Baishe Srabon Poems In Bengali (শ্রাবনের বাইশ)
Baishe Srabon Poems
শ্রাবণের বাইশ
– সুজান মিঠি (Team Bong Connection)
আমার রবিকাকা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলো।
এক আকাশ খাতার পাতায় লিখতে পারতো,
দেওয়াল জুড়ে ছবি আঁকতো,
আমার জন্য বকুল ফুলের মালা গাঁথতো
বলতো, এটা তোর জন্য… খোঁপায় বাঁধিস।
মা বলতো, যাকে ভালোবাসতো, ছেড়ে গিয়েছে
মাঠ ঘাট নদী …
রবিকাকাকে জিজ্ঞেস করলেই হেসে উঠতো
বলতো, আমার ভালোবাসা দেখবি?
ওই দেখ বইয়ের তাকে, খাটের উপর, আর আমার
বুকের পাঁজরে
সঞ্চয়িতা গীতবিতান আর এই ঘর
এক পৃথিবী রবীন্দ্রনাথ।
বলতো, তুই দেখবি, আমার ভালোবাসা?
তুইও কিন্তু প্রেমে পড়ে যাবি বলে দিলাম
যুবক রবি ঠাকুর বের করে বলতো, এই দেখ
আমার কবি, আমার প্রেম।
মা বলতো, শেষবেলায় মেয়েটা ওই ছবিটাই
উপহার দিয়েছিল ওকে।
আমার রবিকাকা এক আকাশ খাতায় লিখতে পারতো।
দেওয়াল জুড়ে ছবি আঁকতো
আর বুকের পাঁজরে রবীন্দ্রনাথ রাখতো ভরে।
আমার যেদিন বিয়ে হয়ে যায়
সবার আড়ালে বকুল ফুলের মালা এনে
আমার হাতে দিয়ে বলে, বালিশের পাশে রাখিস
আমার তো আর কিছু নেই দেবার…
আমি বললাম, রবিকাকা ওই ছবিটা দেবে আমায়?
কান্নায় ভেঙে পড়ে কাকা, ওটা যে আমার ঘর…
তুই নিয়ে চলে গেলে আমি যে আবার একলা হয়ে যাবো!
আমার রবিকাকা এক আকাশ লিখতে পারতো
এক দেওয়াল ছবি আঁকতে পারতো।
কিন্তু ঘর ছিল ওই একটাই।
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে আসার দিন সকাল থেকে
আকাশ ভারী মেঘলা!
আমার দেওর ঠাট্টার সুরে বলে,
আকাশও বৌদির যাওয়া আটকে দিতে চায় বুঝি!
পথে সারাক্ষণ আমার নতুন স্বামী আমাকে
কত প্রেম শোনাতে লাগলো।
আর আমি সেই বাসি বকুল ফুলের মালাটা
হাতের মুঠোয় নিয়ে কেবলই ভাবি,
কখন গিয়ে বলবো, রবিকাকা, আবার একটা
নতুন গেঁথে দাও! খোঁপায় বাঁধি।
কিন্তু এ কেমন দিন আজ!
কী ভীষণ অন্ধকার মেঘে মেঘে!
ধানক্ষেতে কচি ধানের
যে সুর কাকা আমায় শুনিয়েছিল
দেখি পথের দুপাশের ধানক্ষেতে
এ সেই চেনা সুর নয়,
ওরাও যেন কাঁদছে!
বাতাস এসে আমার কানের কাছে
শুধুই কেঁদে কেঁদে যাচ্ছে।
গাড়ির দুলুনি আর নতুন স্বামীর প্রেমালাপ অসহ্য লাগছে আমার!
বাড়ির কাছে আসতেই ছোটখাটো ভীড় আর গুঞ্জন।
ভিতরে ঢুকতেই মা আমার বুকে ভেঙে পড়ে
তোর রবিকাকা আর নেই।
তোর রবিকাকা আর নেই!
হঠাৎ করেই চলে গেল রে!
আমার মুঠোয় তখন বাসি সেই মালা!
আমি থমকে চমকে উঠলাম।
আমার হৃৎপিন্ড চিৎকার করে উঠলো,
রবিকাকা, আমার প্রিয় রবিকাকা…
তুমি কেন চলে গেলে?
মাকে বললাম, কাকাকে শেষ শয্যায় আমি সাজাবো।
কবির ছবিটা রবিকাকা বুকে চেপে ছিল মৃত্যুতেও।
ঠিক তাঁর মত সাজালাম,
ঠিক তাঁর মত।
তারপর এক আকাশ লেখা আর এক দেওয়াল
ছবি আঁকা সেই রবিকাকার মৃতদেহ চললো পথে।
যুবক ঠাকুর রবিকাকার বুকে।
তখনও কাঁদছে আকাশ!
তখনও কাঁদছে বাতাস!
কাঁদছে নদী নালা পথ পাখি!
আমার নতুন স্বামী কানের পাশে এসে বললো
কী আশ্চর্য মিল!
নামটাও রবি আবার
আজকেও বাইশে শ্রাবন!
কাঁদছে আকাশ!
কাঁদছে বাতাস!
কাঁদছে নদী নালা পথ পাখি!
আমার হাতের মুঠো থেকে খসে যাচ্ছে
বাসি বকুলের মালা…
ভিজতে ভিজতে বাইশে শ্রাবণ গাইছে…
…যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…
আরো পড়ুন, আজ বাইশে শ্রাবণ