শেষ বিকেলের ভালোবাসা – Bangla Premer Golpo – Bengali Love Story

Bongconnection Original Published
19 Min Read

 শেষ বিকেলের ভালোবাসা – Bangla Premer Golpo – Bengali Love
Story 

শেষ বিকেলের ভালোবাসা - Bangla Premer Golpo - Bengali Love Story
Loading...

Bangla Premer Golpo

শেষ বিকেলের ভালোবাসা
                     –
বং কানেকশন এক্সক্লুসিভ 
উড়িষ্যার ঝারসুগুড়া স্টেশনের ওয়েটিং রুমে ঢুকতেই অভিদীপ্ত কে হঠাৎ দেখে চমকে
উঠল তিয়াসা। প্রায় ১৫ বছর!!এতো বছর বাদে দেখলেও অভি কে চিনতে ভুল হয় নি
তিয়াসার। কি করবে এখন সে? বেরিয়ে যাবে ওয়েটিং রুম থেকে??অভির পাশে একজন
মহিলা,বেশ সুন্দরী.. নিজের অজান্তেই তিয়াসার চশমার কাঁচটা ঝাপসা হয়ে গেলো..
এই মুহূর্তে খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার, ওয়েটিংরুম টা বিশেষ বড় নয় এক্ষুনি
হয়তো অভিও তাকে দেখতে পাবে,চিনতেও পারবে, নিজেকে যতটা সম্ভব আড়াল করে একটা
চেয়ারে বসলো সে… ছায়াছবির মত অনেক কথাই ভিড় করে আসছে তার মনের গভীরে।


 তিয়াসাই সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে আর অভির মুখোমুখি হতে চায় নি….অভি
অনেক বার চেষ্টা করেছিলো তার সামনে আসতে..কিন্তু তিয়াসাই সুযোগ দেয়নি। বারবার
ফিরিয়ে দিয়েছে তাকে।কোনো ভুল ই যে অভির ছিলো না সেদিন, সেটা  তিয়াসাও
জানতো!!কিন্তু তাও… না থাক, যে অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি সে নিজের হাতেই করেছে
সেই অধ্যায়কে আর মনে করতে চায় না সে..
 ভবিষ্যতে আর কক্ষনো যেনো অভির সাথে দেখা না হয় সেই জন্যই তো সে অনেক
চেষ্টা করে উড়িষ্যার সুন্দরগড়ের একটি প্রাইভেট কলেজে প্রফেসর হিসেবে জয়েন
হয়েছিলো।
  তিয়াসা বর্তমানে বর্ধমানের একটি এনজিও সংস্থার  সঙ্গে
যুক্ত।সাধারণত সে নিজস্ব গাড়িতেই যাতায়াত করে। কিন্তু গতকাল তার ড্রাইভার
সুখদেবের বউ অসুস্থ হওয়ায় সে ট্রেনে ই চলে গিয়েছিল বর্ধমান।সুন্দরগড় যেতে
হলে ঝারসুগুড়া স্টেশন হয়েই যেতে হয়। ড্রাইভার সুখদেব আসবে তাকে এক্ষুনি
নিতে, তাই কিছুক্ষণ ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে হচ্ছে…
হঠাৎ একটি ১০-১২ বছরের মেয়ে হাতে ঝাল মুড়ির দুটো ঠোঙা নিয়ে ঢুকে অভিদের দিকে
এগিয়ে গেলো।হয়তো অভির মেয়ে… বেশ ভালো লাগছিল অভিকে তার পরিবারের সাথে
দেখতে… চোখের জল টা আজ বড়ই অবাধ্য হয়ে চলেছে… ফোন করলো সে সুখদেবকে, “আর
কতক্ষণ আসতে লাগবে??”
“ম্যাডাম, একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ, ঘর থেকে বেরোতে একটু দেরী হয়ে গেছে… যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছানোর চেষ্টা করছি..”

 ব্যাগ থেকে একটা ম্যাগাজিন বের করে তার উপরে চোখ রাখল তিয়াসা।
বাইপাসের কাছেই ছিল তিয়াসা দের দোতলা বাড়ি টা। জন্মের পর থেকেই মা-বাবা
ঠাকুমার স্নেহ আদর ভালবাসার পরশেই বড় হচ্ছিল সে… বাবা ইন্ডিয়ান অয়েল এর
একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী, মা নিজেও একটি বেসরকারি অফিসে চাকুরীরতা ছিলেন। মা
বাবা অফিস বেড়িয়ে গেলে ঠাকুমাই ছিল তিয়াসার জগত। যখন তার ৬ বছর বয়স, একদিন
স্কুল থেকে ফিরে এসে শুনলো তার মা কয়েক মাস বাদেই তাকে একটা বারবি ডল গিফট
করতে চলেছে। সেই ডলটা নাকি কথা বলবে হাত পা নাড়বে!!! খুব খুব আনন্দ পেয়েছিল
সেদিন সে… সেদিন থেকে শুধু অপেক্ষা ছিল তার সেই বারবি ডলটার জন্য… কিন্তু
এই অপেক্ষার অবসান ঘটলো যে ঘটনার মধ্য দিয়ে সে ঘটনার জন্য তার বাড়ির কেউই
প্রস্তুত ছিল না… তার মা হঠাৎ স্লিপ কেটে বাথরুমে পড়ে যায়, তিয়াসার মনে
আছে প্রচন্ড রক্ত বেরোচ্ছিলো, সারা বাথরুম রক্তে ভেসে যাচ্ছে সেই অবস্থায় মাকে
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়… ঠাকুরমা চিৎকার করে কাঁদছিল বাবা অসহায়ের মত
এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছিল, বিকালের দিকে এলো সেই মর্মান্তিক খবর..তার মা আর
বেঁচে নেই কিন্তু বার্বি ডলটা বেঁচে আছে,বোন হয়েছিল তার।তিয়াসার ছোট্ট মনে
সেই ঘটনা বিরাট এক প্রভাব ফেলেছিল… সে সময় তার বাড়ির পরিস্থিতি একটা
শ্মশানভূমির থেকে কোনো অংশে কম ছিল না… একজন ট্রেইন্ড নার্স রাখা হয়েছিল,
বোন কে সেই দেখাশোনা করত, ঠাকুরমা তিয়াসাকে সবসময় আগলে রাখতো। বাবাকে দেখে
খুব কষ্ট হতো তিয়াসার। বাবাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছে সে অনেকবার। ওই
সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পাড়া-প্রতিবেশী সবাই বলেছিল বাবাকে আরেকটা
বিয়ে করার কথা। বাবার স্পষ্ট জবাব ছিল যে আমার দুই মেয়েকে সামলানোর জন্য আমার
মা যথেষ্ট, আমার স্ত্রীর জায়গা আমি আর কাউকে কোনদিনও দিতে পারবো না। ছোট্ট
পুতুলটাকে তিয়াসা খুব আঁকড়ে ধরেছিল। স্কুল থেকে ফিরে এসে সে চলে যেত বোনের
ঘরে, নার্সের সাহায্যে সে বোনকে কোলে নিতো, আবার একটু একটু করে দুধ খাওয়াতো।
তার ছোটবেলার খেলনা হয়ে উঠেছিল তার বোন। মায়ের জন্য তিয়াসার খুব কষ্ট হতো…
এভাবেই চলছিল তার ছোটবেলার বেরঙিন দিনগুলো। হঠাৎ বছরখানেক যেতে না যেতে ই নার্স
এর সাথে তার বাবা ও ঠাকুমার কথোপকথন শুনে ঐটুকু বয়সে সে এইটুকুই বুঝতে পেরেছিল
যে তার বোনের আচরণ আর পাঁচ জনের মত স্বাভাবিক নয়.. সে শুনতে পেল নার্স তার
বাবা আর ঠাকুমাকে বলছে যে তার বোন অনিশা নাকি কানে বিশেষ শুনতে পাচ্ছে না তাই
ভবিষ্যতে হয়তো কথাও ভালো করে বলতে পারবে না, হয়তো দু একটা শব্দের মাধ্যমে সে
তার কথা বোঝানোর চেষ্টা করবে। ইমিডিয়েট যেন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়। তার
বাবা একদিনও সময় নষ্ট করেননি। কিন্তু অনিশা যত বড় হতে লাগল তার মধ্যে জেদ রাগ
তেজ ঠিক ততটাই বাড়তে লাগলো।প্রচন্ড ভাবে বৃদ্ধি পেলো হাইপার
অ্যাকটিভনেস।স্পেশাল চাইল্ডের স্কুলেও তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল, কিন্তু কোন ফল
হয়নি। স্কুল ছাড়িয়ে বাড়িতেই তাকে রাখা হয়েছিল, তার সাথে চলছিল চিকিৎসা।
একটু বড় হতেই নার্স কে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সারাদিন আয়া দেখাশুনা করতো
তার,আর ঠাকুমা তো ছিলই। কিন্তু যতো বড় হতে লাগল অনিশা, ততোই দেখা যেতে লাগলো
তিয়াসার উপরে সে অসম্ভব রকম নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তার সব আবদার জেদ ভালোবাসা
সবই তিয়াসা কে ঘিরে।তিয়াসার সঙ্গে ও কাউকেই সহ্য করতে পারত না। তিয়াশা কে
তার ঠাকুমা যদি ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরতো তাহলেও সে ঠাকুমার উপর অস্বাভাবিক
রেগে যেতো। একেক সময় কামড়ে খিঁমচে পর্যন্ত দিত।

Notun Premer Golpo

Loading...
তিয়াশা তখন ম্যাথ নিয়ে এমএসসি করছিলো।  বাবার কলেজ লাইফের একজন বন্ধু
ছিলেন বিজন ব্যানার্জি, হঠাৎ বহু বছর পর আবার ওনার সঙ্গে দেখা হয় তার বাবার।
বাবা তাকে নিয়ে আসেন নিজের বাড়ি। সেখানেই বিজন প্রথম দেখেন তিয়াসা কে। বাড়ি
ফিরে গিয়ে উনি তিয়াসার বাবাকে ফোন করেন, সরাসরি বলেন তিয়াসা কে সে তার
পুত্রবধূ করতে চান,বড়োছেলের জন্য তিয়াসা কে তার খুব পছন্দ হয়েছে। ওনার দুই
ছেলে… বড় ছেলে Mtech করছে। আর ছোটোছেলে ডাক্তারি ফার্স্ট ইয়ার। যাদবপুরে
নিজস্ব বাড়ি আছে। বিজন কাকু তার বাবাকে বলেছিল যে আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের
মধ্যে কথা বলুক, ওদের দুজন দুজনকে পছন্দ হলে তবেই আমরা কথা বলবো। তিয়াসা শুনেই
কিন্তু না করে দিয়েছিল। বাবাকে বলেছিল, “তুমি কি পাগল হয়েছো?? আমি চলে গেলে
বোন কে সামলাতে পারবে?? আমি বিয়ে করবো না… আমি ওর মা… দিদি নই… কোনো মা
কি তার সন্তানকে ছেড়ে থাকতে পারে বলো???”

Premer Golpo Bangla

বাবা হেসে বলেছিলেন, “পাগলী মেয়ে আমার!! তা বললে কখনো হয়??? এক মেয়ের জন্য
আরেক মেয়ের জীবন আমি নষ্ট করতে পারবো না রে…”
ঠাকুমা মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, “তুই গত জন্মে ওর মা ছিলিস.. তোকে আশীর্বাদ
করি মা তুই সুখী হ….”
ফোনটা পরের দিনই এসেছিল।
“অভিদীপ্ত বলছি। বাবা কথা বলতে বললেন…”
একটু লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল তিয়াসা কি বলবে বুঝতে পারছিলো না… “হ্যাঁ
বলুন…”
“কথা বলে ভালো লাগলে সম্পর্ক এগাবে এরকমই একটা কথা হয়ে আছে জানেন তো??”
সেই শুরু। তারপর সম্পর্কটা এগিয়েছিল বহুদূর, পিএইচডি কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল
তিয়াসার। এম টেক কমপ্লিট করে অভিদীপ্ত একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ পদে
চাকরিও পেয়েছিল। তিয়াসা যেমন অভিদীপ্তের বাড়ি যেতো তেমন অভিদীপ্তও আসতো
তিয়াসার বাড়ি। প্রথম প্রথম খুব ভয় পেতো তিয়াসা। অনিশা কিরকম রিয়েক্ট করবে
তাই নিয়ে খুব ভয় ছিল তার… কিন্তু অদ্ভুতভাবে অনিশা অভিদীপ্তের সঙ্গে মিশে
গিয়েছিল, তিয়াসা যখন অভিদীপ্তের সঙ্গে বসে গল্প করতো, অনিশাও এসে পাশে বসতো।
তিয়াসার সাথে অভিদীপ্তকে দেখে কিন্তু সে একটুও হিংসা করত না, বরং নিজের ভাষায়
সে অভির সাথে কথা বলতো… অভি আসলে অনিশা যে খুব খুশি হয় তা তার চোখ মুখ
দেখলেই তিয়াশা বুঝতে পারতো।
আরো পড়ুন, মন তুই আমার হবি 

সেদিন ছিলো তিয়াসার জন্মদিন। বিকালে খুব বড় করে পার্টি রাখা হয়েছিল,তাই
অভিদীপ্ত অফিস ছুটি নিয়ে সকাল থেকেই তিয়াসার বাড়ি চলে এসেছিল, বাবা ঠাকুমা
অনিশা সব নিচের ঘরে… এই সুযোগটাই খুঁজছিলো অভি, হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরলো
তিয়াসা কে…. প্রস্তুত ছিল না তিয়াসা… ভালোলাগার নেশায় হারিয়ে গিয়েছিল
তারা দুজনে সেদিন.. অনেকটা সময়…. কোন হুঁশ ছিল না তাদের দুজনেরই….
বেশ কিছুক্ষণ সময় পরে দুজনে দুজনের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়েই চমকে উঠেছিল
তারা…. দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনিশা… চোখে-মুখে অদ্ভুত অভিব্যক্তি!!!
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য তিয়াশা একটু হেসে এগিয়ে গিয়েছিল অনিশার দিকে,
এই প্রথম, অনিশা দিদির হাত ছাড়িয়ে দৌড়িয়ে চলে গেল সেখান থেকে।
দাঁড়িয়ে রইল তিয়াসা আর অভি। অভি বললো, “ছিঃ ছিঃ !!আমাদের একটু সচেতন হওয়া
উচিত ছিল…”
সেই ঘটনার পর থেকেই অনিশা বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। অভি আর তিয়াসা দুজনেই
সেটা লক্ষ্য করছিল। যাই হোক সেদিন জন্মদিনের পার্টি ভালোভাবেই শেষ হয়েছিল।
পরের দিন বিকালে আবার অভি ফোন করল তিয়াসা কে। “অনিশা কেমন আছে??”
“সেরকমই চুপচাপ আছে বুঝলে!! আমার সাথেও ঠিকঠাক কথা বলছে না…”
“ঠিক আছে চিন্তা করো না আমি অফিস ফেরত আসছি, দুজনে মিলে ওকে সাথে নিয়ে বসে
একটু গল্প গুজব করলেই দেখবে ঠিক হয়ে যাবে…” অভিও কালকের ঘটনাটা পর থেকে একটু
অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।
“আচ্ছা। আমি বিকেলের দিকে একটু লাইব্রেরী যাবো। তুমি এসো আমিও চলে আসব।”
তিয়াসা ফিরে এসে ঠাকুরমার মুখে শুনলো অভি চলে এসেছে। উপরে রয়েছে। সিঁড়ি
বেয়ে ওপরে উঠে নিজের ঘরের সামনে এসে থমকে দাড়িয়ে পড়েছিলো তিয়াসা….এ কি
দেখছে সে!!!
অনিশা আঁকড়ে ধরে রয়েছে অভি কে।অভি নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা
করছে…অনিশা কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে যতবার বেরোনোর চেষ্টা করছে
অভি…ততবার অনিশা অভি কে জড়িয়ে ধরে তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসবার চেষ্টা
করছে…অনিশার শক্তির সাথে পেরে উঠছে না অভি। নিজেকে একটু আড়াল করে নিলো
তিয়াশা… আর কিছু ই বুঝতে বাকি রইলো না তার!!হতে পারে অনিশা স্বাভাবিক নয়,
কিন্তু তার সহজাত প্রবৃত্তি গুলো তো স্বাভাবিক !!! কাল তিয়াসা দের ঐরকম
পরিস্থিতি তে দেখে তার মধ্যে সুপ্ত অনুভূতি গুলো জেগে উঠেছে…. কিন্তু তিয়াসা
এখন কি করবে??? অসম্ভব একটা কষ্ট হচ্ছে তার!!অনিশার মনের ইচ্ছা জানার পরেও সে
কি আর আপন করে নিতে পারবে অভি কে!!!! কক্ষনো না…. তাকে কিছু একটা করতেই
হবে….
” ছিঃ অভি ছিঃ!!! এতো নিচু তুমি!!!শেষ পর্যন্ত অনিশা????” দরজার সামনে
দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে বলে উঠলো তিয়াসা।
অনিশা তখনো জাপটে ধরে রেখেছে অভি কে।অভির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামেরা জমে
রয়েছে… একটা জোরে ধাক্কা মারলো সে অনিশা কে… ছিটকে পড়লো সে।অভি জড়িয়ে
ধরলো তিয়াসা কে…. বলেছিলো, ” যা দেখেছো সব ভুল….আমায় শুধু বিশ্বাস
করো….অনিশার কিছু সমস্যা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি, আমি তুমি দুজনে মিলে সলভ
করবো…. শুধু ভুল বুঝোনা আমায়…”
“একটা কথাও বলবে না তুমি। আমি সব দেখেছি…আর এক মুহূর্ত নয়, তুমি চলে যাও…
আমার সামনে আর কখনও আসবে না তুমি…”  কালবৈশাখীর তোলপাড় চলছে তিয়াসার
মনের ভিতর।সে অপমান করতে চায় না অভি কে….তিয়াসা জানে অভি কে অপমান না করলে
ছেড়ে যাবেনা সে কখনো। দুজন দুজনকে বড়ো ভালোবেসে ফেলেছে যে!!!
অভি হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে তিয়াসার সামনে…. দুহাত জোড় করে শুধু একটাই
মিনতি সে করেছিল, ” আমাকে একটু বিশ্বাস করো….”
অভির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো মনের জোড় ছিলোনা আর তিয়াসার।বোন কে টেনে
নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো সে।
ঠাকুমার ডাকে দরজা খুললো তিয়াসা।
অভি ঐরকম উদভ্রান্তের মতো বেড়িয়ে গেলো কেনো!!!! আমি ডাকলাম কোনো উত্তর
পর্যন্ত করলোনা… কি হয়েছে???”
কালবৈশাখীর ঝড়ের পর বৃষ্টি নামলো তিয়াসার দুচোখ ভরে….কোনো‌ কথাই গোপন
করলোনা সে ঠাকুমার কাছে। পিছনে কখন বাবা এসে দাঁড়িয়েছেন তা তিয়াসা খেয়াল
করেনি।
“আমি কিছুতেই অভি কে বিনা দোষে শাস্তি পেতে দেব না… আমি সবকিছু ওকে জানাবো…
আমি ওকে জানাবো তুই কেনো ওকে অপমান করেছিস!!!”
“তুমি অভি কে কিচ্ছু জানাবে না বাবা। আমি যখন বোনের মনের কথা জেনে গেছি তখন আমি
কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবোনা… ও আমার সন্তান বাবা… আমাকে বিয়েতে জোর করো
না তাহলে আমি বোনকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো..”
তিয়াসার বাবা অসম্ভব আঘাত পেয়েছিলেন, দুই মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে
পড়েছিলেন তিনি। ঘুমের মধ্যে একদিন তিনি চলে গেলেন। আরো একা হয়ে গেল তিয়াসা।
অভি আর তার বাড়ির লোক বহুবার চেষ্টা করেছে তিয়াসার সঙ্গে কথা বলবার।তিয়াসা
কারোর সাথেই কথা বলতে চায়নি…. বাবা মারা যাবার পর চাকরি নিয়ে কলকাতার সব
পাট চুকিয়ে ঠাকুমা আর বোনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যায় সুন্দরগড়। অবশ্য যে বোনের
জন্য সে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সেও আজ পাঁচ বছর হলো তাকে ছেড়ে চলে
গেছে… শুধু ঠাকুরমা আজো সেই ছোটবেলার মতোই তাকে আগলে রেখেছে …
“বসতে পারি???”
“কক কে???” ভাবনার জগৎ থেকে ছিটকে এসে চমকে তাকালো তিয়াসা।অভির পাশে বসা সেই
ভদ্রমহিলা, অভির স্ত্রী।আপনে আপ তিয়াসার চোখ চলে গেল অভির দিকে।অভি তার দিকেই
তাকিয়ে আছে। একটু ঢোক গিলে বললো সে, ” বসুন”
“আমাকে আপনি চিনবেন না, আমার নাম সম্পূর্ণা। আমি কিন্তু আপনার কথা অনেক
শুনেছি…”
” আমার কথা????”
“হ্যাঁ ওই যে দেখুন আপনার কোনাকুনি বসে আছেন যে ভদ্রলোক উনার মুখ থেকে অনেক
শুনেছি…” একটু হাসলেন উনি।

রোমান্স প্রেমের গল্প

মনে মনে ভাবল তিয়াসা,প্রথম প্রেমের গল্প বিয়ের রাতে সবাই করে নতুন বৌকে।মুখে
শুধু বললো, ” ও আচ্ছা।”
“আপনি এখানেই থাকেন নাকি আমাদের মতো বেড়াতে এসেছেন???”
“এখানেই আছি ১৫ বছর ধরে।একটা কলেজে পড়াই।” 
“তা কারোর জন্যে অপেক্ষা করছেন?? মানে হাসবেন্ড আসবেন নিতে??? কিছু মনে করছেন
না তো বকবক করছি বলে…”
একটু হাসলো তিয়াসা।”হাজবেন্ড তো বিয়ের পর হয়। আমি তো বিয়েই করিনি…”
“ব্যাস এটাই জানার ছিল।” এইবার একটু চিৎকার করেই ডাকলো অভিকে। ” এদিকে এসো।”
অভি আসছে।তিয়াসার হৃদপিণ্ডটা হঠাৎ করেই খুব জোরে আওয়াজ করতে শুরু করলো।
” কেমন আছো???” অভি বললো।
চোখ দুটি এবার বিদ্রোহ করবে তিয়াসার। প্রচন্ড শাষন করছে সে অবাধ্য অশ্রুদের।
” ভালো আছি।”
“দাদাভাই তোমরা কথা বলো আমি দেখি বাবা আর তোমার ভাই কোথায় গেলো….” তারপর
তিয়াশার দিকে তাকিয়ে সম্পূর্ণা বললো,  “সবাই একসাথে বেড়াতে এসেছি,
ট্রেন লেট আসছে শুনে বাবা আর আমার বর দুজনে গেছে এখানে সামনেই একটা ওয়াটার ফলস
আছে সেটা দেখতে,তোমাকে যখন আজকে আমরা পেয়েছি তখন আর কিন্তু ছাড়ছি না…” চলে
গেল সম্পূর্ণা।
“আমার ছোট ভাইয়ের বৌ। আমি বাবা আর আমার ভাই , ভাইয়ের বৌ আর আমাদের একমাত্র
মেয়ে সবাই মিলে এখানে নিরিবিলি তে একটু বেড়াতে এসেছিলাম… শহরের কোলাহল এখন
আর আমার ভালো লাগে না। তাই শহর থেকে দূরে….”
“বিয়ে করোনি এখনো??”
“না । একজন রেপিস্ট এর তকমা পড়ে আর বিয়ে করতে ইচ্ছে করে নি কখনো। তোমাদের
সাথে আমাদের পরিবার, আমি, সবাই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম, সুযোগ দাও নি
তোমরা… যাই হোক বলো অনিশা কেমন আছে???”
তিয়াসা মৃদু স্বরে বললো, ” ও নেই।চলে গেছে।”
“সে কি!!!… আমি কিন্তু ওকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসতাম…. আমি জানি আজও
আমার সাথে দাঁড়িয়ে তোমার কথা বলতে ঘেন্না হচ্ছে, কিন্তু সেদিন আমি….”
ডুকরে কেঁদে উঠলো তিয়াসা,” আমি সব জানি…সব। নিজের চোখে সব দেখেছি। অনিশার
চোখে সেদিন আমি তোমার প্রতি দুর্বলতা দেখেছিলাম, আমি ওর দিদি নই আমি ওর মা
ছিলাম।কি করে পারতাম আমি বলতে পারো?? তোমাকে অপমান করে ফিরিয়ে না দিলে তুমি
কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যেতে না… আমার কোনো উপায় ছিল না, পারলে ক্ষমা করো
আমাকে….”
“ম্যাডাম আসুন । অনেক দেরি করিয়ে দিলাম আপনা কে…” সুখদেব চলে এসেছে। এগিয়ে
এসে সে তিয়াসার লাগেজটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
“আসি…..” মনের ভিতর টা আরো একবার যেনো নতুন করে শূন্য হয়ে যাচ্ছে….ভাবছে
সে, আবার কি নতুন করে সব শুরু করা যায় না!!!
“সব জেনেও এতো বছর অপরাধী বানিয়ে রেখেছিলে?? ভাবোনি কখনো আমার মনে কি তোলপাড়
চলতে পারে??” অভি বললো।
” ভেবেছি। প্রতিটি মুহূর্তে ভেবেছি। তোমাকে একটা দিনের জন্যও ভুলতে পারিনি বলেই
আর কোনদিন নতুন করে জীবন শুরু করার কথাও মনে আনিনি। বাকি জীবনটাও এইভাবে কেটে
যাবে…. ভালো থেকো…”
” এত বছর ধরে তো চেষ্টা করলাম ভালো থাকতে কিন্তু পারলাম কই!! দুজনে মিলে একসাথে
ভালো থাকার জন্য যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সেটা কি আজও পূরণ করা যায় না???” 
বিজন হৈ হৈ করে ওয়েটিং রুমে ঢুকলেন। “এই যে কোথায় তিনি!!আর ছাড়বোনা তোকে…
অনেক হয়েছে… আমার ছেলে টা কে অনেক কষ্ট দিয়েছিস ।এবার তোর শাস্তি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে তোর।আজ আমাদের যাওয়া ক্যানসেল।চল শিগগিরই,তোর বাড়িতে
বসে আজ ই বিয়ের তারিখ টা ঠিক করে ফেলি….”
তিয়াসার চোখে আজ অবাধ্য অশ্রু। হঠাৎ সে দেখলো দূরে দাঁড়িয়ে তার বাবা তাকে দু
হাত তুলে  আশীর্বাদ করছেন, কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে কে ও???? অনিশা না!!!!
হ্যাঁ অনিশাই!! হাসছে অনিশা….বাবার বুকে মাথা রেখে হাসছে… স্পষ্ট শুনতে
পেলো তিয়াসা.. বাবা বলছেন…অনিশা আমার কাছে ভালো আছে রে… তুই যা, আর ভাবিস
না..এবার শান্তিতে সংসার কর… আমি আছি অনিশার জন্য…
নাহ্!! আর ভাববে না তিয়াসা..এগিয়ে গেলো সে অভির হাত টা ধরবে বলে….

Share This Article