Happy New Year Bangla Golpo 2023 – হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প ২০২৩

Bongconnection Original Published
9 Min Read

 Happy New Year Bangla Golpo 2023 – হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প ২০২৩

Happy New Year Bangla Golpo 2023 - হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প ২০২৩
Loading...

Happy New Year Bangla Golpo 2023

          “কালী ভুলো
” 
                   
 – প্রদীপ দে


       
ভুলোকে বাজার আনতে পাঠাচ্ছে তার বউ কালী।
— ছোটো মাছ নিয়ে আসবে,কিন্তু। সব্জি বাজার কিছু নেই। আলু আগে নেবে। সব মনে করে
যাও, যা ভুলো মন তোমার! ছেলে কিন্তু  কলেজে  যাবে। খেয়ে বেড়োবে।
তাড়াতাড়ি আসবে — মনে রেখো কিন্তু। 
— না, না যাবো আর আসবো। সাইকেলে আর কত সময় লাগবে?
— দেখো আবার আড্ডায় জমে যেওনা যেন।
–আচ্ছা — বলে প্লাস্টিকের থলে নিয়ে বিড়ি ধরিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল ভুলো।সাইকেল চড়ে
পোঁ -পোঁ করে একেবারে বাজারে।   মাছের বাজারে ঢোকার মূহুর্তে পকেটে
হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছে সে। অন্যথায় কি করে? ব্যাগ হাতে এদিক
ওদিকে পরিচিত লোক খুঁজতে থাকে সে। বাড়ি ফিরে আনতে গেলে বউয়ের ঝাড় খেতে হবে তাকে
– এই ভয়ে সে আর বাড়ির দিকে পা মাড়ায় নি।
পল্টন আসছে দেখে ভুলো দৌড়ে যায়। পল্টন হাফপ্যান্ট আর গেন্জি পড়েছিল।
— এই পল্টু -এইপল্টু শোন ,শোন।
আরে ভুলো যে রে? কি ব্যাপার?  একেবারে থলি হাতে যে রে? দেখেচিস একেই বলে
সংসারী মানুষ।
আর আমাকে দেখ, কি সুন্দর সক্কাল সক্কাল খেলতে চলেছি। ব্যাচেলর একেই বলে, বুঝলি?
— আরে রাখতো তোর জ্ঞান ? যদি পারিস কিছু টাকা ধার দে। আমি টাকা আনতে ভুলে
গেছি। এখন বাজার করতে হবে।

Happy New Year Bengali Story

Loading...
— ওঃ এই কথা? এতেই এত ঝামেলা? দেখছিস তো আমি খেলতে যাচ্ছি। টাকা নিয়ে বেড়োই
নি।
তাতে কি হয়েছে? তোর টাকার দরকার সেটা আমি যোগাড় করে দিচ্ছি, চল আমার সঙ্গে।
— আরে তুই তো খেলতে যাচ্ছিস, আমি কোথায় যাবো?
— আরে এত বোকা কেন তুই ? ওই জন্যই না বউয়ের হাতে মার খাস?
— ফালতু কথা বলিস কেন? পারলে টাকা দে, না- হলে চলি। — সাইকেল ঘুরিয়ে নেয়
ভুলো।
— আরে এত রাগ করিস কেন ? তুই টাকা চাইলি আর আমি দেবো না তা কখনো হতে পারে? চল
আমার সঙ্গে, সাইকেল তো আছে সঙ্গে, তাহলে এত ভয় কিসের? যাবি আর আসবি , মাঠে চল,
অন্য কারোর থেকে টাকা ম্যানেজ করে দেবো।যাবি আর চলে আসবি এত চিন্তা কিসের ?


আইডিয়াটা খারাপ নয়। বেশ কাজে দেবে। এই ভেবে ভুলো সাইকেল নিয়ে পল্টন কে বললে–
চল তাহলে তাড়াতাড়ি চল।
আরো পড়ুন,


— হ্যাঁ  তা চল এত তাড়া কেন ভাই? যাবি আর আসবি।
দুজনে হাঁটতে লাগলো। ভুলো আর সাইকেলে চড়তে পারলো না। সময় লাগলেও কিছু করার নেই।
এখন পল্টুই যে তার রক্ষাকর্তা। তাকে খুশিতো করতেই হবে। গল্পও জমে উঠলো তাদের
মধ্যে।
দুমাইল দূরে খেলার মাঠ। বেশ লোকের ভিড়। টুর্নামেন্ট চলছে। ফুটবলের খেলা। পল্টন
যেতেই ওকে সবাই ডাকাডাকি শুরু করলো – ও যে বড় খেলোয়াড় – আবার গোলকীপার! আজকে
ওর খুব কদর! যদি পেনাল্টি হয় তাহলে আজ ওর খুব দরকার -ওই পারবে ইজ্জত রাখতে।
ভুলো ফুটবল খেলা খুব ভালোবাসে। বিয়ের দিনও ও ফুটবল খেলে বিয়ে করতে গেছিলো।
তারপর কি যে হলো? বউয়ের পাল্লায় পড়ে খেলাধুলা সব ডকে চলে গেল। ভুলো আজ আবার
মাঠে এসে নিজেকে সেই পুরানো দিনে হারিয়ে ফেললো। কত স্মৃতি মনে পড়ে গেল। খুব
আনন্দ হলো। খেলার নিয়ম কানুন সব জানতো সে। সেও তো অনেকবার গোলে খেলেছে। চোখ বড়
বড় হয়ে গিলতে থাকলো সব।

হ্যাপি নিউ ইয়ার গল্প ২০২৩

— দাঁড়া আমি তোর টাকার ব্যবস্থা করে এখনি আসছি — বলেই ছুটে মাঠের মধ্যে
হারিয়ে গেলো পল্টু।
ভুলো সাইকেলটাকে বাউন্ডারির একপাশে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে একটা বিড়ি জ্বালালো।
হুইসেল বেজে উঠলো। খেলা শুরু হয়ে গেলো। রোমাঞ্চিত ভুলো পান্টটা গুটিয়ে সকলের
মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। দেখতে পেলো পল্টু গোলে খেলছে। টাকা – বাজার – বউ -ছেলে
-কলেজ — এসব মাথা থেকে হারিয়ে গেলো। মনে হলো সে  নিজেই যেন গোলকিপার।
নিজেই খেলতে থাকলো। যতবার তার গোলে বল যায় ততবারই সে কেঁপে কেঁপে ওঠে। বল তাকে
আঁটকাটেই হবে যে! নব্বই মিনিটের খেলা গোল শুন্য ভাবে শেষ হলো। এরপর এলো
এক্সট্রা টাইমের খেলা। দুবার দশ মিনিট করে খেলেও কোনো টিমই গোল করতে পারলো না।
ভুলো দু প্যাকেট বিড়ি শেষ করে ফেললো। এবার সেই চরম মুহূর্তে এসে হাজির সব্বাই।
পেনাল্টি সট্ হবে। মাঠ থরথর করে কাঁপছে উত্তেজনায়।কি হয় !- কি হয়!

বেশ বড় একটা সময়ের ব্যবধান চলছে। ভুলো সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল -এখন
প্রায় এগারোটা। ভুলোর ওসব কিছু মাথায় এলো না এখন তাকে গোল বাঁচাতেই হবে যে! সে
না গোল কিপার!

মাইকে নানা ঘোষণা চলছিল। চারিদিকে হকারেরা নানান মুখরোচক খাবার বিক্রি হচ্ছিল।
ভুলো অমনোযোগে পকেটে হাত ঢুকিয়ে  দেখলো পকেট ফাঁকা। খাবার তৃষ্ণা সব ভুলে
গেছে সে -কোন চিন্তাই তাকে ভাবালো না।
প্রবল উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে পেনাল্টি কিক্ চললো। প্রায় বারোটা বেজে গেল খেলা
মীমাংসা হতে। শেষে গোল্কিপার পল্টুর টিমই জিত পেল।
এরপর শুরু হলো নাচানাচি। মাঠ প্রদক্ষিণ। পল্টন কে মালা পড়িয়ে কাঁধে তুলে ঘুরানো
হচ্ছে। ভুলো ও আনন্দে কোমড় দুলিয়ে নাচছে। বাড়ির কথা বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছে।
এরপর দেওয়া হবে প্রাইজ। হঠাৎই পল্টু দেখলো ভুলো হাত তুলে তাকে দেখিয়ে হাততালি
মারছে। পল্টনের মায়া হলো – যে সে একেবারে ভুলে গেছে টাকা জোগাড়ের কথা।
তখন প্রায় একটা। পল্টন পঞ্চাশ টাকা এনে ভুলোর হাতে গুঁজে দিলো — তাড়াতাড়ি
বাজার যা অনেক বেলা হয়ে গেছে।
ভুলোর মাথায় বাজ পড়লো। একটা ?
বারোটা বেজে গেল তার।পড়িমড়ি করে সাইকেল নিয়ে দৌড়ে গেল বাজারে।
খানিকটা সাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে একটা বাজার পেল। ভিতরে গিয়ে দেখলো প্রায় সব
ফাঁকা। সব্জি মাছ কিছু নেই। সবাই ধুতে মুছতেই ব্যস্ত। ভুলো অনেক খুঁজেও কিছু
পেলো না।
সাইকেল নিয়ে আরো একটা বাজারে গিয়েও একই অভিঞ্জতা হলো। অনেক খুঁজে এক মহিলার
কাছে দুই বান্ডিল শুকনো লাউ শাক পেলো। তাড়াতাড়ি তাই নিয়ে নিল – এখন যা
পাওয়া  যায় – খালি হাতে তো আর বাড়ি ফেরা যাবে না!  বাজারউলি সব শুনে
ভুলোকে বলে দিল, সে যেন শাক গুলোয় একটু জলের ছেটা দেয়, তাহলেই তাজা হয়ে যাবে।

নতুন বছরের গল্প 

ভুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিলো। ভাবলো বউকে  জানানোর আগেই সে জলে ধুয়ে
নেবে।কিন্তু  রাস্তার কলের জল ও চলে গেছিলো। সাইকেল নিয়ে ফেরার পথে একটা
পুকুর দেখতে পেল সে। ব্যস মাথা খুলে গেল। সাইকেল টাকে স্ট্যান্ড করিয়ে শাক গুলো
একটা সাইকেলে রাখা দড়ি দিয়ে বেঁধে  জলে চুবিয়ে দিল। দড়ি ধরে
আধাঘন্টা  ঠায় বসে রইলো -যাতে বউ কিচ্ছুটি না বুঝতে পারে!
পাড়ার হারু বাবু দেখে চেঁচালো — ও ভুলো কি করিস?
— আরে শাকগুলোরে তাজা করছি।
হারু বাবু তো হো হো করে হেসে চলে গেল — তা ভাল তা ভাল!
পাশের বাড়ির লোক ছুটে এলো, ভাবলো পুকুরের মাছ ধরছে, ছিপ ফেলেছে বুঝি বা!
ভুলো দড়ি টেনে শাক তুলে নিল। সাইকেল চালিয়ে দিল। ভিষণ বেলা হয়েছে বাড়ি ফিরতে
হবে যে!
গলিতে ঢুকেই ভুলো মালুম পেলো সকলেই বাড়িতে  মধ্যাহ্নভোজন করতে ব্যস্ত বা
হয়ে গেছে। গলিতে কারোরই দেখা নেই। সাইকেল টা বাইরে রেখে বাড়ির লোহার গ্রীল
ঠেলতেই বোঝা হয়ে গেল বাড়ি নিস্তব্ধ। শুনশান। ভয়ের প্রমাদ গুনলো ভুলো।

নিউ ইয়ার স্টোরি 

ছোট্ট বাড়ি তাও কারোর টুঁ  শব্দটি নেই। ছেলে দৌড়ে এল এবার – বাবা পালিয়ে
যাও, মা ক্ষেপে রয়েছে। বলেই ছেলেও হাওয়া হয়ে গেল।
গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢোকে ভুলো। দেখে বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে হাড় লিকলিকে
তার বউ
কালী। যাক বাঁচোয়া! ঘুমিয়ে আছে!
কথা গুলো ভাবতে সময় হলো না।একেবারে আস্ত ঝাঁটা  নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো কালী —
আজ তোরই একদিন না আমারই একদিন! হয় তুই থাকবি নয় আমি থাকবো। 
ঝাঁটা পেটা খেতে লাগলো ভুলো আর চেঁচিয়ে আত্মরক্ষার্থে চিৎকার করে বলতে লাগলো —
দেখো কেমন তাজা লাউ শাক জমি থেকে কেটে এনেছি। তুমি খেতে কি ভালোবাসো! একবারটি
দেখো আমার লক্ষ্মীসোনা! গ্রামে গেছিলাম না?  তাইতো একটু দেড়ি হলো এই আর
কি?  আমি কিন্তু  ভুলেতো যায়নি, তাহলে অযথা মারধোর কেন করছো? 
মাথা ঠান্ডা করে একটু দেখোই না?
——————————
সমাপ্ত।
আরো পড়ুন,

Share This Article