KK Death Update – সেলসম্যান থেকে দেশের সেরা গায়ক কেকে র জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত – KK Death Reason

Bongconnection Original Published
5 Min Read

KK Death Update – সেলসম্যান থেকে দেশের সেরা গায়ক কেকে র জীবনের বিভিন্ন
মুহূর্ত – KK Death Reason

KK Death Update - সেলসম্যান থেকে দেশের সেরা গায়ক কেকে র জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত - KK Death Reason
Loading...

Singer KK Death

একসময় প্রেমিকার জন্য সেলসম্যান হয়েছিলেন, আর আজ তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে কোটি
কোটি মানুষ শোকাহত। 
জীবনের জার্নিতে যিনি দিয়ে গেছেন হাজারো মন মাতানো গান। তার শেষ দিনে কি এমন
হলো ? যার কারণে মাত্র ৫৩ বছর বয়েসেই চলে গেলেন তারাদের দেশে ? জানুন আমাদের
এই বিশেষ রিপোর্ট এ। …..


একদিন শহরের সেরা জলসা
সেদিনই গলায় তার দারুন জ্বালা
তবুও শ্রোতারা তাকে দিলোনা ছুটি
শেষ গান গাইলো সে পড়ে শেষ মালা…
মান্নাদে’র খুব বিখ্যাত এক গানের শেষদিকের কিছু লাইন। যে লাইনগুলো কাল
‘শিউলিফুল’ হয়ে ঝরে পড়লো কোলকাতার এক বদ্ধ মঞ্চে। ঠাসা গাদাগাদি আর জৈষ্ঠ্যের
ভ্যাপসা গরমে যেখানে শেষবারের মত গান গাইলেন এমন এক শিল্পী, যিনি বরাবরই হেসে
বলতেন-
“শিল্পীকে মানুষের চেনার কি দরকার? শিল্পীর কন্ঠ চিনলেই তো যথেষ্ট!”
মানুষটির কথার সত্যতা মেনে তাকে আমরা চিনেছিও খুব কম৷ ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ কিংবা
জাঁকালো আয়োজনে তাকে নিয়ে সুখ্যাতির বাড়াবাড়ি হয়নি৷ কোনো কনসার্টের লাইনআপেও
তিনি ‘সেলিং পয়েন্ট’ হননি। ছিলেন বরাবরই মাঝের সারিতে। অপ্রাপ্তির তালিকায়
অজস্র উপাদান, তবুও হাতে মাইক্রোফোন আর সামনে অগুণতি মানুষ…. ভুলে 
যেতেন সব, জাগতিক সব ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ এ দাঁড়িয়ে গাইতেন-
‘দিল ইবাদত’, ‘সাচ কেহ রাহা হ্যায়’ অথবা ‘খুদা জানে’… একের পর এক৷ যে কন্ঠ
ছিলো অস্ত্র, সে কন্ঠেই উগরে দিতেন বিষাদ, জ্বালা। প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তি।
সে মানু্ষটিই ‘কেকে।’ কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ৷ 


বাবার টেপ রেকর্ডারে মায়ের রেকর্ড করা গান শুনে ছোটবেলায় প্রবল আগ্রহে দুলতো
মাথা। বয়স হতে হতে হলেন আরেক ‘কেকে’ কিশোর কুমারের ভক্ত। এভাবেই, ছোটবেলা থেকেই
গান ছায়াসঙ্গী। গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলোনা। ছিলোনা জবরদস্ত রেওয়াজও।
সেসবকে গুরুত্ব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। গাইতে ভালো লাগতো। এই তো ঢের! যে
ভালোলাগা টের পেতেন বাবা। ছেলেকে যিনি বরাবরই উৎসাহ দিতেন- 
” বাবা, গান ছাড়িস না কোনোদিন!” 
যদিও বয়স হতে হতে গান ছাড়ার উপক্রম হয়েছে একাধিকবার। ‘শিল্পী’ থেকে ‘সংসারী’
হওয়ার স্বপ্ন ভর করেছে মাথায়। প্রেমিকার জন্যে গান ছেড়ে ‘সেলসম্যান’ এর চাকরীও
ধরেছেন। কিন্তু গলায় টাই আর হাতে স্যুটকেসের এই কেতাবি চাকরীতে থাকা সম্ভব
হয়নি৷ ‘সরস্বতী’ যার গলায়, সে জাগতিক ইঁদুরদৌড়ে ডুববেও বা কেন? মাস ছয়েক চাকরির
পরে পালিয়ে এসেছেন। চিরতরে। আবার ডুবে গিয়েছেন সুরে। সঙ্গীতে। অজস্র বিজ্ঞাপনের
জিঙ্গেলে কন্ঠ দিয়েছেন৷ সিনেমায় গান গেয়েছেন। গেয়েছেন টিভি সিরিয়ালের টাইটেল
ট্রাকও। অধিকাংশ সময়েই থেকেছেন আড়ালে। গলা চিনতো সবাই। কিন্তু গলাটা কার? কে
জানে! 
‘শিল্পীর শুধু কন্ঠ চিনলেই হবে, চেহারা চেনার দরকার নেই’ বলার পরেও কোথাও গিয়ে
যেন তারও খানিকটা অভিমান ছিলো। আক্ষেপমাখা স্বরেই বলতেন- 
“এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমাকে কেউই সেভাবে চেনেনা!”
যদিও তার জীবনের শেষ কনসার্ট দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। পঙ্গপালের মত মানুষ
এসেছে। উত্তপ্ত সন্ধ্যার নাভিশ্বাস বেড়েছে। এত মানুষের উপস্থিতিতে বদ্ধ
অডিটোরিয়ামের গনগনে উনুনে ক্রমশ নাকাল হয়েছে চুয়ান্নো বছরের মানুষটি। বারবার
বলেছেন- 

KK Death Reason

Loading...
” লাইটগুলো বন্ধ করো। এসিটা কেউ চালাও।” 

শেষপর্যন্ত এসি কেউ চালিয়েছিলো কি না, জানা নেই। তবে মানুষটি চালিয়ে গিয়েছিলেন
গান, বেদবাক্য ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’ মেনেই। যদিও, ততক্ষণে ভেতরের কলকব্জা শুরু
করেছে বিদ্রোহ৷ বিক্ষোভ। এরপর, সব শেষে, মাইক্রোফোনের ‘সুইচ’টা অফ করে যখন উঠে
বসেছেন গাড়িতে, তখন ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে আসরের পর্দা। থেমে যাচ্ছে গুঞ্জন।
ভেতরে। বাইরেও৷ স্তিমিত হচ্ছে কোলাহল। আচমকাই বুঝতে পেরেছেন, কোথাও যেন নিভে
যাচ্ছে সব। শীতল কিছু একটা গ্রাস করছে। বলে উঠেছেন- 

“আমার বড্ড শীত করছে!” 
হোটেলের লবিতে অজস্র মানুষ। সবাই তাকে দেখার জন্যে উন্মুখ। তিনি ভক্তদের নিরাশ
করেননা কখনো। কিন্তু গতকাল করলেন। পা দুটো থেকে থেকে কাঁপছিলো। গাড়ি থেকে নেমেই
তাই সটান রুমে। সেখান থেকে বিছানায়। অচেতন। শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। তীব্র
সাইরেন। অ্যাম্বুলেন্স। যাত্রাপথে ভিড়ভাট্টা। ট্রাফিক জ্যাম। দোকানের
সাউন্ডবক্স। সিনেমার গান। ‘তুহি মেরা সাব হ্যায়।’ এরইমধ্যে ধীরে ধীরে উবে
যাচ্ছে জীবন! অদ্ভুত জীবন। আধঘন্টা আগেও মানুষটি ছিলেন স্টেজে। গাচ্ছিলেন গান।
স্রষ্টার বিধান! বোধগম্য হয়না। জীবন! তাও না। 
শিল্পী নিজের কন্ঠ শোনাতে চেয়েছেন, সেটা ছিলো ইচ্ছে। ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। কন্ঠ
সবাই প্রাণভরে শুনেছেও। কিন্তু, সে কন্ঠের আড়ালে শিল্পী যে ক্রমশ চলে যাচ্ছেন
খাদের কিনারায়, ধীরে ধীরে  আঁধারে হচ্ছেন লীন, সেটাই খেয়ালে আসেনি কারো।
যেখানে গেলে শিল্পীর চেহারা থাকে না, পড়ে থাকে শুধু গলাটাই, সেখানেই নেমে
পড়েছেন আচমকা। ক্লান্ত কিংবা অস্ফুটস্বরে শেষবারের মত  বলেছেন-
এ পৃথিবী একবার পায় তারে,পায় নাকো আর।

Share This Article