বসন্ত উৎসব নিয়ে লেখা 2024 – বসন্ত উৎসবের কিছু কথা – Basanta Utsav

Bongconnection Original Published
3 Min Read

বসন্ত উৎসব নিয়ে লেখা 

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন । আর তেরো পার্বনের শেষ হয় বসন্ত উৎসব আর হোলি
উৎসবের মাধ্যমে । বাংলা বছর শেষের আগে রঙের উৎসব বসন্ত উৎসব প্রতিটা বাঙালির জীবনে যে আলাদাই এক
রঙিন ছোয়া নিয়ে আসে তা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখে না ।

বসন্ত উৎসব শান্তিনিকেতন

Loading...

বসন্ত উৎসব মানেই হাজার হাজার বাঙালির ঠিকানা শান্তিনিকেতন (Santiniketan)। রঙ আর আবিরে যেন রাঙ্গা হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন। সকাল থেকেই যেন উৎসবের চেহারা। বেজে ওঠে সেই চেনা গান-‌ “ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল” অথবা একেবারে শেষ মুহূর্ত -“রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো”।

Basanta Utsav 2024 Santiniketan

কেউ কেউ মনে করেন, ১৯০৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি, বসন্ত পঞ্চমীতে, শমীন্দ্রনাথ  ঠাকুরের উদ্যোগে, যে ঋতু উৎসবের সূচনা হয়, তারই পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত রূপ শান্তিনিকেতনের আজকের এই বসন্ত উৎসব বা বসন্তোৎসব। সরস্বতীর
পূজার দিন শুরু হলেও পরবর্তী কালে সে অনুষ্ঠান বিভিন্ন বছর ভিন্ন ভিন্ন তারিখ ও তিথিতে হয়েছে। শান্তিনিকেতনের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথের বিদেশযাত্রা বা অন্য আরও দিক মাথায় রেখে কোনও এক নির্দিষ্ট দিনে আশ্রমবাসী মিলিত হতেন বসন্তের আনন্দ অনুষ্ঠানে।

ক্ষিতিমোহন সেন এবং অন্য সঙ্গীদের নিয়ে সে বার রবীন্দ্রনাথ চিন যাত্রা করছেন দোলযাত্রার দিনে। সন্ধ্যায় পূর্ণিমার চাঁদ ও গঙ্গাতীরের গ্রামের কীর্তনের সুর তাঁকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছিল। তাই হয়তো, শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব পূর্ণতা পায় রঙের উৎসব ‘হোলি’ বা ‘হোরী’ খেলার দিনে অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণের ‘দোলযাত্রা’ তিথিতে। কিন্তু, শান্তিনিকেতনে কখনওই ধর্মীয় আচার অনুষঙ্গ অনুমোদন পায়নি। অথচ উৎসবের আনন্দে ঘাটতিও পড়েনি।

বসন্ত উৎসব নিয়ে কিছু কথা 2024

দুর্গাপুজো এড়িয়ে শারদোৎসব, বিশ্বকর্মাকে সম্মান দিয়ে শিল্পোৎসব— বাংলাভাষা ও সমাজে শান্তনিকেতন নতুন শব্দ ও ভাবনার সংযোজন করেছে। নববর্ষের দিন শ্রীগণেশ বা এলাহি ভরসা, আমপাতা-সিঁদুর-পঞ্জিকা, হালখাতা আর লাড্ডু ছাড়াও যে নববর্ষ পালন হতে পারে, সেটা শিখিয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর শান্তিনিকেতন। আজকের বাংলাদেশ সেই ধর্মীয়-অনুষঙ্গহীন অনুষ্ঠানকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান-বিবর্তন হল এই বসন্তোৎসব।

বসন্ত বরণ উৎসব

তখন থেকেই দেশ-‌বিদেশের নানা অতিথির পাশাপাশি উৎসবে সামিল করা হতো আদিবাসীদেরও। সেই প্রথা আজও চলেছে। শান্তিনিকেতন উৎসবের, আনন্দের পরিচিত মুখ হলেও পৌষ উৎসব পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শান্তিনিকেতন অপেক্ষায় থাকে, কখন আসবে বসন্ত উৎসব?‌ কখন আসবে ফাল্গুনের সেই পূর্ণিমা?‌
বসন্ত উৎসব নিয়ে লেখা 2024 - বসন্ত উৎসবের কিছু কথা - Basanta Utsav
Loading...
সকাল থেকেই শান্তিনিকেতনের রাস্তা রাঙ্গা হয়ে ওঠে আবিরে। বিশ্বভারতী চত্বরই মূলত এই মূল অনুষ্ঠানের অঙ্গ। সেখানে নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি চলে নানা উৎসব। আশ্রমের ছাত্র‌ছাত্রীরা তো থাকেনই। তাছাড়াও থাকেন ভিনদেশি ছাত্র‌ছাত্রীরাও। নেচে ওঠে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরাও। এমনকী বিদেশিরাও।
হোলির দিনে যখন দিকে দিকে উদ্দামতা , শান্তিনিকেতনে তখন সুশৃঙ্খল আনন্দগান ওনাচের অনুষ্ঠান। সকালে সবাই গাইছে , ‘‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগল যেদোল …।’’ ধর্মের ছুঁতমার্গ, সামাজিক বিধিনিষেধ বা লোকাচারের বাড়াবাড়ি— এর কিছুই আসতে পারেনি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে, শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসবে।এই উৎসব এখনও আন্তরিক, এখনও অমলিন আনন্দের উৎস। 


Share This Article