বাসর রাতের গল্প রোমান্টিক – Bashor Rater Golpo – ফুলশয্যার গল্প – Bengali
Story
ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল রাতুল। বুকের ভেতরটা কেমন ধকধক করছে
হঠাৎ। তার প্রথম বিয়ে আর একটি মাত্র বউ, ওই যে খাটের ওপর অপেক্ষা করে আছে। বড়ো
করে দম নিল রাতুল। তারপর আস্তে আস্তে এগোলো খাটের দিকে। নববধূ মুখের সামনে এক
হাত ঘোমটা টেনে মাথা নিচু করে বসে। পকেট থেকে গোলাপটা বের করল রাতুল।
নাদুসনুদুস ফুলটা কেমন দুমড়ে গেছে একলা অভিমানে। শাজাহানের ভঙ্গিতে সেটাকে
বাগিয়ে ধরে নাকের কাছে নিয়ে এল একবার। যাহ চলে! এ যে সিগারেটের গন্ধ ছাড়ছে!
তাড়াতাড়ি ওপর থেকে দুটো পাপড়ি ছাড়িয়ে নিল, তারপর খাটের এক ধারে বসে কাঁপাকাঁপা
হাতে ফুলটা সামনে ধরে গুনগুন করে উঠলো – “মোরা প্রিয়া! মোরা প্রিয়া!”। নববধূ
অবগুণ্ঠন সরিয়ে দরজার দিকে লাজুক মুখে একবার চাইল, তারপরই ঝপ করে ঘোমটা ফেলে
দিয়ে ঝনঝন করে বেজে উঠল – “এতক্ষণে সময় হল কেলানে কোথাকার! সেই থেকে মশার কামড়
খাচ্ছি বসে বসে!”
রাতুল গান ভুলে আমতা আমতা করতে থাকে – “কি করব বলো বাবা ডেকে নিয়ে গেছিলো যে
ক্যাটারারদের সাথে পেমেন্ট নিয়ে কথা বলতে!”
রুষ্ট হল – “কি বাপ মাইরি তোর? নাতির মুখ দেখার ইচ্ছে-টিচ্ছে নেই নাকি? দে একটা
সিগারেট টানি। গলাটা শুকিয়ে গেছে।”
বলছিলাম ফুলশয্যার রাতে সিগারেট খাবে?”
এতো র্যাগিং করা হয় কেন রে? বাড়িশুদ্ধ লোক টাক মাথা নিয়েও দিব্যি ঘুরে
বেড়াচ্ছে আর আমাকে ঘোমটা টেনে সং সাজতে হবে কেন? তোর মাকে বলে দিস কাল থেকে যদি
আর একবার ‘বৌমা, শ্বশুরের সামনে ঘোমটা দিতে হয়’ বলে তাহলে র্যাগিং কাকে বলে
আমিও মহিলাকে দেখিয়ে দেব!”
“ছি সোনা! কলেজের মত তুইতুকারি কেন আবার? আজ থেকে আমরা অফিসিয়ালি হাসব্যান্ড
ওয়াইফ না?“
সময় মনে ছিল না সে কথা?”
হেসে গড়িয়ে পড়ছিলি?”
বাসর রাতের রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
জন্য! হুহ! এই শর্মা অতো গড়াগড়ি খেলে সতেরটার জায়গায় এতদিনে আমার সত্তরটা
বয়ফ্রেন্ড জুটে যেত!”
করেছিল।“
তুই কি ছাই মেখে সন্ন্যাসী হয়ে ঘুরছিলি নাকি? ছন্দার ওপর ছোঁকছোঁকানির কথা তোর
সারা অফিসের কারো জানতে বাকি নেই!”
করে জানলি?”
আমাকে! তারপর থেকে তো প্রায়ই হাই-হ্যালো হয়!”
বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প ( পর্ব – 2)
বয়ফ্রেন্ডের কথা জানতে পেরে কোন বর আহ্লাদে আটখানা হয়! শেষে কিনা রাজাদাও!
বিশ্বাসঘাতক একটা। খেয়ে বাড়ি যাবার সময় আবার প্রিয়াকে নিয়ে চটুল ইয়ার্কি মেরে
গেল! দাঁত চেপে অস্ফুটে দুটো গালাগাল দিয়ে রাগটা দমালো কোনোরকমে। আজ তাদের
ফুলশয্যা! এসব ঠুনকো ব্যাপার নিয়ে মেজাজ খারাপ সে কিছুতেই করবে না আজ। আরো একটু
কাছে সরে এসে গদগদ স্বরে আপোষ করে নিল – “বলছি কি অনেক তো রাত হল, চল এবার শুয়ে
পড়ি।”
বিরক্ত – “তোর বোন দুপুরবেলা আমার থেকে এক জোড়া দুল নিয়ে গেল পরবে বলে আর তো
ফেরত দিল না!”
আছে। চাইলে দিবি না কিছু!”
হেব্বি লাগছে বলেছিল বেমালুম ভুলে গেল।
আমাকে দিয়েই পায়েসটা রাঁধা করালো! শখ কতো! নতুন বউয়ের হাতের রান্না খাবে! বেশি
বাড়াবাড়ি করলে না একদিন খাবারে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে দেব বলে দিলাম!”
ফুলশয্যার গল্প
কাণ্ড! অ্যাম্বুলেন্স ডাকো রে। ভাববেন না নবদম্পতির কোনো বিপদ হয়েছে!
বাইরে তখন দরজায় কান পেতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে রাতুলের নিজের আর মাসতুতো-পিসতুতো সব
দিদি-বোনেরা। বর-বধূর মধুর আলাপ শুনতে। হলেই বা প্রেম করে বিয়ে, রাতুলটাতো এক
নম্বরের ক্যাবলা আর বউটাও বড্ড হাবাগোবা! রাতুলের দিদি বয়সে অনেকটা বড়ো হলেও
শিং কেটে বাছুরের দলে ঢুকে পড়েছিল মজা দেখতে! একেতেই ভেতরে কি চলছে জানার চাপা
উত্তেজনা আর ভ্যাপসা গরম, তার ওপর ক্যাবলা ভাই আর লাজুক, মৃদুভাষী, বিনয়ী বউয়ের
পিলে চমকানো কথাসরিতসাগর – দিদির অনেকক্ষণ থেকেই বুকে চাপ চাপ ব্যথা করছিল।
কিন্তু যেই না প্রিয়া খাবারে ইঁদুর মারার বিষ অবধি পৌঁছেছে, কেমন যেন মাথাটা
ঘুরে চোখ মুখে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে দিদির। সেই ইস্তক চোখ উল্টে ভিরমি খেয়ে পড়েই
আছে! চোখে মুখে জল দেওয়া হচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সও এলো বলে। রাতুলরাও গোলমাল শুনে
বাইরে বেরিয়ে এসেছে। প্রিয়া এক মাথা ঘোমটা টেনে একটা গ্লাস নিয়ে দিদির কাছটিতে
এসে বসল – “দিদিভাইয়ের জন্য আমি নিজের হাতে নুনচিনির জল করে এনেছি। এটা খাইয়ে
দিলে এখুনি ঠিক হয়ে যাবে।”। নুনচিনির জল না, প্রিয়ার কথাই যেন ওষুধের মতো কাজ
দিল। খপ করে চোখ মেলে তাকালো দিদি। প্রিয়ার হাতে গ্লাস দেখেই লাফ দিয়ে উঠে বসল
তাড়াতাড়ি – “না না! আমার কিচ্ছু হয় নি! বাপরে! আমি এখন কিচ্ছু খেতে পারব না!”
মেয়েকে সুস্থ দেখে শ্বশুরমশাই আনন্দে ডুকরে উঠলেন – “মিরাকেল! মিরাকেল!”
শাশুড়িমা দুহাত ঠেকালেন কপালে – “লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং আমাদের বাড়ি এসেছেন গো!”।
জেঠিমা-কাকিমারা আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। শুধু রাতুলের হিংসুটে বোনগুলোই কেমন
কটমট করে তাকিয়ে আছে এখনও!