বসন্ত এসে গেছে
( দশটি পরমাণু গল্প)
অভিজিৎ রায়
বসন্ত-১
এক মুঠো পলাশ হাতে নিয়ে বড় রোমান্টিক ভাবে স্ত্রী বললো এই শুনছো
“বসন্ত এসে গেছে”।
স্বামী: আমি পায়খানায়। বসন্তকে বল বাজার থেকে এক প্যাকেট ইশবগুলের ভুষি নিয়ে আসতে। “
পলাশ ভর্তি মুঠো শক্ত হল স্ত্রীর
“বসন্ত চটকে গেছে……”
বসন্ত উৎসব ২০২৪
বসন্ত-২
বছর পঞ্চাশের হরি বাবু থলি হাতে বাজার যাবার পথে হঠাৎই থমকে দাঁড়ালেন। রাস্তার ধারের বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছটি ফুলে ফুলে লাল। পথের উপরও ছড়িয়ে পরছে সেই ফুল। বসন্তের রঙ যেন আলতো করে ছুঁয়ে দিল হরি বাবুর গাল।
বাজার থেকে ফিরে হাসি হাসি মুখে এক মুঠো ফুল তুলে দিলেন তিনি স্ত্রীর হাতে। আজ বহুদিন পর সেই পুরোনো ভালো লাগাটা ফিরে এল যেন। গভীর দুটি চোখ মেলে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন
“প্লিজ গীতা আজ বারণ করনা।
কতদিন কুমড়ো ফুলের বড়া খাইনা। বেশ মুচমুচে করে ভেজো কেমন।”
“বসন্ত বেসন মাখছে…..”
বসন্ত -৩
গাবলুকে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে হাবলু জিজ্ঞেস করলো ” কি রে ভাই এমন মনমরা হয়ে বসে আছিস যে কী ব্যপার?”
” আর বলিস না হাবলা, ও পাড়ার জগাই ডাক্তারের মেয়ে জবাকে খুব মনে ধরেছিল। কাল সুযোগ পেয়ে ওকে বলেই ফেললাম ” জবা তোমায় দেখে আমার মনে বসন্তের রং লেগেছে। যে দিকে তাকাই শুধু হলুদ বসন্ত।”
আমার কথা শুনে জবা মুচকি হেসে বললো ” বাবার সাথে কথা বল, তোমার জন্ডিস হয়েছে। “
“বসন্ত টেঁশে গেছে…..”
বসন্ত উৎসব
বসন্ত-৪
পঞ্চাকে হাতে ভলিনি স্প্রে করতে দেখে টুকাই জিজ্ঞেস করে ” একী রে পঞ্চা কোথাও ধোলাই খেয়ে এলি নাকি?” পঞ্চা হাতে স্প্রে করতে করতে জবাব দেয়, না রে ভাই, সকালে ঝুম্পা বৌদি এসে বললো “আজ হোলির দিনেও তোমার দাদা ছুটি পায়নি। এদিকে আমি কত রং এনে রেখেছি। বাড়িতেও কেউ নেই। দুপুরের দিকে পারলে এসো না একবার। ” শুনেই তো আমার বুকের ভিতর হাজারটা বসন্ত কিলবিল করতে শুরু করলো। এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।”
টুকাই উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করে “আরিব্বাস! তারপর তারপর সারা দুপুর হেব্বি মাখামাখি হল বল।”
পঞ্চা মুখ গম্ভীর করে বলে ” হ্যাঁ হেব্বি মাখামাখি। সারা দুপুর দরজা আর জানলায় রং মাখালাম। বিকালে আবার গ্রীল গুলোতে রং মাখাতে যেতে হবে।
“বসন্ত ফেঁসে গেছে….”
বসন্ত -৫
সকাল বেলা ঝন্টু আর মন্টু দাঁড়িয়ে গল্প করছে। হঠাৎ ঝন্টু উপরের দিকে তাকিয়ে বলে ” ভাই দেখ গাছে গাছে কেমন কোকিল ডাকছে। মনে হয় বসন্ত এসে গেছে।” মন্টু চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ” কোথায় কোকিল! ওগুলো তো সব কাক ডাকছে। “
ঝন্টু একটা করুণ হাসি মুখে এনে বললো। ” না রে ভাই ওগুলো সব কোকিল। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে ।”
” বসন্ত ভেসে গেছে…”
বসন্ত -৬
“কি রে লাল্টু ঘরের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে আছিস যে। কলেজ যাবি না। আজ বসন্ত উৎসব হবে তো।” “আর বসন্ত উৎসব, যা জোর বেঁচেছি আজ” পল্টুর কথার জবাবে বলে লাল্টু।
পল্টু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে “এই সকাল সকাল আবার কি কেস হল? “
জবাবে লাল্টু বলে “আর বলিস না ভাই সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ব্যালকনিতে বসে আরাম করে এক পাউচ গুটখা মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে যেই না পিচিং করে পিক ফেলছি নিচে, ঠিক ওই টাইমেই পাশের পাড়ার মদন কাকু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন বাজার করতে। আর পরবি পর সেই গুটখার পিক পরলো গিয়ে ওনার টাকে। তেল চকচকে টাকটা তখন ভোরের সূর্যের মত টকটকে লাল। উনি মাথায় হাত দিয়ে রাগে চোখ কটমট করে মুখ দিয়ে সবে কুত্তা টুকু উচ্চারণ করেছেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের মত চিৎকার করে উঠি হ্যাপ্পি হোলি। বুড়া না মানো হোলি হে। আরে হোলি হে ভাই হোলি হে। “
“বসন্ত বেঁচে গেছে…”
Basanta Utsav In Bengali
বসন্ত-৭
দোলের দিন মাল খেয়ে টাল হয়ে বাচ্চু হাই ড্রেনে নেমে কি যেন খুঁজছে দেখে বঙ্কু দা এসে জিজ্ঞেস করলো “কি রে বাচ্চু তুই ড্রেনে নেমে কাদা ঘাটছিস কেন? বাচ্চু ড্রেনের কাদা ঘাটতে ঘাটতেই বলে ” আরে বঙ্কু দা বসন্ত এসেছে তো”। ” বসন্ত এসেছে তো রং খেল, মাল খা। তা না ড্রেনের মধ্যে ময়লা কাদা ঘাটছিস।” বঙ্কু দার কথার উত্তরে বাচ্চু আবারো কাদা ঘাটতে ঘাটতে বলে ” আরে দাদা মালই তো খাচ্ছিলাম দুজনে মিলে। তারপর বসন্ত বাথটবে স্নান করতে নেমে কোথায় যে গেল খুঁজেই পাচ্ছি না শালাকে।”
“বসন্ত স্নানে গেছে…”
বসন্ত-৮
” একিরে লোটন তুই এমন লেংচে লেংচে হাঁটছিস কেন? চোখে কালসিটে, গাল ফুলে ঢোল, কোথায় ঠ্যাঙ্গানি খেয়ে এলি?” আর বলিস না ছোটন কাল সকালে চাঁপাকে একটা লাভ লেটার দিয়েছিলাম
চাঁপা রাণী ফরফরানী
আমার হৃদয় কলি,
পার্কে এস সন্ধ্যা বেলা
খেলব দুজন হোলি।
জানিস একটু বাদে চাঁপাও রিপ্লাই দিল
সন্ধ্যা বেলা আসবো আমি
কাউকে না জানিয়ে
তোমায় দেব সত্যি করে
পলাশ দিয়ে রাঙিয়ে ।
রিপ্লাই পেয়ে তো ভাই আমি পাগল পুরো। সন্ধ্যা হতে না হতেই সেজে গুজে ফুলবাবুটি সেজে পার্কে গিয়ে হাজির। “
ছোটন উত্তেজিত হয়ে বলে “তারপর, তারপর কী হল”
লোটন ফুলে ঢোল হওয়া গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলে ” তারপর আর কী ভাই, সত্যি সত্যি পলাশ এসে পুরো থোবরা রাঙিয়ে দিল। উফফফ কী ঠ্যাঙ্গানিটাই না ঠ্যাঙালোরে। ইসসসস! পলাশ যে চাঁপার বয়ফ্রেন্ড আগে যদি জানতাম …..
“বসন্ত ফেটে গেছে…”
বসন্ত-৯
গদাই বাবু তার ছেলে পটাইকে কান ধরে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এসে পিঠে দুমাদুম কিল চর দিচ্ছেন আর চিৎকার করে বলছেন ” অপদার্থ ছেলে কোথাকার। বাবার মান সম্মান কিচ্ছু রাখলো না। বসন্ত উৎসবে ফূর্তি করার নামে বাবু নেশা করে বেড়াচ্ছে, এমনকি নিজের বাপকে অবধি চিনতে অস্বিকার করে। এমন কুলাঙ্গার ছেলে আমার ঘরে কী করে জন্মালো কে জানে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে গদাই বাবুর স্ত্রী রমলা দেবী ছুটে এসে দেখেন গদাই বাবু সারা শরীরে পেঁড়ি কাদা মেখে ছেলে পটাইকে উদম পেটাচ্ছেন। রমলা দেবী তাড়াতাড়ি ছুটে এসে ছেলেকে সরিয়ে নিয়ে বলেন ” একি গো ছেলেটাকে অমন গাধা পেটা করছো কেন, আর তোমারই বা এমন দশা কি করে হল।” গদাই বাবু রাগে গজগজ করতে করতে বলেন ” না ওকে মারবো না পুজো করবো, ওর এত বড় সাহস ও কিনা নেশা করে আমাকেই চিনতে অস্বীকার করে।”
পটাই লাল হয়ে যাওয়া কানটায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে ” একটা বিড়িই তো খাচ্ছিলাম, আর উনি নিজে যে দোল খেলার নাম করে চোলাই টেনে নর্দমাতে পরেছিল তার বেলা কিছুনা। কাদা মেখে অমন ভূত হয়ে থাকলে বাপ বলে চিনবোটা কী করে।”
“বসন্ত ঢুলু ঢুলু হয়ে গেছে…।”
বসন্ত -১০
দোলের দিন মামাবাড়ি থেকে ফিরছে বাবা। তিন ছেলে তাই হেব্বি খুশি। বাবাকে দোলে রং মাখাবে বলে তিনজনই রং কিনতে গেছে রং এর দোকানে। কিন্তু দোকানে গিয়েই তিন ভাইএর মধ্যে লেগে গেছে তুমুল ঝামেলা। এক ভাই বলে বাবা লাল রং মাখবে, আরেক ভাই বলে না চৌত্রিশ বছর বাবা একই রং মেখেছে তাই এখন সবুজ রং মাখবে। আরেক ভাই বলে ওই রং মাখা দেখলেই বাবাকে ইডি কাকু ,সিবিআই জ্যাঠুরা ধাওয়া করে বাবা এবার গেরুয়া রং মাখবে। তিন ভাইএর ঝামেলা দেখে শেষে দোকানদার রেগেমেগে জিজ্ঞেস করে এই তোদের বাবার কোন রংটা পছন্দ? তিন ছেলে বলে বাবা তো রাজনৈতিক নেতা তাই এক এক ভোটে বাবার এক একটা রং পছন্দ হয়। দোকানি দুটো রং এর কৌটো প্যাকেটে ভরে ছেলে গুলোর হাতে দিয়ে বলে যা ইচ্ছে মত বাবার মুখে মাখা গিয়ে। এর জন্য টাকা দিতে হবে না। ছেলে গুলো খুশি হয়ে বলে এটা কী রং কাকু। দোকানি মৃদু হেসে বলে একটা চুন আর একটা কালি।
” বসন্ত ডিগবাজি খেয়ে গেছে…”