Choto Golpo Bangla – বাংলা ছোট গল্প – Bengali Short Story
Choto Golpo Bangla
পারবে না সে। ছোট জা মিতার পক্ষে এতকাজ করা সম্ভব নয়,তাই লুকিয়ে যেটুকু করা
যায়। আজকে যে বাড়িতে অনেক লোকজনের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আসলে প্রতি বছর
বৈশাখের পয়লা তারিখ এলে এই আয়োজন করা হয়। শ্বশুরের আমল থেকেই দেখে আসছে
স্বাতী। মহোৎসব হয় এই দিনে,আর ঠাকুরের প্রসাদ খেতে পাঁচ গ্রামের লোক ছুটে আসে।
কাজ প্রায় শেষ এমন সময় শাশুড়ি রান্না ঘরে ঢুকেই বললেন,”এই বাঁজা মেয়ে মানুষটাকে
কে এখানে আসতে দিয়েছে? কার অনুমতি নিয়ে তুমি এই রান্না ঘরে ঢুকেছো?”
কার অনুমতিতে তুমি এই ঘরে পা রেখেছো? আমি পই পই করে বলে দিয়েছিলাম। আজকের এই
শুভ দিনে তুমি এদিকে আসবে না,তাহলে এলে কেন?”
এসেছো এখনো পর্যন্ত একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারলে না। বাঁজা কোথাকার। তোমার
ভাগ্যভালো যে আমার ছেলে তোমাকে এখনো ত্যাগ করেনি,আমাদের সময় হলে এতদিনে বাপের
বাড়ি ফেলে আসতো।
বলল,”তুমি রমেনের আবার বিয়ে দাও। ছেলে পুলে না হলে কি চলে? বংশরক্ষা করাও তো
দরকার।”
কি আমার ছেলেকে চিনি না,কত দুঃখে কষ্টে সে যে বাড়ি আসে না তা শুধু আমিই জানি। ”
নিতে হয়,যা হয়েছে ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই হয়েছে,মন খারাপ করো না।”
ধরে এই কথাগুলো শুনে আসছে সে। বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল স্বাতী। এত ঠাকুর
দেবতাকে ডেকেও কোন ফল হলো না,ভগবান তাকে বাঁজা করেই রেখে দিল। কিন্তু এটা কি
শুধু তার অপরাধ? সে তো কত ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু রমেন,তাকে একবারের জন্যও
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেনি। শাশুড়ি সেটা ভালো করেই জানে,পরের ঘরের মেয়ে
সে তাই তার উপর সমস্ত দোষ দেওয়া যায়,নিজের ছেলে ধোয়া তুলসীপাতা।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না স্বাতী,রমেনকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল।
রমেন স্বাতীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”প্লিজ কেঁদো না,তুমি কান্না কাটি করলে আমার
যে খুব কষ্ট হয়,আমার তো কিছু করার নেই।”
না।
রয়েছে তাই রমেন কিছু না বলে পূজোর জায়গায় চলে গেল। ছোট জা মিতা তার মেয়েকে নিয়ে
স্বাতীর কাছে দিয়ে বলল,”তোমার মেয়েকে দেখে রাখো আমি কাজগুলো সেরে নিই।” মিতার
মেয়ে টুসি চার বছরের। রমেনের ভাই অনেক দেরি করে বিয়ে করেছে তাছাড়া রমেনের থেকে
অনেক ছোট। সারাদিন কাজের মধ্যে স্বাতী আর ঘর থেকে বেরলোই না।
তার বাপের বাড়ির লোক অনেকদিন আগেই আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাদ বাকি যে সমস্ত
আত্মীয় স্বজন রয়েছে তারা আসে তবে সবার এক কথা এখনো বাচ্চা হলো না,কেউ কেউ বলে
আর কি হবে? এসব কথা শুনে শুনে স্বাতীর কান ভরে গেছে,প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত
এখন আর লাগে না,তাই বাড়িতে কিছু হলে সে ঘর থেকে বেরোয় না,কেউ তার খোঁজও নেয় না।
তাই সারাদিন স্বাতী শুয়েই কাটিয়ে দিল। একসময় চুপিচুপি এসে ঠাকুর প্রণাম
করে গেছে। আজ চার পাঁচদিন হলো শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। বয়সের সাথে সাথে
পিরিয়ডেরও গন্ডগোল হচ্ছে খুব। একমাস হয় তো পরের মাসে হয়না। ডাক্তার দেখাতে
ডাক্তার বলল,”মেনোপজ হওয়ার সময় এইরকম ইরেগুলার পিরিয়ড হয়। সেটা শুনে স্বাতীর
আরো মন খারাপ হয়ে গেছে। আটচল্লিশ বছর বয়স হয়ে গেল তার,মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে সব
শেষ হয়ে যাবে।টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার কথা বলেছিল রমেনকে কিন্তু সে অনেক হ্যাপা।
স্বাতী সব সামলে নিত কিন্তু শাশুড়ি রাজি নয়,বাচ্চা দত্তক নিতে চেয়েছিল তাতেও
আপত্তি শাশুড়ির,কোন অজাত কুজাত ঘরের কে জানে। মনের কষ্টটা কাউকেই বোঝাতে পারে
না স্বাতী,গুমরে মরে একলা।
ফুল এসেছে এইবার,কি মিষ্টি গন্ধ। মনে পড়ল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই বিয়ে হয়ে
আসে এবাড়িতে। শিক্ষক রমেন প্রায় ছমাস পরে তার কাছে এসেছিল,বিয়ের দুবছর পেরিয়ে
গেলেও কোন ভালো খবর দিতে পারছিলনা স্বাতী। শ্বশুরমশাই খুব ভালো লোক
ছিলেন,শাশুড়ি তখন থেকেই কথা শোনাত। আর শ্বশুর মশাই বকাবকি করলেও শুনত না।
শাশুড়ির এই অশান্তির জন্যই শ্বশুরমশায়ের স্ট্রোকটা হয় এবং মারা যান। তার পুরো
দায় এসে পড়ে স্বাতীর উপর। তবে শ্বশুরমশাইএর শেষ কথাটা আজো স্বাতীর কানে বাজে।
মরার সময় বলেছিলেন,”কেঁদো না বৌমা,আমি তোমার ছেলে হয়ে ফিরে আসব।” কিন্তু কোথায়
তিনি এলেন,আজ দশ বছর হয়ে গেল তবু —
Valobashar Choto Golpo Bangla
নাকে,গা টা গুলিয়ে উঠল। ভীষণ বমি পাচ্ছে,ছুটে গিয়ে বাথরুমে বমি করে এলো। বাড়িতে
এখন লোকজন কম,তবু কেউই ওর দিকে খেয়াল করল না। আবার গিয়ে ঘরে শুয়ে পড়ল,চোখের কোন
বেয়ে আজ বারবার জল বেরিয়ে আসছে। কোন পাপে ভগবান এমন শাস্তি দিচ্ছে তাকে। গা টা
আবার গুলিয়ে উঠছে,মাথাটাও ঘোরাচ্ছে। মনে পড়ল আজ সারাদিন পেটে কিছু পড়েনি। সবার
খাওয়া হয়ে গেছে,মিতা একবার ডেকেছিল স্বাতী ইচ্ছে করে যায়নি। গ্যাস হয়ে গেছে
বুঝতে পেরে একটা গ্যাসের ঔষধ খেল স্বাতী। না আর দাঁড়াতে পারছে না,রমেন সেই যে
গেছে ওর কাছ থেকে আর আসেনি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ,আত্মীয় স্বজন সবাই চলে
গেছে, শাশুড়ি এসে স্বাতীকে বলল,”মহারানীর এবার ওঠা হোক,সারাদিন তো গায়ে হাওয়া
লাগিয়ে বেড়ালে। কোন কাজ করতে হলো না, শুয়ে বসে দিনটা কেটে গেল। ভর সন্ধ্যাবেলা
বাড়ির বড় বউ শুয়ে আছে কি সুন্দর! পাঁচজন পাঁচ কথা বলে গেল,
ওগুলো কে ধোবে শুনি?
শুনিয়ে সাধ পূরণ হয়নি তাই না বাঁজা মেয়ে কোথাকার।”
ছেলে তবে কি? বাঁজা পুরুষ একটা,আমার উপর খুব তো কথা শোনান কোথায় ছেলেকে ডাক্তার
দেখানোর কথা তো একবারও বলেননি কেন? সব দোষ আমার তাই না? আমি তো কাজ করতে
গিয়েছিলাম আপনি করতে দেননি,এখন এসেছেন কথা শোনাতে? আমি যদি কখনো মা হোই পারবেন
এই কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে? আর কোন কথা নয়,বেরিয়ে যান আমার ঘর থেকে।” কথা কটা বলে
স্বাতী ভীষণ হাঁপাচ্ছিল,মাথাটা খুব ঘোরাচ্ছে। টাল সামলাতে না পেরে খাটের উপর
পড়ে গেল।
বলেনি বরং সে কত কটুকথা বলেছে তাকে আর আজ সেই কিনা তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে
বলছে! শাশুড়িও দমবার পাত্রী নন,চিৎকার করে বলতে শুরু করল,”বাঁজা মেয়ে
মানুষ,তোমার এতবড় স্পর্দ্ধা যে তুমি আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছো! রমেন দেখে
যা তোর বৌএর কীর্তি,আজ এবাড়িতে হয় ও থাকবে নয় আমি।” চিৎকারে সবাই ছুটে আসে,রমেন
মাকে চেঁচাতে দেখে বলল,”তুমি একটু চুপ করবে? আজ না নববর্ষ,কোথায় একটু আনন্দ করব
তা নয় সব সময় শুধু এক কথা। এবার একটু রেহাই দাও মা।” তারপর চোখ গেল স্বাতীর
দিকে,”কি হলো ও ওভাবে শুয়ে আছে কেন?”
কথা বলতেই–”
নেই,মিতা দিদি বলে ছুটে এলো,তবু কোন সাড় পাওয়া গেল না। চোখে মুখে জল ছিটানোর পর
চোখ খুলে তাকাল স্বাতী। মিতা বলল,”সারাদিন কিছু খায়নি দিদি,তাই হয়তো গ্যাস হয়ে
গেছে।”
গুলিয়ে উঠল স্বাতীর। কোনরকমে উঠে গিয়ে বমি করল। বাথরুম থেকে আর আসতে পারল
না,রমেন ওকে তুলে এনে শুইয়ে দিল। বড় বৌমার অবস্থা দেখে শাশুড়ি একদম চুপ করে
গেছে,তিনি নিজেও বুঝে উঠতে পারছেন না ব্যাপারটা কি হলো। সুস্থ মেয়েটা হঠাৎ করে
এমন অসুস্থ হয়ে গেল কেন? নিজের উপরই রাগ হচ্ছে,কথাগুলো বলতে চায় না,তবু মুখ
দিয়ে কেন বলে ফেলেন নিজেও জানেন না। আসলে বড় ছেলের ঘরে বংশধর নেই এই কথাটা
প্রথম থেকে শুনে শুনে সমস্ত রাগ গিয়ে পড়েছে ওই নিরপরাধ মেয়েটার উপর।
বলে দিয়েছে বিয়ে আর করবে না। এখন মনে হচ্ছে ওরা যে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলছিল
তাতে মত দিলেই ভালো হতো। ও তো একটা মেয়ে মা হতে পারেনি সে কষ্টটা তো আছেই তার
উপর সবার এত কথা। মনে মনে কথাগুলো ভাবছিল বসে স্বাতীর শাশুড়ি। পাড়ায় খবর রটে
তাড়াতাড়ি,তাই বেশ কিছুজন হাজির বাড়িতে। রমেন ডাক্তার ডাকতে গেছে। যারা সকালে
শাশুড়ির সাথে তাল মিলিয়েছিল তারাই এসে বলল,”সকালে রমেনের মা যা বলল,সারাদিন
মেয়েটা কিছু খায়নি। মনের দুঃখে অন্য কিছু খেল নাতো?”
সেরা ভালোবাসার ছোট গল্প
দেখো।”
বৈশাখ,আমার এ কি সর্বনাশ হলো বলো তো?”
গিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করে বললেন,”প্রেসার খুব লো,ফলে শরীর দুর্বল,ওকে ভালো করে
খাওয়া দাওয়া করতে হবে তো।”
রিস্ক।
ডাক্তারবাবু?”
চলেছো। তবে তোমার স্ত্রীকে খুব যত্নে রাখতে হবে। সময় মতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে
খেয়াল রাখতে হবে ওর। আর মানসিক দিক দিয়ে হাসিখুশি রাখতে হবে। কালকেই ভালো গাইনি
দেখিয়ে নিও।”
হাত বুলিয়ে বললেন,”আমি ওর সব খেয়াল রাখব।” তারপর পরম স্নেহে ডাকলেন,”বড় বৌমা।”
ইজেকশন দেওয়ার ফলে স্বাতীর একটু ভালো লাগছে,শাশুড়ি তাকে উঠিয়ে বসাল। রমেন ছুটে
এসে স্বাতীর কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলল,”স্বাতী তুমি মা হতে চলেছো।”
স্বাতী প্রথমে কথাটা বিশ্বাসই করতে পারেনি, তারপর ডাক্তারবাবু যখন বললেন তখন
বিশ্বাস হলো। আনন্দে চোখে জল এসে গেল তার। মনে মনে বলল ঠাকুর এতদিনে মুখ তুলে
চেয়েছেন।
টিপ্পনি কেটে বলল,”এত বয়সে বাচ্চা হয় জানা ছিল না।”
বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি,আর ভোরবেলায় বেরিয়ে যেতে দেখেছি।”
সকালে পাত পেড়ে খেয়ে গেছো নিয়েও গেছো,এখন আবার একটা ভালো খবর পেলে,বাড়ি যাও আমি
মিষ্টি নিয়ে আসছি। আর আমি জানি বাড়িতে অশান্তি করি বলি ছেলে আমার সামনে আসত না।
ও রোজ রাতেই বাড়ি আসে।সুতরাং উল্টো পাল্টা কথা বলবে না। যাও আজ নববর্ষ তাই
তোমাদেরকে কিছু বললাম না।”
বললেন,”ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই বড় বৌমা,তবু পারলে ক্ষমা করে দিও। ” রমেন মিষ্টি
কিছু ঔষধ নিয়ে এলো,ওর মা গেলেন মিষ্টি বিতরণ করতে। মিতা খুব খুশি। ওর মেয়ে টুসি
এসে বড়মাকে বলেছে তার ভাই না হলে একটা সুন্দর বোনু চাই। রমেন কাছে এসে বলল,”আজ
আমি ভীষণ খুশি স্বাতী। বছরের প্রথম দিনে তুমি যে আমাকে এরকম একটা অপ্রত্যাশিত
খুশির খবর দেবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।” স্বাতী কৌতূহলী হয়ে বলল,”কিন্তু তুমি–”
আমারই ছিল।”
স্বাতীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রমেন, জানালার পাশে গন্ধরাজ ফুলের গাছটা তখন তার
ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দখিনা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে;রমেন স্বাতীকে জড়িয়েই বলল,”সত্যি
আজ নববর্ষ এলো আমাদের জীবনে।”