প্রায় আট বছর পর বৃষ্টি ভেজা কলকাতা শহরটাকে দেখছে অনু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেনটা ল্যান্ড করার আগের থেকেই কলকাতার আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা দেখতে পেয়েছিল। প্লেনে বসেই নিজের মনের সঙ্গে আকাশটার তুলনা করছিল সে। নিজের প্রিয় শহরে পা দেওয়ার আগে বুকের ভেতরে তার একটা দমচাপা কষ্ট হচ্ছে। হৃদয়ের স্পন্দন তীব্র বেগে দৌড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দুচোখ ছাপিয়ে গলে পড়বে। আকাশের গুমোট ভাবটা দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি বৃষ্টিধারা মাটিতে পড়বে।
রোমান্টিক প্রেমের গল্প
বৃষ্টি থামার শেষে (প্রথম পর্ব)
এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে একটা হলুদ ট্যাক্সি ডেকে নেয় অনু। এবার তার গন্তব্য বিধান নগর। সেখানে করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডের কাছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা বসেছে। এই বইমেলায় একটি নামী প্রকাশন সংস্থা থেকে আর তৃতীয় প্রেমের উপন্যাস ‘গোধূলির অস্তরাগে’ প্রকাশিত হচ্ছে। এর আগেও তার দুটি বই ‘অপরাজিতা’ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছে ‘অপরাজিতা’ একজন নামী উঠতি লেখিকা। তার পার্সোনাল ব্লগ পেজের অসংখ্য গুনমুগ্ধ পাঠকপাঠিকা আছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে তার একাধিক লেখা বেশ জনপ্রিয় এবং পাঠকমহলে সমাদৃত। পাঠকদের অনুরোধে এবং কিছুটা ঝোঁকের বসে অনু তার প্রথম উপন্যাস ‘বকুল ফুল’ বই হিসেবে প্রকাশ করেছিল। এই একটা বই তাকে বই প্রেমী বাঙ্গালীদের কাছে লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। পরের বছর বইমেলায় ‘অপরাজিতা’ ছদ্মনামে বেরিয়েছিল ‘প্রেমের রামধনু’। সেটাও পাঠকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। প্রায় তিন বছর ধরে ‘অপরাজিতা’ ছদ্মনামের সে লেখালেখি করছে। এবার তার প্রকাশক সন্দীপদার বারংবার অনুরোধে প্রথম অনুর স্বনামে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘গোধূলির অস্তরাগে’ উপন্যাসটি; লেখিকা ডাক্তার অনিন্দিতা রায়। আর সেই উপন্যাসের প্রকাশ উপলক্ষে তার কলকাতা বইমেলায় আসা। বর্তমান সময়ের একজন নামী সাহিত্যিকের হাত দিয়ে বইটির শুভ উন্মোচন অনুষ্ঠানটি রেখেছেন সন্দীপবাবু। সন্দীপদা এবং উনার সহধর্মিনী শ্রেয়সী বৌদির বারবার অনুরোধে বাবা মাকে সঙ্গে করে কলকাতায় আসতে বাধ্য হয়েছে অনিন্দিতা। নাহলে তো কবেই সে তার প্রিয় শহর কলকাতার সাথে আড়ি করে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে পড়ে আছে। কলকাতার উপর বড্ড অভিমান জমে আছে তার। শুধু কি কলকাতার সঙ্গে অভিমান নাকি তার বিশেষ বন্ধুর প্রতি অভিমান জানে না অনু। হয়তো বা জানে কিন্তু মানতে চায় না।
সেরা প্রেমের গল্প
অভিমানের স্তর জমে জমে এক চরম উদাসীনতায় এতদিন সে এই কলকাতা শহরটাকে বয়কট করে চলেছে। আসলে এছাড়া তার কোনও উপায় নেই। কলকাতার প্রতিটা রাস্তায় — প্রতিটা দ্রষ্টব্য স্থানের আনাচে কানাচে— মেট্রো রেলের কামরায়— কলকাতার প্রতিটা উৎসবে— কলকাতার আকাশে প্রকৃতিতে শুধু ‘সে’ জড়িয়ে আছে। কলকাতার বাতাসে শ্বাস নিলে এখনও তার গায়ের মিন্ট ও চকোলেটের মতো ফরাসি সেন্টের হালকা মিষ্টি গন্ধটা পায় অনু। এই গন্ধটা এতটাই তার অবচেতন মনকে অধিকার করে রেখেছে যে তার নাক আর কোনও গন্ধ অনুভব করতে পারে না। স্মৃতির হাত থেকে পালাতে পালাতে তামিলনাড়ুর চেন্নাই শহরে সে নিজের ছোট্ট বাসা বেঁধেছে। বাবা মা নিয়ে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে।
পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার ফর্সা, স্লিম ডাক্তার অনিন্দিতা রায় পেশায় একজন নামী নিউরোসার্জন। চেন্নাইয়ের নামী একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সে যুক্ত আছে। বয়স প্রায় ছত্রিশ বছর। এখনও অবিবাহিত। অনিন্দিতার বাবা মহাদেব রায় এবং মা রমা রায় অত্যন্ত সাধারন পরিবারের। অনিন্দিতা তাদের একমাত্র মেয়ে। অনিন্দিতার ডাকনাম অনু। সে পেশায় একজন নামকরা ডাক্তার হলেও নেশায় একজন লেখিকা। নিজের প্রফেশনের চাপ সামলে অবসর সময়ে সে একটু লেখালেখি করে।
ছোট রোমান্টিক প্রেমের গল্প
ট্যাক্সি চেপে কিছুদুর এগিয়ে যেতেই আকাশ ভেঙে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার পর কলকাতার রাস্তাঘাট জলের তলায় চলে যায়। ট্যাক্সির কাচের জানলাটা হালকা খুলে বৃষ্টিভেজা শহরটাকে দেখে অনু। বৃষ্টিটা সদ্য একটু ধরেছে। অনুদের ট্যাক্সিটা সিগন্যালে দাঁড়িয়েছে। সে দেখতে পায় ফুটপাতে কতগুলো ন্যাংটো ছেলে বৃষ্টির জলে মহানন্দে ভিজছে। কয়েকজন আবার পলিথিনের প্যাকেট পেঁচিয়ে বড় বল বানিয়ে নিয়ে লাথিপেটা করে খেলছে। বস্তির বেশ কিছু মহিলা লাঠি হাতে সামনের ড্রেন থেকে পলিথিনের প্যাকেট তুলতে ব্যস্ত। মনে মনে সে বেশ বিরক্ত হয়।
এই আমরা মাঝে মাঝে এত কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করি যে তার জন্য আমাদের চরম মূল্য চোকাতে হয়। এই যত্রতত্র পলিথিনের প্যাকেট, যত নোংরা আবর্জনা সব ড্রেনে ফেলে দিই। একটু বৃষ্টি হলেই ড্রেনগুলো উপছে গিয়ে কালো নোংরা দূষিত জল বস্তির ঘরগুলোতে ঢুকে যায়। এর ফলে বস্তিবাসীদের মধ্যে নানা দূষিত রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। ড্রেনের কালো নোংরা জল দেখতে দেখতে বাচ্চাগুলোর দিকে তাকায় অনু। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আমাদের কৃতকর্মের খেসারত দিচ্ছে। এরই নাম কলকাতা। এখন আবার স্লোগান উঠেছে কলকাতা নাকি লন্ডন হবে। কথাটা মনে আসতেই ঠোঁটে একটু আলতো হাসি খেলে যায় তার।
নতুন রোমান্টিক গল্প
তাদের ট্যাক্সিটা তখন বাগুইহাটি পেরিয়ে বিধান নগরের পথে ছুটে চলেছে। গন্তব্যের একটু আগে ট্যাক্সিটা আবার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টি ভেজা কলকাতা শহরের চেনা জলছবি আনমনা করে অনুকে। বৃষ্টিস্নাত দুটো কাক ইলেক্ট্রিকের তারে বসে নিজেদের ডানা শুকনো করছে। ছাতার নিচে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পরস্পর পরস্পরের গা ঘেঁষে হাঁটছে ও হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। তার মন ডুব দেয় অতীতের সমুদ্রে।
আরো পড়ুন, Romantic Valobashar Golpo
” এই বাবাই— বাবাই, ঐদিকে হাঁ করে কি দেখছিস? গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে সে খেয়াল নেই।”
বৃষ্টি আরম্ভ হতেই নিজের হাতের ছাতাটা মেলে বাবাইকে ডাকতে ডাকতে দ্রুত তার কাছে পৌঁছায় সদ্য যুবতী অনু। ছাতাটা বাবাইয়ের মাথার উপর মেলে ধরে।
” ওই মেয়েটাকে দেখছিস্ অনু, কি চাল মাইরি। পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেল– যেন মন্দাকিনী।”
বাবাইয়ের কথা শুনে অনুর মাথাটা গরম হয়ে যায়।
” তা এই মাঝ রাস্তায় ভিজে ভিজে লোফারের মতো যে মন্দাকিনী দেখছিলি, এরপর একসঙ্গে কুড়ি পঁচিশটা হাঁচি হলে কে সামলাবে? তখন আসবে তোর মন্দাকিনী তোর সেবা যত্ন করতে? তোকে ঔষুধপত্র খাওয়াতে? “
” ওসব কাজ মন্দাকিনী কেন করবে অনু। আমার ট্রিটমেন্টের জন্য তো ডাক্তার অনিন্দিতা রায় আছে। মন্দাকিনী শুধু আমার স্বপ্নে এসে আমার হাতটা ধরলেই হল। তাতেই আমি খুশি। আমি শুধু আমার মন্দাকিনীর সঙ্গে রোমান্স করব।”
” শালা হা**, মেয়ে দেখলেই ফ্ল্যাটিং শুরু। এই তুই পারিসও বটে বাবা। এসব করে তুই ক্লান্ত হোস্ না? মেডিক্যাল কলেজে নিজের এমন রোমিও ইমেজ বানিয়েছিস্ যে আমি লজ্জা পাই লোকের কাছে তোকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিতে। সবাই ভাবে আমি বুঝি তোর গার্লফ্রেন্ড।”
অনুর কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে বাবায়।
” তুই??? আর আমার গার্লফ্রেন্ড! যারা এসব কথা ভাবে তারা সব এক একটা পাগল। সবাই মানসিক পেশেন্ট। তোর আর আমার মধ্যে তারা কি মিল দেখতে পায় জানিনা। তুই আগে নিউরোসার্জেন হ অনু, তারপর এসব পাগল ছাগলদের ধরে ধরে ব্রেন অপারেশন করিয়ে দিবি।”
বাবাইয়ের কথায় অনু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। কথা বলতে বলতে বাবাই এগিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ মাথায় গায়ে জল পড়তে দ্রুত পিছিয়ে এসে অনুর ছাতার নিচে ঢুকে যায়।
” কি ব্যাপার হঠাৎ স্ট্যাচুর মতো থম মেরে দাঁড়িয়ে গেলি যে ‘ভেবলি’?”
দ্রুত চারপাশটা দেখে নেয় অনু।
” এই বাবাই তুই আমাকে ‘ভেবলি’ বললি কেন? তোকে বারণ করেছি না আমাকে আর ভেবলি বলবি না। এখন আমি বড় হয়ে গেছি। ‘ভেবলি’ শুনলে আমার এখনকার বন্ধুরা আমায় রাগাবে।”
আরো পড়ুন, সেরা ভালোবাসার গল্প
” তুই আমার ন্যাংটো বয়সের বন্ধু জানেমন। তোকে আমি ‘ভাবলি’ ‘কেবলি’ ‘তোবড়ি’ যা খুশি বলতে পারি। আমার সেই অধিকার আছে। আমি একবার নয় একশো বার বলবো– ভে— ব—লি ভে–ব—লি।”
হো হো করে হাসতে থাকে বাবাই।
” তবে রে শয়তান ছেলে;দেখ তোর হচ্ছে।”
চকিতে বাবাইয়ের চুলের মুঠি টেনে ধরে অনু।
” এই অনু ছাড়্ লাগছে।”
বাবাইয়ের ভেজা চুলে হাত দিয়েই অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে অনু।
” এই বাবাই তোর পুরো মাথাটা তো ভিজে গেছে। এখনই ঠান্ডা লেগে যাবে। আয় মুছিয়ে দিই।”
নিজের শুকনো ওড়না দিয়ে বাবাইয়ের ভেজা চুল মুছিয়ে দেয় অনু। বাবাই দুই হাতে ছাতা ধরে থাকে। মিষ্টি একটা মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।
(চলবে)
বন্ধুরা আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম আমার পরবর্তী উপন্যাস বৃষ্টি থামার শেষে। এটি একটি বড় উপন্যাস।
আরো পড়ুন,
শরীরী প্রেমের গল্প – শারীরিক প্রেমের গল্প