Valobashar Golpo Bangla Lekha – ভালোবাসার গল্প
দেরি করে কলেজে ঢুকলে চলবেনা,10টা থেকে প্র্যাক্টিকাল ক্লাসটা করতেই হবে।
মায়ের উপর খানিকটা চোটপাট করে নাওয়া খাওয়া ভুলে মধুরা ছুটলো কলেজের উদ্দেশ্যে।
স্কটিশ চার্চ্ কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে পড়ে সে। শেষ ক্লাসের পরে
বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে মধুরা চললো অভীকের সাথে দেখা করতে। অভীক মেডিকেল কলেজে
ডাক্তারী পড়ছে। কলেজের পরে প্রায়দিন দুজনে মিলে হাতে হাত রেখে পাশাপাশি অনেকটা
পথ হেঁটে যায়, কোন কোন দিন বসে সময় কাটানোর জন্য মিলেনিয়াম পার্ক, প্রিন্সেপ
ঘাটে পাড়ি দেয়। আজ ওরা ঢুকেছিল সিনেমা দেখতে। বেরিয়ে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে
ফিরতে মধুরা ঘড়িতে দেখলো দশটা বেজে গেছে। পাড়ার গলিটা শুনশান হয়ে গেছে। যতো
তাড়াতাড়ি সম্ভব পা চালাচ্ছিল সে। হঠাৎ সামনে থেকে রাস্তা আটকে একজন দাড়ালো।
মধুরা চমকে উঠে দেখলো, সৌম্য।
“এতো রাতে কোথা থেকে আসছিস?” জিজ্ঞাসা করলো সৌম্য। মধুরা কটমট করে
সৌম্যর দিকে তাকিয়ে, “সেই কৈফিয়ত তোকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনা।” বলে পাশ
কটিয়ে চলে আসতে উদ্যত হতেই সৌম্য তার হাত চেপে ধরে। মধুরা এক ঝটকায় সৌম্যর হাত
ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে বাঁকি রাস্তা পার হয়ে বাড়িতে ঢোকে। সৌম্য আর মধুরা এক পাড়ায়
থাকে, ছোট থেকেই চেনা পরিচয়, কিন্ত কিছুদিন হলো তার সাথে সৌম্য এইরকম ব্যবহার
শুরু করেছে। মধুরা কোনভাবেই চায়না সৌম্যর মতো একজন অতি সাধারণ সদ্য
গ্ৰ্যাজুয়েট করে ক্লাবে বসে ক্যারাম পেটানো ছেলে তার আর অভীকের মাঝে আসুক।
অভীকের মতো সুন্দর চেহারার মিশুকে আর ঊজ্জ্বল ভবিষ্যতের একজন ছেলের সাথে
সম্পর্ক থাকার জন্য বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই হিংসার পাত্রী মধুরা। অভীকের
মা বাবাও তাকে খুবই পছন্দ করেন। মধুরা এখন অপেক্ষা করে আছে শুধু সেই দিনটার
জন্য যেদিন সে নববধূ রূপে অভীকের বাড়িতে পা রাখবে।
Valobashar Golpo Bangla Font
গেছে অঞ্জলি দিতে। লাল হলুদ জামদানি শাড়ি, খোলা চুল আর লাল টিপের সাজে অপূর্ব
লাগছে মধুরাকে। অঞ্জলি দিতে গিয়ে চোখ পড়লো একটু দূর থেকে সৌম্য অপলক দৃষ্টিতে
তার দিকেই তাকিয়ে। প্রচন্ড বিরক্তিতে মুখ ঘুড়িয়ে নিল মধুরা, কবে যে ছেলেটা পিছু
ছাড়বে! বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করেই আর এক প্রস্থ সাজগোজ করে বেড়িয়ে পড়লো। অভীক
আসবে, কিন্তু কোথায় যাবে সেটা বলেনি। আজ অভীক ওর বাবার গাড়ি নিজে চালিয়ে নিয়ে
এসেছে। মধুরা উঠে বসতেই উড়ে চললো অজানার উদ্দেশ্যে।
মধুরাকে নামতে বলে নিজেও নেমে পড়লো। তারপর মধুরাকে হাত ধরে নিয়ে সেখানকার একটা
ফ্ল্যাটের চাবি খুলে ঢুকে বললো, “আজ আমরা ঠাকুর দেখতে যাবোনা, এই ফ্ল্যাটটা
আমাদের, এখানে দুজনে একলা কিছু সময় কাটাবো”।
ঠিক হচ্ছে?” ।
আমাকে দাও”। মধুরা আর আপত্তি করতে পারলোনা, নিজেকে সঁপে দিলো অভীকের হাতে।
না, কোনো ভুল সে করেনি। অভীক আর সে তো একে অপরের ছায়া, দুজন দুজনকে মন প্রাণ
দিয়ে ভালোবাসে, এখন শুধু সামাজিক স্বীকৃতিটুকুর অপেক্ষা। আলো নিভিয়ে ক্লান্ত
শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিলো মধুরা।
ফেরার সময় সৌম্য এতো বাড়াবাড়ি করেছে যে সৌম্যকে একটা চড় মেরে দিয়েছে সে। সৌম্যও
“এর ফল তোকে ভুগতে হবে” বলে হুমকি দিয়ে চলে গেছে। মা বাবাকে এসব বললে
তারা প্রচন্ড চিন্তায় পড়বে, মাঝখান থেকে মধুরার বেরোনোই হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে,
তাই তাদেরও কিছু বলতে পারেনি। সব মিলিয়ে মধুরা আজ খুব অন্যমনস্ক। এদিক ওদিক না
তাকিয়ে রাস্তা পাড় হতে গিয়ে তীব্র গাড়ির হর্নের আওয়াজে চমকে উঠে একদম সামনেই
মারুতি গাড়িটাকে দেখে দৌড়াতে গিয়ে হুমরি খেয়ে রাস্তায় পড়লো মধুরা। কোনরকমে
হিঁচড়ে নিজের শরীরটাকে সরিয়ে নিলেও ডান পাটা টেনে নেওয়ার আগেই মনে হলো পায়ের
হাড়গুলো গুঁড়িয়ে গেল। ডান পায়ের তীব্র যন্ত্রণায় জ্ঞান হারালো মধুরা।
আজ দুই সপ্তাহ হলো হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেছে মধুরা। শারীরিক ভাবে
সুস্হ কিন্তু ডান পা টাকে ডাক্তাররা বাঁচাতে পারেনি। হাঁটুর নীচে থেকে ভেঙে
গুড়িয়ে গেছিল তাই হাঁটুর নীচ থেকে বাদ দিতে হয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে মধুরা
পাথর হয়ে গিয়েছিল, বন্ধুরা এসেছিল, কারওর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। অভীক রোজ
হসপিটালে এসেছে, খালি চোখের জল ফেলেছে মধুরা। মা বাবা তাকে সারাদিন যেন ডানা
মেলে আগলে রাখছে। চারিদিকে অন্ধকার লাগে মধুরার। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তার
মতো ছুটে বেড়ানো একটা মেয়ের ভবিষ্যতের সঙ্গী হবে একটা ক্রাচ, কোনদিন আর দুই
পায়ে ছুটে বেড়াতে পারবেনা।
Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla
পরশুদিন বলেছিল অবশ্য পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু একটু কথা না বললে ভাত হজম
হয়না মধুরার। আবারও গতকালের মতো ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেল।
মধুরার ফোন ধরেওনি। শেষে মরিয়া হয়ে সে অভীকের মা কে ফোন করলো, ” আন্টি, আমি
অভীককে বেশ কিছুদিন ধরে ফোনে পাচ্ছিনা, ও ঠিক আছে তো?”
তোমার সাথে আর কথা বলতে চায়না তাই ওকে আর ফোন করে বিরক্ত কোরোনা”, বলেই ফোনটা
কেটে দিলো। মধুরার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। অস্থির হয়ে ফোনটা তুলে আবার ফোন
লাগায় অভীককে। এবারে অভীক ফোনটা ধরে, “বলো কি বলবে”। মধুরা অশ্রুসিক্ত কন্ঠে
বলে, “এতোদিন পরে তুমি আমার সাথে কথা বলছো! আন্টি বলছে তুমি নাকি আমার সাথে কথা
বলতে চাওনা!”
পারছিনা। জীবনের পথে তোমাকে নিয়ে আমি দৌড়াতে পারবোনা। ভালো থেকো। রাখলাম।”
ভিতরে ভিতরে গুমরে গুমরে মরতে লাগলো। পরেরদিন দুপুরবেলা, মধুরার মা তার পাশে
শুয়ে ঘুমাচ্ছে আর বাবা পাশের ঘরে। আস্তে করে বালিশের পাশ থেকে মার ঘুমের ওষুধের
শিশিটা মধুরা বার করলো। এটা সকালবেলাতেই নিয়ে এসে লুকিয়ে রেখেছিল। পাশে ঘুমন্ত
মায়ের মুখের দিকে একবার তাকালো, বাবার মুখটা মনে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। বুকের
ভিতর এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় ফেটে পড়ছে, চোখ দিয়ে অবিরাম বয়ে যাচ্ছে জলের ধারা।
অভীকের মুখটা এবার ভেসে উঠলো মধুরার চোখের সামনে। যাকে সে সর্বস্ব দিয়ে
ভালোবেসেছিল সে এখন তাকে বোঝা ভেবে ঝেরে ফেললো, সারাজীবন বাবা মার উপর বোঝা হয়ে
থাকতে চায়না। আর বাবা মা যখন থাকবেনা, তখন কি হবে? না, তার থেকে এই ভালো। চোখ
বন্ধ করে সবটুকু ঘুমের ওষুধ মুখে ঢেলে জল দিয়ে গিলে নিল। চোখ খুলে এবার
চারিদিকে তাকিয়ে মধুরা দেখলো সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে। ভীষন শীত করতে লাগলো
তার। মৃত্যু কি খুব শীতল হয়? মাথাটা ভীষন ভারি লাগছে, চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে।
আর বসে থাকতে পারলো না মধুরা, বালিশে মাথা দিয়ে অতল ঘুমে তলিয়ে গেল।
Bangla Love Story
হাতে টিফিন বক্স। মধুরার হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিয়ে সৌম্য মধুরার দিকে একটা
মিষ্টি হাসি হেসে অফিসের দিকে রওনা দিলো। আজও চোখ বুজলে মধুরা সেই দিনগুলোতে
ফিরে যায়। সেদিন ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর মায়ের ঘুম হঠাৎ কি জানি কোন অজানা কারণে
ভেঙে যায়। এরপর আবার ডাক্তার, হসপিটাল সবকিছু পেড়িয়ে মধুরা যখন বাড়ি ফেরে
পুরোপুরি মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিল। তখন একদিন সন্ধেবেলা সৌম্য আসে তার সাথে
দেখা করতে। প্রথমে এসে মধুরার সামনে কিছুক্ষণ চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে থাকে,
তারপর হঠাৎই মধুরার দিকে তাকিয়ে সরাসরি বলে, “মধু, আমাকে বিয়ে করবি?” মধুরা কোন
উত্তর দিতে পারেনি, শুধু অপলক দৃষ্টিতে সৌম্যর দিকে তাকিয়ে ছিল। সৌম্য বলে চলে,
“আমি জানি আমি তোর যোগ্য নই, আমাকে একটু সময় দে মধু, একটা চাকরি আমি পেয়ে
গিয়েছি, আমি তোর যোগ্য হয়ে উঠবো বিশ্বাস কর, তোকে খুব ভালো রাখবো”। মধুরা কিছুই
বলতে পারেনি সেদিন, শুধু বুঝেছিল সত্যিকারের ভালোবাসা কাকে বলে। আজ সৌম্যর সাথে
তার সুখের সংসার। মধুরা জানে তাকেও যে সৌম্যর যোগ্য হয়ে উঠতে হবে, সৌম্যকে
ভালো রাখতে হবে।