Bangla Love Story – বাংলা লাভ স্টোরি – ভালোবাসার গল্প

Bongconnection Original Published
11 Min Read

 Bangla Love Story – বাংলা লাভ স্টোরি – ভালোবাসার গল্প

Bangla Love Story - বাংলা লাভ স্টোরি - ভালোবাসার গল্প
Loading...

Bangla Love Story

ভালোবেসে সখী
                – তৃপ্তি
মুন্সী 
মুনিয়া লাজুক লাজুক মুখে বুবুন কে জিজ্ঞেস করে,”বলছি কি শোনো না ,মামনি ,বাবা
জিঞ্জেস করছিল আমরা কোথায় যাচ্ছি?”তারপর একটু থেমে,”কাল রাতে দিদিভাই ফোনে
বললো আমার ভাইটার খুব ঢঙ হয়েছে,কেন রে বাবা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অন্তত তোকে তো
বলবে!বলো না কোথায় যাচ্ছি।”মুনিয়া তাও তো ওই কথাটা বলেনি ওর ভাই বলেছে,”দি
ব্যাপারটা খুব সন্দেহ জনক ,মালটা তোকে নিয়ে গিয়ে খুন টুন করবে কিনা,কি জানি
কি প্লান আছে।”


    ‌     মুনিয়া ওর ভাই মিন্টুকে বলে,”এই শোন এসব
কি ভাষা? একমাত্র দিদির বর কে এমন বলছিস , একটু লজ্জা পাওয়া উচিত। মিন্টু হেসে
বলে,”ঠিক আছে, যখন খুন করবে আমাকে দোষ দিবি না,আমি কিন্তু আগেই সাবধান
করেছিলাম।”শুধু মুনিয়া আড়াল থেকে ওর বাবাকে বলতে শুনেছে,”জামাই কিন্তু খুব
রোমান্টিক, ঠিক আমার মতো। আমি ও তোমাকে কেমন সারপ্রাইজ দিতাম তখন।”
     মুনিয়ার বন্ধুরা বিয়ের আগে ওকে সমানে ভয় দেখিয়ে
গেছে”অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করছিস ,দেখিস কেমন একটা বর হবে।চেনা নেই জানা নেই সোজা
ফুলসজ্জা।”মুনিয়া বিয়ের আগে”ওমা শোনো না”করে গেছে কিন্তু নিজের ভয়ের কথা
মাকে বলে উঠতে পারে নি।আর ও জানে বললেও  ওর মা ঠিক বলতো তোর বাবাকেও তো
আমি চিনতাম না,তাতে হয়েছে কি?
     কিন্তু যাইহোক বিয়েটা কিন্তু মোটেও খারাপ হয়নি।দু’মাস
হলো ওর আর বুবাইয়ের বিয়ে হয়েছে এর মধ্যে ই ওর আর বুবাইয়ের দিব্বি ভাব হয়ে
গেছে। শুধু তাই নয় ওদের বাড়ির সবাইকেও মুনিয়ার বেশ লেগেছে।বুবাই তেমন একটা
ছুটি না পাওয়ায় ওদের হনিমুনটা যাওয়া হয়নি’।দু চারদিন যা ছুটি পেয়েছে
আত্মীয় বন্ধু বান্ধবের বাড়ি ঘুরেই কেটে গেছে। হঠাৎ করেই বুবাই ঠিক করেছে,বেশি
দিনের ছুটি আর এর মধ্যে পাবে না।তাই দিন চার পাঁচেকের ‌ছুটি নিয়ে ধারে কাছে
কোথাও একটা বেরিয়ে আসবে।এই ধারে কাছে টা কোথায় সেটাই ও কাউকে বলছে না।


    দিঘা কিম্বা পুরী হবে কি!খিল্লি হওয়ার ভয়ে নাম বলছে না।
বেড়ানোর দিন মুনিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি ওকে দায়িত্ব দিল ,”পৌঁছেই ফোন করে দিস
মা, অন্তত তখন জানতে পারব কোথায় আছিস তোরা।”মুনিয়ার বুঝতে পারে,বুবাইয়ের
ছেলে মানুষীর জন্য এই মানুষ গুলো শুধু শুধু চিন্তা করবেন।ওর বাবা মাও পৌঁছে ফোন
করতে বললেন।
      মন্দার মনি পৌঁছে থেকে মুনিয়ার মনে একটাই প্রশ্ন কেন
ঠাকুর এখানেই কেন আসল ও।ওর অতীতের সেই ঘটনার কথা ও প্রায় ভুলে যেতেই বসে
ছিল।বুবাইয়ের ভালোবাসায় আবার ওর মন এমনিতেই বেশ অশান্ত হয়ে আছে।না রুদ্রর
কথা ও বুবাই কে বলতে পারছে ,না লুকিয়ে রাখতে চাইছে।ওর কাছে লুকিয়ে যাওয়াটা
পাপ , আবার বলে দিলে বুবাই যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় ,ওর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে
নেয়! মুনিয়া থাকতে পারবে না।বুবাই ওর মা বাবা ওদের বাড়িটা বড্ড আপন হয়ে
গেছে এই দু মাসেই।
       এ কি করে সম্ভব!সেই এক হোটেল ওই এক রুম‌। রুদ্র কি
বাইচানস ওকে সব বলে দিয়েছে?বুবাই এখন সবটা জানার পর ও এখানে এসে কি করে সেটা
দেখার অপেক্ষায় আছে। মুনিয়া খুব সচেতন ভাবে সহজ থাকার চেষ্টা করছে, কিন্তু
বারবার অতীতের ঘটনা মনে পড়ে চোখের কোলটা ভিজে যাচ্ছে।ওই বাচ্চা বয়সে যদি
ছেলেমানুষী টা না করত তবে এই আজকের দিনটা কত সুন্দর ভাবে কাটাতে পারত ওর প্রিয়
মানুষটার সাথে।

Bangla Romantic Love Story

Loading...
       হোটেলের ওয়াসরুমের শাওয়ার টা চালিয়ে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ে মুনিয়া। অতীতের ঘটনা গুলো ওর চোখের সামনে চলে আসে।কেন সেদিন
নির্বোধের মতো এমন একটা কাজ করেছিল। অবশ্য তখন অন্যায় বা পাপ মনে হয়নি।ও যে
তখন রুদ্র কে ভীষণ ভালোবাসত।রুদ্রের বাবা হিরন্ময় কাকু আর ওর বাবা অফিসের কলিগ
ছিল। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল দুই পরিবারে।

       
       একবার দুই পরিবার মিলে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান ঠিক
করে। টিকিট কাটা হয়ে যাওয়ার পর , মুনিয়া আর হৈমন্তী জানতে পারে তার পরের
সপ্তাহ থেকেই ওদের উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। টিকিট ক্যানসেল করা হবে ঠিক
করা হলে, রুদ্র ই তখন বলে “তোমরা চারজন মিন্টু ছোটো ওকে নিয়ে চলে যাও। হৈমন্তী
আর মুনিয়ার সাথে আমি থাকছি। আমি ওদের দেখে রাখব।কটা তো দিন ঠিক কেটে যাবে।”

      ‌”হৈমন্তী আর রুদ্র এর আগেও দুজনে বাড়িতে থেকেছে।
মুনিয়া ও ঠিক পারবে থাকতে।”হিরন্ময় কাকুর এই কথায় ওর মা বাবাও রাজি হয়ে
যায়। মুনিয়া তখন ভীষণ উত্তেজিত, রুদ্রের সাথে তিন চারদিন এক বাড়িতে থাকা ,ওর
কল্পনার বাইরে।মা বাবা ওরা বেড়িয়ে যেতেই রুদ্র হঠাৎ ঠিক করে ,না এভাবে
বাড়িতে বসে থাকবে না। মুনিয়া কে নিয়ে ও 
কোথাও একটা দুদিন বেড়িয়ে আসবে। হৈমন্তী ওই দুদিন ম্যানেজ করে নেবে।
      ওই দুদিনের কথা রুদ্র আর হৈমন্তী ছাড়া কেউ জানে না।কারোর
জানার কথাও নয়, এরপর ওদের সম্পর্কটা আর এগোয় নি। রুদ্র আসলে ওই রকমেরই ছিল।
মুনিয়া ছাড়াও আরো অনেক মেয়ের সাথেই ও অমন করেছে। কিন্তু রুদ্র এখন বিদেশে আর
হৈমন্তীর ও বিয়ে হয়ে গেছে বহু দিন। তবে কি পুরোটাই কাকতালীয়, রুদ্র বা
হৈমন্তী কেউ কিছু বলেনি।ও মিথ্যেই ভয় পাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যে ভয় কেন হবে,যে
মানুষ টা ওকে এত ভালোবাসে ,যার পরিবারের লোক ওকে এত আপন করে নিয়েছে তাদের
সঙ্গে এই মিথ্যাচার করাটা পাপ।
      এসব ভাবনার মাঝে কাঁদতে কাঁদতে বেশ দেরি হয়ে যায়। বুবাই
বাইরে থেকে ওকে ডাকে,”মুনিয়া এত দেরি হচ্ছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে
নাকি।”মুনিয়া তাড়াতাড়ি চোখ মুখ মুছে বেড়িয়ে আসে।বুবাই ওর দিকে তাকিয়ে ওকে
কাছে টেনে বলে,”আমি কি কিছু ভুল করেছি? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন মুনিয়া।
মুনিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজে কে সামলে নেওয়ার।কোনো রকমে মাথা নেড়ে বোঝাতে
চেষ্টা করে ওর কিছু হয় নি।
    বুবাই ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,”ঠিক আছে, তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও
আমি স্নান টা সেড়ে নি।”এই বলে বুবাই ঘর থেকে বেড়তে গেলে মুনিয়া ঘরের খাট টার
দিকে তাকিয়ে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ছিঃ ছিঃ ও কি ওই সব বাজে মেয়েদের
হয়ে গেল,এই ঘরে এই খাটে এর আগে একজনের সাথে থেকেছে।আজ আবার ….না ও আর ভাবতে
পারছে না ‌।যা হবার হবে বুবাই স্নান করে বেড়লে ও সব বলে দেবে।আর পারছে না,
এমনিতেও অনেক দেরি করে ফেলেছে।
          কিন্তু বুবাই স্নান করে বেড়নোর পর , ওকে
দেখে মুনিয়া আবার নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায়। আচ্ছা বুবাই শুনে কি করবে? খুব
চিৎকার চেঁচামেচি করবে?ওর গায়ে হাত তুলতে পারে?না কি ওকে এখানে একলা ফেলে চলে
যাবে? যাওয়ার সময় কি বলে যাবে, “কোর্ট পেপার বাড়িতে পৌঁছে গেলে একটা সাইন
করে দিও”।না না ও পারবে না ওসব শুনতে।

বাংলা লাভ স্টোরি লেখা

      বুবাই পায়ে পায়ে ওর দিকে এগিয়ে যায়।” বাহ্ সদ্য স্নান
করে এসে তোমাকে তো খুব সেক্সি লাগছে।”এই বলে মুনিয়া কে কাছে টেনে বুবাইয়ের
ঠোঁট মুনিয়ার ঠোঁটে নেমে আসতেই মুনিয়া কেঁদে ফেলে।বুবাই ওর মুখের ওপর ঝুঁকে
বলে ,”কি হলো তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?”মুনিয়া তখন বুবাইকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
ধরে বলে,”তুমি আমাকে ক্ষমা করবে কিনা আমি জানি না।কিন্তু তোমাকে আজ আমার জীবনের
একটা ঘটনার কথা আমাকে বলতেই হবে।শুনে তারপর তুমি যে শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে
নেবো।”
      
     বলতে বলতে মুনিয়া হাইপার হয়ে ওঠে।ও কথা গুলো বেশ জোড়ে
জোড়ে বলে ওঠে।বুবাই খুব শান্ত ভাবে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমাকে কিছু
বলতে হবে না মুনিয়া আমি সবটা জানি।”মুনিয়া বেশ অবাক হয়ে বলে ওঠে,”কে বলেছে?
রুদ্র!নাকি হৈমন্তী!”বুবাই মাথা নেড়ে বলে,”উঁহু ওরা কেউ বলেনি ।বলেছ
তুমি।”মুনিয়া ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,”আমি!”বুবাই বলে,”এখানে চুপ করে
আগে বোসো তারপর বলছি সব।
       মুনিয়া কে বসিয়ে ওর পাশে বসে বুবাই ওর হাতটা ধরে
বলে,”তুমি জানো তোমার ইনসোমনিয়া আছে?”মুনিয়া বলে,”সেটা আবার কি?এটা কি কোনো
ডিজিজ?”বুবাই বলে,”হ্যাঁ একরকম ডিজিজ তো বটেই। তবে মারাত্মক কিছু নয়। চেষ্টা
করলে এমনিও সেড়ে যায়, তবে প্রয়োজনে ডক্টরের সাথে কনসালট ও করতে হতে
পারে।”তারপর একটু থেমে বলে,”ধরো কেউ একটা বিষয় নিয়ে খুব মানসিক চাপে আছে।
হয়তো কাউকে বলে উঠতেও পারছে না। অনেক সময় সেই ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে ওটাই
বারবার বলে যায়। তুমি ও ঠিক তাই করেছ ,এই দুই মাসে তুমি বহু বার এই ঘটনার কথা
বলেছ ঘুমের ঘোরে।”

Bengali Love Story Online

        বুবাই ওর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলে,”আমি প্রথম
দিন থেকেই তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি,তাই ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারি না।
আমার একজন বন্ধু আছে সে সাইকোলজিস্ট।ওর কাছে এই রোগটা সম্পর্কে জানতে চাইলাম।ওই
বললো এটা ভয়ের কিছু না।যে মানুষ টার সাথে এমন হচ্ছে,সে যদি নিজেই এটা বলার মতো
সাহস জোগার করে ফেলতে পারে,মানে বলে হাল্কা হয়ে যায়। তবে মানসিক চাপ কমে
গিয়ে সেড়ে উঠতে পারে।”
     মুনিয়া অবাক হয়ে এতক্ষণ ধরে ও বুবাইয়ের কথা শুনছিল।এত
ভালোবাসে বুবাই ওকে!ওর এমন একটা অতীতের ঘটনা আছে জেনেও ওকে নিয়ে এত ভাবে।ও
বুবাই কে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি সব জানতে তাও আমাকে কিছু বলো নি?আমাকে তোমার
থেকে আলাদা করে দেওয়ার কথাও ভাবনি!বুবাই বলে ,”নাহ্ ভাবিনি। আমাদের সম্পর্ক
এতটা ঠুনকো নয়,কবে কি ছেলেমানুষী করেছিলে তার জন্য ভেঙ্গে দেবো।আর তুমি তো
লুকোতে চাও নি।এই দু মাস খুব কষ্ট পেয়েছো ,আমাকে হারানোর ভয়ে ,বলতে চেয়েও
পারনি বলতে।তাই এই না বলে বেড়াতে আসার প্ল্যান টা করেছিলাম।জানলে হয়তো ভয়ে
তুমি আসতেই চাইতে না।”
     মুনিয়া বুবাইয়ের কথায় লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়।বুবাই
তাই দেখে ওকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”আর তাছাড়া এটা হনিমুন ছিলোও না। এখান
থেকে ফিরে একটা জমিয়ে হানিমুনের প্ল্যান করতে হবে। সম্পর্কের মধ্যে আড়াল
থাকলে ,সে সম্পর্কের কোনো মানে থাকে না।”এই কথা বলে বুবাই ওকে বুকের মধ্যে টেনে
নিয়ে ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলে।

Share This Article