একটি ভ্রমণ কাহিনী (ভ্রমণ কাহিনী রচনা) – Bhromon Kahini Rochona
একটি ভ্রমণ কাহিনী
না দেখতে পারলে ফিরবি না ভাই। বান্ধবীরা বলেছিল, বাঘ নিয়ে আসবি আর না হলে বাঘ
হয়ে আসবি কিন্তু!
আমি তো ভয়ঙ্কর মোটিভেশন নিয়ে তাই বাঘ দেখতে গেলুম। প্রথমদিন লঞ্চেই কাটল
সারাদিন। আরে, বাঘ কই, একটা বেড়াল পর্যন্ত নেই। সকাল থেকে শুধু অবেলার
বৃষ্টিতে চান করে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে হেঁচে মরলাম। বিকেলে শুরু হল ঘূর্ণিঝড়।
বেশ চা খাচ্ছিলাম ডেকের উপর বসে। হঠাৎ দেখি জঙ্গলের ভিতর থেকে মরমর ঘড়ঘড়
দুদ্দাড় শব্দ হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়ানক গোলমাল বেঁধে গেল। গাছপালা ভেঙে
বাঘ, হরিণ, শেয়াল, কুমির আরো যা যা ছিল সব ঝড়ের চোটে আকাশপথে উড়ে যেতে লাগল।
তারপর আমাদের বোটটাও উল্টে গেল, আমরাও ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কায় ঘুরতে ঘুরতে এদিক
ওদিক উড়ে যেতে লাগলাম। চারপাশে অন্ধকার, কে কোথায় ছিটকে পড়লাম কিছুই বোঝা
গেল না। বোকা লোকেরা উড়তে উড়তেই বাঘের পেটে চলে গেল। আমি অনেক স্মার্ট, তাই
ফস করে হাতের কাছে একটা দড়ি পেয়ে সেটা ধরে ঝুলতে ঝুলতে বেঁচে গেলাম।
একটি ভ্রমণ কাহিনী অনুচ্ছেদ
ভাবলাম এ যাত্রায় এখানেই শেষ। ওহ বাবা, মাটিতে ল্যান্ডিং করার পর হঠাৎ দেখি
আমার দড়ি ধরে টানাটানি শুরু করেছে কোন উজবুক, আমি যত টানি সেও তত টানে আর গোঁ
গোঁ করে কিসব গালি দেয়। শেষে বিরক্ত হয়ে আমি এক হ্যাঁচকা টান মেরে খেলা শেষ
করে দিলুম।
করার আগেই তারা জানাল, এটাও আসলে পার্ট অফ দ্য ট্যুর। টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনসে
লেখা ছিল নাকি! যে কজন ভাগ্যবান বিজেতা বেঁচে ছিলাম তাদের হোটেলে নিয়ে আসা হল।
ঘরে ঢুকে পকেট থেকে বার করে দেখি, যেটাকে নৌকার দড়ি ভেবেছিলুম সেটা তো
ডোরাকাটা একখানা বাঘের ল্যাজ !!!
পরে অনেকটা পারফিউম দিয়ে বেরোলাম বাঘ দেখতে। একটা খাঁড়িতে ঢুকল লঞ্চ,
অনেকক্ষণ কেটে গেছে, আমরা বেশ গভীর জঙ্গলের দিকে চলে এসেছি। দুই পাশে স্রেফ
ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, আর কিছু নেই কেউ নেই। এর মধ্যে আমার লঞ্চের অন্য
ট্যুরিস্টদের পাঁচবার বাঘ, তেরোবার হরিণ আর প্রায় শ দুয়েক কুমির দেখা হয়ে
গেছে।
কুত্তা , কুমির কই ওটা তো জলে গাছের ডাল ভাসছে। যাকগে, সেসব কথায় কান দিলে কি
চলে?
কিন্তু আমি তো সেই সকালে উঠেই প্রতিজ্ঞা করেছি যে বাঘ না দেখতে পেলে আজ জল
স্পর্শও করব না। তাই খালি পেটে নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর বাঘের চোদ্দগুষ্ঠী
উদ্ধার করছি।
আমার কি দোষ? হঠাৎ কি হল কে জানে, লঞ্চের সবলোক লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠে
দৌড়াদৌড়ি লাগিয়ে দিল, ” বাঁচাও….বাঘ, কুমির, ডায়নোসর… হেল্প, হেল্প”
বলে ভয়ঙ্কর চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিল কেউ। আর যেই সবাই উত্তেজিত হয়ে ছুটে
একদিকে চলে গিয়েছে ব্যস, লঞ্চটাই দুম করে সেদিকে হেলে গিয়েছে। আর সবাই রেলিং
টপকে টুপটুপ করে জলে পড়ে গিয়েছে। কয়েকজন ওস্তাদি করে তখনও রেলিং ধরে ঝুলতে
লাগল, তাদের বাকিরা প্যান্ট ধরে টেনে ফেলে দিল। তারপর আর কি, আশেপাশের জঙ্গলে,
খাঁড়িতে, নদীর চড়ায় ঘাপটি মেরে থাকা কুমিরদের ফিস্ট লেগে গেল। তারা সব
স্যানিটাইজার ন্যাপকিন নিয়ে লালা ফেলতে ফেলতে এসে প্লেট ছাড়াই খাবারের উপর
ঝাঁপিয়ে পড়ল।
আমিও এইসব দেখে টাল সামলাতে না পেরে পাকা তালের মত খসে পড়লুম। তারপর ভয়ের
চোটে স্ট্রেট অজ্ঞান হয়ে গেলুম।
ছোট ভ্রমণ কাহিনী
আমায় খেলো না, হতাশ হয়ে ঠোঁট চাটতে চাটতে চলে গেল। আমি ভাসতে ভাসতে গিয়ে
একখানা সুন্দরী গাছের নোংরা শিকড়ে আটকে গেলাম।
গরুর মত বেঁধে রেখেছিল চুপিচুপি। আসলে এই আবার সেই ল্যাজ কাটা বাঘটা, ল্যাজের
শোকে রাতের বেলায় আমাদের রিসর্টের সামনে কান্নাকাটি করছিল, আর খপ করে ধরা পড়ে
গেছে। সে ব্যাটা বাঘ হলে কি হবে, আগের রাতে ধরা পড়ার আগে উড়তে উড়তে ভুল করে
একটা গাঁজাখোর লোককে খেয়ে ফেলেছিল। একে ল্যাজের ব্যথা, তার উপর পেটে বর্ধমানের
বাসি গাঁজা, বাঘ ব্যাটা বাঘত্ব হারিয়ে কাবুলি বিড়ালের মত হাত পা ছড়িয়ে
উল্টে ঘুম দিচ্ছিল এতক্ষণ। হঠাৎ শোরগোল শুনে বিষম চমকে ঘুম ভেঙে উঠে, দড়ি ফরি
ছিঁড়ে সে মহা চ্যাঁ ভ্যাঁ জুড়ে দিল।
সেরা ভ্রমণ কাহিনী
অমনি আমার সামনে পড়ে গেছে। আমার লাল চোখ, চকচকে জামা, জঙ্গুলে দাড়ি গোঁফ আর
উৎকট পারফিউমের বিকট গন্ধে বাঘের চোখ কপালে উঠে গেছে। ল্যাজটা থাকলে সেটা ঝুলে
পিছনে ঢুকে যেত, কিন্তু কি করা যাবে! যা হচ্ছে, মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে!
পেয়েছি। সামনে কেঁদো বাঘ দেখে কনফিউজড আমি বন্দুক ভেবে কালকের সেই বাঘের
ল্যাজটাই সামনে তাগ করে বললুম, “হ্যান্ডস আপ”
হাতে নিজের ছেঁড়া ল্যাজ দেখে তার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল।
আজও ছুটছে… জঙ্গল ঝোপ ঝাড় ভেঙে, নদী সাঁতরে, গ্রাম গঞ্জ পেরিয়ে এখনও ছুটছে,
ছুটছে…