Dour Web Series Review – দৌড় ওয়েব সিরিজে অনবদ্য মোশারফ করিম –
Hoichoi
Dour Web Series Review
নিয়েই কাজটা দেখতে বসেছিলাম ঈদের দিন। ২ মে ভারতীয় ওটিটি প্লাটফর্ম হইচই (Hoichoi) এ ৯ পর্বের থ্রিলার ঘরানার ওয়েব সিরিজ ‘দৌড়’ মুক্তি পায়।
‘দৌড়’—ওয়েব সিরিজে মূল গল্প এগিয়েছে একটা গাড়ি চুরি হওয়া কে কেন্দ্র করে৷ একটা
বিষয় দেখে ভালো লাগলো বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজের গল্পের মূল
প্রেক্ষাপট হিসাবে নির্মাতা বেছে নিয়েছেন গাড়ি কে! এই যেমন অমিতাভ রেজার ‘ঢাকা
মেট্রো’, সৈয়দ আহমেদ শাওকীর ‘তাকদীর’ এই ওয়েব সিরিজ গুলো তে আমরা দেখতে পাই
একটা গাড়ির মধ্য দিয়ে কিভাবে সম্পূর্ণ একটা ওয়েব সিরিজ এগিয়ে যায়। ঠিক তেমনি
‘দৌড়’ ওয়েব সিরিজে রুহুল আমিন নামে এক ব্যবসায়ীর গাড়ি চুরি হওয়া কে কেন্দ্র
করেই। গাড়ি চুরি হওয়ার পর তার ব্যাবসা ও পরিবার দিনেদিনে নিঃশেষ হতে
থাকে।
দৌড় ওয়েব সিরিজ রিভিউ
এই চরিত্রটি প্লে করেছেন মোশাররফ করিম (Mosharraf Karim)। অভিনেতা মোশাররফ করিম যে ভার্সেটাইল অভিনেতা তা আবারও প্রমাণ করলেন ‘দৌড়’
ওয়েব সিরিজে রুহুল আমিন চরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার মাধ্যমে। যেকোনো
দর্শকের মোশাররফ করিমের প্রতি এক্সপেক্টেশন বেড়ে যাবে ‘দৌড়’ ওয়েব সিরিজে তার
অভিনয় দেখার পর। ডায়লগ ডেলিভারি থেকে গল্পের আবহের সঙ্গে মিল রেখে সংলাপ বলার
ধরণ, কিংবা সিচুয়েশন অনুযায়ী কথার টোন সবকিছু ছিল এককথায় অনবদ্য। ওয়েব সিরিজটি
দেখার পর বলবেন “ওয়ান ম্যান আর্মি মোশাররফ করিম”। শুধুমাত্র মোশাররফ করিমের
অভিনয় দেখার জন্যও হলে-ও আপনাকে ওয়েব সিরিজটি দেখার জন্য রিকমেন্ড করবো।
অভিনয় করেছেন তার সহধর্মিণী রোবেনা রেজা জুঁই। তিনি তার চরিত্রে একদম সেরাটা
দিয়েছেন তা বলা যায় চোখ বুঝে। চরিত্রের সঙ্গে একদম নিখুঁত ভাবে মিশে গিয়েছেন।
সন্তান হারানোর আহাজারি তিনি এতটা সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পর্দায় যা
অবশ্যই প্রশংসনীয়।
‘আর একটা দৌড়’, ‘ফেরারি রুহুল’, ‘পর্দার আড়ালে‘। ৩ ঘন্টা ২৭ মিনিট ব্যাপ্তির ওয়েব সিরিজটির প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য ১৭ থেকে
সর্বোচ্চ ৩২ মিনিট। আমার কাছে মনে হয় দুইটা পর্ব কম হলেও মন্দ হতো না। গল্পের
মোমেন্টাম অনেক সময় খানিকটা কমে গিয়েছে। তাই মনে হয়েছে গল্পের টানটান উত্তেজনা
আর মোমেন্টামটা ধরে রাখার জন্য পর্ব কমিয়ে আনতে পারতেন নির্মাতা।
আগ্রহের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র টুইস্ট দেখার পর। তার ব্যতিক্রম
ঘটেনি ওয়েব সিরিজটি-তেও কিছু অংশ ছাড়া।
Dour Hoichoi Web Series Review
উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। টানটান উত্তেজনা যাকে বলে। কিন্তু সময়
যতই গড়াতে থাকে উত্তেজনা পারদ ক্রমশ কমতেও থাকে৷ সে জায়গায় নির্মাতা অসফল বলা
যায়। ট্রেলার থেকে চার পর্ব পর্যন্ত যে গতি ছিল তা ধরে রাখতে পারেনি পরিচালক।
একপর্যায়ে মনে হচ্ছে বাধ্য করে দেখানো হচ্ছে। কিছু সিকুয়েন্স ছিল অহেতুক।
আমিনের নিজস্ব প্রাইভেট কার হারিয়ে গিয়েছে, ধারণা করা হয় গাড়িটা চুরি করা
হয়েছে। পুলিশের কাছে জানানো হয় গাড়িটা চুরি করা হয়েছে। তারপর একপর্যায়ে জানা
যায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীক কাগজপত্র রয়েছে গাড়িটিতে এবং কৌতূহলের বিষয় হচ্ছে পুলিশ
যদি গাড়িটা উদ্ধার করে কাগজগুলো হাতে পায় তবে নিশ্চিত ভাবে গ্রেফতার হবেন রুহুল
আমিন! এমন পরিস্থিতি তে রুহুল আমিন ভাড়া করা গুন্ডা কে দায়িত্ব দেয় পুলিশের
পূর্বে গাড়িটা কে খুঁজে পুড়িয়ে ফেলার জন্য। এই কমান্ড পাওয়ার পর কাজে লেগে পরে
তার ভাড়া করা বাহিনী। সে পর্যায়ে সৃষ্টি হয় নতুন টুইস্ট। গাড়িটির লকারে রয়েছে
রুহুল আমিনের সন্তান শায়ান। যা শুনে সে উদাসীন হয়ে যায়। গাড়িটা খুঁজতে এবং
সন্তান কে খুঁজে পেতে। গাড়িটা কেন চুরি করা হলো! কাগজগুলো তে কি এমন আছে যার
জন্য গ্রেফতার হতে হবে তার! তার সন্তান টা কে কি গুম করা হয়েছে নাকি কিডন্যাপ!
গাড়ি চুরি করা টা কি পূর্ব পরিকল্পনা নাকি আতকা ঘটে যাওয়া! শেষ পর্যন্ত গাড়িটার
কি পরিনতি হয়! এমন অসংখ্য বিষয়ের খোলস উন্মোচন হতে থাকে শেষ পর্ব
পর্যন্ত।
থেকে সেরা পারফরম্যান্সটা বের করতে পেরেছেন এটা প্রশংসার দাবিদার। ওয়েব সিরিজটি
তে মোশাররফ করিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার। একবাক্যে
অনবদ্য! কি চমৎকার পারফর্ম করছেন ওটিটি প্লাটফর্মে ইন্তেখাব দিনার তা বলার ভাষা
রাখে না। ওটিটি প্লাটফর্মে তিনি দিনেদিনে হয়ে উঠছেন নির্মাতাদের আস্থার এক নাম৷
পর্দায় সবচেয়ে বেশি কনফিউজড আবহ তৈরি করেছেন তিনি তার অভিনয় এবং ফেসিয়াল
এক্সপ্রেশন দিয়ে। এই ওয়েব সিরিজে আরেকজন গুণী অভিনেতার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
তিনি হচ্ছেন তারিক আনাম খান। বহুদিন পর তাকে ভিন্ন ঘরানার চরিত্রে দেখলাম। কাম
এন্ড কোয়াইট পুলিশ অফিসার চরিত্রে দেখা যায় তাকে ওয়েব সিরিজটিতে। চরিত্রে সঙ্গে
মিশে গিয়েছেন খুবই সাবলীল ভাবে। তিনি প্রতিটি কাজেই দর্শকদের মুগ্ধ করেন তার
অভিনয়শৈলী দিয়ে এখানেও তাই। বেশি মুগ্ধ হয়েছি এরূপ চরিত্রে তার উপস্থিতি
দেখে।
দৌড় ওয়েব সিরিজ মোশারফ করিম
অভিনয়শিল্পী সঙ্গে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করা অনেক গুলো ক্যারেক্টর পেরে উঠতে
পারেনি। খাবারের স্বাদ দিয়ে যদি বুঝাতে চাই তবে নাজিরা বাজারের হানিফ বিরিয়ানি
আর লোকাল এরিয়ার বিরিয়ানি। আপনি নিরদ্বিধায় বেছে নেবেন হানিফ বিরিয়ানি। এখানেও
তাই তাদের তিনজনের অনবদ্য পারফরম্যান্সের ফলে বাকি চরিত্রে অভিনয় করার
অভিনেতাদের দেখে মনে হচ্ছিল কিচ্ছু হচ্ছে না তো!
দিয়েছেন নির্মাতা। সেখানে থাকবে আরও চমক, আরও টানটান উত্তেজনা। কিন্তু কিছু
চরিত্র, গল্প প্রথম সিজনে ডেভলপ করার বড্ড প্রয়োজন ছিল। তবে বিষয়টা আর ঝুলে
যেতো না। তখনই ওয়েব সিরিজটা শেষ করে আমরা বলতাম এমন টানটান উত্তেজনা আবহের ওয়েব
সিরিজওই দেখতে চাই৷ যেহেতু নয় পর্বের ওয়েব সিরিজ হয়েছে একটু সময় নিয়ে ১২ কিংবা
১৫ পর্বের মধ্যে শেষ করে দিলে-ও পারতেন নির্মাতা। দেখা যাক নবাগত নির্মাতা নতুন
সিজনে কি চমক নিয়ে হাজির হন। তবে এটা বলতেই হবে প্রথম ওয়েব সিরিজ হিসেবে রায়হান
খান নিজের সর্বোচ্চ টুকু দিয়েছেন। কিছু কাজ ভালো হতে হতে হয়না ঠিক তেমনই হয়েছে
‘দৌড়’ তবে কিছু বিষয় ঠিক করে সামনের দিনে ভালো গল্পের অসাধারণ নির্মাণ উপহার
দিবেন এটাই প্রত্যাশা।
শেষ পর্বে গানটার সঙ্গে মোশাররফ করিমের চোখ দিয়ে অভিনয়। আহা! কি অনবদ্য!
গানটা যেনো সে সময়ের কথাই বলে। ‘আয়না‘ শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন
সাকি ব্যানার্জী ও আতিকা। দ্বিতীয় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আমার বর্তমান সময়ের
প্রিয় শিল্পী রায়হান ইসলাম শুভ্র। যারা তার গান শুনেছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝবেন।
অনেকটা অর্ণব দাদার একটা ফ্লেভার পাওয়া যায় তার কণ্ঠে। ‘বিস্ময়’ শিরোনামের পুরো
গানটি শোনার অপেক্ষায়।
আছে।
ওয়াচ ওয়েব সিরিজ এটি। ট্রেলার দেখে এক্সপেকটেশন বেশি না বাড়ালেই চলবে।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, লোকেশন, কালার গ্রেডিং, ক্যামেরা কাজ সবকিছুই চোখে আরাম
দিবে শুধু একটা পার্টে সেটা কি ওয়েব দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন।