গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা: এই খাবারগুলো খেলে গর্ভবতী মা ও বাচ্চা থাকবে সুস্থ

Dr. Nilanjana Banerjee
4 Min Read

কোনো মেয়ে যখন মা হতে চলে,সেক্ষত্রে তার স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে,গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তান যথেষ্ট পরিমান প্রয়োজনীয় পুস্টি পাচ্ছে কিনা। তবে প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকায় অবশ্যই কিছু পুস্টিকর খাবার রাখা উচিত,যথা-

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা


শাক সবজি ও ফলমূলের উপকারিতা:-
গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের উদ্যেশে প্রতিদিনের খাবারে টাটকা অর্থাৎ সতেজ শাক সব্জি ও ফলমূল অব্যশই রাখা দরকার। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমানে ভাত,রুটি ও আলু জাতীয় খাবার, সেই সঙ্গে প্রোটিনযুক্ত খাবার হিসেবে মাছ,মাংস,ডিম ও ডাল ইত্যাদি খেয়ে রাখা দরকার। এছাড়া সামুদ্রিক মাছও খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে,কারণ সামুদ্রিক মাছে রয়েছে আয়োডিন যা বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ক্যালসিয়াম যুক্ত ফুড অর্থাৎ যাকে বলা হয় ডেইরি ফুড,যেমন-দুধ,দই ও দুধ দিয়ে তৈরী খাবার,ইত্যাদিও গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফলের দিক থেকে বলা যায়,এক গ্লাস কমলার রস থেকে আপনি প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা শিশুর দাতঁ ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করতে সাহায্য করে।

গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকা

Loading...

ডিমের উপকারিতা:-
শিশুর মস্তিকের বিকাশে ডিমের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে,এবং সেইসঙ্গে জন্মগত ত্রুটি দূর করতেও সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ ডিম কুসুম সহ খেয়ে রাখা খুব প্রয়োজনীয় বলা যায়।

গর্ভাবস্থায় মায়েদের সমস্যা:-
গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ মায়েদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়ে থাকে। এজন্যে শরীরে রক্তস্বল্পতা রোগ হয়ে থাকে,কারণ এই সময় গর্ভস্থ শিশুর দেহে লৌহের চাহিদা মেটানোর ফলে মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। এমনকি গর্ভবতী অবস্থায় রক্তস্বল্পতার ফলে শারীরিক দুর্বলতা,মানসিক অবসাদ বা ক্লান্তি,বুক ধড়ফড় করা প্রভৃতি সমস্যা হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন?

গর্ভবতী মায়েদের প্রোটিন বা আমিষের প্রয়োজনীয়তা:-
গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্য গ্রহনের প্রয়োজন দৈনিক ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম। তবে এই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় মাছ,মাংস,ডিম,দুধ,ডাল,বাদাম,শিমের বিচ থেকে।

ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয়তা:-
শারীরিক শক্তির উৎস হিসেবে এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে চর্বিজাতীয় খাবার। চর্বি পাওয়া যায় ঘি,মাখন,তেল,মাংসের চর্বি ইত্যাদি থেকে।

ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা:-
নবজাত শিশুর হাড় গঠনের জন্য গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি পরিমানে খেতে হবে। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। তবে দুধ ছাড়াও ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটানো যায় এরকম খাবার হল ডাল ও ছোট মাছ ইত্যাদি।

৪ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

লৌহ ও ফলিক এসিড-এর প্রয়োজনীয়তা:-
মেয়েদের গর্ভ ধারণের আগেই ফলিক এসিড ও লৌহসমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমানে খেয়ে রাখা দরকার।কারণ গর্ভকালীন মেয়েদের শরীরে এই দুটির ঘাটতি বেশি দেখা যায়। লৌহ ও ফলিক এসিড আছে এরকম খাবার গুলি হল দুধ,ডিম,মাছ,মাংস,চালতা,গুড়,কলিজা,পাকা কলা,খেজুর,আম,টমেটো,তরমুজ,সবুজ শাকসবজি,কালো কচুর শাক ইত্যাদি।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা pdf

ভিটামিন-এর প্রয়োজনীয়তা:-
শিশুর দেহ গঠনের জন্য ভিটামিন‘এ’ও ভিটামিন‘বি কমপ্লেক্স’খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও গর্ভকালীন রক্তপাতের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকার জন্য গর্ভের শেষদিকে ভিটামিন‘কে’খাওয়া খুবই প্রয়োজন। এমনকি শিশুর হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন‘ডি’খেয়ে রাখা খুব প্রয়োজন। আরও বলা যায় ভিটামিন‘সি’গর্ভবতী মায়েদের এবং নবজাতকের ত্বক এবং চুলের জন্ যখাওয়া খুবই দরকার বলা যায়। যে সমস্ত খাবারের মধ্যে এই ধরনের ভিটামিন রয়েছে সেগুলি হল-দুধ,ছানা,মাখন,ডিম,কডলিভার অয়েল,ইলিশ মাছ,টমেটো, গাজর,পালংশাক,বিট, লালশাক,মাংস,বিভিন্ন ধরনের ডাল,আলু,আমলকী,পেয়ারা,কমলালেবু ইত্যাদি।

ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা:-
স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে গর্ভবতী মায়েদের ক্যালরির প্রয়োজন অনেকটাই বেশি। গর্ভ ধারণের আগে প্রতিদিন যতটুকু ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়েছেন ততটুকুই খেতে হবে প্রথম তিন মাস পর্যন্ত।পরের তিন মাসের জন্য প্রয়োজন দৈনিক ৩০০ ক্যালরি এবং শেষ তিন মাসের জন্য প্রয়োজন আরও ২০০ ক্যালরি। তবে কখনো গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা কখনো ঠিক নয়,কারণ ডায়েট করার ফলে শরীর পুষ্টিহীনতায় পরিণত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি হওয়া ভালো কিন্তু কমে যাওয়া ভালো নয়।

গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা উচিত না এতে করে আপনার শরীর পুস্টিহীনতায় ভুগতে পারে।গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া ভাল লক্ষন কিন্তু আপনার ওজন যদি খুব বেশী বেড়ে যায় তাহলে খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাবার বাদ দিন ও হালকা ব্যায়াম করুন।
তবে তার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Share This Article