শারীরিক প্রেমের গল্প – দৈহিক প্রেমের গল্প – Saririk Premer Golpo

Bongconnection Original Published
15 Min Read

 শারীরিক প্রেমের গল্প – দৈহিক প্রেমের গল্প – Saririk Premer
Golpo 

শারীরিক প্রেমের গল্প - দৈহিক প্রেমের গল্প - Saririk Premer Golpo
Loading...


শারীরিক প্রেমের গল্প

মোমের দহন
             –  কলমে প্রিয়াঙ্কা
              (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)
       বৃষ্টির শব্দ ভীষণ প্রিয় তৃণার। এইরকম রাতেই নিজের
প্রিয় পুরুষের কাছে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া যায়, বলা যায় মনের গোপনতম কথা।
বেডরুমের হাল্কা নীল আলো স্বল্প বসনা,উদ্ধত যৌবনা তৃণাকে যেন আরো মোহময়ী করে
তুলেছে।

হাল্কা হেসে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে অনিরদ্ধর চোখের দিকে তাকায় তৃণা।ওই দু
চোখের ইশারায় আজ সে মরতেও রাজী। অনিরুদ্ধরও দৃষ্টি নিবদ্ধ তৃণার দিকে। তার
চোখের ভাষা দুষ্পাঠ্য। টেবিলে ওয়াইনের গ্লাসটা রেখে অনিরুদ্ধের দিকে এগোয় তৃণা
একটু উষ্ণতার প্রত্যাশায়। কিন্তু এক ঝটকায়

তৃণার বাহুডোর থেকে নিজেকে মুক্ত করে অনিরুদ্ধ।
-“না” অস্ফুটে গলা থেকে বেরিয়ে আসে তার।
-“অনি..?” তৃণার কাজলকালো চোখে প্রত্যাখানের মেঘ।
-“না” এবার জোর গলায় বলে ওঠে অনিরুদ্ধ। উঠে দাঁড়িয়ে সুসজ্জিত বেডরুম থেকে
নিষ্ক্রান্ত হয় সে। তার গমন পথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তৃণার চোখে
বৃষ্টি নামে।


        লিফট দিয়ে দ্রুত নেমে এসে খোলা  আকাশের নিচে
দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকে অনিরুদ্ধ। শরীরটা হঠাৎ ভীষণ খারাপ লাগে তার। সামনের দিকে
ঝুকে হড়হড় করে বমি করে দেয় সে।এবার একটু ধাতস্থ হয় শরীর। বৃষ্টির অঝোরধারা গায়ে
মেখে একটাই নাম ঘৃণাভরে উচ্চারণ করে অনিরুদ্ধ সোম -“দামিনী”
                     
          (২)
       সেই কালো হাতদুটো  এগিয়ে আসছে দামিনীর শরীর
স্পর্শ করার জন্য.. হাতের সেই ঘড়িটা..কোথায় যেন দেখেছে সে..হ্যাঁ.. জেঠু। আবার
সেই কানফাটা আর্তনাদ..মা..মাগো। ঘুমটা ভেঙ্গে গেল দামিনীর। বুকের মধ্যে একরাশ
ঘৃণা আর আতঙ্ক  নিয়ে বিছানায় উঠে বসে সে। ছোটোবেলার  বিষাক্ত
স্মৃতিগুলো  আজও পিছু ছাড়েনি দামিনীর। গলাটা শুকিয়ে গেছে। শীততাপ
নিয়ন্ত্রিত বেডরুমের দরজা খুলে বিশাল বারান্দায়  গিয়ে দাঁড়ালো দামিনী। আজ
সব আছে তার.. অর্থ, প্রতিপত্তি,নাম। আজ যে কোনো পুরুষকে সে নিজের পদোদলিত করতে
পারে কিন্তু তাতে কি তার মা ফিরে আসবে.. নাকি কোনো দিনও সে তার বাবাকে ক্ষমা
করতে পারবে..আর আবির..সে কি তার যোগ্য শাস্তি পাবে?বুকের ভেতর রাগ আর বিদ্বেষ
জমাট বাধঁতে থাকে দামিনীর।       
       কর্পোরেটে দামিনী রায় এক পরিচিত নাম।
পুরুষতান্ত্রিক কর্পোরেট জগতে নিজের কূটনৈতিক বুদ্ধি আর অসামান্য সৌন্দর্য্যকে
হাতিয়ার করে দামিনী পিতৃদত্ত এই কোম্পানীকে অনেক এগিয়ে নিয়ে এসেছে। ক্ষমতা আর
অর্থ উপার্জন– তার একমাত্র নেশা। কিন্তু দামিনীর আরেকটা পরিচয়ও আছে।সে একজন
মিস্যান্ড্রিস্ট অর্থাৎ পুরুষবিদ্বেষী। একমাত্র সহকারী কমল ছাড়া আর কোনো
পুরুষকে সে বিশ্বাস করেনা।পুরুষ তার কাছে শুধুমাত্র ব্যবহার সামগ্রী। 

প্রতিশোধের শারীরিক সম্পর্ক রোমান্টিক গল্প

Loading...
           আজ রাতটা দামিনীর সেলিব্রেশনের রাত।
সরকারি টেন্ডার পাওয়ার আনন্দে তার বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে পার্টি চলছে। যদিও
নিমন্ত্রিত মাত্র দুজন-তার সেক্রেটারি কমল আর তার কোম্পানির কর্মচারী সিরাজ।
অল্পবয়স্ক ঝকঝকে সুঠাম শরীরের অধিকারী সিরাজের ওপর দামিনীর নজর বহুদিনের। আজ
কমলের সাহায্যে তার ইচ্ছে পূরণ হবে। সিগারেট ঠোঁটে চেপে দামিনী ধীরে ধীরে দরজা
ঠেলে গেস্ট বেডরুমে ঢোকে। মাদকের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। হাল্কা আলোর জালে
দেখা যাচ্ছে খাটের সঙ্গে দু হাত বাঁধা এক অর্ধনগ্ন অপূর্ব পুরুষ শরীর-সিরাজ।
-“আমাকে এখানে বেঁধে রাখার কারণ জানতে পারি?” 
-“কেন সিরাজ,তুমি নিজে জান না..?” ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে দামিনী
-“কেন বোকা সাজছিস সিরাজ, ম্যাডামের কাছে সব স্বীকার করে নিলে তোরই ভাল..আমরা
সব জানি।”
হিসহিসিয়ে বলে কমল।
আরো পড়ুন,
-“আমি..কিছুই জানি না..আপনারা কি বলতে চাইছেন?”
-“তোমার সাফাই শোনার জন্য নিয়ে আসা হয় নি তোমাকে .. আমার পথে আসার শাস্তি
দেওয়ার জন্য তোমাকে আনা হয়েছে..যাতে তুমি মনে রাখো দামিনীর কাজে বাধার পরিণাম
কি হয়..!”
  ম্যাডামের চোখের ইশারায় কমল একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বিঁধিয়ে দেয়
সিরাজের হাতে
“এটা কি..না…না…প্লীজ” চিৎকার করে ওঠে সিরাজ।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে
গেছে..মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে তার..সারা শরীরে যেন আগুন জ্বলছে ..  জাগছে
অযাচিত উত্থান।হিংস্র ক্ষুধার্ত দামিনী  এবার ঝাঁপিয়ে পরে সিরাজের ওপর।
-“অনেকদিন ধরে এই মুহুর্ত চেয়েছি আমি..আজ কেউ আমায় আটকাতে পারবে না।”
    সিরাজের সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতে দিতে বলে দামিনী।
কাতরে ওঠে সিরাজ। “তোর মত অনেক দেখেছি..কি ভেবেছিলিস আমার পেছনে ছুড়ি মারবি আর
তোকে ছেড়ে দেব.নরকের কীট তোরা সব.. .. আজ দেখ কি করি তোর সঙ্গে..” দামিনী যেন
উন্মাদ হয়ে গেছে।তার এই রুপ দেখে আতঁকে ওঠে কমল ও।  নিজের বিকৃতকাম
সিরাজের  শরীরের ওপর চরিতার্থ করে দামিনী । যন্ত্রণায় কেঁপে ওঠে সিরাজ।
এরপর এগিয়ে আসে কমল।নিজের ইচ্ছে মত সিরাজের শরীর নিয়ে খেলার পর নিজের কাঠিন্য
সজোরে প্রবেশ করায় সিরাজের পায়ুদ্বারে। স্টিরিওর মিউজিক ছাপিয়ে ভেসে আসে
সিরাজের আর্তস্বর।

প্রথম শারীরিক সম্পর্কের গল্প       

                     
          (৩)
টুকরো টুকরো স্মৃতি আজও অনিরুদ্ধকে রাত জাগায়।এই তো মনে হয় সেদিনের ঘটনা যেদিন
অনি ‘রায় এন্ড রায়’ তে ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিল আর তার মৌ IPS পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হল।দুজনেরি চোখে কত স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ নিয়ে,জীবন নিয়ে কিন্তু-
-“এসব কি বলছ অনিরুদ্ধ.. দামিনী রায় তোমাকে যৌন হেনস্থা করছে সহকারী কমলের
সাহায্যে..কিন্তু একজন মহিলা কিভাবে..”মৌএর অর্ধসমাপ্ত কথাটাই বুঝিয়ে দেয় তার
দ্বিধা।
-“বিশ্বাস কর মৌ..” বোঝাতে চায় অনিরুদ্ধ “সুন্দরি হলেই কি সে আমার প্রেয়সী
হবে..সব নারীর স্পর্শ কি কাঙ্ক্ষিত হয়..সবাই কি তুমি?”
-“পুরুষরা তো এসব ব্যাপার উপভোগ করে বলেই জানি..তা তুমিও নিশ্চয়ই..” বাঁকা হাসি
মৌ এর ঠোঁটে।
-“মৌ এসব কি বলছ..তুমি বিশ্বাস করো না আমাকে?আমি তোমাকেই চিরকাল ভালবাসি আর
বাসবোও।”
-“অনি আমাদের সম্পর্ক অনেকদিনের.. হতেই পারে তোমার আর আমাকে পছন্দ নয়।ম্যাডামের
সঙ্গই হয়তো তোমার প্রিয়.. কিছু কথা আমার কানেও এসেছে অনি.. সবটাই কি রটনা?”
-“মৌ..প্লিজ.. “
-“তাহলে চাকরী ছেড়ে দাও অনি..অন্য চাকরি দেখ..যেখানে শান্তি আছে..তোমার সঙ্গে
ঝামেলা আমারও ভাল লাগেনা।”
-“চাকরি পাওয়া কি মুখের কথা..তাছাড়া এখানে আমার দোষ কোথায়?.. না মৌ চাকরি ছাড়তে
পারব না”
-“তাহলে এটাই তোমার শেষ সিদ্ধান্ত..?”
-“হ্যাঁ”
মৌ আর দাঁড়ায় নি। সেদিনই অনিরুদ্ধের ঘর এবং জীবন থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়েছিল সে।
আজ মনে হয় সেদিন মৌএর কথা মেনে নিলেই ভাল হত..তার জীবনের সেই কাল রাত হয়তো আসত
না। পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করল অনি.. 
      সেরাত ছিল অনির প্রমোশনের পার্টি,দামিনীরই ফ্ল্যাটে।
দামিনীই উদ্যোগ নিয়েছিল যদিও অনিরুদ্ধর খুব একটা ইচ্ছে ছিল না।পার্টিতে গিয়ে
একটু অবাকই হয়েছিল অনি।পার্টির বাকি লোকজন তো নেই-শুধু সে আর কমল। কমলের হাবভাব
কোনোদিনই বিশেষ পছন্দ ছিল না অনিরুদ্ধের। অফিসে শুনেছিল কমল নাকি সমকামী। তাতে
যদিও অনির কোনো অসুবিধে ছিল না-মানুষের যৌনতা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার এটাই বরাবর
মেনে এসেছে সে। কিন্তু অসুবিধাটা শুরু হল সেদিন থেকে যেদিন ম্যাডাম তাকে কমলের
সঙ্গে কাজ করতে বললেন। আজ মনে হয় তার প্রমোশন,দামিনীর অহেতুক মিশুকে ব্যবহার,
কমলের হৃদ্যতা এসবই ছিল একটা ফাঁদ।
       সেদিন কমলের ব্যবহার তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে সচকিত
করছিল। রাত বাড়ার আগেই দু পেগ পান করে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সেই পেগই
যে তার সর্বনাশ করবে– কে জানতো!
-“কি হল মিস্টার সোম..আপনার কি কষ্ট হচ্ছে?”
মধুঢালা কন্ঠে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল দামিনী।
-“না,না,আমি ঠিক আছি..বরং বাড়ি যাই এখন।”
-“আরে এই তো সবে পার্টি শুরু হল,এখনই কিসের এত তাড়া..।” কমল বলেছিল।
সায় দিয়েছিল দামিনীও। অনিরুদ্ধও যেন ওদের হাতের পুতুল হয়ে গেছিল সেদিন। 
রাত বাড়ার সাথে সাথে আরও উত্তাল হয়ে উঠছিল দামিনী । অনি যেন আটকা পড়ে গেছিল
একটা জালে। কিভাবে কীকরে সে বেডরুমে পৌঁছোল আজ আর তার মনে নেই। শুধু মনে আছে
সেই পাশবিক অত্যাচারের যন্ত্রণা.. যখন জলন্ত মোমবাতির মোমে জ্বালিয়ে দিচ্ছিল
তাকে দামিনী। দাঁত কেটে বসছিল তার শরীরে।দামিনী নিজেকে নিঃশেষ করার পর এসেছিল
কমল..মনে আছে রক্ত ঝরা শুরু হবার পরও ওরা ওকে ছাড়েনি। জ্ঞান  হারানোর আগের
মুহূর্ত অবধি প্রচন্ড যন্ত্রণা…তারপর সব অন্ধকার।
     সেই ঘটনা আজ ৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাও কি মানসিক
ধাক্কাটা এতটুকুও কমেছে? শরীরের দাগগুলো সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়েছে কিন্তু
দামিনী আর কমলের প্রতি দাবানলটা দিন দিন বেড়েছে । চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিল অনি।
     এই অসময় পাশে ছিল সিরাজ,তার প্রাক্তন সহকর্মী আর বন্ধু।
তাকেই একমাত্র বলেছিল অনিরুদ্ধ –
“কি বলছিস অনি..পুলিশে জানানো দরকার তোর..” উত্তেজিত সিরাজ বলেছিল।
“নিজের লোকই যেখানে বিশ্বাস করলোনা সেখানে পুলিশ মানবে আমার কথা?” 
“আমি কি মৌ-এর  সঙ্গে কথা বলবো?” সিরাজ জিজ্ঞাসা করেছিল।
” চেষ্টা করেছিলাম রে..কিন্তু ওর ধারণা আমি অতিরঞ্জন করে নিজের দোষ ঢাকছি।
তুই-ই বলনা যেখানে একটা মেয়েকেই ধর্ষণের ন্যায় বিচার পেতে এত অপেক্ষা করতে হয়,
সেখানে আমার মত একজন পুরুষ কিভাবে ন্যায় পাবে..সমাজ কি বিশ্বাস করবে সেই রাতে
বদ্ধ ঘরে  দামিনী আর কমল আমাকে ধর্ষণ করেছে?না..কখনই না”
“তাহলে কি ওরা পার পেয়ে যাবে রে..” 
“না..ওদের শেষ দেখে ছাড়ব আমি..তার জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।” চোয়াল শক্ত করে
বলেছিল অনি। তার চোখে ছিল জিঘাংসা।
       চাকরি পরবর্তী জীবনে সিরাজের সাহাজ্যে নিজের
শখকে  পেশায় রুপান্তরিত করে অনিরুদ্ধ-আঁকা। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্যে
একটি প্রদর্শনীও আয়োজন করে সে। এখানেই আলাপ তৃনার সাথে।
-“আপনার ছবি এত বিষাদময় কেন?” একটা ছবি দেখে বলেছিল তৃণা
-” জীবন যখন নিষ্ঠুর পরিহাস করে তখন সেটা এভাবেই ফুটে ওঠে..।” উত্তর দিয়েছিল
অনি।
খানিক চুপ থেকে হেসে ফেলেছিল তৃণা।
-“জীবনকে আরেকবার সুযোগ দিয়েই  দেখুননা..হয়তো নিরাশ হবেননা..আমি তৃণা
রায়..দিদির নাম শুনেছেন হয়তো.. দামিনী রায়।”
    বাকরুদ্ধ অনি প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে-ধীরে সহজ হয়েছিল।
তৃণার মধ্যে তখন  তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার সুযোগ সে দেখেছিল। 
  -“যা করার ভেবে করবি অনি..ওরা কিন্তু লোক ভাল না।” সাবধান করে দিয়েছিল
সিরাজ।
     আলাপচারীতা, কথা,প্রেম সব প্ল্যানমাফিক হলেও যেটা সম্ভব হয়
নি অনিরুদ্ধের দ্বারা সেটা হল অন্তরঙ্গতা-নারী শরীরের প্রতি বিতৃষ্ণাই হয়তো
কারণ।

বড়দের রোমান্টিক গল্প       

                     
         (৪)
    যাই হোক ৪ বছরের চিন্তার জাল ছিন্ন হল একটা ফোন কলে-
      “অনিরুদ্ধ, কি ভেবেছিলে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে তুমি পার পাবে..
অতই সোজা… সিরাজকে ফেরত পেতে চাও নাকি..” তৃণার গলা।
   একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল অনিরুদ্ধের সারা শরীরে।
     ” সিরাজ..কি বলছ..তৃণা..শোনো….” কেঁপে যায় অনির গলা।
     গত পরশুদিনই তো কথা হল সিরাজের সাথে..কোন পার্টিতে
যাচ্ছিল..’রায় আর রায়’ তে তার সাথেই ঢুকেছিল সিরাজ.. দামিনীর খপ্পরে পড়ল না তো?
তারমানে তৃণাও..খুব অসহায় লাগে নিজেকে অনিরুদ্ধের। 
     ” রাত ১২টা..পুরোন গো ডাউনে..অপেক্ষা করব অনি।” ফোন কেটে
গেল।
       নিজের নির্বুদ্ধিতায় হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে
অনির..আজ তার জন্যই হয়তো সিরাজও বিপদে।কেন শুনল না ওর কথা..আর তৃণা..হায় কপাল।
      নিশুতি রাতে কোম্পানির পুরোনো গোডাউনটা এক নিঃসঙ্গ
প্রেতের মত দাঁড়িয়ে। জনমানবশূন্য প্রান্তরে অনি একা। ঘড়িতে পুরো ১২টা।
   “মিস্টার সোম, কতদিন পর দেখা,তৃণার মুখে আপনার অনেক কথা শুনলাম।
সিরাজের ফোনেও আপনার মেসেজ পড়লাম। আপনি তো মশাই পাক্কা খেলোয়াড় -আমার বোনটাকেও
ফাঁসালেন।”
     ” আর ম্যাডাম আপনি..আপনি নিজে কি করেছেন আমার সাথে..ভুলে
গেছেন?” চেঁচিয়ে বলে অনি।
     ” কি করেছি.. কি প্রমাণ.. ভারতীয় দণ্ডবিধিতে কোনো আইন নেই
আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবে। হ্যাঁ করেছি তোমাকে আর সিরাজকে ধর্ষণ।তোমরা এরই
যোগ্য.. তোমরা পুরুষরা চিরকাল নারীদের অত্যাচার করেছ..কত সম্পর্কের অছিলায়
তাদের ঠেলে দিয়েছ অন্ধকারে..বল কি দোষ ছিল আমার মায়ের যে আমার বাবার হাতে
নিত্যদিন লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল..কি দোষ ছিল আমার যে
নিজের জ্যেঠু এমনকি প্রেমিক আবির যাকে এত বিশ্বাস করলাম আমাকে ধর্ষণ করল..না
তোমরা সব পিশাচ আর তোমাদের স্থাণ পায়ের তলায়।তাই যা করেছি সেটা তুমি বা সিরাজ
বা তোমাদের প্রাপ্য।”
-” সবাই কি এক রকম হয়।হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান হয়?আপনার সঙ্গে বা আপনার মায়ের
সঙ্গে সত্যি খারাপ হয়েছে। যারা সেই কাজ করেছে তারা ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু তার
মানে আপনি সব পুরুষ জাতিকে এক গোত্রে ফেলবেন?সবাইকে ঘৃণা করবেন?এটা তো মানষিক
বিকৃতি। আপনার কৃতকর্ম আপনাকে কি সেই সমস্ত পাপীদের সমগোত্রীয় করে না?ভেবে বলুন
ম্যাডাম।”
-“ভাবার সময় আর নেই অনিরুদ্ধ। আমার বোনকে তো আপনি ব্যবহার করতে গেছিলেন..যদি না
সিরাজের ফোনের মেসেজগুলো পড়তাম তাহলে আপনার অভিসন্ধি জানতেই পারতাম না।কি
ভেবেছিলেন সিরাজের নজরদারি আর তৃণার মাধ্যমে আপনি আমাকে সায়েস্তা করবেন..সেটা
আপনার ভুল।”
       কথাটা বলে চোখের নিমেষে দামিনী একটা পিস্তল বার করে
অনিরুদ্ধের দিকে গুলি করে। কিন্তু সেই মুহুর্তে চোখ ধাঁধানো আলো জ্বলে ওঠে আর
গর্জে ওঠে আরেকটা পিস্তল- সারা কম্পাউন্ড জুড়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পুলিশ।
জ্ঞান  হারানোর আগের মুহুর্তে অনিরুদ্ধ দেখতে পায় দামিনীর নিথর দেহ।
       হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে অনিরুদ্ধ সামনে যাকে আবিষ্কার
করে তাকে এই জীবনে আর দেখবে বলে ভাবে নি- মৌ,পুলিশের পোষাকে।
    “আমাকে ক্ষমা কর অনি..ইনফরমার সিরাজের কাছ থেকে সব শুনে তোমার
অভিজ্ঞতার ভয়াবহতা বুঝি।পরশু দিন সিরাজের সঙ্গে শেষ কথার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
হয়ে যায়।সে কমলের সাথে ছিল।সব দিক বিবেচনা করে প্রথমে দামিনীর বাড়ি আর পরে গো
ডাউনে ফোর্স পাঠাই। দামিনীর অনৈতিক কাজের জন্য জেল হতো কিন্তু যে পাপ সে করেছে
তার জন্য মৃত্যুই একমাত্র শাস্তি। ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুই -সে পুরুষ হোক বা
নারী।” 
       “সিরাজ?” কাঁধের ব্যথা অগ্রাহ্য করে দুর্বল স্বরে
জিগেস করে অনি।
        “বেঁচে আছে..অমানুষিক অত্যাচার হয়েছে ওর ওপর।
দামিনীর বেআইনি ব্যবসার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করার ফল ভোগ করেছে। কিন্তু
চিকিৎসায় ভাল হয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, কমল আত্মহত্যা করেছে।”
       পরম নিশ্চিন্তে চোখ বোজে অনি। 
   “আমি আছি অনি..আর ছেড়ে যাব না” ফিসফিসিয়ে বলে মৌ। পূবের
সূর্য  তখন সবে আলো ছড়াচ্ছে।

Share This Article