“ইচ্ছে করে খুব ভোরে একদিন পতিতালয়ে যাবো। পতিতাদের ঘুমন্ত চেহারা দেখার জন্য। তাঁদের চেহারা কি মায়াবতীর মতো? তাদের চেহারায় কি মায়ার পরিপূর্ণ?
– হঠাৎ এরকম ইচ্ছে পোষণ হলো কেন? অবনির মুখ থেকে হঠাৎ এমন কথা শুনে রুদ্র কিছুটা বিচলিত হয়ে বললো।
ঘুমন্ত পতিতাদের চেহারা নাকি মায়ায় পরিপূর্ণ। তখন তাদের মন পবিত্র থাকে।
– ধূর তুমিও! কোন এক পাগল লেখকের কথা শুনে এখন পতিতালয়ে যাবে।
– লেখকরা কিছুটা হলেও সত্যি লেখে।
– লেখকরা কিছুটা সত্যি লিখলো বলে, তুমিও কি সত্য মিথ্যা যাচাই করতে যাবে নাকি?
– যেতে পারি,সমস্যা কি।
– ভালো মেয়ে মানুষরা কখনও পতিতালয়ে যায় না।
– ভালো ছেলেরা কি পতিতালয়ে যেতে পারে?
– মানে!
– মানে, তোমার মতো ভালো ছেলেরা কি পতিতালয়ে যেতে পারে?
– তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো নাকি?
– ক্যান, তোমাকে নিয়ে তোমার সন্দেহ হয় নাকি?
– অবশ্যই না।
– তাহলে তোমাকে সন্দেহ করে কথা বলবো কেন।
– বললে না, আমার মতো।
– তোমার মতো বলছি, তোমাকে তো বলিনি।
– বুঝলাম।
– যেতে দিবে আমাকে পতিতালয়ে। তাদের চেহারা কি আমার থেকেও মায়াবতী।
– মানে কি?
– মানে হলো, আমি আমার চেহারায় পতিতাদের চেহারার কোনো মিল আছে কি না দেখতে চাই।
– ক্যান?
– মায়াবতী! এই শব্দটার মানে খুঁজতে চাই।
– আমার মনে হচ্ছে তোমার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। নয়তো এই রাতদুপুরে কিসব আবোলতাবোল কথা বলছো।
– যখন কোনো পুরুষ ঘরে বউ রেখে পতিতালয়ে যায়। তখন সেই স্ত্রীকে লোকে পাগল বলে। বলে সে মায়াবতী না। যদি সে মায়াবতী হতো, তাহলে সে তাঁর স্বামীকে আগলে রাখতো।
– তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো।
– আমি তো আর অবুঝ শিশু না।তাই বুঝ শক্তিটা প্রকট ভাবেই বিস্তার করে। তুমি যে পতিতালয়ে যাও তা আমি জানি।
রুদ্র আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।টাস করে অবনির মুখে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেই। আসলেই এই সমাজে সত্যি কথা বললেই থাপ্পড় খেতে হয়।
ধপাস করেই ঘুম থেকে উঠলো অবনি। এ কি! সে কেন এমন স্বপ্ন দেখলো। পাশে থাকিয়ে দেখে পরম যত্নে ঘুমিয়ে আছে রুদ্র। কি মায়া মাখা মুখ। নিষ্পাপ একটা মুখ।মায়ায় পরিপূর্ণ একটা চেহারা সে ঘুমন্ত রুদ্রকে দেখছে।
আরো পড়ুন ,বয়ফ্রেন্ড টু বিয়ের পিঁড়ি
তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস জল খেলো অবনি। তার হঠাৎ এমন মনে হলো কেন।কেনই বা এমন স্বপ্ন দেখলো।
তবে কি আসলেই রুদ্র! না আর ভাবেই পারছেনা অবনি।
এই রুদ্র শুধুই অবনির। পৃথিবীর সবকিছুর ভাগ হয়তো অবনি দিতে পারবে। কিন্তু রুদ্রের ভাগ সে কাউকে দিতে পারবেনা। ভালোবাসার মানুষের ভাগ কখনও কাউকে দেওয়া যায় না।
কিছুদিন থেকেই অবনি রুদ্রকে পূর্ণাঙ্গ সুখ দিতে পারছেনা। কিন্তু রুদ!রুদ্র এই নিয়ে মোটেই বিচলিত না। বরং রুদ্র বলেছে। আজ পারোনি কাল পারবে।
কিন্তু অবনির মনে সন্দেহের বীজ বপন হয়ে গেলো। তাই হয়তো সে এমন আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছে।
না কাল নিশ্চয়ই সে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু রুদ্র যদি আবার কিছু মনে করে। ধূর সে আবার কি মনে করবে। অন্য ভাবে বলবো।
.
‘আচ্ছা রুদ্র আমার প্রতি নিশ্চয়ই তোমার মন খারাপ।
– কেন?
– এই যে কিছুদিন থেকে তোমাকে পরিপূর্ণ সুখ দিতে পারছিনা।
– যদি আমি তোমাকে পরিপূর্ণ সুখ না দিতে পারতাম, তখন কি তুমি আমার উপর রাগ করতে? মন খারাপ করতে?
– না।
– তাহলে আমি কেন রাগ করবো। যেখানে ভালবাসা বিদ্যমান সেখানে শারীরিক সুখ অহেতুক। আর হ্যাঁ ভালবাসার সাথে শারীরিক সুখও লাগে। ভালবাসর মতোই সংসারে শারীরিক সুখের-ও প্রয়োজন আছে।
কিন্তু এই নয় যে, তুমি ইচ্ছে করে আমাকে সুখি করতে পারছো না। তুমি তো চেষ্টা করছো। কিন্তু পারছো না।
এটা ডাক্তার দেখালে ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো তোমার কোনো শারীরিক সমস্যারা কারণে এমন হচ্ছে। আর শুনো, তুমি কখনও এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করোনা।
যেখানে আমি এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি না। সেখানে তুমি ক্যান করছো?
বলেই রুদ্র অবনিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। বললো “যখন আমরা বয়স্ক হয়ে যাবো, তখন আর এই শারীরিক সুখের চাহিদা থাকবে না। তখন ভালবাসার চাহিদা থাকবে। আর ঠিক এভাবেই আমি মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত তোমাকে জড়িয়ে ধরে রাখবো।
অবনি আর কিছু বলতে পারছে না, তার গলা আটকে আসছে। কান্না আসছে তার।
কতো বড় একটা ঘটনা কতো সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিলো রুদ্র। আসলে এমন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।