|| ভালোবাসার ভিন্ন রূপ ||
দোকানে আসা ক্রেতাদের ভীড় সামলে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সান্তা। আজ 14ই ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে হওয়ায় সান্তার ছোটো ফুলের দোকানে যুবক-যুবতীদের উপচে পড়া ভীড়। অন্যদিনের তুলনায় আজ সান্তার ফুলের বিক্রি ভালোই হয়েছে, তবুও ওর আজ কিছুই যেন ভালো লাগছে না।
বিশেষ করে আজকের উজ্জ্বল মনোরম পরিবেশ এবং সুন্দর সুন্দর সাজে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঘুরতে দেখে তার মন বিষণ্ণ হয়ে উঠলো। সদ্য সাত মাস আগে বিবাহিতা সান্তার হঠাৎ মনে হলো তার স্বামী রাজু যদি ভালোবাসার এই বিশেষ দিনে তার জন্যও সুন্দর গিফট নিয়ে আসতো, একসাথে সুন্দর জামাকাপড় পরে তারাও যদি ঘুরতে যেতে পারতো, কি ভালোই না হতো তাহলে! কিন্তু হঠাৎ পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠতে সান্তা সম্বিত ফিরে পেলো। তারপর সে ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার স্বামী রাজু ফোন করেছে।
Valentine’s Day Story In Bengali 2024
সে ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে থেকে রাজু ব্যস্ত সুরে বললো, “সান্তা আজ আমার গ্যারেজ থেকে বাড়ি ফিরতে ভোর হয়ে যাবে। আসলে নতুন একজন গাড়ি দিয়ে গেছে সারাতে, কাল ভোরবেলায় মধ্যে তাকে গাড়িটা ডেলিভারী দিতে হবে। তাই মালিক আমাকে বলেছেন আজ রাতের মধ্যে কাজটা করে দিতে, পরিবর্তে আমাকে বেশ কিছু অতিরিক্ত টাকা দেবেন। তুমি একদম চিন্তা করবে না, খেয়েদেয়ে ভালো করে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়বে। কেমন!”
সান্তা রাজুর কথায় সায় দিলো। তারপর দু’জনে নিজেদের মধ্যে টুকটাক প্রয়োজনীয় কিছু কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো। রাজুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতেই সান্তার মনখারাপটা আরো জাঁকিয়ে বসলো। সে মনে মনে ভাবলো তার মতো সামান্য ফুলের দোকানদার আর রাজুর মতো গরিব মেকানিকদের জন্য বোধহয় ভালোবাসার জন্য আলাদা কোনো উৎসব নেই। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করার ইচ্ছে বিলাসিতা মাত্র।
ভালোবাসা দিবসের গল্প
বাড়িতে একটু রাত করে ফিরে সান্তা কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়লো কিন্তু কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। বড্ড রাজুর কথা মনে পড়ছে তার। এমন সময় হঠাৎ সান্তা বাইরে থেকে দরজার কড়া নাড়ার শব্দ পেলো। সে বিছানা থেকে দরজার সামনে গিয়ে ইতস্ততভাবে বাইরের মানুষটাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “কে? এতো রাতে কি চাই?”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই অপরপ্রান্ত থেকে প্রায় সাথে সাথেই সান্তার অতিপরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “আমি রাজু গো, তাড়াতাড়ি দরজা খোলো।”
রাজুর গলা চিনতে পেরেই সান্তা চমকে উঠলো। সে তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে রাজুকে দেখতে পেয়ে, খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরলো। সান্তার হঠাৎ এইরূপ আচরণে রাজু কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো, “কি করছো কি! বাইরে লোকজন দেখলে কি ভাববে বলো তো? চলো, ভেতরে চলো তাড়াতাড়ি।”
রাতে রাজুর আনা খাবার খাওয়ার পর সান্তা যখন রান্নাঘরে বাসনগুলো ধুতে ঢুকলো, রাজু তখন পেছন থেকে এসে সান্তার চোখের সামনে একটা প্যাকেট তুলে ধরলো। সান্তা অবাক দৃষ্টিতে রাজুর দিকে তাকিয়ে বললো, “প্যাকেটে কি আছে গো?”
রাজু প্রবল তৃপ্তির গলায় বললো, “তোমার জন্য লাল শাড়ি, টিপের পাতা, কানের দুল, কাজল, চুরি, বেলী ফুল এনেছি। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে তোমাকে এই সাজে দেখবো। আমি সেইভাবে তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। তাই আজ ভালোবাসার দিনে তোমার জন্য এসব নিয়ে এলাম। এগুলো একটু পড়ে এসো না বৌ।”
রাজুর অনুরোধ শুনে আর তার মুখে ‘বৌ’ ডাকটা শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে রাজুর মনের মতো সাজতে গেলো সান্তা।
কিছুক্ষন পর লাল শাড়ি, চুলে বেলীফুল এবং চোখে কাজল পড়ে যখন সান্তা রাজুর সামনে এলো, রাজু মুগ্ধ হয়ে সান্তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। রাজুর মুগ্ধতা ভরা ভালোবাসাময় দৃষ্টি দেখে কিছুটা লজ্জা পেয়ে সান্তা বললো,
- “ওইরকমভাবে কি দেখছো?”
- “তোমাকে দেখছি। আজ তোমাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ঠিক ওই চাঁদের মতো সুন্দর। (রান্নাঘরের জানালা দিয়ে চাঁদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো)
- “ধ্যাৎ খালি মিথ্যে কথা!”
- “সত্যি বলছি সান্তা, তুমি খুব সুন্দর। খুব ভালোবাসি তোমায়।” (এবার সান্তাকে জড়িয়ে ধরলো রাজু)
- “প্রতিবার এইভাবেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করবে তো আমার সাথে? আমাকে এইভাবেই ভালোবাসবে তো সারাজীবন?”
- “ধুর বোকা! ভালোবাসার আলাদা কোনো দিন হয় নাকি? সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে প্রতিদিনই ভালোবাসার দিন। আসলে কালকে আমাদের মালিক ওনার বৌয়ের জন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র গিফ্ট কিনতে যাচ্ছিলেন, তাই আমি ভাবলাম তোমাকেও আজকের দিনে গিফ্ট দিয়ে চমকে দেবো। তাই সকালে তোমাকে ফোন করে মিথ্যে বলেছিলাম।
- “ভালো করেছো কিন্তু আর কোনোদিনও আমায় মিথ্যা বলবে না।”
- “আচ্ছা আর বলবো না। খুব ভালোবাসি তোমায় সান্তা।”
- “আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি রাজু।”
তারপর তারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসার তীব্র আলিঙ্গনে হারিয়ে গেলো। চাঁদও যেনো আজ তাদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো। আজ তারা প্রমান করে দিলো সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য কোনো জাঁকজমক বা দামি গিফ্ট প্রয়োজন হয় না। একে ওপরের প্রতি সততা, দায়বদ্ধতা, তীব্র অনুভূতি আর অনেকটা সরলতা থাকলেই দু’টো মানুষ সারাজীবন একে অপরের সঙ্গে সুখে থাকতে পারে। তাই আধুনিকতার এই যুগে সান্তা আর রাজুর মতো সবার মধ্যেই এরম সহজ, সরল ও ভিন্নভাবে বেঁচে থাকুক পৃথিবীর সুন্দরতম অনুভূতি ‘ভালোবাসা’। আজ বিশেষ দিনে এই শুভ কামনা রইলো।
সমাপ্ত….
Happy Valentine’s Day Bengali Shayari, SMS & Wishes 2024
ভালোবাসা দিবসের ছবি, মেসেজ ও শুভেচ্ছাবার্তা