“ভালোবাসা দিয়ে পেট ভরে না!”, বলে চলে গিয়েছিল বিদিশা; থমকে দাঁড়িয়েছিল অতনু! তাঁদের ৫ বছরের সম্পর্কের শেষটা এ’ভাবে হবে, ভাবতে পারেনি সে। সরকারি চাকরির চেষ্টা কম করেনি অতনু কিন্তু একেবারে কাছে এসেও কিছু নম্বরের জন্য পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছিল চাকরিগুলো! বয়সও হয়েছিল ২৬, আর ক্লাসমেট বিদিশার বাড়ি থেকেও বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে! বিদিশাও প্রথমে কবিতা শুনতে চাইলেও পরের দিকে খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল কেমন যেন! খুপরি চায়ের দোকান ছেড়ে সে যেতে চাইতো সিসিডিতে, রাস্তার পাশের হোটেল ছেড়ে সে যেতে চাইতো হ্যাংআউট বা কেএফসিতে; কিন্তু অতনুর টিউশনের মাইনেতে তা খুব একটা হয়ে উঠত না! “দু’বেলা ডালভাত খেয়ে কাটিয়ে দেবো” কবে যে “ভালোবাসা দিয়ে পেট ভরে না!” হয়ে গেলো, বুঝতে পারেনি অতনু! কদিন আগে ফেসবুকে বিদিশাকে দেখল ৯০,০০০-এর মাসমাইনেওয়ালা বরেকে জড়িয়ে ধরে ছবি দিয়েছে; মাঝেমধ্যেই দেয়! খোঁজ নিয়ে দেখেছে, কবিতাপাগল বিদিশার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বর কবিতার ‘ক’ টুকুও বোঝে না!
বাড়ি ফেরার সময় একটা অপরাধবোধ কাজ করত সহদেবের! ৮ বছরের ছেলেটা বাড়ি ফিরলেই বায়না করে খেলনার জন্য! পাড়ার বন্ধুদের দেখাদেখি তারও কথা বলা আয়রনম্যান লাগবে! কাগজের নৌকো, পাখি, অথবা এরোপ্লেন দেখলেই সে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত! ছেলের সাথে, বৌয়ের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারত না দিনমজুর সহদেব! তবে সবকিছু বদলে গেল সেদিন! সহদেব হাতে করে একটা আয়রনম্যান কিনে এনে দিল ছেলেকে আর ছেলের খুশি দেখে সমস্ত ক্লান্তি এক লহমায় কেটে গেল! কতদিন পরে ছেলে বাবার কোলে বসে বাবার সাথে খেলল! কিন্তু সহদেবের মাথা ঘুরিয়ে উঠল হঠাৎ! বউ ছুটে এল, ছেলে ভয় পেয়ে গিয়েছে! সহদেব হাত নেড়ে তাঁদের চিন্তা করতে বারণ করে! ওঁরা তো জানে না, এক বড়োলোক পার্টিকে চার বোতল রক্ত দিয়ে ছেলের খুশি কামিয়েছিল সে!
আরো পড়ুন ,সেরা 12 টি বাংলা ছোট গল্প
ছোট ভাই এমএনসিতে চাকরি পাওয়ার পর থেকে বাবা-মা যেন আরও ব্যাঁকা চোখে তাকাতো প্রীতমের দিকে! গলগ্রহ হয়ে থাকার মানেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে চাকরিরত ছোট ভাইয়ের থিয়েটার করা বেকার দাদা! চিকেন প্রীতমের খুব প্রিয় হলেও বাড়িতে আসতো মাটন, কারণ প্রতীক মাটনটা ভাল খায়! ছোটবেলার নিয়ম পাল্টে গিয়ে যখন মাংসের ভালো পিসগুলো প্রতীক আর বাবা-মা নিয়ে বাকিটুকু প্রীতমকে দিত, প্রীতম চটজলদি খেয়ে উঠে পড়ত! হঠাৎই তাঁর দলের ডিরেক্টর কমলদা তাঁকে আমেরিকা যাওয়ার অফার দেয়, সেখানে এক থিয়েটার দলের কর্মকর্তার প্রীতমের অভিনয় ভালোলেগেছে আর তাঁকে দলে নিতে চায় তাঁরা! কিছু না ভেবেই বিদেশ পাড়ি দেয় প্রীতম, পিছনে ছেড়ে আসে ভাইয়ের কটাক্ষ আর বাবা-মা-এর অবিশ্বাস! সেই দলে ধীরেধীরে তাঁর নাম বাড়তে থাকে! এখন সে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ টাকা কামায় মাসে… বাড়িতে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে বাকিটুকু দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয় প্রীতম! হঠাৎ করেই বাবা-মায়ের ফোন কল, ভাইয়ের ভিডিও কল, ইত্যাদি বাড়তে থাকে! নিজেকে স্পেশাল মনে হতে থাকে প্রীতমের! ন’মাসে-ছমাসে বাড়িতে ফিরলে এখন চিকেনের লেগপিসটা মা জোর করে তাঁর পাতে দিয়ে দেয়…
“ভাই খাওয়া না?” এই প্রশ্নের খুব বেশি হ্যাঁ-বাচক উত্তর কখনও দিতে পারেনি সাহেব! বাড়ির ভাড়া, বাবার ওষুধ, ইলেকট্রিক বিল, ইএমআই, ইত্যাদির চাপে কখনও সেভাবে বন্ধুদের ট্রীট দেওয়ার ব্যাপারটাকে আমল দিতে পারেনি সে! এবং বন্ধুরাও ধীরে ধীরে হাসিঠাট্টা থেকে শুরু করে বিদ্রুপে এসে ঠেকে… ক্রমশ কেমন যেন দূরত্ব বাড়তে থাকে সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের সাথেও। ঠিকই আছে, এমন হাড়কিপটে ছেলের সাথে বন্ধুত্ব কে রাখে! খাওয়াতে বললে খুব বেশি দূর গেলে একটা চা! হাজার চাইতেও একটা গোল্ডফ্লেক লাইট খাওয়াতে পারেনি সাহেব। কিন্তু সরকারি চাকরিটা শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় ওঁর! এখন খাওয়াতে বললে আর না বলার দরকার পড়ে না! সাহেবের ফ্রেন্ড-সার্কেল বেড়েছে, ঘুরতে যাওয়া বেড়েছে, মদ খাওয়া বেড়েছে, আর একটা জিনিস বদলেছে – এখন “পয়সা নেই ভাই” বলে লুকিয়ে খাওয়া বন্ধুরা জোর করে ওঁর সিগারেটের টাকা দিয়ে দেয়। গড নোজ হোয়াই! কিন্তু বন্ধুদের ভালোবাসাটা বেড়েছে…
এইতো জীবনের কিছু টুকরো গল্প , যা আমার ,তোমার আমাদের গল্প । বড্ড চেনা তাইনা ???
নতুন সব গল্প , কবিতা পড়তে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে …
কারণ, আমরা গল্প লিখি না
জীবনের গল্প বলি