ফালতু | Bengali heart touching story | Bengali New Story | বাংলা কষ্টের গল্প

Bongconnection Original Published
13 Min Read


ফালতু | Bengali heart touching story |  Bengali New Story | বাংলা কষ্টের গল্প
Loading...




      ” আজ কিন্তু তোর দিদিকে দেখতে ছেলের বাড়ির লোকজন আসবে ফালতু।সেই সময়ে পারলে তুই তোর ঘর থেকে বেরোস না,কিংবা খুব ভালো হয় যদি ঐ সময়টাতে তুই বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসিস “—-দিবাকর বাবু কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে মাছের ঝোলের বাটি টা টেনে নেন।
      ফালতু নীচে বসে খাচ্ছিলো।চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া তার জন্য নয়।একবার একটা নেমন্তন্ন বাড়িতে গিয়ে চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু চেয়ারে বসলে তার মুখটা প্রায় টেবিলের সমান্তরালে চলে আসে।হাত দুটো চলে যায় টেবিলের নীচের দিকে।তবুও সে চেষ্টার ত্রুটি করে নি।কিন্তু শেষমেষ হাতের ধাক্কায় টেবিল নড়ে গিয়ে সে এক যাচ্ছেতাই কান্ড।বাড়ি ফিরে এসেছিলো মুখ চুন করে।উপহার হিসেবে পেয়েছিলো বাবার বিরাশি সিক্কার এক থাপ্পড়—” হারামজাদা,পারিস না তো যাস কেনো মরতে?আমার মুখে চুনকালি লাগানোর জন্য??”
     ফালতু কে ভগবান অনেক কিছুই দেননি।
মেরেকেটে তার উচ্চতা তিন ফুটের কাছাকাছি।জন্মের পর যখন তাকে কোলে করে তার মা এসে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিলো,তখন নাকি তার ঠাম্মা চোখ মুখ বিকৃত করে বলেছিলেন–” এ কোন ফালতু মাল কে কোলে করে নিয়ে এলে বাছা?দশ মাস কি এই বানরছানাটাকে গব্বে
ধরেছিলে?মুখে নুন দিয়ে মেরে ফেলতে পারলে না?”
      এই উক্তির মধ্যে দিয়েই ঠাকুমা হয়তো সবার অলক্ষ্যে তার নামকরণ করে দিয়ে গেছিলেন।তারও একটা গালভরা নাম ছিলো–যেটা এখন আর মনেই পড়ে না।ঠাকুমা হয়তো অন্তর্যামী ছিলেন।জন্মকালীন চেহারা দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন,যে এই ছেলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হবে না।
    ফালতু জানে যে তার উপস্থিতি তার পরিবার কে, লোকের সামনে বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে।মানুষজন কেমন যেন একটা উপহাস আর ব্যঙ্গ মেশানো দৃষ্টি নিয়ে তাকায় তার দিকে।সে ধীরে ধীরে মুখ তুলে বললো——” চিন্তা কোরো না বাবা,দিদির বিয়েতে আমি কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।”
    ” এ তো বড়ো অদ্ভুত কথা বললে তুমি।ছেলেটা একা একা সারাদিন কোথায় টো টো করে ঘুরে বেড়াবে?”—মৃদু স্বরে একটা বিফল প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন রমলা দেবী।মেয়ে হবার তিন বছরের মধ্যেই বলতে গেলে
শাশুড়ির জোরাজুরিতেই দ্বিতীয়বার মা হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন রমলা দেবী—” অদ্ভুত তোমাদের আচরণ বৌমা।বলি,একটা বিইয়েই কুলুপ এঁটে দিলে?আমাদের সময় তো গু মুতের কাঁথা শুকনো করার ফুরসত পেতাম না। বলি এই বংশে কি বাতি দেওয়ার কেউ থাকবে না? “
      শাশুড়ির মুখে ফুল চন্দন দিয়ে বংশে বাতি দেওয়ার মানুষ ই এলো পৃথিবীতে।কিন্তু শাশুড়ি কোনদিনই তার নাতিকে কোলে নেন নি।বাবার আদর ও কোনদিন পায়নি ছেলেটা।অনেক ঝড় ঝাপটা সামলে,অনেক লোকের তির্যক দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাকে আজ এতো বড়ো করেছেন রমলা দেবী।
    কিন্তু গর্জে উঠলেন দিবাকর বাবু–” তুমি চুপ করো দেখি রমলা।ফালতুর ব্যাপারে জানাজানি হোলে কেউ আর তোমার মেয়ে কে ঘরে তুলবে?ছেলের প্রতি বেশী দরদ দেখাতে এসো না।”


     ফালতু তো বলে বসলো যে সে বাইরে সময় কাটিয়ে আসবে,কিন্তু নেহাত প্রয়োজন না পড়লে সে ঘর থেকে খুব একটা বের হয়না।আট বছর বয়সে যখন তার মা তাকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেছিলো–তখনই সব গার্জিয়ানদের মধ্যে তুমুল হাসির ঝড় উঠেছিলো—” আরে দেখো কান্ড,এদের ও তাহলে পড়াশোনার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।আমার ছেলের সেকশনে দিলে না জানি কি হবে,মিষ্টুন তো লেখাপড়া ছেড়ে ওর দিকেই তাকিয়ে বসে থাকবে।”
    ক্লাসে মাষ্টারমশাই ওর জন্য একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।কিন্তু সে ওখানে গিয়ে বসতেই,ক্লাসের সমস্ত ছেলেরা মিলে চীৎকার করে উঠেছিলো—” আমাদের ক্লাসে একটা জোকার ঢুকে পড়েছে।অ্যাই ছেলেটা,তুই কোন সার্কাসে খেলা দেখাস রে?”
      ধমকে উঠেছিলেন মাষ্টারমশাই—” চুপ কর তোরা,ওর যে উচ্চতা কম,সেটা ওর কোন দোষ নয়।এটা একটা হরমোনাল ডিস-অর্ডার।যেটা তোরা বড়ো হয়ে বুঝবি।ছোট থেকে এই কটা দিন ও বাড়িতে বসে নিজেকে তৈরি করেছে।আমিই ওর মাকে বলে এসেছিলাম,যাতে এরপর ওকে স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হয়।আমি আশা করবো,তোরা ওর সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করবি।একটা কমপ্লেন যেনো আমি ওর থেকে না পাই।শিবু,তুই তোর ভালো নামটা সবাইকে বলে দে।”
     পেছন বেঞ্চ থেকে আওয়াজ ভেসে এসেছিলো—” স্যার,ওকে ওর নাম বলার দরকার নেই।ওর নাম যে ফালতু,সেটা সবাই জানে।”—-ব্যাস,সেই থেকে স্কুলেও ওর এই বিখ্যাত নামটা চালু হয়ে গেলো।
     কোনমতে মাধ্যমিকের গন্ডী টা উৎরোবার সুযোগ পেয়েছিলো ফালতু।কিন্তু আর পারলো না।ক্লাস ইলেভেনে গিয়ে ভর্তি হতে হলো কো-এড স্কুলে।অপমান যে কতো বিচিত্র রকমের হতে পারে এই প্রথম টের পেলো ফালতু।একদিন কোনমতে মাথা নিচু করে ক্লাসে ঢুকছে।হঠাৎ তীব্র হাসির সাথে কানে ভেসে এলো কথাগুলো–” এই ব্যাটারি মালটা কোথা থেকে জুটলো রে অহনা?এ তো একেবারে ছেলের বয়সী।আমার তো একে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াতে ইচ্ছে করছে।”
    অহনা হো হো করে হেসে উঠে জবাব দিয়েছিলো—” তোর বাপী কে বল তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে।তাহলে বছর খানেকের মধ্যেই তোর শখ পূরণ হয়ে যাবে।”
   একদিনের কথা–ক্লাসে স্যার সবাই কে ডেকে ডেকে বোর্ডে অঙ্ক করতে দিচ্ছিলেন।ফালতু ভয়ে শিউরে উঠছিলো।মনে মনে ডাকছিলো ভগবান কে——” ঠাকুর আমাকে যেন না ডাকে,দয়া করো ঠাকুর।”—-ঠাকুর হয়তো ডাক শুনতেন।
কিন্তু একজন ছেলে দাবী জানালো—” স্যার,
সবাইকে ডাকলেন,এবার তো ফালতু কে ডাকুন।ও কিন্তু খুব ভালো অঙ্ক করে।”
পেছন থেকে আর একজন চট করে বলে উঠলো—” স্যার ফালতু কে ডাকার আগে আমাকে বলবেন–আমি একটা টুল নিয়ে আসবো।নইলে ওর অঙ্ক করতে অসুবিধে হবে।”—সারা ক্লাস জুড়ে হাসির বন্যা বয়ে গেছিলো।
    স্যার গম্ভীর কন্ঠে বলেছিলেন–” তোমরা ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র ছাত্রী।তোমাদের কাছ থেকে এই ব্যবহার আশা করা যায় না।ছিঃ।
কোথায় বন্ধুর দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেবে তা নয়,তোমরা ওকে আরো কোণঠাসা করার চেষ্টা করে যাচ্ছো।”
    কিন্তু ব্যাপারটা বন্ধ হলো না।চোরাগোপ্তা চলতেই থাকলো।ইলেভেনের মাঝপথে স্কুল
বাড়িকে চির বিদায় জানাতে বাধ্য হলো ফালতু।
   দিবাকর বাবু হাসিমুখে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন অফিস থেকে ফিরে–” জানতাম পারবি না,তাও শুধু শুধু একগাদা টাকা খরচ হলো তোর জন্য।এখন আর কি?বাড়িতে বসে বসে বাপের অন্ন ধ্বংস করো,তোমাকে দিয়ে আর কিছু তো হবার নয়।”
    সেই থেকে ফালতু ঘরে বসা।খুব যখন কষ্ট হতো–বিকেল বেলায় মাঠের ধারে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকতো।বাচ্চার খেলা করতো মাঠে।মাঝে মাঝে ওদের মারা বল,গড়িয়ে গড়িয়ে চলে আসতো মাঠের ধারে।একদিন খুব ইচ্ছে হয়েছিল যে ও নিজেও বলটাকে শট মেরে মাঠের মধ্যে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু বাঁধ সেধেছিলো একটা বাচ্চা ছেলে।দৌড়ে এসে বলটা কুড়িয়ে নিতে নিতে বলেছিলো—-” ও চেষ্টা তুমি কোরো না ফালতু দা,তুমি শট মারলে বলটা দশ ফুটের বেশী যাবে না।”
     খুব ইচ্ছে হতো,দুর্গাপুজোর সময় প্যান্ডেলে গিয়ে একবার মা কে প্রণাম করে আসে।কিন্তু ইচ্ছেটাকে গিলে ফেলা ছাড়া উপায় ছিলো না।একবার মা বুঝতে পেরে,  বলতে গেলে জোর করেই ফালতু কে নিয়ে বেরিয়েছিলেন পূজোর সময়।কিন্তু বিড়ম্বনা বাঁধলো প্যান্ডেলে ঢুকে।চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো ফালতু কে দেখার জন্য।প্যান্ডেলের কারুকার্য কিংবা আলোর বাহারের থেকে সেই হয়ে উঠলো প্রধান দ্রষ্টব্য বিষয়।শেষে পূজো কমিটির লোকজন বাধ্য হয়েই ওকে আর ওর মা কে প্যান্ডেলের পিছন দিক দিয়ে কোনমতে বের করে ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলো।
    সেই থেকে ফালতু ঘরবন্দী–অন্ধকারের জীব।কিন্তু নেহাত বাবার আদেশ।তাই দিদি কে যেদিন দেখতে আসার কথা,সেদিন দুপুর থাকতে থাকতে ফালতু বেরোলো বাড়ি থেকে।রমলা দেবী একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন—” কোথাও বেরোতে হবে না তোকে,তুই ঘরেই থাকবি।তাতে যদি তোর দিদির বিয়ে না হয় তবে নাই হবে।”
    গলার শির ফুলিয়ে চীৎকার করে উঠেছিল পর্ণা–” বলিহারি যাই মা তোমাকে।ছেলের ওপর তোমার দরদ উথলে উঠছে।তাতে মেয়ের যা ক্ষতি হচ্ছে হোক।বলি,ঘন্টা দুয়েক ও যদি বাইরে কাটিয়ে আসে তবে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? “
    আর দাঁড়ায় নি ফালতু।চুপচাপ বেরিয়ে পড়েছিলো ঘর থেকে।কিন্তু যাবে কোথায়?সব জায়গাতেই হাজার খানেক তাচ্ছিল্য আর উপহাস ভরা দৃষ্টি অপেক্ষা করে আছে তার জন্য।অপেক্ষা করে আছে লক্ষ লক্ষ হূল,তাকে দংশন করে ক্ষতবিক্ষত করার জন্য।হঠাৎই ফালতুর মাথায় আলোর ঝলকানি—পেয়েছে,একটা মনমতো জায়গা সে খুঁজে পেয়েছে।সেখানে গেলে কেউ তাকে বিরক্ত করবে না।ওখানে যারা বসবাস করে,
তারা সব বলা কওয়ার উর্ধ্বে।চুপচাপ শ্মশানে এসে বসলো ফালতু।আজ হয়তো তার কথা ভেবেই কোন শব দাহ হবার জন্য আসেনি।অদ্ভুত একটা শান্তি বিরাজ করছে সারা শ্মশান জুড়ে।একপাশে একটা ছোট্ট শ্মশানকালীর মন্দির।ইতস্তত ছড়িয়ে আছে,মাটির খাপরা,জ্বলে যাওয়া কাঠের টুকরো।
ফালতু চুপচাপ বসে পড়লো মন্দিরের দাওয়ায়।কে যেন এক বিরাট পোস্টার সেটে দিয়ে গেছে শ্মশানের গেটে।তাদের শহরে নাকি সার্কাস আসছে কয়েকদিনের মধ্যেই।
ফালতু সময় কাটানোর জন্য এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করছিলো পোস্টার টা।একটা জিনিস বিশেষ ভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলো–জীবজন্তু,ট্রাপিজের খেলা এইসব বিভিন্ন চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের সাথে,তার মতো চেহারা বিশিষ্ট কয়েকজনের ছবি রয়েছে পোস্টারে।এরা কি করছে এখানে?তাহলে কি তাদের মতো মানুষদেরও সমাজে কিছুটা হলেও দাম আছে।নাহহ,ব্যাপারটা নিয়ে খোঁজ নিতে হবে।রাত নটা নাগাদ ফালতু উঠলো শ্মশান থেকে।চারদিকে টিমটিম করছে জোনাকির আলো।শেয়াল কুকুরেরা একজন অযাচিত অতিথি দেখে সরবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
    বাড়ির গেট খোলার সাথে সাথেই প্রথম সম্ভাষণ টা এলো দিদির তরফ থেকে–” আয় ভাই,চাঁদের ষোলকলা পূর্ণ হবার আর কিছু বাকী নেই।তুই থাকতে মনেহয় আমার আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হবে না।ভাই বোনে মিলে বেশ মজা করে থাকা যাবে বল?”
    ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে এলো বাবার–” যে চুলোয় গেছিলি,সেখান থেকে আবার ফেরত এলি কেন?যতো সব জোকার জুটেছে বাড়িতে।বড্ড বেশী ছেলের আশা করেছিলাম।ঐ ছেলে যে এমন বাঁশ দিয়ে ছেড়ে দেবে কে জানতো?”

    মায়ের কাছ থেকে ধীরে ধীরে সব শুনলো ফালতু।ও পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।ছেলের বাড়ির লোকজন খোঁজ খবর নিয়েই এসেছিলেন।ছেলের বাবা    একটা প্রশ্ন রেখেছিলেন–” আপনাদের বংশে যখন বামনত্ব ব্যাপারটা আছে,তখন আমি আর রিস্ক নিতে পারি না।ভবিষ্যতে আপনার মেয়ের বাচ্চা কাচ্চা হলে সে যে অমন হবে না,তার নিশ্চয়তা কোথায়?আমাদের মাফ করবেন আপনারা”
    ফালতুর চারদিকে কেমন যেন অন্ধকার নেমে এলো।চরম ধিক্কার জন্মালো নিজের ওপর।কি করবে সে?ভোরবেলা বেরিয়ে শুয়ে পড়বে রেললাইনের ওপর?কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিতে বড্ড ভয় হয়।তাহলে কি কোনো উপায় নেই।তার মতো অসহায় মানুষের জন্য ভগবান কি কোন রাস্তা খোলা রাখে নি?হঠাৎই উত্তেজনার চোটে লাফ দিয়ে উঠলো ফালতু।কে বললো উপায় নেই।ভগবান একেবারে চক্ষুহীন নয়।সে ফালতু নয়।তার মতো মানুষেরা ফালতু হতে পারে না।
    ঠিক চার দিন পর মাঠে সার্কাসের তাবু বাঁধা শুরু হলো।একদিন দুপুরবেলা ফালতু লোকজনের ভীড়ে মিশে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ম্যানেজারের রুমের দিকে।সার্কাসের ম্যানেজার দক্ষিণ ভারতের লোক।ফালতু কে পেয়ে হাতে যেনো চাঁদ পেলেন তিনি।ভাঙা ভাঙা হিন্দি আর বাংলা মিশিয়ে তিনি ফালতু কে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে ফালতু যদি তাদের দলে কাজ করতে চায় তবে তার কোন আপত্তি নেই।কারণ সার্কাসে যে এতোদিন জোকারের খেলা দেখাতো সে ব্যাটা ভেগেছে অন্য দলে।তবে শর্ত একটাই–দুমদাম ছুটি চাওয়া চলবে না।আর কয়েকদিনের মধ্যেই সব খেলা শিখে নিতে হবে।এইজন্য সে মাস ফুরোলে ভালো টাকা মাইনে পাবে।
    ফালতু ও হাতজোড় করে বোঝাতে চাইলো যে ছুটি চাওয়ার মতো কোনো ইচ্ছে তার নেই।তবুও মা কে যদি খুব দেখার ইচ্ছে হয় তবে মালিক যেন একদিনের জন্য ছুটি দেয় তাকে।
     পনেরো দিন পরের কথা।আজ সার্কাস দল চলে যাবে শহর ছেড়ে।ফালতু এতোদিন ঘরে কিছু বলেনি।আজ গভীর রাতে উঠে ফালতু খাতা কলম নিয়ে বসলো—” মা,দিদি আর বাবা কে বোলো,এবার আমি বরাবরের মতোই চললাম।আর অন্তত আমার এ মুখ ওদের দেখতে হবে না।খুব ধুমধাম করে দিদির বিয়ে দাও।তবে এ শহরে থাকলে হয়তো আবারো আমার ছায়া দিদির বিয়ের ওপর পড়বে।তাই বাবাকে বোলো,অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিতে যেখানে অন্তত এই বামন ছেলেটাকে কেউ চেনেনা।সেখানে তোমরা নয় এটাই বোলো যে তোমাদের এই একটিই মেয়ে।ফালতু বলে তোমাদের জীবনে কেউ ছিলো না।জানি মা,তোমার খুব কষ্ট হবে।কিন্তু বাকী জীবনটা আমাকে আমার রাস্তায় চলতে দাও মা।প্রণাম নিয়ো।”
    ট্রাক গুলো ছেড়ে দিলো আস্তে আস্তে।ফালতুর চোখের সামনে দিয়ে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল তার এতোদিনের চেনা শহর….

Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.