রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প – Romantic Valobasar Choto Golpo – Love
Story
রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প
বেলা প্রায় সাড়ে বারোটা বাজতে চললো। নন্দন প্রেক্ষাগৃহের সামনে থিকথিক করছে
উৎসাহী দর্শকের ভিড়। এক নামকরা পরিচালকদ্বয়ের সুপারহিট সিনেমা নিজের চোখে
চাক্ষুষ করবার জন্য। টিকিট ঘরের সামনে শুধুই সারসার কালো মাথা। বাইরে রোদ ঝলমলে
আকাশ থাকলেও একরাশ মন শ্রাবণমেঘের বাতাসকে সঙ্গী করে একা একাই পৌলমী ওরফে
পোলোও সেই দলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এগারোটা থেকে। আদেও কি আজ সিনেমাটা দেখতে
পারবে? দীপের ফোনটা এখনও বন্ধ। সত্যি কী যে করে ছেলেটা। কোনো রকম দায়দায়িত্ব
বলে কিছু নেই। সুর,তালের জগৎ নিয়েই মেতে আছে রাতদিন। পৌলমীও তো ওসব নিয়ে আছে।
তবে দীপ মানে দীপাঞ্জনের মত ওমন বাউন্ডুলে মোটেই নয়। কে জানে পোলো ছোটবেলা
থেকে মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছে বলে এতটা গুছিয়ে চলতে শিখেছে কিনা! একদম
শৈশবে নিজের মাকে হারিয়েছিল পৌলমী।বাবার কাজের পোস্টিং ছিল বাইরে। অগত্যা তাই
মামার বাড়িটাই ছিল ভরসার জায়গা। অবশ্য বাবা মাসে মাসে খরচটা পাঠিয়ে
দিতেন বা ছুটিছাটায় এসে ওকে দেখে যেতেন।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
সবাই আছেন। একমাত্র ছেলে বলে ওকে নিয়ে সবার আস্কারা অনেকটাই বেশি। অন্তত দীপের
বাড়িতে যতবার গেছে পৌলমীর এগুলোই মনে হয়েছে। সত্যি এরকম পরিবার পাওয়া
ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু এই গরমে রোদে পুড়তে পুড়তে মনে হচ্ছে দীপের সাথে
আজীবন থাকাটা সত্যিই ভাগ্য না দুর্ভাগ্য। কাণ্ডজ্ঞান কি কখনোই হবে না ওর? দিন
পনেরো পরেই ওদের বিয়ের দিন ঠিক করেছে দুই বাড়ির লোকজনেরা। যদিও পৌলমীর
কাঠবাঙাল মামাবাবুটির এই বিয়েতে একটু আপত্তি ছিল দীপ ওরফে দীপাঞ্জন ঘটি বাড়ির
ছেলে বলে। কিন্তু দীপের ঠাকুমাকে দেখার পর উনি আর দ্বিরুক্তি করেননি। সত্যি এসব
বাঙাল,ঘটিতে কি যায় আসে। দুটি মন একসাথে ঘর বাঁধতে চায় এর থেকে ভালো কিছু তো
হতে পারে না। তাই দুই বাড়ির আশীর্বাদপর্ব মিটে গেছে মাস দুই আগে।
সময় থেকে দুজন দুজনকে চেনে। সুরের বাঁধনেই তো দুজন দুজনের কাছে এসছে। পেপসির
ক্যানে আলতো চুমুক দিতে দিতে এলোমেলো চিন্তা করতে করতে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে
উঠছিল পৌলমীর। গতকাল রাতে কত করে দীপকে বলেছিল অনলাইনে টিকিট কেটে রাখার কথা।
সেসব কানে না নিয়েই দিব্যি কুম্ভকর্ণের মত ভসভস করে ঘুমিয়ে যাবার আগে কোনমতে
বললো,”তুই এগারোটা নাগাদ চলে আসিস পোলো। আমি ঠিক পৌঁছে যাব।”কিন্তু পৌলমী চলে
আসলেও তার কোনো পাত্তা নেই। এদিকে আর আধ ঘন্টার মধ্যেই সিনেমা শুরু হয়ে যাবে।
ধুর আর অপেক্ষা করবে না ও। এই ভেবে লাইন থেকে বেরিয়ে আসার সময়েই ঝট করে ওর
হাত টেনে ধরে দীপ বলে,”কিরে রাগ করেছিস? মিনিট পনেরো আগেই এসছি। দূর থেকে তোকে
দেখছিলাম। দে একটু পেপসিটা। উফফ গলা শুকিয়ে গেল গরমে!
সেরা ভালোবাসার ছোট গল্প
একটু টেনে।
খেয়ে এলি। তুই কি বুঝবি চিংড়ির মাহাত্ম্য।”;দীপ বলে ঝাঁঝিয়ে উঠে।
পোকা মানে চিংড়ির মাহাত্ম্য বোঝার কোনো দরকার নেই।”
ক্যানটা ডাস্টবিনে ফেলে দীপাঞ্জন গুনগুন করে গেয়ে ওঠে ওর খুব প্রিয় একটা
রবীন্দ্রসঙ্গীতের কয়েক কলি,
চান্দেরি শাড়িতে রঙিন প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াচ্ছিল বান্ধবীদের সাথে পোলো সেদিন
ক্যাম্পাসের এদিক ওদিক। হঠাৎ অমন গলা শুনে মঞ্চের সামনে এসে দেখে হলুদ
পাঞ্জাবীর দীপাঞ্জনকে। ওই যাকে বলে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট তেমন কিছুই হয়েছিল
বোধয়। দীপ মঞ্চ থেকে নামার পরপরই নিজের বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিল
পৌলমী,”নমস্কার, আমি পৌলমী বসু। প্রথম বর্ষ।” সেই থেকে কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটা
বছর। বহুবার মান, অভিমানের শেষেও দীপের কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্ত বোধ করেছে
পৌলমী।
জন্য লেখা এত কাণ্ড করছিল দীপ। রাগের পারদ নীচে নামে। দুজন দুজনের আঙুল ছুঁয়ে
সিনেমাহলে ঢোকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর অভ্যেসমত,”আবার দেখা হবে অমুকদিন বলতে
গিয়ে লজ্জায় মুখটা রাঙা হয়”পৌলমীর। এবার যে দেখা হবে একবারে শুভদৃষ্টির
সময়।
কেটে যায় বিয়ে, বৌ ভাত, রিসেপসন পার্টি। আত্মীয়স্বজনরাও সব বিদায় নেন।
অষ্টমঙ্গলা সেরে পৌলমী আর দীপ ফিরে যায় ওদের কাজের জগতে।
বাড়ি ফেরে। স্নান সেরে এসে খেতে বসতেই পৌলমী দেখে কড়ির প্লেটে সুন্দর করে
বেড়ে দেওয়া ভাত আর গন্ধরাজলেবু। পাতের পাশে বাটিতে পরপর মুগডাল,
ভাজা,ডাবচিংড়ি, ইলিশ পাতুরি, আমের চাটনি।
আমার তো ঘন মুগ ডাল, ভাজাভুজি দিয়েই খাওয়া হয়ে যেত।”
নিজের হাতে রেঁধেছেন।”
লক্ষ্মী ঠাকরুন মুখ বুঁজে ডাল, ভাজা দিয়ে অল্প খেয়ে উঠে যাবে এটা তো হবেনা।
এটা যেমন দীপের নিজের বাড়ি তেমন তোরও বাড়ি পোলো। তুই পেট ভরে না খেলে,
হাসিখুশি থাকলে যে আমার শান্তি হবেনারে নাতবউ। এই বাড়িতে একদম নিজের মত
প্রাণভরে থাকবি তুই।”
সুন্দর রোমান্টিক গল্প
যাবার, নিজে প্রতিষ্ঠা পাবার। তুমি চাইলেই তো একটা রেস্তোরাঁ বা হোম ডেলিভারি
খুলে ফেলতে পারতে? আজকাল অনেকেই এমন করছে। তাছাড়া তুমি তো মাছ খাওনা। তাও
অন্যের জন্য চুপচাপ করে যাও কি করে দিনের পর দিন ধরে?”
প্রতিপত্তির থেকেও আমার কাছে সুখ মানে তোদের হাসিমুখ। তাই বাইরে গিয়ে সুখের
খোঁজ করিনা আমি। এই ঘরেই আমার সুখ।”
মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প
বলে আজও এমন স্নেহের সংসারগুলো বেঁচে আছে। এই সমস্ত মানুষরা অন্যের ভিতর দিয়েই
ছোট্ট ছোট্ট সুখের খোঁজ করেন। নিজে সব কিছু পেয়ে গেলে যে অনেক ক্ষেত্রেই সেটা
নষ্ট জীবন হয়ে যায়। এরকম পরিবার পাওয়া মানে সবসময় সুখ ছুঁয়ে থাকা।
গেয়ে ওঠে,”রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে/এই ভালোবাসাতে তোমাকে ভাসাতে।।।”