হঠাৎ প্রেমের গল্প – মনের মানুষ – Hotat Premer Golpo – Love Story

Bongconnection Original Published
20 Min Read

 হঠাৎ প্রেমের গল্প – মনের মানুষ – Hotat Premer Golpo – Love Story

হঠাৎ প্রেমের গল্প - মনের মানুষ - Hotat Premer Golpo - Love Story
Loading...

হঠাৎ প্রেমের গল্প

মনের মানুষ


অনুপমের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল বন্ধু তমালির বিয়েতে। তমালির শুভদৃষ্টি সবে
মাত্র হয়েছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুরা হাসাহাসি করছি তখনই হাতে ধরে রাখা
মুঠো ফোনটা বেজে উঠলো দেখলাম মা ফোন করছে। ফোনটা ধরে ভিড় থেকে একটু সরে এসে
মাকে বললাম, তমালির এইমাত্র শুভ দৃষ্টি সম্পন্ন হলো এবার কিছু খেয়ে বের হচ্ছি
১১:১৫ লাস্ট ট্রেনটা ঠিক পেয়ে যাবো এখনও দশটা বাজেনি তুমি চিন্তা করোনা,
ছাড়ছি। খেয়ে এসে তমালিকে বললাম আজ যাই, তমালি মুখটা কাচুমাচু করে বলল, এখনই
চলে যাবি ? একটু হেসে তাকে বললাম থাকার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই আর দেরি করলে
লাস্ট ট্রেনটা পাবো না, ঠিক আছে তুই শ্বশুর বাড়ি থেকে এ বাড়িতে এলে খবর দিস
দেখা করে যাবো। ঠিক আছে বলে তমালি বলল, আমাদের বাড়িটা একটু ভিতরে হওয়ায়
স্টেশনে যাওয়ার কোন টোটো বা ভ্যান এখান থেকে পাবিনা ! বললাম তাহলে !! তমালি
এদিক-ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে শেষে একজনকে দেখে বলল, অনুপমদাকে বলে দেখি তোকে
স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারে কিনা। তমালি এগিয়ে গিয়ে লম্বার উপরে দোহারা
চেহারার একটা ছেলেকে আমাকে দেখিয়ে কথা বলাতে বুঝতে পারলাম ইনিই হয়তো অনুপমদা।
ছেলেটি কাছে এসে বলল আপনি কি স্টেশনে যাবেন ? হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই ছেলেটি
একবার তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল চলুন। তমালিকে বিদায় জানিয়ে ছেলেটির
মটর সাইকেলের পিছনে উঠবার আগে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনিই কি অনুপম বাবু ? সে
হ্যাঁ বলে বলল, কেন বলুন তো ! বললাম কিছু না, তমালি আপনার নাম বলছিল তাই
জিজ্ঞাসা করলাম।


স্টেশনে পৌঁছিয়ে অনুপম বাবুকে চলে যেতে বললে তিনি বললেন, এই রাতে আপনাকে একা
প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি যেতে পারব না, ট্রেন আসুক আপনি উঠুন তারপর
যাবো। সেদিন অনুপম বাবুর দায়িত্ববোধটা দেখে ভাল লেগেছিল, তাকে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম, তমালি আপনার কে হয় ? সে বলেছিল খুড়তুতো বোন।

প্রথম প্রেমের রোমান্টিক গল্প

Loading...
দিন পনেরো বাদে তমালি ফোন করে বলল তিন দিনের জন্য এ বাড়িতে এসেছি তুই সকাল
সকাল চলে আয় সারাদিন গল্প করব। পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম, মেচেদা স্টেশনে
নেমে দেখি টোটো চালকদের নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলের জন্য টোটো বন্ধ এমনকি ভ্যানও
নেই। ফোন করে তমালিকে বললাম স্টেশনে আটকে গেছি। তমালি বললো একটু দাঁড়া আমি লোক
পাঠাচ্ছি।
লোক না, কিছু সময় পর মোটরসাইকেল নিয়ে অনুপম বাবু এলেন। এত সময় দাঁড়িয়ে
থেকে কেমন যেন একটা বিরক্ত লাগছিল সুন্দর চেহারার অনুপম বাবুকে দেখেই মনটা ভালো
হয়ে গেল ! জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, ভালো আছেন ? হেলমেটটা খুলে মুখের কোনায় ছোট্ট
একটা হাসি নিয়ে সিটের পিছনে বেঁধে রাখা লাল কাপড়টা খুলে ধুলো লেগে থাকা
জায়গাটা মুছতে মুছতে বললেন, চারটে টিউশনি পড়িয়ে কি ভালো থাকা যায় ! হাত
খরচটা চলে। বললাম চাকরির চেষ্টা করছেন না ? লাল কাপড়টা আবার যথাস্থানে বেঁধে
মাথায় হেলমেটটা পরবার আগে বললেন, আট মাস আগে একাউন্টান্সিতে অনার্স নিয়ে
গ্রাজুয়েশন করবার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটা ইন্টারভিউ দিয়েছি কোন সুফল পাইনি,
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বললাম বাড়ীতে আপনার কে কে আছেন ? কে কে বলতে এখন আমি
আর বাবা। বললাম আপনার মা নেই ! ছিল, চার বছর আগে মারা গেছেন। আপনার বাবা কি
করেন ? বাবা চাকরি করলেও সামনের বছর রিটায়ার করবেন, তার আগেই চাকরি আমাকে একটা
পেতেই হবে বলে সিটে বসে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বললেন বসুন। আমি আর কোন কথা না
বলে মোছা জায়গাটায় উঠে বসে অনুপম বাবুর কাঁধের উপর হাতের সাপোর্ট রেখে মনে
মনে ভাবতে লাগলাম এত সুন্দর একটা ছেলে যদি বেকার না হতো তাহলে তাকে নিয়ে ভাবনা
চিন্তা করা যেত। গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক চাপায় চিন্তায় ছেদ পড়লো দেখলাম সামনে
একজন অল্পবয়সী মোটরসাইকেল চালক একজন বয়স্ক সাইকেল চালককে ধাক্কা দিয়ে
দ্রুতগতিতে চলে গেল ! অনুপম বাবু আমাকে নামতে বলে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে
ভদ্রলোককে রাস্তা থেকে তুলে তিনি ঠিক আছেন কিনা জিজ্ঞাসা করে সাবধানে যাবেন বলে
পড়ে যাওয়া সাইকেলটা তুলে তার হাতে দিয়ে আমাকে আবার বসতে বলে গাড়িটা স্টার্ট
দিলেন। টোটাল ঘটনাটা এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে গেল। ভালো লাগলো অনুপম
বাবুর এগিয়ে গিয়ে বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের প্রবণতা দেখে।
সেদিন ফেরার সময়ও আশা করেছিলাম অনুপম বাবুর সাথে ফিরব স্টেশনে বসে গল্প করব চা
খাব ! কিন্তু না, উনি আসতে পারেননি ছাত্র পড়ানোয় ব্যস্ত ছিলেন বলে।
আরো পড়ুন,

সেই শেষ, আর কখনো তমালিদের বাড়ীতে যাওয়া হয়নি মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে অনুপম
বাবুর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলেও তার সাথেও দেখা হয়নি। ইচ্ছা থাকলেও
লজ্জায় তমালির কাছে অনুপম বাবুর ফোন নাম্বারটা যেমন চাইতে পারিনি তেমনি
জিজ্ঞেস করাও হয়নি অনুপম বাবু চাকরি পেয়েছেন কিনা ?

অনেক সময় অনেক মানুষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছাড়াই তাদের নিজেদের ব্যবহারে অন্যের
মনে জায়গা করে নেয়। অনুপম বাবুর সাথে দেখা হয়েছে দু’বার কথাবাত্রা যাই হোক
না কেন এমন কিছু হয়নি যেটা মনে রাখার মত, অথচ হঠাৎ হঠাৎ করে তার মুখটা আমার
মনের মাঝে উঁকি দেয় ! কারণ কি নিজেই জানিনা তবে হ্যাঁ, অনুপম বাবুকে দেখে তার
সাথে আলাপ করে ভালো লেগেছিল কিন্তু এই ভালোলাগা আর প্রেম-ভালোবাসা কিন্তু এক না
!! ভুলে যাব মনে করেও মনের কুঠুরিতে তাকে সযত্নে রেখে দেড় বছর পর আমিও
গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করেছি। ভেবেছিলাম এমবিএটা করে একটা চাকরি পেয়ে গেলে তখন
অনুপম বাবুর খোঁজ করব। 
কিন্তু না, মেয়ে বলে যেটা ভেবেছি সেটা হয়নি ! বাবা মা দাদা সবাই প্রেসার
দিয়ে বলতে লাগলো, বিয়ের পর তুই এমবিএটা করিস কিন্তু এখন বিয়েতে না করিস না
তা না হলে মোটা মাইনের চাকরি করা ভালো ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।
ক্ষণিকের জন্য শান্ত সুন্দর হাসি হাসি অনুপম বাবুর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো
!! মনে মনে ভাবলাম কষ্টটাকে হাসিমুখে মেনে নিতে বোধ হয় প্রকৃত পুরুষরাই পারেন।
শেষ পর্যন্ত তমালিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অনুপম বাবু চাকরি পেয়েছেন কিনা ! যখন
শুনলাম তখনও উনি চাকরীর চেষ্টা করে চলেছেন তখন একজন বেকার ছেলের কথা বাড়িতে
কাউকে কিছু বলতে না পারলেও আমাকে আরো কিছুদিন সময় দেওয়া হোক বলে আপত্তি
করেছিলাম। আসলে বাপের বাড়ি হোক কিংবা শ্বশুরবাড়ি সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের
স্বাধীনতাটা একটু কম ! তা না হলে এমবিএটা করে একটা চাকরি পেয়ে গেলে এই
সুচিস্মিতার জীবনটাই হয়তো অন্যরকমও হতে পারতো !!

আমার প্রেমের গল্প

আপত্তি সত্ত্বেও বিয়েটা হয়ে গেল, ছেলে রমেশ দেখতে-শুনতে ভাল স্মার্ট। ভাবলাম
মুনের কুঠুরিতে যে ছবিটা আছে সেটা এবার আস্তে আস্তে ভুলে যাব। 
ফুলশয্যার রাতে সাজানো-গোছানো বিছানায় বসে ঘোমটা মাথায় দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম
কখন রমেশ এসে ঘোমটাটা তুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলবে সুচিস্মিতা তোমাকে
কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে।
না, আমি ভুল চিন্তা করে বসে ছিলাম !
রমেশ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হেলে দুলে আমার সামনে এসে ঘোমটাটা একটানে খুলে দুল
পরা দুই কানের উপর হাত চেপে জোর করে আমার মুখের উপর চুমু খেলো, কানে ব্যথা
পেলাম সেই সঙ্গে গাটা গুলিয়ে উঠলো, মুখে তার মদের গন্ধ ! ঠেলে সরিয়ে দিয়ে
বললাম আপনি মদ খেয়েছেন !! সে বলল কেন রে মদকি খাওয়ার জিনিস না ? আমি তো রোজ
খাই। অবাক হয়ে গেলাম রমেশের মুখের ভাষা শুনে, তার দিকে তাকিয়ে বললাম একথা
আপনি আমার বাড়ির লোকেদের আগে বলেন নি কেন ? সে বিচ্ছিরি ভাবে ফ্যাচ করে হেসে
বলল, এখন তো জানলি তোর বাড়ির লোকেদের তুই না হয় বলে দিস। নে আর ছেনালি করতে
হবে না অনেক রাত হয়েছে এসব বাদ দে, দেরি করিস না জামা কাপড় খুলে ফেল !
ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠলো, গলার স্বর বাড়িয়ে বললাম খবরদার আপনি আমার কাছে
আসবেন না। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রমেশের থাপ্পর আমার মুখের উপর এসে পড়ল !
দাঁত দিয়ে নোনা রক্ত আর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে আমার
গলার কাছটা চেপে ধরে আওয়াজ একদম নিচে বলে রমেশ আমার জামা কাপড় খুলে জোর করে
ধর্ষণ করলো ! সেখানেও রক্ত !!
রমেশ তার দেহের খিদে মিটিয়ে আমার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
রক্তাক্ত আমি বাড়ির লোকেদের কাছে শোনা বেশি মাইনে পাওয়া ভালো ছেলের এই বিকৃত
ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নিশ্চুপ হয়ে মনের ব্যথা শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে ভেবে
নিলাম প্রথম রাতে যে তুই তুকারি করে গায়ে হাত তুলে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা
দিতে পারে তার সাথে বাকি জীবনটা থাকা যাবে না। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাবার
দেওয়া আলমারি থেকে বন্ধ করে রাখা ফোনের সুইচটা অন করে বাড়িতে মাকে ফোন করে
সমস্ত ঘটনা জানালাম। কিছুসময় চুপ থেকে মা শুধু বললেন, রমেশ তোর গায়ে হাত
তুলেছে তাও এই ফুলশয্যার রাতে ! তুই তোর জামা কাপড় সোনাদানা সমস্ত গুছিয়ে
নিয়ে অপেক্ষা কর, ভোর হতেই তোর দাদা তোকে ওই নরক থেকে নিয়ে লোকাল থানায়
রিপোর্ট করে বাড়ি আসবে।
রক্ত লেগে থাকা জামা কাপড় ওয়াশরুমে ছেড়ে নিজেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে
বিছানার এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে ভোরের অপেক্ষা করতে করতে কেন জানি আজ এই
সময়ে যাকে ভুলবো মনে করেছিলাম সেই শান্ত সুন্দর পরোপকারী অনুপমকেই খুব মনে
পড়তে লাগলো !

সত্যি প্রেমের গল্প

দু’বছর আট মাস পর।
আমার ডিভোর্সটা ছ’মাসের মধ্যে হয়ে গিয়েছিল। বাগনান থেকে কলকাতায় এসে একটা
লেডিস হোস্টেলে থেকে এমবিএতেও ভর্তি হয়েছিলাম। পাস করবার তিন মাসের মধ্যেই আজ
চাকরির প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পেলাম, তিন দিনের মধ্যে জয়েন করতে
হবে, পোস্টিং কলকাতারই অফিসে।
এমবিএ পড়বার সময় যে লেডিস হোস্টেলটায় ছিলাম সেখানে যোগাযোগ করলে জানতে পারি
সিট খালি নেই। বাবা-মা চিন্তা করছে দেখে কলকাতার মেয়ে বৌদি বলল, দুএকজনকে খোঁজ
নিয়ে দেখতে বলেছি সুচির অফিসের কাছাকাছি কোথাও যদি পেইং গেস্ট হিসেবে একটা
থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারে কিংবা ভালো লেডিস হোস্টেলের সিট খালি আছে কিনা।
আপাতত যে কদিন ওর থাকার একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা না হচ্ছে সে কটা দিন আমার বাপের
বাড়ি থেকে ও ওর অফিসে যাতায়াত করতে লাগুক, আমি বাবাকে বলে দিচ্ছি।
আরো পড়ুন,

অফিস থেকে বেশ খানিকটা দূরে হলেও পাঁচদিন ধরে বউদির বাবার বাড়ি থেকে অফিসে
যাতায়াত করছি। অফিস কলিগদেরও বলেছি তাদের কারো যদি কোন যোগাযোগ থাকে তাহলে
আমার যেন একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
প্রতিদিন না হলেও প্রায়ই তমালি ফোন করে আমার খবরা খবর নেয়, তখন মনে হয়
তমালিকে জিজ্ঞাসা করি অনুপম এখন কোথায় আর কি করছে কিন্তু একজন ডিভোর্সি
হওয়ায় সংকোচ লাগে পারিনা ! তমালি কি মনে করবে এই চিন্তা করে ইচ্ছেটা বুকের
মধ্যে চেপে রাখি। 
আজ তমালি যখন ফোন করলো তখন আশেপাশের সবাই টিফিন করতে চলে গেছে আমিও যাব বলে
ডেক্সটা গুছাচ্ছিলাম। তমালি বলল থাকার কোন যোগাযোগ করতে পেরেছিস ? বললাম এখনো
হয়নি খোঁজ চলছে। আমি আমার হাসবেন্ডকে ছাড়াও অনুপমদাকেও বলেছিলাম তোর একটা
থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য, অনুপমদা কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলল বিধান নগর
সেক্টর ওয়ানে একটা দু কামরার কমপ্লিট ফ্ল্যাট খালি আছে ফোন করে ফ্ল্যাট ওনারের
সাথে কথা বলে নিতে, ফোন নম্বরও দিয়ে দিয়েছে। বললাম নাম্বারটা দে ! তমালি বলল
কার ফ্ল্যাট ওনারের ? না বলে বললাম তোর অনুপমদার। তমালি বলল অনুপমদার নাম্বার
নিয়ে তুই কি করবি তার থেকে ফ্ল্যাট ওনারের সাথে সরাসরি কথা বল। বললাম অনুপম
বাবুর সাথে কথা বলে নিলে ভালো হতো কেননা ফ্ল্যাট ওনারকে তো আমি চিনিনা তিনি
কেমন মানুষ তাও জানিনা… 
মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে তমালি বলল ঠিক আছে আমি নাম্বারটা তোর হোয়াটসঅ্যাপে
পাঠিয়ে দিচ্ছি কথা বলে কি হলো আমাকে জানাস বলে ফোনটা কেটে দিলো।
চেপে রাখা ইচ্ছেটা নাম্বারটা পেতেই যেন আঙ্গুলের মাথায় চলে এল ফোন করলাম অনুপম
বাবুকে। একবার রিং হতেই ফোনটা ধরে বললেন কে বলছেন ? বললাম আমি কি অনুপম বাবুর
সাথে কথা বলছি ! বললেন, হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে ? বললাম আমি তমালির বন্ধু
সুচিস্মিতা। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললেন ওনারের সাথে কথা বলে ফ্ল্যাটটা
দেখুন পছন্দ হয় কিনা, ওটা আপনার অফিসের কাছাকাছি হবে। এতদিন পর যার গলার
স্বরটা শুনতে পাচ্ছি তাকে দেখার ইচ্ছায় বললাম আপনি সঙ্গে থাকলে ভালো হয়, আমি
একেবারে নতুন ঠিকমতো চিনতে পারব কি না ! একটু সময় নিয়ে অনুপম বললেন, আপনি
ওনারকে ফোন করুন তিনি যদি বাড়ি থাকেন তাকে বলুন আপনি ঘর দেখতে আসছেন। ঠিক আছে
করছি বলে আকুতি করে বললাম, আপনি আসবেন না ! আজ যদি অসুবিধা হয় তাহলে না হয়
আগামীকাল দেখতে যাওয়ার প্রোগ্রামটা করি ? উনি বললেন আগামীকাল সম্ভব হবেনা
ব্যস্ত থাকব আপনি একটা কাজ করুন এখন তো লাঞ্চ ব্রেক চলছে আপনি আপনার অফিসের
সামনে থেকে একটা অটো ধরে পিএনবি’র মোড়ে এসে দাঁড়ান আমি আসছি।
সিনিয়রকে বলে কুড়ি মিনিটের মধ্যে পিএনবি’র সামনে এসে প্রায় দশ মিনিট অপেক্ষা
করার পর ফোনটা করতে যাব দেখলাম উল্টো দিকের রাস্তায় গভর্মেন্ট অফ
ওয়েস্টবেঙ্গল লেখা একটা গাড়ি থেকে অনুপম নেমে গাড়িটাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসতে লাগলেন। সাড়ে চার বছর আগে যার দায়িত্ববোধ
আর সুন্দর স্বভাবের পুরুষালি চেহারার প্রতি একটু হলেও আকৃষ্ট হয়েছিলাম আজ
সাড়ে চার বছর পর সেই মানুষটিকে আবার চোখের সামনে দেখে অনেকদিন পর ভালো লাগলো।
কাছে এসে বললেন আমার বোধহয় একটু দেরি হয়ে গেল। বললাম না ঠিক আছে, আমরা এখন
কোন দিকে যাব ? যাব তো সামনের দিকে বিডি ব্লকে কিন্তু তার আগে খিদে লেগেছে কিছু
খাওয়া দরকার বলেই বললেন, আপনি কিছু খেয়েছেন ? না বলে বললাম এখানে কোন
রেস্টুরেন্ট আছে ?? উনি বললেন ওইতো আপনার পাশেই, গন্ধ পাচ্ছেন না ! তাকিয়ে
দেখে বললাম আগে খেয়াল করিনি, চলুন কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। উনি আমাকে অবাক করে
বললেন, এখানে শুধু চাইনিজ আর কন্টিনেন্টাল ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না আপনি খেতে
চান খান আমি আলু ভাজা দিয়ে গরম রুটি খাব ! বললাম সেটা কোথায় পাওয়া যাবে ? ওই
তো বলে রাস্তার ওপারে ফুটের উপর পলিথিন দিয়ে ঘেরা একটা দোকান দেখিয়ে উনি
বললেন, ওখানে গরম গরম রুটি ভাজছে যদি খেতে চান তাহলে চলে আসুন। অবাক হলাম ওইরকম
একটা গাড়ি থেকে নেমে এইরকম একটা সস্তা দোকানে বসে খাবেন ! 

Bengali Love Story

রাস্তা পার হয়ে দোকানের সরু বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে রুটি আর আলু ভাজা খেতে খেতে
বললাম, বিরিয়ানি কাটলেট কিংবা চাওমিন খান না। উনি রুটি খেতে খেতে বললেন, খাই
তবে ইদানিং খাচ্ছি না। বললাম কেন পেটের সমস্যা, মাথা নেড়ে না বলে বললেন,
অডিটরের চাকরি করি তো তাই যেখানেই অডিট করতে যাই সেখানেই এই সব খাবার খেতে
দেয়, প্রথম প্রথম খেতাম এখন আর খাই না। আজও লাঞ্চে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ
ছিল, না খেয়ে চলে এসেছি। বললাম বিরিয়ানি ফেলে আপনি রুটি খাচ্ছেন ! ওই যে
বললাম আগে এত খেয়েছি বলেই হয়তো এখন আর ভালো লাগেনা। তবে যাই বলুন আলু ভাজা বা
বেগুন ভাজা দিয়ে গরম রুটি খাওয়ার স্বাদই আলাদা, দেশের বাড়ি থাকতে খুব খেতাম।
বললাম কেন, এখন যে বাড়িতে থাকেন সেখানে খান না ? উনি মুখে সেই হালকা হাসি
নিয়ে বললেন, এখানে বাড়ি কোথায়, মেসে থাকি সকালের খাবারটা গরম পেলেও রাতে যখন
রুটি খাই তখন সেটা দুহাত দিয়ে ছিড়তে হয়। কেন আপনার মিসেস কোথায় থাকেন বলে
ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ! উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু
হেসে রুটি আলু ভাজার দাম মিটিয়ে বললেন ঠাট্টা করছেন করুন, আপনার কাছে জল আছে ?
ব্যাগ খুলে ছোট জলের বোতলটা বার করছি উনি বললেন বিয়েটা এখনো করে উঠতে পারিনি।
বোতলটা ওনার হাতে দিয়ে বললাম, কেন কাউকে কথা দিয়ে রেখেছেন ? দুঢোক জল খেয়ে
বললেন সেরকম না ! করা হয়নি বলতে দু’বছর আগে চাকরি পেয়ে একটু গুছিয়ে
নিচ্ছিলাম, দশ মাস আগে বাবা মারা গিয়ে সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। নিজেকে চেপে না
রেখে বললাম, আমার খবর জানেন ? চলুন এবার যাওয়া যাক বলে বললেন জানি, তমালির
কাছে শুনেছি। বিডি ব্লকের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, আমার আত্মীয়স্বজন এমনকি
বন্ধুরাও বলে দোষ নাকি আমার আমিই এডজাস্ট করতে পারিনি। যারা বলে তারা হয়তো
আপনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন সেরকম কোনো পরিস্থিতির সামনে পড়ে নি
বলেই বুঝতে চায় না বলেই বললেন, ওসব নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না আপনি এখন একজন
সম্পূর্ণ স্বাধীন মানুষ ! চাকরি করছেন এবার নিজে দেখে শুনে একটা বিয়ে করুন।
বললাম ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না ভয় পায়। উনি দাঁড়িয়ে গিয়ে
বললেন, আপনার মত এমন সুন্দর একজন মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে ভয় পাবে কেন ? আপনার
ধারণা ভুল ! ঠিক আছে আপনার যদি কাউকে পছন্দ থাকে আমাকে বলবেন আমি তার সাথে কথা
বলব। অনুপমের দিকে ঘুরে চোখে চোখ রেখে বললাম, যদি বলি আপনাকে আমার পছন্দ তাহলে
কি এই ডিভোর্সিকে বিয়ে করতে পারবেন ? সে হতবাক হয়ে আমার মুখের দিকে কয়েক
সেকেন্ড তাকিয়ে শেষে ঠোঁট চেপে হেসে বলল, কি যে ঠাট্টা করেন ! আমি মানে আপনার
মাথা ঠিক আছে তো !! কি বলছেন আপনি জানেন ?? জানি। ঠান্ডা মাথায় খুব ভেবেচিন্তে
বলেছি, এখন বলুন পারবেন বিয়ে করতে এই ডিভোর্সিকে ? অনুপম গম্ভীর হয়ে আমার
মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তো তমালিকে খবর দিতে হয়। বুঝতে না পেরে বললাম
তমালিকে কেন ? আরে ওর জন্যই তো আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, বিয়ের
সাক্ষীটা ওকে না করলে ওকি ছেড়ে দেবে মনে করেছেন নাকি ?? কথাটা শুনে আমার
বিশ্বাস হলো না। বললাম বিয়েটা কি সত্যিই আপনি আমাকে করবেন ? একটু এগিয়ে এসে
আমার দুই বাহু ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে অনুপম বলল, হ্যাঁ। মনের মানুষের স্পর্শে
খুশিতে চোখে জল চলে এলো সেইসঙ্গে লজ্জাও পেলাম ! নিজেকে লুকানোর জন্য বললাম
ছাড়ুন !! এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ওনারের সাথে কথা বলে ঘরটা আগে ঠিক করি চলুন।

Premer Golpo In Bengali

যে মানুষটা এতদিন আমার মনের এক কোনে জায়গা করেছিল সেই মানুষটাকে আমি আমার
নিজের করে পাবো ভেবে অনেকদিন পর মনটা খুশিতে ভরে উঠল।
মনের শান্তি আর ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে মনের মানুষটার পাশে হাটতে হাটতে আমরা
দুজন নতুন ঘর দেখতে এগুতে লাগলাম।

Share This Article