বাংলা হাসির গল্প – মজার গল্প – Bangla Hasir Golpo

শুনছো গো, - এবার পূজোয় কিন্তু আমি রাঁধতে পারবো না, এই বলে দিলাম ! মেজদি , রাঙাদি, আমাদের শম্পি - ওরা সব পূজোর একমাস আগে থেকে কত প্ল্যান - প্রোগ্রাম করে রাখে, পার্লারে যায়, প্যান্ডেল হপিং করে, বড়ো বড়ো হোটেলে খায়

Samaresh Halder
10 Min Read
বাংলা হাসির গল্প - মজার গল্প - Bangla Hasir Golpo
Loading...

বাংলা গল্প হাসির

” শুনছো গো, – এবার পূজোয় কিন্তু আমি রাঁধতে পারবো না, এই বলে দিলাম ! মেজদি , রাঙাদি, আমাদের শম্পি – ওরা সব পূজোর একমাস আগে থেকে কত প্ল্যান – প্রোগ্রাম করে রাখে, পার্লারে যায়, প্যান্ডেল হপিং করে, বড়ো বড়ো হোটেলে খায় ! আমার কপালটাই ফাটা ! ওইজন্যই তো বাবাকে বলেছিলুম ওই রাবণের গুষ্টিতে বিয়ে দিও না , তা শুনলে তো ! এতগুলো বছর আগুণ – তাতেই কেটে গেলো আমার ! সন্তু আর বৌমার তো টিকির দেখাই পাওয়া যাবে না ওই কদিন ! ওরা আজকালকার ছেলেমেয়ে – বাঁচতে জানে ! আমরাও এবার ওইকটা দিন নিজেদের মত করে কাটাব ! আমার বন্ধুরা বলেছে – সাতচল্লিশ আবার বয়স নাকি! বিদেশে তো এই বয়সে বিয়ে হচ্ছে এখন !”

সকালে ঘুম থেকে উঠে ইসবগুলের গ্লাসে চুমুক দিতে যাচ্ছিলেন সলিলবাবু । গিন্নি স্নিগ্ধার শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণী শুনে বিষম – টিশম খেয়ে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা ! মুখটা তেতো হয়ে গেলো একেবারে ! গিন্নি কি আজ ইসবগুলের সাথে চিরতাও মিশিয়েছে ?

প্রচন্ড হাসির গল্প

Loading...

ভীষণ হিসেবী মানুষ সলিলবাবু । বাহান্ন বছর বয়স হলো তাঁর – এই এতদিনে অফিসে একটা প্রমোশন হয়েছে। সে আর কত টাকা বেড়েছে – হাজার দুই বড়জোর ! কিন্তু গিন্নি তারপর থেকেই এমন ভাব করছেন – যেন তিনি ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের গিন্নি ! কোনো ছকেই জব্দ করা যাচ্ছে না তাঁকে। এ বুলডোজার যে কখন কিভাবে তেড়ে আসে , বোঝাই যায় না ! সক্কাল সক্কাল যে রামনাম শুনিয়ে গেলো , তাতে পূজোর পরে ঝোলভাত জুটবে কিনা, সন্দেহ ! কোনরকমে পাখির ছানার মতো চিকণ গলায় বললেন – ” কবে থেকে শুরু হচ্ছে প্রিপারেশন ?”

কমেডি হাসির গল্প

-” এই তো, আজ থেকেই ! হাতে আর সময় কোথায় ! হাজার পাঁচেক অন্তত রেখে যেও – বীথিকা আসবে, ওই যে আমার স্কুলের বন্ধু গো ! নিউ মার্কেটে যাবো, মডার্ন ড্রেস – পত্তর তো ওখানেই ভালো মেলে ! বিথী তো নিউ মার্কেট ছাড়া একটা সেফটিপিনও কেনে না ! হোটেলগুলোও একবার দেখে আসবো।”

আবার বীথিকা ! শিউরে উঠলেন সলিল । সাতসকালেই অতবড় ধাক্কা হজম হলো না বোধহয় ! অত্যাধুনিকা মহিলা – বিশদ বিবরণ আর দিয়ে কাজ নেই ! চাপ আর সামলানো গেলো না – মুক্তকচ্ছ হয়ে বাথরুমে দৌড়লেন তিনি।

দুপুরের আগেই মূর্তিমতী বিপদ হাজির ! মুখে কয়েক পোঁচ ডিসটেম্পার করা , মুখের চাইতে কয়েক সাইজ বড়ো সানগ্লাস , কাঁধ থেকে ঝুলছে ঢাউস ভ্যানিটি ব্যাগ ! ভ্যানিটি সত্যিই দেখবার মত ! সঙ্গে আবার এক ভদ্রলোক – সলিলের চাইতে বয়সে দু তিন বছরের ছোটই হবেন । তাঁরও গায়ে চকরা – বকরা শার্ট , ছুঁচলো বুট, মাথার চুল আলকাতরায় চুবিয়ে এসেছেন বোধহয় – উইগও হতে পারে ! ( সলিলের তো এরই মধ্যে মাথার পেছনে বেশ চকচকে আয়না তৈরি হয়েছে !)

আরো পড়ুন, দমফাটা হাসির গল্প

-” স্নিগ্ধা, দ্যাখ – দিব্যেন্দুকে নিয়ে এলুম, কল্লোলকেও খুঁজে পেয়েছি রে ! এবার পূজোটা ফাটাফাটি জমে যাবে ! তুই শুধু তোর ওই মধ্যবিত্ত কাকিমা – মার্কা সাজগোজগুলো ছাড়! আরে, ছেলের বিয়ে দিয়েছিস বলে তোর এনজয়মেন্ট বন্ধ হবে কেন?”

আজ আর সলিল ভয়ে ভয়ে অফিসই যান নি – আলমারির তাকে জামাকাপড়ের নিচে হাজার দশেক আছে, কম পড়লে যদি ওদিকে হাত পড়ে ! এখানে তো বেড়ে খেলাও যাবে না, শেষে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে! খেয়েদেয়ে নিজের শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি – বীথিকা ক্যাচ লোফার মত লুফে নিলো তাঁকে ।

-” আরে জেন্টলম্যান, পালাচ্ছেন কোথায় ! দিব্যেন্দুর সাথে আপনার আলাপ করিয়ে দেবো বলেই তো হিরোকে ধরে নিয়ে এলাম ! এককালে আপনার স্ত্রীর প্রতি ওর দূর্বলতা কলেজে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিলো। স্নিগ্ধা অবশ্য কোনো কথাই বলে নি কোনোদিন। তবু ওকে দেখে ওর মনের অবস্থাটাও বোঝা যেত। নেহাত আপনি কোথা থেকে টপকে পড়লেন – নাহলে নিগোশিয়েট করে স্নিগ্ধার হিস্ট্রি জিওগ্রাফি আমি বদলে দিতাম। আরে, চটে গেলেন নাকি ? জাস্ট মজা করছিলাম !”

শিক্ষনীয় হাসির গল্প

পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো সলিলের ! আবার বাথরুম যেতে হবে নাকি ? এতো কি সহ্য হয় ! এই জবাকুসুম তেল মাথায় থাবড়া মেরে মেখে খোঁপা – বাঁধা, চারবেলা ঘরে গঙ্গাজল ছিটানো মহিলার এই বয়সে পুরোনো বয়ফ্রেন্ড ! তাও একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ! এ তো কেলেঙ্কারি ব্যাপার ! ছেলে – বৌমা আছে বাড়িতে – কেচ্ছা ছড়াতে কতক্ষণ ! আর এই হিরো যদি এবার বাড়িতে যাতায়াত করা ধরে – মান থাকবে তাঁর? আবার জজ সাহেবাকে কিছু বললেই তর্জন গর্জন আর কান্নার ঢেউ তাঁকে যে কোথায় নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলবে , তা কি কেউ জানে ! ওই বান্ধবী মহিলা ( বিয়ে – থা করে নি, ও সংসারের জানেটা কি !) নিজেই এক আপদ – আবার আ – ছোলা বংশদন্ড উপহার দিয়ে যাচ্ছে! বাড়ির গিন্নি বিগড়ে গেলে সে বাড়ির আর কি কিছু থাকে ! মতলব একটা আঁটতেই হবে – যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে !

রাইভ্যালকে কোনরকমে ‘ হাই ‘ করে বেজার মুখে নিজের শোবার ঘরে আশ্রয় নিলেন সলিলবাবু । ওরা সবাই মিলে ওই লোকটার গাড়িতে করে নিউ মার্কেট না কোথায় একটা চলে গেলো।

বেশ কিছুক্ষণ বিছানায় বসে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে লাগলেন সলিল। এতটা বয়স হয়ে গেলেও বউ তাঁর দেখতে মন্দ নয় ! এখনো শরীরটা তবলার মত হয়ে যায়নি ! কে যেন তাঁকে একবার বলেছিল – প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায়না! নিজে কি ছাই জানেন, না, ওই বেলতলায় গেছেন কখনো ! ওই বিনোদ খান্না মার্কা চেহারার মোহ যদি এই বয়সেও আবার চাগিয়ে ওঠে ! প্রথম ধাক্কাতেই তো তিনি রিজেক্ট ! যা মডার্ন হওয়ার শখ জেগেছে আজকাল ! ডিভোর্স তো আবার এই বয়সেই বেশি হচ্ছে ! তেমন হলে তো আত্মহত্যা করা ছাড়া গতি নেই !

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেলো । রঞ্জন এখনও ‘ চলো চলো ‘ তেই আছে না ! ওকে একটা ফোন করা যাক – এক্ষুণি !

সাড়ে সাতটা নাগাদ স্নিগ্ধা বাড়ি ফিরে এলো। সন্তু আর তার বউ আজ রাতে বাড়ি ফিরবে না – সেটাই বাঁচোয়া ! স্নিগ্ধা তো ভোল পালটে ফিরেছে ! এইটুকু সময়ে এতসব হয়ে গেলো – ও অত শিখলই বা কোথায় ! নির্ঘাত ওই মেয়েটা শিখিয়েছে ! এতো বড়ো শত্রু যেন কেউ না পায় – এই বুড়ো বয়সে তাঁর ঘর ভাঙতে এসেছে ! ক্ষমতা থাকলে মেয়েটাকে তিনি ভস্ম করে ছাড়তেন ! আবার গোদের ওপরে বিষফোঁড়া ওই ক্লাউনটাকে এনে হাজির করলো ! কে জানে কপালে কি আছে এবার ! শুরুতেই যদি এই হয় – শেষটা কি হবে ভেবে সলিলের মাথাটা বনবন করে ঘুরে গেলো।

প্রচন্ড হাসির ছোট গল্প

হাত – মুখ ধুয়ে পা পর্যন্ত একটা ঢোলা পোশাক পরে চা নিয়ে এলেন গিন্নি । গদগদ মুখ একেবারে !

-” বাড়িতে পরার জন্য চারটে কাফতান কিনলুম ! এখন আর কেউ বাড়িতে শাড়ী পরে না । দিব্যেন্দু বললো – ওর মিসেস তো গেঞ্জি আর পালাজো পরে! বড়ো দোকান থেকে ট্রায়াল দিয়ে কিনলুম , বিথী বললো, এক ঝটকায় দশ বছর বয়স কমে গেছে নাকি আমার ! “

-” মা তোমার চুল দেখেই পছন্দ করেছিলেন , সেটাও উড়িয়ে ফেললে একেবারে ?”

-” না, না – ওরা বললো, আমার লম্বাটে মুখের ছাঁদে অত লম্বা চুল মানায় না ! ওটার জন্যই তো বয়স বেশি লাগে ! দিব্যেন্দু লেয়ার কাটতে বললো। ভালো লাগছে না! বিথী বলেছে, পূজোর আগে হেয়ার হাইলাইটিং করিয়ে দেবে। আর একটা দারুণ মজার কথা শোনো – আমরা তো সব বন্ধুরা মিলে পূজোয় একদিন আউটিং এ যাচ্ছি ! খাওয়া – দাওয়া, হৈ – হুল্লোড় ! আহা, ভেবেই আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে ! তুমিও তো তোমার বন্ধুদের সাথে এনজয় করতে পারো ওই দিনটা !”

নতুন হাসির গল্প

খেয়েছে ! হঠাৎ এতো স্বাধীনতা ? চব্বিশ ঘন্টা যে মহিলা অঙ্গুলিহেলনে স্বামীকে নাচান – তিনি হঠাৎ গরুর গলার দড়িটা খুলে দিচ্ছেন ! ব্যাপারটা তো সুবিধের মনে হচ্ছে না ! না, না – বেড়াল প্রথম রাতে মেরে ফেলাই ভালো !

মরীয়া হয়ে এবার সলিলবাবু বলেই ফেললেন -” কিন্তু , আমি তো ওই সময় সাতদিনের জন্য মুসৌরি, নৈনিতালের টিকিট কেটে ফেলেছি , গিন্নি ! তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে বলিনি ! অনেক তো এই সংসারের জন্য করলাম – এবার নিজেদের কথা একটু ভাবি ! খুব আনন্দ করবো আমরা দুজনে ! ফিরবো কিন্তু প্লেনে !”

গিন্নির হতভম্ব মুখের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের ঘরে গিয়ে টিভি চালালেন সলিলবাবু – খবর শুনবেন !

হাজার পঞ্চাশেক বোধহয় খসে যাবে এই দুর্মূল্যের বাজারে ! সে যাই হোক – আপাতত ওই বয়ফ্রেন্ডের ভূত তো মাথা থেকে নামবে !

আরো পড়ুন, রাজার হাসির গল্প

আজব হোস্টেলের আজগুবি গল্প

রোমান্টিক হাসির গল্প

Share This Article