Happy New Year 2023 Golpo – নিউ ইয়ার গল্প – New Year Bengali Story
নতুন বছরের নিবেদন
** হ্যাপি নিউ ইয়ার **
ময়নার বায়না যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।অগত্যা ধমক দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়
খুঁজে পেল না ফোকলা। ছোট্ট বোনটাকে বকাঝকা করতে একদমই ভালো লাগে না তার।আসলে
ফোকলার কপালটাই খারাপ। জন্ম থেকে বাপের মুখ দেখেনি তো!!তাই পনেরো-ষোলো বছর
বয়সেই সংসারের কর্তা হয়ে উঠতে হয়েছে।নিজের মালপত্র গুছিয়ে রওনা দেওয়ার আগে
বোনকে বলল,
খুঁজে পেল না ফোকলা। ছোট্ট বোনটাকে বকাঝকা করতে একদমই ভালো লাগে না তার।আসলে
ফোকলার কপালটাই খারাপ। জন্ম থেকে বাপের মুখ দেখেনি তো!!তাই পনেরো-ষোলো বছর
বয়সেই সংসারের কর্তা হয়ে উঠতে হয়েছে।নিজের মালপত্র গুছিয়ে রওনা দেওয়ার আগে
বোনকে বলল,
— “কাজ থেকে ফিরলে মাকে বলবি, ধর্মতলা চত্বরে যাচ্ছি…. ফিরতে দেরি হবে।
”
”
–ফ্রি ফ্রি..লিয়ে যা, লিয়ে যা… তাড়াতাড়ি লিয়ে যা… দুটো নিলে একটা
ফ্রি…ইষ্টক লিমিটেড।
ফ্রি…ইষ্টক লিমিটেড।
ব্যস্ত রাস্তার ধারে পুরানো একটা ত্রিপলের ওপর সাজানো রয়েছে রঙ-বে-রঙের বিভিন্ন
মাপের বল, চিকমিক কাগজের ষ্টার, মাথায় দেওয়ার জন্য লাল-নীল
সিংওয়ালা ব্যান্ড আরো কত কি….ছোট-বড়-মাঝারি বিভিন্ন মাপের প্লাস্টিক গাছেগুলো
গুঁতোগুঁতি করে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরই ফাঁক দিয়ে লাল জামা সাদা দাড়ি নিয়ে
উঁকি মেরে চলেছে গোটা কয়েক সান্তা দাদু।যদিও ঠিক ছ’দিন আগে বড়দিন বিদায়
নিয়েছে।তাই টেবিলের একটু পেছন দিক করে সান্তা দাদুর জায়গা হয়েছে। কিন্তু সান্তা
দাদু ও তার আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রের দিকে কারোর কোনো নজর নেই। বড়দিন উপলক্ষে
মালগুলো তুলেছিল ফোকলা। ঘাটের মরা ওইদিনই জ্বরটাকে আসতে হলো। নড়াচড়ার শক্তিটুকু
ছিল না বেচারার। কাল থেকে শরীরটা একটু ঠিক লাগতেই আজকে তল্পিতল্পা নিয়ে বেরিয়ে
পড়লো সে।কয়েকশো টাকার জিনিসপত্র তো আর জলে ভাসিয়ে দেওয়া যায় না। যতটুকু জোটে
তাই সয়।
মাপের বল, চিকমিক কাগজের ষ্টার, মাথায় দেওয়ার জন্য লাল-নীল
সিংওয়ালা ব্যান্ড আরো কত কি….ছোট-বড়-মাঝারি বিভিন্ন মাপের প্লাস্টিক গাছেগুলো
গুঁতোগুঁতি করে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরই ফাঁক দিয়ে লাল জামা সাদা দাড়ি নিয়ে
উঁকি মেরে চলেছে গোটা কয়েক সান্তা দাদু।যদিও ঠিক ছ’দিন আগে বড়দিন বিদায়
নিয়েছে।তাই টেবিলের একটু পেছন দিক করে সান্তা দাদুর জায়গা হয়েছে। কিন্তু সান্তা
দাদু ও তার আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রের দিকে কারোর কোনো নজর নেই। বড়দিন উপলক্ষে
মালগুলো তুলেছিল ফোকলা। ঘাটের মরা ওইদিনই জ্বরটাকে আসতে হলো। নড়াচড়ার শক্তিটুকু
ছিল না বেচারার। কাল থেকে শরীরটা একটু ঠিক লাগতেই আজকে তল্পিতল্পা নিয়ে বেরিয়ে
পড়লো সে।কয়েকশো টাকার জিনিসপত্র তো আর জলে ভাসিয়ে দেওয়া যায় না। যতটুকু জোটে
তাই সয়।
বছর শেষের এই এক সপ্তাহ,কলকাতার রাজপথ নতুন ভাবে সেজে ওঠে। সেই সাজ দুর্গাপুজোর
থেকে কম কিছু নয়। আসলে,ধর্ম যার যেমন হতে পারে কিন্তু উৎসবটা সবার- সুদূর কাল
থেকে মহানগরী যেন সেই প্রমাণই দিয়ে চলেছে।উৎসবের এই মরসুমে নিউ মার্কেট চত্বরে
তাই তিল ধারণের জায়গাটুকু থাকে না।হাঁটাচলার কথা তো বাদই দিলাম। বিশেষ করে
ফুটপাত লাগোয়া দোকানগুলো কার কোনটা সেটাই বোঝার উপায় নেই। সবাই সবার ঘাড়ের ওপর
উঠেই বেচাকেনা চালাচ্ছে।
থেকে কম কিছু নয়। আসলে,ধর্ম যার যেমন হতে পারে কিন্তু উৎসবটা সবার- সুদূর কাল
থেকে মহানগরী যেন সেই প্রমাণই দিয়ে চলেছে।উৎসবের এই মরসুমে নিউ মার্কেট চত্বরে
তাই তিল ধারণের জায়গাটুকু থাকে না।হাঁটাচলার কথা তো বাদই দিলাম। বিশেষ করে
ফুটপাত লাগোয়া দোকানগুলো কার কোনটা সেটাই বোঝার উপায় নেই। সবাই সবার ঘাড়ের ওপর
উঠেই বেচাকেনা চালাচ্ছে।
Also read,
ফোকলার জায়গা খুবই সীমিত। বয়স এবং দৈর্ঘ্য-দুটোতেই খাটো হওয়ায় গুরুত্বটা বেশ
কম।কিন্তু হার মানার ছেলে ফোকলা নয়। নিজের সাধ্যমতো হাঁক-ডাক করে ক্রেতাদের
আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিছু ক্রেতাসকল কৌতূহল দেখিয়ে হরেক রকমের
প্রশ্ন উত্তরের খেলা খেলে শেষ পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে… কেউ কেউ আবার
ভিড়ের মাঝে উঁকি দিয়েই পাশ কাটিয়ে হাঁটা দিচ্ছে। বেশ কয়েক ঘন্টা এইভাবেই
কেটে গেল।বাজারের দশা দেখে ফোকলা বিড় বিড় করে বলে উঠল,
কম।কিন্তু হার মানার ছেলে ফোকলা নয়। নিজের সাধ্যমতো হাঁক-ডাক করে ক্রেতাদের
আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিছু ক্রেতাসকল কৌতূহল দেখিয়ে হরেক রকমের
প্রশ্ন উত্তরের খেলা খেলে শেষ পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে… কেউ কেউ আবার
ভিড়ের মাঝে উঁকি দিয়েই পাশ কাটিয়ে হাঁটা দিচ্ছে। বেশ কয়েক ঘন্টা এইভাবেই
কেটে গেল।বাজারের দশা দেখে ফোকলা বিড় বিড় করে বলে উঠল,
—না!!! মনে হয়না আজ আর কিছু হবে….শালা কপালটাই খারাপ।
হঠাৎ
— ও ভাই, এই বলগুলো কত করে?আর ওই ক্রিসমাস ট্রি গুলো?
Happy New Year Bengali Story
Loading...
একদল ছেলে মেয়ের চিৎকার চেঁচামেচিতে সম্বিৎ ফিরলো ফোকলার। চেয়ে দেখলো, দলটা বেশ
ভারী। ছেলে মেয়ে মিশিয়ে মোট ছ’জনের দল। সবারই পিঠে ব্যাগ। বোধহয় কলেজে পড়া
ছেলেমেয়ে।কথাবার্তার মাঝে একে অপরকে ডাকাডাকির সময় তিন-চারজনের নাম কানে এলো
ফোকলার।
ভারী। ছেলে মেয়ে মিশিয়ে মোট ছ’জনের দল। সবারই পিঠে ব্যাগ। বোধহয় কলেজে পড়া
ছেলেমেয়ে।কথাবার্তার মাঝে একে অপরকে ডাকাডাকির সময় তিন-চারজনের নাম কানে এলো
ফোকলার।
একসাথে এতজনকে দেখে নড়েচড়ে বসলো ফোকলা। আনন্দের সাথে উত্তর দিল,
— ছোটো বলগুলো দশ, বড় পনেরো। দুটো নিলে একটা ফ্রি। যে কোনো সাইজরেই নিন না
কেন।আর ট্রি গুলো তিরিশ থেকে শুরু…. সব থেকে বড়টা একশো।
কেন।আর ট্রি গুলো তিরিশ থেকে শুরু…. সব থেকে বড়টা একশো।
ওদেরই মধ্যে একজন বলল,
অগ্নি: এত দাম…ক্রিসমাস তো চলে গেছে।
ফোকলা: বাবু,শেষের এই কটা দিন তো প্রতিদিনই উৎসব।রাত ফুরোলেই তো নতুন বছর। নিয়ে
যান না… সুন্দর করে বাড়িটা সাজাবেন।
যান না… সুন্দর করে বাড়িটা সাজাবেন।
অগ্নি: বাড়ির জন্য নয়। আমাদের একটা নিউ ইয়ার পার্টি আছে। পার্টি ডেকোরেশনের
জন্যই লাগবে।
নিউ ইয়ার পার্টি!! বোধগম্য হলো না ফোকলার।যাগ গে যাক, অত বুঝে কাজ নেই।
ওর বেচা নিয়ে কথা।
ওর বেচা নিয়ে কথা।
ফোকলা: কতগুলো নেবেন বলুন না.. তারপরে আমি ঠিক করে দিচ্ছি।আসলে পঁচিশ তারিখের
জন্যই সব মাল তুলেছিলাম। জ্বরে পড়েছিলাম এতদিন। ফেলে তো দিতে পারি না। ঠিক আছে,
আপনারা যেটা ভালো বুঝবেন তাই দিন।
জন্যই সব মাল তুলেছিলাম। জ্বরে পড়েছিলাম এতদিন। ফেলে তো দিতে পারি না। ঠিক আছে,
আপনারা যেটা ভালো বুঝবেন তাই দিন।
দলের মধ্যে নাক উঁচু একটা মেয়ে হঠাৎ করে বলে উঠলো,
অদিতি: এই জন্য বলেছিলাম mall থেকে কিনতে। ফুটপাতের জিনিসের কোনো কোয়ালিটি আছে
নাকি!!ডিসগাস্টিং!!!
নাকি!!ডিসগাস্টিং!!!
দীপেন: প্লিজ অদিতি, তু্ই থাম তো।সব জায়গায় কোয়ালিটি খুঁজতে যাস না।
আফটার পার্টি এই জিনিসগুলো তো কোনো কাজেই লাগবে না। বেকার বেকার mall থেকে
একগাদা টাকা খরচ করে কিনে কি লাভ??আফটারঅল উই অল আর কলেজ গোয়িং
স্টুডেন্টস।
আফটার পার্টি এই জিনিসগুলো তো কোনো কাজেই লাগবে না। বেকার বেকার mall থেকে
একগাদা টাকা খরচ করে কিনে কি লাভ??আফটারঅল উই অল আর কলেজ গোয়িং
স্টুডেন্টস।
সোমা : আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে…
নতুন বছরের গল্প
দীপেন: কি সেটা?
সোমা : যদি এই ছেলেটার সব কটা জিনিসই আমরা কিনে নিই। সাজানোর জন্য তো সেই
লাগবেই…আমরাও যেমন আনন্দ করবো বেচারা ওর মুখেও একটু হাসি ফুটুক।কতই বা বয়েস
হবে ছেলেটার।
লাগবেই…আমরাও যেমন আনন্দ করবো বেচারা ওর মুখেও একটু হাসি ফুটুক।কতই বা বয়েস
হবে ছেলেটার।
দীপেন: গ্রেট আইডিয়া সোমা।
অগ্নি: দারুন আইডিয়া। এই যে ছেলে, কি নাম তোর?
গাল ভরা হাসি নিয়ে উত্তর এলো,
— ফোকলা।
নাম শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
অগ্নি: আচ্ছা ফোকলা, এবার কাজের কথা শোন। তোর 90% মালই আমরা কিনে নেবো…
সেই বুঝে এবার দামগুলো বল।
সেই বুঝে এবার দামগুলো বল।
Happy New Year Bengali Story 2023
একথা শুনে ফোকলার আনন্দের সীমা রইলো না।পাওনা গন্ডা বুঝে খুশি খুশি
দিদি-দাদাদের বিদায় জানালো সে। অবশিষ্ট কয়েকটা সান্তা দাদুদের প্যাকেটবন্দী
করার সময় হঠাৎই ময়নার মুখটা ভেসে উঠলো। বেচারী একটা কেক খাওয়ার জন্য বায়না জুড়ে
ছিল। ফোকলার মনটা হু হু করে উঠলো। ফোকলার যা রোজগার হলো আজ ছেড়ে আগামী তিন
চারদিন খাওয়া-দাওয়ার কোনো চিন্তা থাকবে না। কাঁধে ঝোলানো বোঁচকাটার দিকে একবার
তাকিয়ে নিয়ে কি মনে হতে ব্যাগপত্র গুছিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিল
ফোকলা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কাঁচঘেরা একটি কেকের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো ।দরজা
ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। ভীড় ঠাসা দোকানের কয়েকজন অবাক দৃষ্টিতে একবার
ফোকলার সর্বাঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিলো। ফোকলা সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে নানা আকৃতির,
নানা রূপের, নানা রঙের কেক দেখতে ব্যস্ত। হাতে টাকা থাকলে ফকিরও নিজেকে রাজা
মনে করে। শোকেসে সাজানো কাজু, কিসমিস, আলমন্ড, ট্রুটি-ফ্রুটিতে ঠাসা একটি প্লাম
কেক পছন্দ হলো ফোকলার।নির্ধারিত তিনশো টাকা মিটিয়ে খুশি খুশি বাড়ির পথে রওনা
দিল সে।
দিদি-দাদাদের বিদায় জানালো সে। অবশিষ্ট কয়েকটা সান্তা দাদুদের প্যাকেটবন্দী
করার সময় হঠাৎই ময়নার মুখটা ভেসে উঠলো। বেচারী একটা কেক খাওয়ার জন্য বায়না জুড়ে
ছিল। ফোকলার মনটা হু হু করে উঠলো। ফোকলার যা রোজগার হলো আজ ছেড়ে আগামী তিন
চারদিন খাওয়া-দাওয়ার কোনো চিন্তা থাকবে না। কাঁধে ঝোলানো বোঁচকাটার দিকে একবার
তাকিয়ে নিয়ে কি মনে হতে ব্যাগপত্র গুছিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিল
ফোকলা। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কাঁচঘেরা একটি কেকের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো ।দরজা
ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। ভীড় ঠাসা দোকানের কয়েকজন অবাক দৃষ্টিতে একবার
ফোকলার সর্বাঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিলো। ফোকলা সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে নানা আকৃতির,
নানা রূপের, নানা রঙের কেক দেখতে ব্যস্ত। হাতে টাকা থাকলে ফকিরও নিজেকে রাজা
মনে করে। শোকেসে সাজানো কাজু, কিসমিস, আলমন্ড, ট্রুটি-ফ্রুটিতে ঠাসা একটি প্লাম
কেক পছন্দ হলো ফোকলার।নির্ধারিত তিনশো টাকা মিটিয়ে খুশি খুশি বাড়ির পথে রওনা
দিল সে।
রাত এখন বারোটা বেজে পাঁচ। বাজির শব্দে কান পাতা দায়। শহর মেতেছে আনন্দ
হুল্লোড়ে।ফুটপাতের ওপর ত্রিপল ঘেরা চার বাই চার ঘরের মধ্যে তখন নিউ ইয়ার পার্টি
চলছে ভাই-বোনের।
হুল্লোড়ে।ফুটপাতের ওপর ত্রিপল ঘেরা চার বাই চার ঘরের মধ্যে তখন নিউ ইয়ার পার্টি
চলছে ভাই-বোনের।
Also read,