Abhijaan Movie Review: অভিযানে শেষবার ফিরে দেখা সৌমিত্র চ্যাটার্জি কে

Bongconnection Original Published
7 Min Read

 Abhijaan Movie Review: অভিযানে শেষবার ফিরে দেখা সৌমিত্র চ্যাটার্জি
কে 

Abhijaan Movie Review: অভিযানে শেষবার ফিরে দেখা সৌমিত্র চ্যাটার্জি কে
Loading...

Abhijaan Bengali Movie Review

“আপনার জীবনের ট্র‍্যাজেডি কি !? “
” এক জার্মান শিল্পী বলেছিলেন, আমাদের অন্তরে লালন করে তৈরী করা কিছু যা আমাদের
চলাফেরায় অহংকারের মত ঝংকার, সেসবের যখন মৃত্যু হয় আমদের জীবদ্দশাতেই তার মত বড়
দুঃখ জীবনে খুব কমই আছে । ” (ভাবানুবাদ)


Abhijaan Movie Cast

Rating – 7.5 /10
আমাদের অনেকেরই মাঝেমাঝে হয়ত মনে হয় – 
‘ কেমন হত যদি খ্যাতির চূড়ায় অবস্থান করতাম ?  রাস্তায় বের হলে লোকে একটু
সান্নিধ্যের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত !  ‘ 
আমার মনে হয় একটা সময় পর্যন্ত সেলেব্রিটিরা এই ব্যাপারটা উপভোগ করেন কিন্তু এক
একেক সময় এটা ভীষণ বিরক্তিকর । তারা যেন একটা খাঁচায় আবদ্ধ ! যেখানে তারা
ব্যক্তিগত পছন্দ, কথাবার্তা, সিদ্ধান্ত ইচ্ছেমত নিতে পারেননা, ফ্যান ফলোয়িং এর
কথা ভাবতে হয় ।  সারাক্ষণ একটা ভালমানুষি মুখোশ পড়ে থাকতে হয় । কজন পারে
বলুন তো, যে মাটি আকড়ে চারাগাছ প্রকান্ড বৃক্ষ হয়েছে সেই মাটি আঁকড়ে ধরেই ছায়া
প্রদান করে যেতে ?  বিরাট স্টার হয়েও সেই মাটির মানুষটার মতই চলাফেরা
করতে, রবিবার মাছ বাজার করতে, চায়ের ঠেকে বসে আড্ডা দিতে ?  সম্ভব ? 

বাংলায় একজন মেগা-স্টার এমন একটা মাটির গন্ধ মেশানো স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই
স্বপ্ন শেষ সময় পর্যন্ত পুরণ করার চেষ্টা করেছিলেন সহজাত প্র‍য়াসে । সেই তারার
নাম – সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যাকে বাঙালির শেষ কালচারাল আইকন বলে অভিহিত করে
থাকেন অনেকে । 
“অভিযান” ভীষণ ভাল এক প্রচেষ্টা !  কেন ? সেটা বলার চেষ্টা করছি । 
প্র‍থমত “অভিযান” সিনেমটা ডকু-ড্রামা ফরম্যাটে তৈরী যেখানে অনেকটা অংশে
ক্যামেরার সামনে বসে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনের উত্থান-পতন নিয়ে আলোচনা করেন,
তাই যেই বিষয়টা এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল এই কথপোকথন কতটা চিত্তাকর্ষক
!  এইখানে বাজিমাত করেছে পরমব্রত ! ভীষণ সুন্দরভাবে রিল লাইফ এবং রিয়েল
লাইফের সেতুবন্ধন করা হয়েছে ! কলেজ থেকে, আকাশবাণীর চাকরী, রাজনীতি থেকে শিল্প,
থিয়েটার থেকে সিনেমা, প্রেম থেকে সংসার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে শৈল্পিক
দ্বন্দ্ব সবটাই সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে কোথাও অতিরঞ্জন মনে হয়নি এবং একইসাথে
মনে হয়নি ভারী ভারী কথার খিচুড়ি ! পরমব্রতর চরিত্রের সাব-প্লটটাও বেশ ভাল
লেগেছে ! 
সংলাপ ভীষণভাবে ভাবায়, এবার কিছু কিছু দৃশ্য হো হো করে হাসায় !  সংলাপের
কথা উঠলই যখন একটা ছোট্ট উদাহরণ উল্লেখ না করে পারছি না ! 
সত্যজিৎ রায় এবং সৌমিত্র চ্যাটার্জি দাঁড়িয়ে আছেন কোন এক মরুভূমির নির্জন
পরিসরে । সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন –
” পৃথিবীতে এমনও নির্জন জায়গা আছে, মানিক দা !? “
উত্তরে সত্যজিৎ রায় বলছেন –
” আছে ! আমাদের অন্তরের নির্জনতা ! “
অভিযান এর প্রত্যেকটা ফ্রেম নয়নাভিরাম, খুব যত্ন করে বানানো !  প্রত্যেকটা
সিনেমার রিক্রিয়েশন একদম পিকচার পার্ফেক্ট ।  ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আবহের
সাথে বেশ খাপ খাইয়ে যায় । সাউন্ড ডিজাইনিং ভাল লেগেছে, কফি হাউজের দৃশ্যে বেশ
নয়েজ রাখা হয়েছে যেন মনে হচ্ছে অন সেট সাউন্ড রেকর্ড করা !  
কিছু কিছু দৃশ্যে আলোর ব্যবহার ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত ! একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই ।
শেষের দিকে যখন পরমব্রত ওনাকে কিছু কন্ট্রোভার্সিয়াল প্রশ্ন করেন আর উনি বলেন
আজ এখানেই থাক, পরে ফোন করবো, তারপর পরমের ঘরের দৃশ্যে দেখা যায় একদম অন্ধকার ,
ওপারে ভিডিও কলে তনুশ্রীর থেকে পরমের জীবনের অন্ধকারের কথা জানতে পারি । এরপর
যখন পরম সেই ভয় বা অন্ধকারকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করে তখন ওর ঘরে ওর মুখের
একটা অংশে আলো এবং একটা অংশ অন্ধকার  অর্থাৎ সে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে
এগোচ্ছে ! এরপর পুরো ঘর আলোময় ! 
অভিনয়ের দিক দিয়ে বিচার করলে সিনেমার ৮০% জুড়ে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,
যীশু সেনগুপ্ত এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে নতুন
করে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই, তবে যীশু সেনগুপ্তের ক্যারিয়ারের অন্যতম
শ্রেষ্ঠ অভিনয় এখানে দেখা যেতে পারে ! বিশেষ করে যখন সত্যজিৎ রায় মারা যান,
তারপর ঘরে এসে ছেলের পাশে বসে সেই অভিব্যক্তি !  আহা ! পরমব্রত বেশ
ন্যাচারাল, মনে হচ্ছিল যেন সত্যি সত্যিই ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে । একটা ছোট্ট
দৃশ্যের কথা বলি, কফিহাউজের দোতালার দৃশ্য, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ক্যামেরার
সামনে কথা বলছেন এবং পরমব্রত অপলক তাকিয়ে রয়েছেন ক্যামেরার স্ক্রিনের দিকে
এবার এই সিনেমার মূল সমালোচনা হচ্ছে যে উত্তম কুমার সহ অনেক সহ অভিনেত্রীর
কাস্টিং  ভাল হয়নি । এই ব্যাপারে আমিও সহমত । প্রসেনজিৎ কে উত্তর কুমার
হিসেবে বেশ দৃষ্টিকটু লাগছিল । একমাত্র পাওলি দাম এবং তুহিনা দাস ছাড়া বাকি সহ
অভিনেত্রীদের ও কাজ তেমন দাগ কাটেনি । এমনকি সোহিনি সেনগুপ্তের ও না ! 
তবে বাসবদত্তা বেশ ভাল অভিনয় করেছেন । অল্প স্ক্রিন প্রেজেন্সে রুদ্রনীল, নীল
এবং শুভাশিস মুখার্জি বেশ নজর কেড়েছেন ! শিশির ভাদুড়ীর চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার
অসাধারণ !  কি ব্যক্তিত্ব ওনার !  আহা, চোখ জুড়িয়ে যায় ।  আর
অবাক করেছে Q (Quashik Mukherjee)। ভয়েস টোন, কথা বলার ধরণ, এমনকি সত্যজিৎ
রায়ের শেষ দৃশ্যে সেই মরুভূমি দিয়ে যখন হেঁটে চলে যাচ্ছে !  আহা 
❤️❤️
আমি আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ করবো যেটা আমাকে একটু হলেও আশাহত করেছে । সেটা হল
প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত, জাতীয়
পুরষ্কারপ্রাপ্ত রাজা মিত্রর পরিচালনায় অসাধারণ সিনেমা  “একটি জীবন” এর
উল্লেখ না করা !  “কোনি”, গৌতম ঘোষ (“দেখা”), ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন,
অঞ্জন দত্ত এমন অনেকেরই নাম উঠে এসেছে সেখানে এই সিনেমার নাম নেই যেখানে
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন !  সিনেমাটা ” Criminally
Underrated” বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই, যাই হোক Youtube এ আছে, আপনারা যারা
দেখেননি অবশ্যই দেখবেন – “একটি জীবন” ! 
সিনেমাটা যেভাবে শেষ হয় সেটাও ভীষণ ভাল লেগেছে,  সেই হাত এগিয়ে দেওয়ার
দৃশ্য, সেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠার দৃশ্য !  “It has been a LONG JOURNEY ! ”
তারপর শূন্যতা !  এমন পরিপূর্ণ সিনেমা অনেকদিন দেখিনি ! 
অবশেষে আজ আন্তর্জাতিক বই দিবসে “অভিযান” এর একটা সংলাপ দিয়েই শেষ করছি । 
পরমব্রত বলছে –
” বইয়ে তো অনেককিছুই লেখা রয়েছে আপনার ব্যাপারে তবে সিনেমা হলে আরো অনেকের কাছে
পৌঁছাবে । বই আর আজকাল কজন পড়ে ! ”
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় –
” যারা বই পড়ে না তাদের আমাদের সিনেমা দেখার অধিকার নেই ! “
বলেই তিনি হেসে ফেলেন । এই হাসি আমাদের চেতনায় গিয়ে আঘাত করে ! 
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.