রবীন্দ্র জয়ন্তী 2023 – Rabindra Jayanti Story In Bengali
রবীন্দ্র জয়ন্তী (কাল্পনিক )
…………………….
” হ্যালো, হ্যালো—-মাইক টেস্টিন–
ওয়ান,টু,থ্রি,ফোর,ফাইভ ফাইভ,ফোর,থ্রি,টু,ওয়ান-
ওয়ান,টু,থ্রি,ফোর,ফাইভ ফাইভ,ফোর,থ্রি,টু,ওয়ান-
হ্যালো–নমস্কার—“আমরা কজন” ক্লাবের পক্ষ থেকে পাড়ার সবাই কে রবীন্দো জয়ন্তী
উপলক্ষে সাংস্কিতিক অভিনন্দন জানাই।আমাদের অনুষ্ঠান আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু
হতে চলেছে।তাই পাড়ার সব মা,কাকিমা ভাই,বোন দের কাছে আমার অনুরোধ,আপনারা যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহন করুন ……..
উপলক্ষে সাংস্কিতিক অভিনন্দন জানাই।আমাদের অনুষ্ঠান আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু
হতে চলেছে।তাই পাড়ার সব মা,কাকিমা ভাই,বোন দের কাছে আমার অনুরোধ,আপনারা যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহন করুন ……..
উফফফফ,আর পারা যাবে না।সেই দুপুর থেকে পাড়া কাঁপানো প্রচার
শুরু হয়েছে।ছটা বক্স আর অগুণতি চোঙা।তারের সাহায্যে অলি গলি পর্যন্ত ঢুকিয়ে
দিয়েছে রবি ঠাকুরকে।রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে বড্ড খুশী হতেন।নোবেল চুরি
যাওয়ার দুঃখ হয়তো ভুলতে পারতেন কিছু টা।দিন চারেক আগে একদল ছেলে এসেছিলো।পান
চিবোতে চিবোতে।মাথায় চুলের বাগান——
শুরু হয়েছে।ছটা বক্স আর অগুণতি চোঙা।তারের সাহায্যে অলি গলি পর্যন্ত ঢুকিয়ে
দিয়েছে রবি ঠাকুরকে।রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে বড্ড খুশী হতেন।নোবেল চুরি
যাওয়ার দুঃখ হয়তো ভুলতে পারতেন কিছু টা।দিন চারেক আগে একদল ছেলে এসেছিলো।পান
চিবোতে চিবোতে।মাথায় চুলের বাগান——
—–” কাকু,জানেন নিশ্চই,পাড়ায় রবীন্দো
জয়ন্তী হচ্ছে।পোষ্কার বলে দিচ্ছি,আপনার কাছে কিন্তু ভালো মাল্লু আশা করছি”।
রাগে ঘৃণাতে শরীর টা রি রি করে উঠেছিল।কিন্তু এদের চটানো
চলবেনা।এরাই এখন সংষ্কৃতির ধারক ও বাহক।অনেক দরাদরি করে পাঁচশো টাকা থেকে দুশো
টাকায় নামানো গেছে।একটা ছেলে রুখে দাঁড়িয়েছিলো—“বড্ড কিচাইন করে দিলেন
কাকু,আর একটু ছাড়লে পারতেন”।মিষ্টি হেসে পাশ কাটিয়ে গেছি।ভেবেছিলাম একটু
পড়াশোনা করবো কিছু,কিন্তু হ্যালো হ্যালোর দৌলতে সেই আশায় জল ঢেলে দিতে
হলো।ফেসবুক খুলে বসলাম।আজ সারা ফেসবুক জুড়ে রবীন্দ্র ঝড় উঠেছে।কে কতো বেশি
রাবীন্দ্রিক হতে পারে,তা প্রমাণ করার একটা মরিয়া চেষ্টা।
চলবেনা।এরাই এখন সংষ্কৃতির ধারক ও বাহক।অনেক দরাদরি করে পাঁচশো টাকা থেকে দুশো
টাকায় নামানো গেছে।একটা ছেলে রুখে দাঁড়িয়েছিলো—“বড্ড কিচাইন করে দিলেন
কাকু,আর একটু ছাড়লে পারতেন”।মিষ্টি হেসে পাশ কাটিয়ে গেছি।ভেবেছিলাম একটু
পড়াশোনা করবো কিছু,কিন্তু হ্যালো হ্যালোর দৌলতে সেই আশায় জল ঢেলে দিতে
হলো।ফেসবুক খুলে বসলাম।আজ সারা ফেসবুক জুড়ে রবীন্দ্র ঝড় উঠেছে।কে কতো বেশি
রাবীন্দ্রিক হতে পারে,তা প্রমাণ করার একটা মরিয়া চেষ্টা।
রবীন্দ্র জয়ন্তী সম্পর্কে লেখা
Loading...
সন্ধ্যাবেলা পাইজামা পাঞ্জাবি পরে,ঘাড়ে
পাউডার থাবড়ে দাঁড়ালাম গিয়ে মঞ্চের সামনে।আজ তো বাঙালি সাজবার দিন।
বৈশাখের বিশেষ দুটি দিনে আমাদের বাঙালিআনা টা একটু চাগাড় দিয়ে ওঠে।
না,ছেলেগুলো খরচ করতে কোনো কার্পণ্য
করেনি দেখছি।চারপাশে বেশ একটা রবি ঠাকুর,রবি ঠাকুর গন্ধ।মঞ্চে কবির বিশাল
একটা প্রতিকৃতি।পাশে মঙ্গলদ্বীপ।ফুলের
মালা।আম পল্লব আর গাঁদা ফুলের মালা
ঝুলছে ঝুলুর ঝুলুর করে।বুকে ভলান্টিয়ার লেবেল সাঁটা এক নব্য ছোকরা আমার পাশ
দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে বলে গেল–“এখনও চেয়ার খালি আছে আঙ্কেল,বসে পড়ুন।এরপর তাও
পাবেন না”।আমার বসার বিশেষ ইচ্ছে ছিলো না।কি হবে শুধুশুধু একটা চেয়ার আগলে
রেখে।
দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে বলে গেল–“এখনও চেয়ার খালি আছে আঙ্কেল,বসে পড়ুন।এরপর তাও
পাবেন না”।আমার বসার বিশেষ ইচ্ছে ছিলো না।কি হবে শুধুশুধু একটা চেয়ার আগলে
রেখে।
পাড়ার এক কেউকেটা ব্যক্তি কে প্রধান অতিথি করে নিয়ে আসা
হয়েছে।ইনি ধর্মেও
হয়েছে।ইনি ধর্মেও
আছেন আবার জিরাফেও আছেন।বোধহয় মোটা অঙ্কের ডোনেশন দিয়েছেন।তা তিনি
তার দীর্ঘ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের
সূচনা করেছিলেন,কিন্তু পেছন থেকে আওয়াজ ওঠায় থেমে যেতে হলো।মালা পরাতে গিয়ে
রবি ঠাকুরের ছবিটা একদিকে কেতরে গেছিলো—ঠিক করে দেওয়া হলো।
রবি ঠাকুরের ছবিটা একদিকে কেতরে গেছিলো—ঠিক করে দেওয়া হলো।
পাড়ার ক্ষুদে বাচ্চারা—“আলোকের এই
ঝরণা ধারায়”—গানের সাথে দারুণ এক নৃত্য পরিবেশন করলো।চটাপট হাততালি পড়লো
কিছু।এক বাচ্চা দেখি তার মায়ের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে—“মাম্মা,রবি আঙ্কেল কে
ছিলেন?”
কিছু।এক বাচ্চা দেখি তার মায়ের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে—“মাম্মা,রবি আঙ্কেল কে
ছিলেন?”
মা অপ্রস্তুত হয়ে বলছেন–“বড়ো পোয়েট
ছিলেন বেটু।এখন তুমি পোগ্রাম দেখো”
খুব ভালো লাগলো তন্ময় বাবুর গান।উদাত্ত রেওয়াজ করা গলা।”আকাশ ভরা সূর্য
তারা”যখন গাইছেন,ঠিক মনে হলো দেবব্রত বিশ্বাস।
তারা”যখন গাইছেন,ঠিক মনে হলো দেবব্রত বিশ্বাস।
এরপর ঘোষক এক মহিলার নাম ঘোষণা করার সাথে সাথে সিইইক
করেবেশ কিছু সিটি পড়লো।হায় রে রবীন্দ্র জয়ন্তী।আঁচল সামলাতে সামলাতে মঞ্চে
উঠলেন ভদ্রমহিলা।তিনি গান গাইলেন না গান গাইবার চেষ্টা করলেন—কিছুই বুঝলাম
না।
করেবেশ কিছু সিটি পড়লো।হায় রে রবীন্দ্র জয়ন্তী।আঁচল সামলাতে সামলাতে মঞ্চে
উঠলেন ভদ্রমহিলা।তিনি গান গাইলেন না গান গাইবার চেষ্টা করলেন—কিছুই বুঝলাম
না।
তবে এটা বুঝলাম ভদ্রমহিলা পাড়ায় বেশ জনপ্রিয়। “ভেঙে মোর ঘরের চাবি,নিয়ে যাবি
কে আমারে “–যখন ধরেছেন,পেছন থেকে একটা জড়ানো গলা পাওয়া গেল—“নিশ্চয়ই যাবো
বৌদি,দাদা কখন থাকেনা,টাইম টা একটু বলবেন”
কে আমারে “–যখন ধরেছেন,পেছন থেকে একটা জড়ানো গলা পাওয়া গেল—“নিশ্চয়ই যাবো
বৌদি,দাদা কখন থাকেনা,টাইম টা একটু বলবেন”
বিরক্ত লাগছিলো।হঠাৎ দেখি পাশে এসে
দাঁড়িয়েছে বিল্টু,টোটো চালায়।সে উৎকন্ঠা
নিয়ে জানতে চায়—“কাকা,এখানে “ও মধু,ও মধু–আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ” হবে
না?ও হরি,এ তো দেখছি বাটার দোকানে আমূল স্প্রে খুঁজছে।কি বলবো ওকে?ওই বরং আমাকে
কিছু হককথা শুনিয়ে দিলো—-“কি যে আপনারা করেন না কাকা,এইসব ঘুম পাড়ানি গান কেউ
শোনে?এরচেয়ে ” আযা সামে ” গাইতে বলুন।দু পাত্তর চড়ানোই আছে।জমিয়ে নাচতে পারতাম।
না?ও হরি,এ তো দেখছি বাটার দোকানে আমূল স্প্রে খুঁজছে।কি বলবো ওকে?ওই বরং আমাকে
কিছু হককথা শুনিয়ে দিলো—-“কি যে আপনারা করেন না কাকা,এইসব ঘুম পাড়ানি গান কেউ
শোনে?এরচেয়ে ” আযা সামে ” গাইতে বলুন।দু পাত্তর চড়ানোই আছে।জমিয়ে নাচতে পারতাম।
Rabindra Jayanti In Bengali
আর দাঁড়ানোর মতো মানসিকতা ছিল না।ঘরের দিকে হাঁটা
দিলাম।মঞ্চে তখন ঘোষক প্রাণপণে গলা ফাটাচ্ছে–“আপনারা ধৈর্য ধরে বসুন।এখনো অনেক
নামী দামী শিল্পী বাকী আছে।এরপর স্বরচিত রবীন্দ্র
দিলাম।মঞ্চে তখন ঘোষক প্রাণপণে গলা ফাটাচ্ছে–“আপনারা ধৈর্য ধরে বসুন।এখনো অনেক
নামী দামী শিল্পী বাকী আছে।এরপর স্বরচিত রবীন্দ্র
কবিতা পাঠ করে শোনাচ্ছেন………
এটাই হয়তো শেষ চমক ছিলো।স্বরচিত
রবীন্দ্র কবিতা!!!!!!!দারুণ দারুণ।
তবুও পরিশেষে একটা কথাই বলবো।
এখনো প্রতি বছর পঁচিশে বৈশাখ আসবে।এই ধরনের ভুল ভ্রান্তি ভরা কিছু
অনুষ্ঠান
অনুষ্ঠান
হবে।আর এই ধরনের অনুষ্ঠান হবে বলেই,আমরা কবি কে নিয়ে একদিন হয়তো ভাববো।কোন অতি
আধুনিকা মা তার ছোট ছেলের প্রশ্নের সামনে জেরবার হবেন–রবি ঠাকুর কে নিয়ে বলতে
গিয়ে।আমরা ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপ ছেড়ে,তৃণমূল বিজেপি কে পেছনে রেখে,দিল্লির মসনদ
নিয়ে চিন্তা না করে, বুকের খাঁচা ভরে কিছুটা টাটকা অক্সিজেন টেনে নেবো,আর সবাই
মিলে সমস্বরে বলে উঠবো——“আকাশ ভরা,সূর্য তারা,বিশ্ব ভরা
প্রাণ………….”
আধুনিকা মা তার ছোট ছেলের প্রশ্নের সামনে জেরবার হবেন–রবি ঠাকুর কে নিয়ে বলতে
গিয়ে।আমরা ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপ ছেড়ে,তৃণমূল বিজেপি কে পেছনে রেখে,দিল্লির মসনদ
নিয়ে চিন্তা না করে, বুকের খাঁচা ভরে কিছুটা টাটকা অক্সিজেন টেনে নেবো,আর সবাই
মিলে সমস্বরে বলে উঠবো——“আকাশ ভরা,সূর্য তারা,বিশ্ব ভরা
প্রাণ………….”