Shyam Singha Roy Review : IMDb Rating
একটি অত্যন্ত সাধারণ মানের গল্প, যাতে অত্যন্ত অপ্রয়োজনীয় ভাবে পূনর্জন্ম বিষয়টিকে টেনে আনা হয়েছে। জাতপাতের এই ধরনের বৈষম্য নিয়ে দক্ষিণ ভারতের অনেক সিনেমাই হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টাকে অন্ততঃ সত্তরের দশকের বাংলায় টেনে আনার কোন মানে হয় না। আর এই গল্পটাকেই বাংলার সাথে জোড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এটা আদ্যন্ত দক্ষিণী ছবি। এর কেবল মালায়লাম, তামিল এবং তেলেগু (অরিজিনাল) ভার্সন এবং কেবলমাত্র ইংরেজী সাবটাইটেল উপলব্ধ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে টার্গেট অডিয়েন্স কারা! মাঝখান থেকে বাংলা দেখাতে গিয়ে ইতিহাস, ভূগোল সব গুলিয়ে দেওয়ার জোগাড়! সিনেমার গল্প বলে লাভ নেই। মোটামুটি অধিকাংশ মানুষ জেনেই গেছেন। শুধু যে বিষয়গুলো খুবই দৃষ্টিকটু লাগল, – সেগুলো সম্পর্কেই বলি।
Shyam Singha Roy Movie Cast
Nani
Sai Pallavi
Krithi Shetty
Ankith Koyya
Jisshu Sengupta
Mandonna Sebastian
প্রথমেই বলি ‘খড়্গপুর’ ‘৬০-‘৭০এর দশকে ‘ডিস্ট্রিক্ট’ ছিল বলে জানতাম না। খড়্গপুরে যেহেতু অন্ধ্রপ্রদেশ – তেলেঙ্গানার প্রচুর মানুষ থাকেন সেইজন্যই সম্ভবতঃ খড়্গপুরের উল্লেখ। পরিচালক শুধু নামটাই জেনেছেন। আর কিছু জানার প্রয়োজন বোধ করেননি।
IMDb Rating – 8/10
খড়্গপুরের কাল্পনিক কালিকাপুর কেন, অন্য কোন অঞ্চলে গঙ্গানদী আছে বলে জানা নেই। অন্ধ্রর কোন নদীর কথা বললে পরিচালক মনে হয় শুধু ‘গোদাবরীর’ উল্লেখ করবেন।
সিনেমাতে যে ধরনের পোড়ামাটির কাজ সমৃদ্ধ বড় বড় মন্দির দেখানো হয়েছে সেক্ষেত্রে খড়্গপুর তথা মেদিনীপুরের বদলে কালিকাপুরের সঙ্গে বাঁকুড়া – বিষ্ণুপুর অঞ্চলের বেশি মিল আছে। আর গ্রামবাসীদের পোষাক দেখে তো ১৯৬৯ এর বদলে ১৮৬৯ মনে হচ্ছে!
১৯৬৯-‘৭০ এ পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলে জাতপাতের এত বৈষম্য দেখা যেত, যেখানে কোন সম্প্রদায়কে কুঁয়ো থেকে জল নিতে দেওয়া হত না বা অস্পৃশ্য বলে বিবেচনা করা হত? দক্ষিণ ভারতের এই ঘৃণ্য জাতপাতের প্রথা খামোখা বাঙালিদের ঘাড়ে চাপানোর কি মানে?
পশ্চিমবঙ্গে কবে থেকে নবরাত্রি পালন করা হচ্ছে দুর্গাপুজোর বদলে? নবরাত্রির প্রথমদিন মানে ধারনা করা যায় মহালয়ার কথা বলা হচ্ছে। সকালে নদীতে তর্পন না দেখিয়ে সন্ধ্যায় মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠান!! সেটা কি ভাবে? না, – দেবদাসীদের নাচের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে!! সিরিয়াসলি?? পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬৯সালে দেবদাসী প্রথা! তার মধ্যে মাঝির মুখ দিয়ে বলানো হল এরা বাংলাদেশী! অর্থাৎ উদ্বাস্তু বাংলাদেশী অসহায় মেয়েদের পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাঠাকুরের মন্দিরে দেবদাসী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করতে হত! ওহ্, সেই দুর্গামন্দিরের ভিতরের দেওয়ালে আবার পোড়ামাটির রাধাকৃষ্ণের মূর্তি দেখা যাচ্ছে। আবার মন্দিরের ভিতরের অংশ দেখলে বাংলা না দক্ষিণ ভারত ভ্রম হয়। আর দুর্গামন্দিরের মহন্ত! তাও আবার ওইরকম দক্ষিণ ভারতীয় বড় মোটা টিকি নিয়ে! সারাদিন ধরে সারাগ্রামে দুর্গাপুজোর কোন চিন্হ নেই! অষ্টমী, নবমীর অঞ্জলী নেই! কিন্তু সন্ধ্যাবেলা মন্দির চত্বরে, খোলা আকাশের নীচে কালী প্রতিমা সদৃশ দুর্গাঠাকুরের সামনে মহন্ত বসে পুজো করছেন!
আর এই সিনেমাটা দেখলে তো মনে হতে বাধ্য যে বাঙালিরা রসগোল্লা ছাড়া আর কিছু খায় না! শ্যাম যখন তার দাদাকে কলকাতা যাওয়ার কথা বলছে তখন বলছে তার জন্য যেন রসগোল্লা প্যাক করে দেওয়া হয়! খড়্গপুর থেকে যে কলকাতা যাচ্ছে সে সাথে করে রসগোল্লা নিয়ে যাবে! কেননা কলকাতাতে তো তখন রসগোল্লা পাওয়াই যেত না। তারপর কলকাতায় যখন শ্যাম নেমন্তন্ন করে খাওয়াচ্ছেন সবাইকে তখন বাচ্চা মেয়েটি বলছে তাকে যেন আরো একটা রসগোল্লা দেওয়া হয়। শেষের দিকে শ্যাম যখন তার বাড়িতে ফিরে আসে তখন তার দাদাকে বাজার থেকে কিছু নারকেল আনতে বলায় তিনি বলেন কিছু রসগোল্লাও নিয়ে আসছি! মানে ‘সোন্দেশ,মিষ্টি দোই খাব না আমরা?! আর এভাবে দেখলে তো কফি সংক্রান্ত সীন টা ম্যাড্রাসে হওয়া উচিত ছিল। আর তেলেগু যখন, তাহলে তো ব্রেকফাস্ট – লাঞ্চ – ডিনারে তো শুধু ইডলি খাওয়া দেখানো উচিত ছিল।
ওহ্ নবরাত্রি মানে দুর্গাপুজোর সময় মানে আশ্বিন মাসে ১৯৬৯ সালের বাংলায় নদীর ধারে, কখনও বা মাঝনদীতে নৌকায় খোলা আকাশের নীচে সারারাত (নায়িকা আবার শুধু একটা পাতলা কাপড় জড়িয়ে)! ওহ্ তখন তো কোভিড ছিল না! আরে দাঁড়ান! নিউমোনিয়া তো ছিল! তার মধ্যে আবার মাঝরাতে নায়িকাকে নদীতে নাইয়ে দিলেন! শিশিরেই তো ভিজে চুপ্পুস হয়ে যাওয়ার কথা!
আর বাংলা লেখা!!! কত বলা যায়! সাথে একটা ছবি দিলাম। দু তিনবার রিপিট করে দেখতে হল জায়গাটা! ব্যাকগ্রাউন্ডে “বন্ধু রে” মন রে’ বাজালেই কি আর হয়ে যায়! আর বিশেষ একটি পতাকা আর নকশালবাড়ি নাম থেকেই রাজনৈতিক মতাদর্শ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু অতিবামপন্থীরা আবার পূনর্জন্মে বিশ্বাসী হল কবে থেকে চে?… ইয়ে… মানে… কবে থেকে হে?
এই সিনেমার পরিচালকের নাম (Rahul Sankrityan) রাহুল সংকৃত্যায়ন। রাহুল! নাম তো দোবারা শুননাহি নেহি চাহতা! আর বাংলার ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতির তো শান্তি সত্যয়ন করে রেখে দিয়েছেন! আরে নানি আর সাই পল্লবী কে নিয়ে একটা ছোট মিউজিক ভিডিও বানালে পারতেন। ওইটুকুই যথেষ্ঠ হত। এরকম পাইকারি হারে মারার কোন দরকার ছিল!? যীশু আর বরুণ চন্দ কে আমরা অন্য কোথাও দেখে নিতাম।
যে সূত্রে বাসুর মুক্তি সেটা মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। ব্যখ্যা করব না। স্পয়লার হয়ে যাবে ।
এছাড়া দেখানো হয়েছে পূর্বজন্মের কথা মনে পড়লেই কান দিয়ে রক্ত গোড়ায়। তার জন্য ডাক্তারও দেখানো হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। (বাঙালি বেকার চিকিৎসা করাতে দক্ষিণ ভারতে ছুটছে!) আর এই কান দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে শর্টফিল্মের শুটিং করার সময় মার খেয়ে। তাহলে তার আগে নিশ্চয়ই পূর্বজন্মের কথা মনে থাকার কথা নয়। তাই না? তাহলে? স্পয়লারের চক্করে আর বেশি কিছু লেখা উচিত নয়। যারা এখনো দেখেননি তাদের কথাও তো ভাবা উচিত! কষ্ট শুধু আমরাই কেন পাব! আপনারাও একটু ভোগ করুন।
আর কারো লেখা বই কপি করে সিনেমা বানালে বিনা নোটিশে প্রেস কনফারেন্সের মাঝখানে এইভাবে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায় নাকি? তাও আবার জামিন অযোগ্য ধারায়! ভাগ্যিস কারো কারো উপরে বেঙ্কটেশ্বরের আশীর্বাদ থাকে!
IMDB রেটিং 8/10, নেটফ্লিক্সে মোস্ট লাইকড! বিশ্বাসযোগ্য বলে আর কিছু থাকছে না! তবে এই রেটিংগুলোর পিছনে বাঙালিদের অবদানই বেশি এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকবেন। দক্ষিণ ভারতের সিনেমার প্রশংসা না করলে আজকাল বাঙালি সিনেপ্রেমী হওয়া যায় না যে! এটা বাংলা সিনেমা হলে এতদিনে ট্রোলের বন্যা বয়ে যেত।
তবে ওই রসগোল্লা খাওয়া, মাঝে মাঝে বাংলা বলা, পুরনো কলকাতা… কি কিউট না? এই খড়্গপুর অঞ্চলের না হয়ে এটা যদি কলকাতার কালচারের গুষ্ঠি উদ্ধার হত তাহলে হয়তো প্রতিবাদ হত।
Also read,