Bhalobashar Golpo – Valobashar Golpo – রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

Bongconnection Original Published
17 Min Read

 Bhalobashar Golpo – Valobashar Golpo – রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

Bhalobashar Golpo - Valobashar Golpo - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
Loading...

Valobashar Golpo Romantic Bangla

স্বীকৃতি 
                     
  – অনিকেত সুনন্দা 
            
“ কোথায় গো বৌমা? চশমা টা খুঁজে পাচ্ছি না। একটু দেখে দাও তো!” 
    শ্বশুর বেনীবাবুর ডাকে ব্যস্ত হয়েই এঘরে এল রঞ্জনা। 

“ কাল রাতেও তো এখানেই ছিল দেখেছিলাম। “ বলতে বলতে হঠাৎ কি যেন মনে করে ওষুধের
বাক্সটা খুলল। যা ভেবেছিল তাই। প্রায় আশি বছরের বেনীবাবুর মাথা ঠিক থাকে না
এখন। বড্ড ভুলোমন , সযত্নে ওষুধের বাক্সে রেখে চশমার কথা বেমালুম ভুলে
গেছেন। 


চশমাটা তার হাতে দিয়ে বলে, “ বাবা, কালকে বুঝি ওষুধের বাক্সে রেখে দিয়েছিলেন
চশমাটা? “
“ কি জানি! মনে তো পড়ছে না বৌমা। “ অসহায় কন্ঠ বেনীবাবুর। 
হাসিমুখে রঞ্জনা বলে, “ আচ্ছা থাক। মনে করতে হবে না। এই নিন আপনার খবরের কাগজ।
“ 
বেনীবাবুর বহু পুরোনো অভ্যেস সকাল সকাল খবরের কাগজের সবটুকু পড়া চাই তার। খুশি
হয়েই মেলে ধরলেন কাগজ খানা। 
রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার টাও এখনই শেষ হওয়ার ছিল, মনে মনে বিরক্ত হয় রঞ্জনা।
অভীকও বেড়িয়ে গেছে । সন্তুর কলেজ আছে, রেডি হচ্ছে আর তার নিজেরও অফিস
টাইম।  কিন্তু উপায় তো একটা বের করতেই হবে। তাড়াতাড়ি ইন্ডাকশনটা
নামিয়ে এতেই রান্না চাপায়।
কোনভাবে এক তরকারি আর ভাত নামিয়েই  বাথরুমে যায়। স্নান সেরে শাড়ি পড়তে
পড়তেই  খেতে ডাক দেয় সন্তুকে । ছেলেকে ভাত দিয়ে শ্বশুরের খাবার আলাদা
তুলে রেখে যায় নয়তো হাবুলের মা অতশত বোঝে না, বুড়ো মানুষ, সবকিছু তো আর হজম
হয় না এখন তাই তার ঝালমশলা ছাড়া তরকারি আলাদা করে করতে হয়। 
সব কাজ সেরে ছুটতে ছূটতে বাসস্ট্যান্ডে যখন যায়, উনিশ বছরের সন্তুও মায়ের
সাথে পেরে ওঠে না। অভীক ব্যবসায়ী, সারাদিন সেই  নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।
সংসারে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখার সময় কোথায়!! 
একাহাতে সব সামলে অফিস করে রঞ্জনা। অথচ অভীকের মুখেই শুনতে হয়, ‘ যা ধকল গেছে
সারাদিন! ‘ বলেই সটান গা এলিয়ে দেয় বিছানায়, চলতে থাকে হাই ভল্যুমে টিভি সেট।
কান ঝালাপালা লেগে গেলেও কিছু বলা যাবে না, শত হলেও সারাদিন খেটে ঘরে এসেছে।
একটু মনোরঞ্জন তো চাই!! 


এদিকে রঞ্জনা অফিস থেকে ফিরেই রান্নাঘরে আবার। অফিস যাবার পথে পাড়ার সিলিন্ডার
ক্যারিয়ার ছোকরাটাকে বলে গেছিল একটা ব্যবস্থা করে দিতে। সে এনে নীচে রেখে গেছে
সিলিন্ডার টা। কিন্তু ঘরে এনে দেবে কে? 
আমতা আমতা করে ক্লান্ত অভীককেই বলে, “ একটু সিলিন্ডারটা এনে দিতে হবে যে।
ইন্ডাকশনে বেশ দেরি হয়। “
বিরক্ত অভীক ওঠলেও কথা শোনাতে ছাড়ে না, “ এক মিনিট শান্তি দেবে না তুমি!
সবসময় এটা করো ,ওটা করো। অসহ্য!! সারাদিন খাটতে থাকি,তোমার মতো এয়ার
কন্ডিশনড্ অফিসে চেয়ারে বসে থাকি না।  বাড়ি এসে একটু যে গায়ে হাওয়া
লাগবে,তা না। এখন ওনাকে সিলিন্ডার ঘরে এনে দিতে হবে!! ওই ছেলেটাকে বলে দিলেই
পারতে ,ঘরে  দিয়ে যেতো। যত্তসব! “
রঞ্জনা শুনেই যায়, বলে না যে যখন এটা বাড়ি দিয়ে গেছে তখন সেও অফিসেই ছিল।
 কি লাভ? অযথা কথা বাড়বে । 
অভীকের পরিশ্রমের তুলনায় রঞ্জনার অফিস করাটা নেহাতই কলম পেষা বৈ তো নয়! আর
ঘরের কাজ, রান্নাবান্না ইত্যাদি তো মেয়েদের জন্মসূত্রে পাওয়া। এগুলো
পরিশ্রমের পর্যায়ে পড়েই না!!?? 
******************************
“ সন্তু…  কি করছিস? পড়ার টেবিল ছেড়ে ওঠলি যে? “ মায়ের গলা শুনতে
পেয়েই ভীষণ বিরক্ত হয়ে সন্তু মোবাইল টা রেখে দিয়ে 
বলে, “ কেন যে এত চেচাঁও মা? একটু ব্রেক নেওয়া যাবে না? “
“ পড়ার টাইমে পড়বি। আর পড়া শেষ করে ব্রেক নাও, মোবাইল নাও, আপত্তি নেই। “
বলতে বলতেই ছেলের হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে নেয় ।সাংঘাতিক বিরক্ত হয়, মায়ের
যেন সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি। মুখে হয়তো বলে না,কিন্তু ছেলের চোখমুখ দেখে রঞ্জনা
সন্তুর রাগ বুঝতে পারে। 
ছেলের প্রিয় চাউমিন এনে রাখে টেবিলে। 
সন্তু মাকে চেনে। বলেছে যখন, তখন পড়া শেষ করা অবধি ব্রেক বা মোবাইল কোনটাই
পাবে না। তাই বাধ্য হয়েই টেবিলে বসে পড়ে। 
হাসিমুখে বেড়িয়ে আসে রঞ্জনা। 
অভীককে চা আর পরোটা দিয়ে বলে,” আজকে পরোটা করেছি , দেখো তো কেমন হয়েছে?” নিউজ
চ্যানেলে ডুবে থাকা অভীক স্ত্রীর দিকে ফিরেও দেখে না একবার।  একটুসময়
উত্তরের  অপেক্ষা যে করে না  তা নয়, তবে সে ভালো করেই জানে,তার
সারাদিন এতো খেটে ফেরা স্বামীর দুসেকেন্ডের ও সময় হবে না উত্তর দেবার মতো !!!
তাই আস্তে আস্তে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। 
     রঞ্জনা এরপর যায় শ্বশুরের ঘরে, হাতে ঘরে তৈরি ছানা।
বিকেলে চা দেয় না বেনীবাবুকে । ডাক্তার নিষেধ করেছেন তাই এখন থেকে নিজেই ঘরে
দুধ কেটে ছানা তৈরি করে নেয়। 
বেনীবাবু হয়তো চায়ের জন্যই মুখিয়ে ছিলেন, কিন্তু বৌমার হাতে কাঁচের বাটি
দেখেই আশাহত হলেন।
 বললেন, “ আজকেও চা হবে না বৌমা? “
“ আর কোনদিনই সন্ধ্যের চা হবে না বাবা। নিন ছানা টুকু খেয়ে নিন। “ 
বেজার মুখে বেনীবাবু বাটি থেকে খানিকটা মুখে দিয়েই আরো বেজার মুখ করে বললেন, “
একটু চিনিও দাও নি। “
“ সুগারটা বেড়েছে বাবা। কয়েকদিন একদম মিষ্টি চলবে না। খেয়ে নিন। “ রঞ্জনার
চোখ ফাঁকি দেবার উপায় নেই, তাই বিষঢোক গিলেই  খেয়ে নিলেন বিস্বাদ
বস্তুটা। 
রঞ্জনার শাসনে বেনীবাবু এই আশি বছর বয়সেও সমবয়সী অন্যদের তুলনায় সুস্থ আছেন।
সক্ষম আছেন এখনও। একটা লাঠি হাতে এখনও মর্নিং ওয়াকে বের হন। রঞ্জনার দিকে
সস্নেহে তাকিয়ে বলেন বেনীবাবু, “ কত যত্ন করো আমার! অথচ এমন একটা দিনও ছিল.. “
রঞ্জনা সাথে সাথেই থামিয়ে দেয়, “ ওসব পুরোনো কথা তুলে কি লাভ বাবা? আপনি
মিছিমিছি কষ্ট পাবেন না। “ বলেই বাটিটা হাতে বেড়িয়ে যায়। 

সেরা ভালোবাসার গল্প

ওপরের ঘর থেকে নীচে আসতে আসতে ভাবে রঞ্জনা, সত্যিই এমন একটা দিনও ছিল, তাকে
তিনি ভরসাই করতে পারেন নি, যে চাকরি করেও নিখুঁত ভাবে সংসারের সব দায়িত্ব পালন
করা সম্ভব । 
শ্বশুরমশাইয়ের প্রবল আপত্তি ছিল ঘরের বৌ চাকরি করায়।  অভীক চিরটাকাল
উদাসীন। সে বেনীবাবুর সাথে একমত না হলেও রঞ্জনার পক্ষেও মত দেয় নি। সে নিজের
ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। এর বাইরে কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় নি কোনোদিন। 
পরিবারের কর্তা বেনীবাবু তখন অনেক কথা শুনিয়েছিলেন তখন, রঞ্জনার বাবাকে
মধ্যস্থ মেনেছেন, চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু রঞ্জনার ইচ্ছেই শেষ অবধি
জয়ী হয়েছিল, তবে শর্তসাপেক্ষে। 
বাবা শুধু এটুকুই বলেছিলেন, “ যদি ভাবিস সব সামলে পারবি, চাকরি কর অসুবিধা নেই।
কিন্তু কখনো যেন কোনও অভিযোগ না করেন তারা। “
রঞ্জনা সেদিন কথা দিয়েছিল কখনও কোন অভিযোগের সুযোগ দেবে না। কথা রাখার আপ্রাণ
চেষ্টায় কাটিয়েছে একুশ বছর। যুদ্ধের মতোই জীবন চলছে তার। তবুও হার মানে নি
রঞ্জনা। অমানুষিক পরিশ্রম করেও মুখের হাসি ম্লান হতে দেয় নি। 
কিন্তু এখন মনে হয় যেন, এ বাড়িতে তার স্হান কোথায় সে নিজেই জানে না। কেবল
যন্ত্রের মতো কাজ করে চলেছে। তার আদৌ গুরুত্ব আছে কি নেই… সে বুঝে ওঠতে পারে
না। 
**********************
……….বিকেল থেকেই রঞ্জনার শরীরটা ভালো না আজকে। বুকের ভেতর একটা অস্থিরতা বোধ
করছে, চাপের মতোই কি যেন একটা আটকে আছে। 
কলিংবেলের শব্দে ওঠতেই হল। দরজা খুলে দেখে অভীক। 
হাতের বাজারের ব্যাগটা এগিয়ে দেয়, স্ত্রীর মুখের দিকে তাকানোর সময় পায় না।
রঞ্জনা ব্যাগ হাতে রান্নাঘরে যায়, কিন্তু শরীরের অবস্থাটা আজকে বেশী ই খারাপ
বুঝতে পেরে আবার চলে এল। শুয়ে পড়ল বিছানায়। 
অভীক ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রন্জনার দিকে। বলে ওঠে, “ কি গো? শুয়ে আছো যে?
“ 
“ শরীরটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে আজ। “ রঞ্জনার গলার স্বর শুনে অভীকের
সন্দেহ হয়। সামনে এগিয়ে যায়। কপালে হাত দিয়ে দেখে। না… জ্বর তো নেই। কি হল
তাহলে… বুঝতে পারে না। 
“ ডাক্তার ডাকবো নাকি? কি হয়েছে বল। “ 
“ আমি একটু ঘুমুবো। প্লিজ লাইটটা  অফ করে দাও। “ 
অভীক কথা মতোই কাজ করে । এরপর ছেলের ঘরে গিয়ে বসে। ছেলে মোবাইল নিয়ে চ্যাটিং
এ ব্যস্ত। অপ্রত্যাশিত ভাবেই বাবাকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। 
গম্ভীর মুখে অভীক বলল, “ পড়ার টেবিলে বসে মোবাইল না নিলেই নয়? “
সন্তু বিব্রত হয়েই বলে, “ না। আসলে বন্ধুর কাছ থেকে নোট নিচ্ছিলাম। “
“ সবই বুঝতে পারি সন্তু। তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। “ বলেই সামনের
চেয়ারটায়  বসে পড়ল অভীক। সন্তু কিছুই বুঝতে পারছিল না। 
বোকার মতো বলে, “মা কোথায় বাবা ? ভাবছিলাম টিফিন করে নিয়ে তবেই বসবো। তাই আর
কি.. “
অভীকের মুখেই জানে সন্তু মার শরীরটা আজ ভালো নেই। সুতরাং টিফিনের আশা দূর অস্ত।
অভীকের ও চায়ের জন্য পিপাসা জাগছিল বহুক্ষণ। অগত্যা বেগতিক দেখে বাপ ব্যাটা
ঢুকলো রান্নাঘরে। কিন্তু কোথায় চায়ের সরঞ্জাম, কোথায় কি,,,, কিছুই খুঁজে না
পেয়ে শেষ পর্যন্ত স্হির হল অর্ডার করে খাওয়া আনা হবে। ব্যস্ যে মন ভাবা তেমনই
করা। খাবার এলো, মহানন্দে খেল দুজনেই। এরপর বেনীবাবুর জন্য কুকারে ভাত চাপানো
হল, ফ্রিজের তরকারি গরম করে তাকেও সে রাতের মতো খাওয়ানো  হল। বিছানায়
শুয়ে শুয়ে ভাবছিল অভীক, যাক বিপদ কাটলো।
*********************
কিন্তু না। শরীরটা সুস্থ হল না রঞ্জনার। পরপর দুদিন অফিস গেল না রান্নাঘরে ও
গেল না। হাবুলের মা যা রান্না করে দেয় তা বেনীবাবু, অভীক আর সন্তু… কারোরই
মুখে রোচে না। এভাবেই সাংঘাতিক যন্ত্রনায় কাটলো আরো দুদিন। ডাক্তারের পরামর্শ
মতো বেডরেষ্ট । অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে প্রেসার হাই, হার্টের কন্ডিশন ও ভালো
নয়। সুতরাং রান্নাবান্না একদম বন্ধ। হাবুলের মার হাতেই পরিত্রাণের ভার। 
…..রঞ্জনা দশদিনের লিভ শেষে আবার অফিস জয়েন করেছে। তবে এই দশদিনে সবকিছুই
যেন কেমন বদলে গেছে। এখন রঞ্জনা ঘুম থেকে ওঠে পুজো দিয়ে চা খায়, এরপর একটু
খেয়ে রেডি হয়েই বেড়িয়ে যায়। সন্ধ্যেয় ফিরে এখন আর রান্নাঘরের দিকে যায়
না। রেষ্ট নেয় বিছানায়। অন্যদিকে অভীক এখন ফিরে এসে চা করে, ফ্রিজের ডাল
তরকারি গরম করে, বাবার রাতের খাবার, ওষুধের ভার এখন তার দায়িত্ব।
              সন্তুর ঘরে গিয়ে প্যাকেট
করে কিনে আনা চাউমিন দিতে যায়। কখনো বা বাবা ছেলে দুজনেই প্রানান্ত চেষ্টায়
মোবাইল দেখে দেখে নতুন কিছু একটা খাবার বানায়। রঞ্জনা দুর থেকে দেখে যায়
শুধু। 
অভীকের মুখে একটা গর্বের হাসি, যখন চা করে আনে। রঞ্জনা কে দিয়ে বলে, “ দেখো তো
কেমন হল? “
রঞ্জনা মুখে দিয়ে উত্তর দেয় না, কেবল একটু হাসে। ব্যগ্র হয়ে অভীক
রঞ্জনার  দিকে তাকিয়ে আবার বলে, “ কেমন হয়েছে, বললে না? “
“ ভালো। “ বলেই আবার কাপে চুমুক দেয় রঞ্জনা। 
                 আশাহত হয়ে
অভীক ভাবে, এত পরিশ্রমের পরে চা করে, অনেকসময় টুকটাক রান্নাও করে কিন্তু কোনও
অ্যাপ্রিসিয়েশন নেই রঞ্জনার হাবে ভাবে, এইটুকু কৃতজ্ঞতা নেই। অভীকের মুখ দেখেই
রঞ্জনা তার মনের অবস্থা আঁচ করতে পারে। 
সন্তুর টেবিলে গিয়ে মাঝে মাঝে বসে অভীক এখন। সেদিন ও গিয়ে বসতেই লক্ষ্য করে
মনমরা হয়ে বই খুলে বসে আছে সে, কিছু পড়ছে কিনা বলা মুশকিল। 
“ কি রে? কি ভাবছিস  সন্তু? “বাবার কন্ঠে চমকে তাকায় সন্তু। বলে, “ কিছু
না বাবা। “
“ বলে ফ্যাল! কি হয়েছে? “
“ মা যখন সুস্থ ছিল বাবা, বুঝতেই পারিনি কত পরিশ্রম করছে,মা একা। উল্টে কমপ্লেন
করেছি সবসময় , এটা হয়নি, ওটা করে দাও, এই টিফিন না, অন্য একটা করে দাও… কেবল
দাও দাও দাও!!… তার ও তো কিছু চাওয়ার থাকতে পারে, আমরা বুঝিই নি। তাই না
বাবা? “
অভীক হতবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকায়, সত্যিই ছেলেটা আজ বড় হয়ে গেছে মনে হল
তার!! 
…. “ বাবা তোমার খাবার এনেছি, ওঠে বসো। “ অভীকের ডাকে বেনীবাবু ফিরে তাকালেন
কিন্তু ওঠলেন না।
 আবার অভীকের ডাক, “ কি হল বাবা? ওঠো। ওষুধের টাইম হয়ে যাচ্ছে । “
বেনীবাবু বলেন, “ ওষুধটা তাহলে  দে। আজকে খাবো না। “
“ সে কি কথা বাবা? খাবার খাবে না কেন? “
“ইচ্ছে করে না এখন খেতে। ওষুধটাই  দে অভীক। “ বেনীবাবুর কথায় বুঝতে পারে
অভীক এই বক্তব্য আর বদলাবে না। অগত্যা ওষুধের বাক্সটা এনে দেয়। 
“ বুঝলি অভীক। বৌমার এত যত্নের অভ্যেস হঠাৎ করেই পাল্টে যাওয়ার সব কেমন যেন
ফাঁকা ফাঁকা লাগে। বাঁচার ইচ্ছেটা যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে। “ অভীক আশঙ্কায় মুখ
কালো করে বলে, “ ওর তো শরীর ভালো নেই এখন বাবা। সুস্থ হলেই.. “

“ হুমমমম্… সুস্থ হলেই আবার চলবে তার হাড় ভাঙা খাটুনি। আমার ওষুধ, খাবার,
ছেলের মর্জিমাফিক টিফিন, তোর মেজাজ .. ব্যস্… তার কথা আমরা আর ভাববো ও না। এত
বছর ধরে একটা দিন ও ভেবেছি আমরা? বল? “
অভীক নিশ্চুপ। সত্যিই রঞ্জনার মর্যাদা কখনোই দেয় নি তারা। কেবল নিজেদের কথাই
ভেবেছে এত বছর! 
“ এরচেয়ে বরং অসুস্থ থাকুক। বেচারি বিশ্রাম তো পাবে। “
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বৃদ্ধ বেনীবাবু বলে ওঠেন, “  ওষুধটা দে অভি । “ 

আবেগি ভালোবাসার গল্প

************************
রাতের খাওয়া শেষ করে আজ শুয়ে পড়ল না অভীক। স্ত্রীর পাশে বসল। রঞ্জনা অবাক
চোখে তাকায় তার দিকে। 
“ কি হল? বসে আছ যে? ঘুমুবে না? “
অভীক হঠাৎই রঞ্জনার একটা হাতে ধরে বলে, “ তোমার প্রতি এতটা বছর আমি অবহেলাই করে
এসেছি রন্জু।“
রঞ্জনা বিস্মিত চোখে দেখে স্বামীর দিকে। 
“ কখনও তুমি কি চাও, ধর্তব্যের মধ্যেই আনি নি। সবসময় চোখে চোখে রেখেছ আমাদের,
সমস্ত চাহিদা হাসিমুখে পূরণ করে গেছ।  তখন বুঝতেই পারিনি আমাদের জন্যে
তুমি কতটা জরুরি!! একসময় তোমার সবদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা দেখে বিরক্তও হয়েছি।
অথচ এখন যখন কোনও কিছুতেই তোমার পরিচিত হস্তক্ষেপ নেই, মনে হচ্ছে কি যেন
হারিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে যেন এই সংসারে প্রান নেই  আগের মতো।“
 ভারী কন্ঠস্বর অভীকের মনের ভারটাকেই প্রকাশ করল। রঞ্জনা চুপ করে শুনে
যায়। উপলব্ধি করতে পারে অভীকের অনুতপ্ত হৃদয়ের যন্ত্রনা। 
“ জানি, তোমার চাওয়া বেশী কিছু ছিল না। শুধুমাত্র একটু ভালবাসা, একটু কেয়ার…
ব্যস্!! আর আমি ? সেলফিসের মতোই কেবল নিজের কথা ভেবেছি। পরিশ্রম তুমিও করেছ ঘরে
বাইরে দুদিকেই। অথচ ঘরের কাজ ভাবতাম, এটা তো মেয়ে লোকের কাজ, করতেই হবে। আর
অফিসের কাজ তো পরিশ্রমের নয়!! অথচ দেখো, সন্ধ্যের পর বাড়ি এসে আমার ক্লান্তি
দুর করতে সেই তোমারই ক্লান্ত দেহেও বিশ্রাম ছিল না। এতো স্বার্থপর আমি! “
অনেকক্ষণ নীরবতার পরে রঞ্জনা বলে, “ আমার অসুস্থতার দশ দিনেই তুমি এতকিছু বুঝে
ফেললে  গো? “
“ কাজ করি বলে নয় । কিন্তু সত্যিই সেই আগের তোমাকে সন্তু, বাবা আর আমিও ভীষন
মিস্ করছি রন্জু। “ হাতটা কেঁপে ওঠে দুজনের। 
“ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমরা বাঁচব না। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও রন্জু।
আর পারছি না আমরা।“
চোখটা ভিজে গেল দুজনেরই। 
************************
 কয়েকদিন পর….রঞ্জনা রান্নায় ব্যস্ত, স্বামী অভীক  ছুড়ি হাতে
সব্জি নিয়ে টেবিলে। 
সন্তুর হাতে ফোন কম থাকে এখন, বই খাতা ব্যাগে নিয়ে রেডি হয়ে নিজেই ডাইনিং
টেবিলে বসে পড়ে।
 স্ত্রীর কাজ লাঘব করতে ভাতটা অভীকই বেড়ে নেয় , একসাথে তিনজনেরই।
বেনীবাবু মর্নিং ওয়াক সেরে নিজেই নিজের চশমা খুঁজে খবরের কাগজ হাতে পড়তে
বসেন। ….. 
রঞ্জনারা কি চায় .… কেবলমাত্র একটু মনে করিয়ে দেওয়া,  “তোমার সাথে আমিও
আছি, সবসময়, সবকাজেই”।  হোক সে পিতা, স্বামী অথবা সন্তান… এইটুকু
স্বীকৃতিই রঞ্জনাদের জীবনযুদ্ধের প্রেরনা যোগাতে যথেষ্ট। 
*********************************
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.