠান্ডায় সান্তা ক্লজের সঙ্গে দেখা করে হাঁটতে বেশ লাগছে। ‘ নীলুর কথার মধ্যে আমি শুনছি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
“মনে মনে বহুদূর চলে গেছি – যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে
একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি।”