স্বজন | Bengali Emotional Story | Bangla Choto Golpo

Bongconnection Original Published
5 Min Read



স্বজন | Bengali Emotional Story
Loading...






এই নিয়ে তিন’মাস..
রোজ ঐন্দ্রিলার কলেজ যাওয়ার পথে,ছেলে’টি বাস স্টপে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা  করে থাকে,তাকে শুধু একটি’বার দেখার জন্য..
প্রথম-প্রথম বেশ অস্বস্তি হতো ঐন্দ্রিলার,,তবে ইদানিং রীতিমতো উপভোগ করে ব্যাপারটি ‘সে.
কলেজে এমনিতেও তার জন্য পাগল হওয়া ছেলেপিলের মস্ত বড় লিস্ট.
একটা মুচকি হাসিতেই হয়ে যায় মোবাইল রিচার্জ, আর সৌজন্য বোধের মিষ্টি কথায় তৈরী হয় ক্লাসনোট.
এইরূপ পরিস্থিতিতে বাসস্টপের রোমিও’টি তার কাছে যেন বাড়তি পাওনা..
****************************************************
সকাল সাড়ে’নটায় বাসস্টপে দাঁড়িয়ে ঐন্দ্রিলা রোজ দেখা’পায় অনামী ছেলেটির…
পরিপাটি বস্ত্রে বুকভরা প্রত্যয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে রাস্তার উল্টো দিকের একটি গাছের ছাওয়ায়.
জুলজুল করে তাকিয়ে থাকে সে মেয়েটির দিকে.. বেশ কিছু দিন বাসে ওঠার পর,ঐন্দ্রিলা ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে আড় চোখে ছেলেটিকে মাথা নিচু করে ফিরে যেতে দেখেছে,,এবং এভাবেই সে নিশ্চিত হয়েছে যে ছেলেটি তার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে তৎপর হয়ে.
দুতিন’দিন হলো মনোবিনোদের পারদ’কে বাড়াতে, সে কিঞ্চিৎ আস্কারা দিয়েছে রাস্তার রোমিও’টিকে.
গত বুধবার বাসে ওঠার আগের মুহূর্তে,ছেলেটির চোখে দৃষ্টি রেখে, ঠোঁটে ঢেউ খেলানো স্বল্প হাসিতে ছোটো কপালের ফ্রণ্টফ্লিক্স চুলগুলি কানের ধার ঘেঁষে পরিপাটি করে ছিল সে নিজস্ব আঙ্গিকে.
ফলস্বরূপ পরের দিন’ই, ছেলেটির শরীরিভাষায় দেখা গিয়েছিলো বেশ কিছু পরিবর্তন…
ঐন্দ্রিলা কে আসতে দেখেই,ছেলেটি এক’পা দুপা করে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু স্বাভাবিক ইতস্তত বোধের কারণে আলাপচারিতার কর্মসূচি সম্পন্ন হতে পারছিলোনা..
অবশেষে ঐন্দ্রিলার মেকি আবেদনের হাসিতে যৎসামান্য পরিমানের ভরসা সঞ্চয় করে, অন্যমনষ্ক হয়ে এপারে আসতে গিয়ে ছেলেটি  রাস্তার ধারে বসানো মাইলস্টোনের সাথে খেলো এক জমজমাট ধাক্কা ! 
এ’প্রান্তে দাঁড়িয়ে, ছেলেটির অবস্থা দেখে ঐন্দ্রিলা’তো মুখ চেপে প্রায় হেসেই খুন..
অপ্রস্তুত হয়ে ছেলেটি পিছিয়ে গিয়েছিলো আবার নিজস্থানে…
যথারীতি ছেলেটি’র উদ্দেশ্যে মনমোহিনী হাসির ফোয়ারা ছুড়ে বাসে উঠেছিল ঐন্দিলা..
তার বিশ্বাস ছিল পরের’দিন অবশ্যই ছেলেটি তার সাথে কথা বলবে, আর এভাবেই জুটবে তার আরোও একটি  সময়কাটানোর সঙ্গী.
****************************************************
আজ বেশ পরিপাটি করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে ঐন্দ্রিলা,,তার বিশ্বাস ছেলেটি আজ এগিয়ে এসে তার সাথে আলাপচারিতা করবে..
বাস’স্টপে বেশকিছুক্ষন দাঁড়ানোর পর ঘড়ি দেখলো ঐন্দ্রিলা..


বেশ কিছুটা অবাক হলো সে.
ঘড়ির কাঁটা বললো পৌনে দশটা !
‘সেকি ঠিক দেখছে তো সে?’ অপ্রত্যাশিত ভাবে ছেলেটির অনুপস্থিতি যেন অবাক করছিলো ঐন্দ্রিলা’কে..
দুটি বাস প্রত্যাক্ষান করলো সে বিশেষ চিন্তায়..
না ! ঐন্দ্রিলা দেখা পেলোনা ছেলেটির.
কানে এলো পাশের মোড়ে নাকি একটি পথদুর্ঘটনা হয়েছে..দুর্ঘটনা’গ্রস্ত এক যুবকের অবস্থা নাকি ঘোরতর..
মনটা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো ঐন্দ্রিলার..
নিছক খেলার ছলে এগিয়ে ছিল সে..কিন্তু নাজানি কেনো সবকিছু  হঠাৎ করে তালগোল পাকিয়ে গেলো তার. ..
দিশা পরিবর্তন করলো মেয়েটি.
এগিয়ে গেলো সব ভুলে…
যেন আপনা থেকেই ধেয়ে যাচ্ছিলো তার পা’দুটি, কোনো আপনজনের সন্ধানে.           
****************************************************
অন্য রাস্তার মোড়ের দিকে দ্রুত পায়ে এগোতে লাগলো সে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার.
দুশ্চিন্তায় গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে একদম ..
পথ’লাগোয়া একটি চায়ের দোকানে তৃষ্ণা মেটানোর আশায় থামলো সে কিঞ্চিৎ..
 দোকানের বেঞ্চিতে বসা কিছু স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের  কথোপকথন শুনে স্তম্ভিত হলো সে,ম্লান হলো তার সর্বস্ব …
–“ও মাসি ! শুনলাম তোমাদের রঞ্জনের নাকি গাড়ি একসিডেন্ট হয়েছে ?”
(হাঁফাতে হাঁফাতে হেঁটে যাওয়া এক মাঝবয়সী মহিলা জবাব দিলেন)
–“আর বলিসনা বাপ ! জানিনা ও কেমন আছে, ওকে নিয়ে আর পারিনা ! গ্রাম ছেড়ে এখানে এসে থাকে,নিজের লোক বলতে কেউ নেই,,কি করি বলতো !”
 –” কি হয়েছিল গো মাসি? তোমার বাড়িতেই তো ভাড়া থাকতো!”.
( মহিলা’টি একটু দম ফেলে বলে চললেন.) 
–“দূর’দূর ! পাগল একটা ! গতবছর দেশের বাড়ি’তে একমাত্র বোন’টাকে ডেঙ্গিতে খেলো..এখানে কোথায় নাকি রোজ সকালে একটি মেয়ে আসে, টাকে নাকি ওর বোনের মতোই দেখতে..
তাকে দেখার জন্য রোজ হা’পিত্তেশ করে মরে বেচারা.. আজ ওর উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো,তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে,,দেখনা কি দশা করলো ছেলেটা !
শুনলাম বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে,ওখানেই যাচ্ছি ! “
দুচোখ বেয়ে টপ টপ করে জল গড়াচ্ছে ঐন্দ্রিলার.. বুকের বাঁদিক’টায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার..
মৃদু রিংটোনে,অনেক কষ্টে কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে ফোন রিসিভ করলো সে:


–“কিরে কোথায় তুই? আজ কখন আসছিস?” 
 ব্যাকুল শিহরিত কণ্ঠে ঐন্দ্রিলা জবাব দিলো :
–“আজ আসছিনা’রে, আমার দাদার খুব বিপদ,আমি ওর পাশেই থাকবো  !
(কল ডিস্কানেক্ট হলো )
ঐন্দ্রিলা’কে ওই মাঝবয়সী ভদ্রমহিলার সাথে একটি অটো’তে উঠতে দেখা গেলো.
**************************************************

Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.