Bangla Premer Story | ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে | রোমান্স প্রেমের গল্প

sudiproy877
8 Min Read

Bangla Premer Story

ধরো যদি হঠাৎ সন্ধ্যে

“…ধরো যদি হঠাৎ সন্ধে
তোমার দেখা আমার সঙ্গে
মুখোমুখি আমরা দুজন
মাঝখানে অনেক বারণ ..”

চারিদিকে কালো মেঘের ঘনঘটা, একেবারে নিস্তব্ধ নিঝুম, ঝড় আসার আগের মুহূর্তের থমথমে প্রকৃতি শহর জুড়ে। রেলিং এর গা ঘেঁষে একটা বছর পঁচিশের যুবক দাঁড়িয়ে, হাতে আধখাওয়া ধোঁয়া ওঠা সিগারেট। ছেলেটা গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছে। হঠাৎ একটা গাড়ির শব্দ সেই গানের সুরে ব্যারাম দিল। গাড়ি থেকে নেমে এল লাল শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে। মেয়েটা নেমেই ছুটে গেল রেলিং এর ধারে গাঁ ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছে, ছেলেটার শার্টের কলার ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলতে লাগলো –

তুমি এই শহরে কী করছো! কেন ফিরে এসেছো এখানে বলো বলো? কী চাও তুমি? আমার জীবনটা আবার ছারখার করে দিতে এসেছো তাই না! যে নিজেই ছারখার হয়ে বসে আছে সে কীভাবে সাহস পাবে অন্যের জীবন ছারখার করে দিতে!
চুপ করো তোমার সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না করে! কিন্তু আমি তো তোমাকে ডাকিনী, তুমি নিজেই যে তড়িঘড়ি ছুটে এলে আমার কাছে!
প্রতারক তুমি! বিশ্বাসঘাতক! তুমি শুধু পারো সবার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে! কী ক্ষতি করেছিলাম তোমার বলতে পারো? কেন আমার ভালোবাসাটাকে নিয়ে এভাবে খেললে, ওটা তো মিথ্যে ছিল না আবীর! ক্ষতি হা হা হা হা! না তুমি কোন ক্ষতি করোনি নীল! করেছে তো আমার ভাগ্য!
খবরদার একদম আমাকে নীল বলে ডাকবে না! তোমার মুখে ওই ডাক আমি শুনতে চাই না! এটাও কেড়ে নিলে! বেশ মেনে নিলাম! তারপর বলো নতুন জীবন কেমন কাটছে!
বিদ্রুপ করছো! সব কিছু শেষ করে এখন তামাশা করছো আমার সাথে! ওমা তামাশা বিদ্রুপ কেন করবো! আমি তো শুধু জানতে চাইলাম কেমন আছো!
খুব ভালো আছি। ! তুমি তো চেয়েছিলে আমি কষ্টে যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাই কিন্তু তোমার উদ্দেশ্যে সফল হয়নি আবীর চৌধুরী! বাবাহ আরো একটা অভিযোগ যোগ হল!
সাট আপ জাস্ট সাট আপ! কী করে পারলে বলোতো দুটো মেয়ের জীবন এভাবে শেষ করে দিতে! তোমারও তো ঘরে মা বোন আছে তারা কী তোমায় এই শিক্ষা দেয়! চুপ করো নীলাশা! আর একটা কথাও বলবে না !
অনেক বলে নিয়েছো এবার চুপ করো।

রোমান্স প্রেমের গল্প


না করবো না চুপ সব টা শেষ করে এখন আমাকে চুপ করতে বলছো কেন কেন চুপ করব! করব না চুপ! তুমিও যেমন তোমার পরিবারের লোকও হয়তো তেমন! কথাটা শুনে আবির পারলো না নিজেকে আটকে রাখতে, অনেক তো সহ্য করেছে। আর কতই বা করবে সহ্যেরও যে বাঁধ থাকে! ওদিকে নীলাশা থামছে না দোষারোপ করেই চলেছে , আবির হঠাৎ সহ্য করতে না পেরে নীলাশার গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিল। চলে যাও ! চলে যাও তুমি। আর আমার সামনে কোনদিনও আসবেনা।
তুমি আমাকে মারলে আবির! হ্যাঁ, এটাই তো বাকি ছিল! চুপ করো তুমি ; কিছুই জানো না। একটা ভুল বুঝে সবকিছু শেষ করে দিয়েছো নিজেই ! আর এখন আমাকে দোষারোপ করছো।
ভুল বুঝেছি, কি করে পারছো বলোতো? এখনো এত জোর গলায় কথা বলতে! আমি কোন অন্যায় করিনি নীলাশা, তুমি সেদিন যেটা দেখেছো সেটার বাইরেও অনেক কিছু ছিল। অনেক সময় আমরা চোখে যেটা দেখি সেটার ভেতরেও একটা দেখা থাকে যেটা আমরা কেউ দেখতে পাই না, দেখতে চাইও না।

আরো পড়ুন, বয়ফ্রেন্ড টু বিয়ের পিঁড়ি


মানে? কি বলতে চাইছো! এখন যদি মানেটা বলি তাহলে কি আর কোন লাভ হবে বলোতো? কোন লাভ নেই ছাড়ো বাদ দাও!
কি বলতে চাও খুলে বলো! আমি সেদিনও জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিন্তু তুমি নীরব ছিলে ,আমি তোমার কথাগুলো শুনতে চাই। তুমি কি না দেখার কথা বলছো? সেদিন তুমি যা দেখেছো তা বিন্দুমাত্রও সত্যি নয় নীলাশা। নেহা আমাকে ফাঁসিয়েছিল আসলে আমার উপর ওর একটা চাহনি ছিল। তোমাকে আমি আগেও বলেছিলাম কিন্তু তুমি বলেছিলে ওসব ইনফেচুয়েশন।
কিন্তু আমি যে সেদিন রাতে পার্টিতে ওই হোটেলের রুমে তোমাকে আর ওকে একসাথে ওই অবস্থায় দেখেছিলাম ! সেটা কি করে মিথ্যে হতে পারে? পারে নীলাশা পারে! সেদিন রাতে আমাকে নেহা একটা জুস খেতে দিয়েছিল , তোমাকেও দিয়েছিল মনে পড়ে! আমরা একসাথেই তো খাচ্ছিলাম কিন্তু ওই জুসটা খাওয়ার পর আমার মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছিল আমার মনে হয় ওই জুসে কিছু মেশানো ছিল যেটাতে মানুষের জ্ঞান থাকে না। মানুষ কি করছে কোথায় আছে সেই চৈতন্য টুকুও থাকে না! তারপরের হিসেবটা খুব সোজা। আমি ওই জুসটা খাওয়ার পর তোমাকে বলেছিলাম আমার মাথাটা কেমন একটা করছে তুমি বলেছিলে স্ট্রেসের জন্য হচ্ছে। ঠিক হয়ে যাবে। তারপর তুমি আমার জন্য তোমার ড্রাইভারকে ফোন করতে গেছিলে যাতে আমরা বেরিয়ে যাই ওখান থেকে। কিন্তু তখনই নেহা আমাকে এসে বলল ওর সাথে যেতে। আমি যেতে চাইনি ! কিন্তু ও আমার হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে গেল। আমি চাইলেও পারিনি আটকাতে আমার যে হুশই ছিল না। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।

সেরা প্রেমের গল্প


সকালে আমি উঠে দেখলাম নেহা রুমের সোফায় বসে আছে আর বিছানার একপাশে তুমি দাঁড়িয়ে! আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম কারণ আমি দেখলাম আমার পরনের সাদা জামাটা মাটিতে পড়ে আছে। আমি উঠে বসলাম তারপরেই দেখলাম তুমি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলে!
হ্যাঁ আমি বেরিয়ে গেছিলাম কারণ আমাকে নেহা যা বলেছিল আর যা ছবি দেখিয়েছিল তারপর ওখানে আমি দাঁড়াতে পারিনি। আমি যখন ওই রুমে এসেছিলাম তখন নেহা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল তুমি নাকি ওর সাথে সারারাত ওই ঘরে ছিলে! তুমি নাকি নেশার ঘোরে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও গেছিলে! এই কথাগুলো শোনার পর আমি পারিনি নিজেকে ঠিক রাখতে। তারপরেও আমি বিশ্বাস করিনি জানো তো কিন্তু ওই ছবিগুলো দেখে আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না! ওই ছবিগুলো আমার মুখ বসিয়ে এডিট করা হয়েছে , নেহা পরে নিজে আমাকে এই কথাগুলো বলেছে। আসলে ও চেয়েছিল আমাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক তাই হয়েছে। সেদিন তোমাকে যা দেখানো হয়েছিল তুমি সেটা দেখেই বেরিয়ে গেলে , একবারো ভাবলে না তুমি যাকে এতদিন ভালোবেসেছিলে সে কি করে তোমার সাথে এটা করতে পারে!!
আমাকে ক্ষমা করে দাও আবির! আমি সত্যিই এতটা গভীরে ভাবিনি! যেখানে নিজের ভালোবাসার মানুষটা জড়িত সেখানে গভীরে গিয়ে তো ভাবতে হবেই নীলাশা মৈত্র ও সরি এখন তো গাঙ্গুলী!

সত্যি প্রেমের গল্প


আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না! যদিও জানি এ ভুলের কোন ক্ষমা নেই তবুও! ভালোবাসার মানুষের সাথে ক্ষমার সম্পর্ক চলে না। শুধু একটা কথাই বলবো তুমি আর আমার সামনে এসো না! যে সিঁথিতে আমার পড়ানো সিঁদুর থাকার কথা ছিল সেখানে আজ অন্য কারো নাম, এইভাবে তোমাকে দেখতে পারবো না তাই বলি আমার সামনে আর এসো না কোনদিন।
আসবো না আর কক্ষনো আসবো না। শুধু তুমি ভালো থেকো আবির আমি পারিনি তোমাকে ভালো রাখতে, হয়তো তোমার জন্য এমন কেউ আসবে যে তোমাকে সত্যিই ভালো রাখবে আগলে রাখবে। নিজের জীবনটা এবার গুছিয়ে নিও। গুছিয়ে নেব , না তার চেয়ে এমন বাউন্ডুলেই ভালো আছি , তুমি চিন্তা করো না আমি ভালো থাকবো।
জানি শুনবে না তবুও যাবার আগে বলবো সিগারেটটা খাওয়া কমাও! এই একটা জিনিসে ভেতরের কষ্টগুলোকে একটু হলেও ভুলে থাকা যায় তাই এই বদ অভ্যাসটা ত্যাগ করতে পারবো না।।
_ভালো থেকো , ভুলে যাও নীলাশা নামের কেউ তোমার জীবনে ছিল।
তারপর নীলাশা দাঁড়িয়ে থাকা হলুদ ট্যাক্সিটাতে উঠে পড়ল ট্যাক্সিটা রওনা দিল নীলাশার গন্তব্যে , ওদিকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবির চৌধুরী আওড়ালো একসময়ের নীলাশার প্রিয় কবিতার লাইন …


“আমাকে খোঁজ না তুমি বহুদিন,
কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি নাকো
এক নক্ষত্রের নিচে তবু একই আলো
পৃথিবীর পাড়ে আমরা দুজনে আছি, পৃথিবীর পুরনো পথে রেখা হয়ে যায় ক্ষয়
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়”।

আরো পড়ুন, শ্রেষ্ঠ বাংলা গল্প (দা জাজমেন্ট)

আরো পড়ুন,  এতটা ভালোবাসি 4

Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.