Bengali Holi Stories 2024 (হোলির গল্প) Holi Bengali Story

sudiproy877
5 Min Read

Bengali Holi Stories 2024

হোলির স্পেশাল গল্প 
হোলি হে
“এস হে বন্ধু থেকো না দূরে গাও ফাগুফার গান,
এই মিলনের রঙিন হরষে রাঙিয়ে নাও পরাণ।
সব কি অঙ্গনা উড়েগা বিন্দিয়া দিশা দিশা মে গান।”
****
“হোলি আই হোলি আই রে।
হোলি আই সুখ দায়ী মন ভাই মিতবা
হোলি আই রঙ্গ লায়ি অঙ্গড়ায়ি মিতবা
হোলি হে।”
*****
“আনো রঙ পিচকারি রঙ দাও ছড়িয়ে
লালে লাল আবিরে মন দাও রাঙিয়ে
এ এল রে এল রে এল হোলি এল রে
রঙে রঙে মনপ্রাণ রাঙা হোলো রে।”
*****
সত্যিই আজ কত্তো কতো বছর পরে ভুলে থাকা স্মৃতি খুঁড়ে গানের কলিগুলো গলায় উঠে এলো মৌয়ের। অফিসের ওয়াশরুমের কমন সার দেওয়া বেসিনে আবিরের রঙমাখা মুখটা ধুতে গিয়ে গুণগুণ করে উঠলো মৌপিয়া।  পাশে দাঁড়ানো সুস্মিতা ওকে ফেস ওয়াশটা হাতে ঢেলে দিচ্ছিল। তুই বললিনা কেন লিপিকে? আর তোর শরণ্যা ম্যাম তো বলার আগেই তোর কপালে আবিরের টিকা লাগিয়ে দিল।

দুমাস আগে জয়েন করা লিপি বলল -দিদি সরি আই এম ভেরি সরি। আমি জানতাম না, তোমার আবিরে এলার্জি আছে। তাহলে ছুটির আগে পিছন থেকে ওভাবে তোমার দুগালে.. আই এম রিয়েলি সো সরি।

হোলি উৎসব নিয়ে গল্প

Loading...
– আরে না না এতো কিছু ব্যপার না,লিপি। হ্যাপি হোলি।একটা তো দিন,আবিরের রঙ একটু লাগলেই বা..কাল তো দোলের জন্য অফিস ছুটি,পরশু হোলির জন্য।তার পরে রবিবার। তিনটে দিন পেয়েছো তো, চুটিয়ে রঙ খেলতে পারবে,কি বলো?
হাসিখুশি লিপি,কাঁছুমাচু  মুখে বলল- না দিদি ছুটির আগে এই অফিসেই আজ যা একটু খেলছি,আমার বাড়ির পরিস্থিতি তো তুমি জানো।
প্রথমবার করোনাতে মাকে হারিয়ে আর কমাস আগে ব্রেন স্ট্রোকে বাবাকে হারিয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইয়ের দায়িত্ব হঠাৎ এসে পড়েছে  ওর কাঁধে। ভাগ্যিস নিজের যোগ্যতায়  চাকরিটা পেয়েছিল। যদিও অস্থায়ী পদ কনট্রাকচুয়াল। তবু ঐটুকুই অনেক।  হাজারো সমস্যাতেও হাসিখুশি থাকে মেয়েটা। অল্পবয়সী লিপির মনোবলকে মনে মনে স্যালুট জানায় মধ্য পঞ্চাশের মৌপিয়া। ওকে দুঃখ-মুখে একেবারেই মানায় না। – ঠিক আছে লিপি,চিয়ার আপ। জীবনে সমস্যা তো থাকবেই তবু তার মধ্যে যেটুকু আনন্দ খুঁজে নেওয়া যায়। লিপি হাসিমুখে গুড নাইট জানিয়ে ওয়াশরুম ছাড়ে। সুস্মিতা বলে- ঠিক বলেছিস। তবে তোর স্কিনে সমস্যা হবেনাতো দাসবাবুকে বলছিলি শুনলাম,এলার্জির কথা। – আরে ছাড় তো, জানিস না দাসবাবু এই আধাবৃদ্ধা আমাকেও ছাড়ে না। শুধু অসভ্যতামি। তবে আমার স্কিনে আবির লাগলে একটু জ্বালা করে এটাও ঠিক। – ও তুই দাসবাবুকে এড়ানোর জন্য, আরে আমাকে ডেস্কের সামনে এসেই দুগালে মাখিয়ে
দিলেন,সাহসটা দ্যাখ। আবার হেসে বলে কিনা রাগ কোরোনা একটা তো দিন। কি আর বলি!
ছুতো খোঁজে বিপত্নীক লোকটা। – কি আর করবে?  বউকে হারিয়েছে যে। যাদের বৌ থেকেও উদাসীন তাদের কি বলবি?
– মানে। কি ব্যপার রে মৌ? মৌপিয়া বলে -ছাড় ওসব..অনেক আগের জমানো ব্যথা এইসব।  – না তুই বল, বলে হাল্কা কর নিজেকে, বলে সুস্মিতা। আমার আর রঙ মাখার সখটাই মরে গেছে। বাবার মৃত্যুতে এই অফিসের চাকরিটা তো জুটল।কিন্তু সব ভাই বোনেদের পায়ের শক্ত জমি তৈরি করতে গিয়ে নিজের বিয়েটাই আর করা হলো না। অপেক্ষায় ক্লান্ত প্রেমিক প্রান্তিকও আমাকে ছেড়ে বড়োলোকের জামাই হয়ে বিশাল বিজনেসম্যান হয়ে গেল। এরপর আর এইসব পালাপার্বর্ণে আমার নিজের কোনো অনুভূতি হয় না আর। শুধু ভাই ফোঁটা আর জামাইষষ্ঠী করতে হয় ভাই বোনেদের জন্য। তোর কথা বল।
– আর কি বলি? ওই যে দাদার কীর্তি সিনেমার যে গান গাইছিলাম সেটাই আমার মোহ সৃষ্টি করেছিল। বিদেশের কর্মস্থল থেকে হঠাৎ ছুটি পেয়ে স্বামী ফিরছে বাড়ি হোলির দিনে। ফিরে স্ত্রীকে একান্তে কাছে পেয়ে গালে আবির মাখিয়ে দিচ্ছে। স্ত্রীও সেই স্পর্শ পেয়ে প্রেমের সুবাসে আকুল।  এই আকুলতা দেখেছি দাদার কীর্তি সিনেমায়।সালটা বোধহয় আশি। ক্লাস নাইনের কিশোরী স্বপ্ন বুনতে শুরু করল। বিয়ের পরে তার র স্বামীও..কিন্তু না তার নববধূ  প্রথম বছরের দোলে কোনো আবির স্পর্শ পেলো না। অথচ কলেজের বান্ধবীদের সাথে শান্তিনিকেতনে গিয়ে আবির খেলছে, সেই ছবি পরে দেখেছি এলবামে।
আরো পড়ুন,
– সেকি এতো বছরেও আবির মাখায়নি তোকে?
– নাহ! আমার বিয়ের নয় বছর পরে দোলের দিনেই মারা গেলেন আমার শ্বশুরমশাই। ব্যাস নিয়ম করে দোল খেলা বন্ধ হয়ে গেল ওদের বাড়িতে। তবে দ্যাখ এতো বছর পরে গানের কলিগুলো আজও পরিষ্কার মনে আছে আমার।
– তুই ওই দৃশ্যটাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলি যে। কিন্তু বাস্তব যে বড়োই কঠিন বন্ধু।
– হ্যাঁ রে ঠিক তাই। সকলে বিট্রে করলেও স্বপ্নের স্মৃতি  কখনো আমাদের সঙ্গে বিট্রে করেনা বল?  জলে ভেজা গাল বেয়ে অশ্রু নামে মৌপিয়ার দুচোখ বেয়ে। – এই পাগলী কাঁদছিস নাকি। এবার তবে আমার স্টক থেকে নে একবার।… এডভান্স হোলি হ্যায়। মুখে লাল আবির মাখিয়ে দিয়ে হাসে সুস্মিতা।
– তবে রে, দাঁড়া… কাঁদতে গিয়েও হেসে ফেলে মৌপিয়া।
হোলি হ্যায় চিৎকারে,ওর স্টক থেকে আবির কেড়ে নিয়ে সুস্মিতাকেই ভূত বানিয়ে ছাড়ে।
*******

Share This Article