Golondaaj Movie Review – গোলন্দাজ মুভি রিভিউ

Bongconnection Original Published
7 Min Read


 Golondaaj Movie Review – গোলন্দাজ মুভি রিভিউ 

Golondaaj Movie Review - গোলন্দাজ মুভি রিভিউ
Loading...

Golondaaj Movie Review

Loading...
By – Aadhyan Ghosh Prottoy
 যদি হিন্দীতে Lagaan এর মত sports drama তৈরি হতে পারে তাহলে
বাঙালিও পারে গোলন্দাজ  নির্মাণ করতে।সিনেমাটা দেখছিলাম আর বাকরুদ্ধ হয়ে
যাচ্ছিলাম;আসলে বাংলাতে এই লেভেলের স্পোর্টস ড্রামা তৈরি হতে পারে এটা
কল্পনাতীত ছিল।তবে,এটুকু ভেবে নিশ্চিত ছিলাম যে বাংলার বীরপুত্র নগেন্দ্রপ্রসাদ
সর্বাধিকারীর জীবন কাহিনী যেখানে উঠে আসবে সেটা নিশ্চয়ই বাংলার মান রক্ষা
করবে।
তবে সিনেমা হলে ঢুকে এমন একটা বিষয় এক্সপেরিয়েন্স করলাম যেটা এর আগে কখনো
করিনি, সিনেমা হলে ঢুকেই দেখি আমি ছাড়া আর কোন দর্শক নেই; এত বড় একটা
মাল্টিপ্লেক্স, এত বড় একটা মুভির প্রিমিয়ার, সেখানে কি না আমিই একমাত্র
দর্শক। অবাক লাগে এসব।। জানি না বেশিরভাগ লোকের পিরিয়ড ড্রামা/আর্ট ফিল্ম এর
চেয়ে মাসালাদার মুভির প্রতি কেন এত আকর্ষণ! যাইহোক এই প্রথম থিয়েটারে বসে একা
একা একটা গোটা ফিল্ম দেখতে হলো।


নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী (Nagendra Prasad Sarbadhikari)বাঙালির একটা আবেগের নাম;যিনি শুধু ফুটবল নয়;ভারতের বুকে
হকি,টেনিস,রাগবি,ক্রিকেট এর মত বিদেশি খেলার প্রচলন এর পথিকৃৎ তিনি।ক্রিকেটে
তিনিই প্রথম ভারতীয় বোলার যিনি ইংরেজদের সাথে খেলায় ওভার হেড বোলিং করতে
পারতেন।নগেন্দ্রপ্রসাদ ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি কবি, সাহিত্য
রসিক, নাট্যকার এবং নাট্যসমালোচক ছিলেন। তিনি শেক্সপিয়ারের টেম্পেস্ট এবং
মার্চেন্ট অফ ভেনিস অনুবাদ করেছিলেন। হিন্দুধর্মশাস্ত্র এবং তন্ত্রশাস্ত্রে তার
গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি কীর্তন গানেও দক্ষ ছিলেন।
নগেন্দ্রপ্রসাদ বাঙালি যুবকদের সামরিক ও আধা-সামরিক শিক্ষা দেবার চেষ্টা
ছাত্রাবস্থা থেকেই শুরু করেন। তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
সময়ে বাঙালি পল্টন তৈরি করেন। সেক্ষেত্রে তার জীবন কাহিনীকে পর্দায় তুলে ধরা
মোটেই সহজ ছিল না।।কিন্তু সেই কাজটি করে দেখিয়েছেন পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি।


গোলন্দাজ মুভি রিভিউ 

কাহিনি সংক্ষেপ – Story
  যে ব্যক্তিকে এতদিন শুধুমাত্র ইতিহাস বইয়ের পাতায় পড়ে এসেছি তার
জীবনের একটা অংশকে পর্দায় দেখতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছিলো।
সিনেমার পটভূমি সবারই কমবেশি জানা।১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে শোভাবাজার ক্লাব সমস্ত
ইউরোপীয় ক্লাবকে পরাজিত করে ফ্রেন্ডস কাপ জয় করে।সেই পটভূমিতে ই নির্মিত
হয়েছে সিনেমাটি।
Golondaaj Movie Review - গোলন্দাজ মুভি রিভিউ
My Rating – 4.5/5
IMDb Rating – 9.3/10
বিশ্লেষন:
   সিনেমাতে মূল ভূমিকায় নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে
অভিনয় করেছেন দেব।।তার স্ত্রী কৃষ্ণকমলিনীর ভূমিকায় দেখা গেছে ইশা সাহা
কে।এছাড়া নগেন্দ্র প্রসাদ এর পিতার চরিত্রে দেখা গিয়েছে সংগীত শিল্পী
শ্রীকান্ত আচার্য্য কে।অন্যান্য ভূমিকায় Alexx O’Nell,জন ভট্টাচার্য, উজান
চ্যাটার্জী,অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রশিস রায়কে দেখা গেছে।
সিনেমাটা দেখার সময় শুধু ভাবছিলাম, যে দীপক অধিকারীকে আমরা তথাকথিত
রোমিও,পাগলু,খোকাবাবু হিসেবে চিনি, তাকে এমন একটা ঐতিহাসিক চরিত্রে দেখতে পারবো
সেটা একেবারেই কল্পনাতিত ছিল।তার অভিনয় দেখে সত্যিই  আবেগ তাড়িত হয়ে
পড়ছিলাম;এতটা পিকচার পারফেক্ট অভিনয়! তার করা প্রতিটি দৃশ্যেই নজর কেড়েছেন
তিনি।এটা বলতে পারি যে,তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ এখনো পর্যন্ত এটা।এছাড়া,তার
স্ত্রীর চরিত্রে ইশা সাহা কে যতবার দেখছিলাম ততবারই তার গুণমুগ্ধ হয়ে
যাচ্ছিলাম।বর্তমান বাংলা সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী যে তিনি;সেটা আর বলার
অপেক্ষা রাখে না। অনির্বাণ ভট্টাচার্য কে ভার্গবের চরিত্রে অপূর্ব লাগছিল।
এছাড়া জন ভট্টাচার্য, উজান চ্যাটার্জী এদের অভিনয় দেখে মনে হল এরাই বাংলা
সিনেমার ভবিষ্যৎ; দারুন সাপোর্ট করেছে ওরা সিনেমাতে। তাছাড়াও ইন্দ্রাশিষ রায়
এর রাফ অ্যান্ড টাফ বিহেভিয়ার সিনেমাতে একটা ভিন্ন মাত্রা দিচ্ছিল; তাকে
জিতেন্দ্র চরিত্রতে দারুন মানিয়েছে। নগেন্দ্র র পিতার ভূমিকায় শ্রীকান্ত
আচার্য কে চমৎকার লাগছিলো,এছাড়া ইংরেজ ফ্রেডরিক এর ভূমিকায় Alexx O’Nell ও
ভালো কাজ করেছে। নগেন্দ্রপ্রসাদ এর ছোটবেলার চরিত্রে যে ছেলেটি অভিনয় করেছে
সেই ছেলেটির মুখাবয়বের সাথে দেব এর চেহারার এক অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছি;
যেটা সিনেমাটিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তবে আরও একজনের কথা এখনো বলিনি; সে হচ্ছে
আমাদের রেডিও মিরচি র অগ্নি দা। প্রথমে তাকে সিনেমাতে দেখে বেশ চমকে
গিয়েছিলাম। তার যে রেডিও জকির পাশাপাশি এত ভালো অভিনয় দক্ষতা আছে সেটা আমার
জানা ছিল না। এছাড়া অন্যান্য পার্শ্বচরিত্রদের অভিনয়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
সিনেমাটির সিনেমাটোগ্রাফি ছিল দেখার মতো, দেখে মনে হচ্ছিল যেন পরাধীন
ভারতবর্ষের জীবন্ত গ্রামবাংলা কে স্বচক্ষে উপলব্ধি করছি; কিছু কিছু জায়গাতে
অসাধারণ ক্যামেরার কাজ চোখে পড়ছিল।
সিনেমাতে অনেকগুলো ডায়লগ আছে যেগুলো গায়ের লোম খাড়া করে দিচ্ছিল। তৎকালীন
সময়ে জাত ধর্ম প্রথা ভারতবর্ষে চালু ছিল, তারমধ্যে নগেন্দ্রপ্রসাদ
সর্বাধিকারীর বলা কিছু উদ্ধৃতি সেসবের মূলে কুঠারাঘাত করে,
    “আমি বুকের রক্ত দিয়ে ক্লাব তৈরি করেছি, বংশপরিচয় নিয়ে
খেলোয়াড় তৈরি করিনি৷ জাতপাত নিয়ে খেলার আসর আমি সাজাব না, তৈরি করব
খেলোয়াড় জাত।”
  ঠিক একই ভাবে এই সিনেমাটির মধ্যেও ভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেকেই একসঙ্গে
অভিনয় করেছেন, তাদের অভিনয় এবং পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতা দেখে মনে হচ্ছিল
রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে, অভিনয়টা নিজেই একটা জাত।
পরিচালকের আসনে ধ্রুব ব্যানার্জি তার সেরাটা দেখিয়ে দিয়েছেন, এর আগে তার
পরিচালিত গুপ্তধনের সন্ধানে এবং দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন মুভিগুলো যতটা ভাল
লেগেছিল, এবার তার পরিচালিত গোলন্দাজ মুভিটা সেটাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। তার এই
অসাধারণ ডিরেকশন এর জন্য তাকে বাহবা দিতেই হয়। এছাড়াও সিনেমাটির সঙ্গে
অন্যান্য কলাকুশলীরা জড়িয়ে ছিলেন; তারমধ্যে বাইচুং ভুটিয়া সহ আরও কয়েকজন
খেলোয়াড় এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সিনেমাটি নির্মাণে সাহায্য করেছেন।।
সিনেমাটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে, সিনেমাতে বন্দেমাতরম
গানটি শোনার সময় আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল। এছাড়া বিভিন্ন দৃশ্যতে
প্রয়োজনমাফিক দু তিনটে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও আমার কাছে
বেশ ভালো লেগেছে।
মোটের উপর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি দেখার সময় এক মুহূর্তের জন্যেও বোর
ফিল করিনি, সিনেমাটির মধ্যে বহুবার গুজবাম্পস ফিল হচ্ছিল। এ শুধুমাত্র একটা
ফুটবল কেন্দ্রিক সিনেমা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ নগেন্দ্রপ্রসাদ
সর্বাধিকারী, বাঙালির বিপ্লবী চেতনা, বাঙালির স্বাধীনচেতা মনোভাব, গ্রাম বাংলার
অপরূপ সৌন্দর্য, শোভাবাজার ক্লাবের জাগরণ, তৎকালীন বাংলার পটভূমি, ইংরেজদের
বাঙালির প্রতি মনোভাব, বাঙালি বিপ্লবীদের জীবনগাঁথা, তৎকালীন বাংলার
হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দের চিত্র এবং সর্বোপরি বাঙালির দেশপ্রেম এবং বিপ্লবের এক
অভূতপূর্ব কাহিনী। 
#শেষকথা:
  তাই সিনেমাটি না দেখলে অনেক কিছু মিস করে যাবেন; আর এমন সিনেমা বারবার
তৈরি হয় না, আবার এমন নৈপুণ্যভরা বাংলা সিনেমা বারবার মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে
দেখাও হয় না; তাই, এবারের পুজোর ছুটিতে একেবারেই মিস করবেন না সিনেমাটা;
অনেকদিন পর সিনেমা হল খুলেছে, তাই পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আপনার নিকটবর্তী
মাল্টিপ্লেক্স/সিনেমা হলে গিয়ে উপভোগ করে ফেলুন সিনেমাটা।আশাকরি, সিনেমাটা
আপনাদের বহুদিন হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।
আরো পড়ুন,

Share This Article