30+ Best Romantic Bangla Premer Kobita ( বাংলা সেরা প্রেমের কবিতা সমগ্র ) | Valobashar Kobita
প্রেমের কবিতা – প্রেম ও প্রেমের কবিতা পড়তে প্রতিটি মানুষই পছন্দ করেন । আপনি কি ইন্টারনেটে সেরা প্রেমের কবিতা ( Premer Kobita ) বা ভালোবাসার কবিতা (Valobashar Kobita ) খুঁজছেন ? তাহলে বলবো আপনার খোঁজ এখানে শেষ হতে পারে । কারন এই পোস্টে বং কানেকশনের তরফ থেকে রয়েছে বাংলার সেরা কবিদের সেরা কিছু ভালোবাসায় মাখানো সেরা প্রেমের কবিতা । ভালোবাসা আর প্রিয় ভালোবাসার মানুষটির জন্য এই ভালোবাসার কবিতাগুলো আপনার প্রেমকে নিয়ে যাবে এক অন্য আঙ্গিকে ।
Bangla Premer Kobita
বিবাহিতাকে – জয় গোস্বামী
কথা আছে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার ভিতরে বাহিরে – রুদ্র শহীদুল্লাহ
প্রেমিক – জয় গোস্বামী
চন্দরীতি – মহাদেব সাহা
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পাগলী তোমার সঙ্গে – জয় গোস্বামী
একবার ভালোবেসে দেখো – মহাদেব সাহা
প্রেমিক জনের চিঠি – শ্রীজাত
একটি মেয়ের জন্য – রুদ্র গোস্বামী
গোপন প্রিয়া – কাজী নজরুল ইসলাম
হৃদয়ের ঋণ – হেলাল হাফিজ
তুই কি আমার হবি – আনিসুল হক
তোকে নিয়ে এলোমেলো – হাবিব কাশফ
ভালোবাসি ভালোবাসি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তোমার চোখ এত লাল কেন ? – নির্মলেন্দু গুণ
আমি খুব অল্প কিছু চাই – হুমায়ুন আহমেদ
একবার তুমি – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
যদি বাসোই – তসলিমা নাসরিন
আকাশলীনা – জীবনানন্দ দাশ
তুমি – রাজদ্বীপ দত্ত
বিবাহিতাকে
– জয় গোস্বামী
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।
কথা আছে
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে
– রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………
Valobasar Kobita
প্রেমিক
– জয় গোস্বামী
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
ছন্দরীতি
– মহাদেব সাহা
তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।
বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।
সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি
যতো জানি ততো জানি নে।
জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।
পাগলী, তোমার সঙ্গে
– জয় গোস্বামী
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।
অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।
মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান
লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন
পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’ কাটাব জীবন।
এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব
লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।
দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্কার করবে সেল
দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।
কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম
পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।
নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে
ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।
দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।
সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা
হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।
পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।
এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে
এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।
একবার ভালোবেসে দেখো
– মহাদেব সাহা
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো আর
এই মুখে কবিতা ফুটবে না,
এই কণ্ঠ আবৃতি করবে না কোনো প্রিয় পঙ্ক্তিমালা
তাহলে শুকিয়ে যাবে সব আবেগের নদী।
আমি আর পারবো না লিখতে তাহলে
অনবদ্য একটি চরণ, একটিও ইমেজ হবে না রচিত,
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো তবে
কবিতার পান্ডুলিপি জুড়ে দেখা দেবে ঘুরে ঘুরে অনাবৃষ্টি, খরা।
তুমি যদি না তাকাও এই চোখ দেখবে না কিছু
উজ্জ্বল আলোর ভোর ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাবে,
সন্ধ্যাতারা মনে হবে মৃত নিষ্পলক চোখ
যদি ফিরে না তাকাও মর্মে আর পল্লবিত হবে না কবিতা।
তুমি যদি না দাও চুম্বন এই মুখে ফুটবে না ভাষা
মরা গাঙে জাগবে না ঢেউ, দুই তীরে প্রাণের স্পন্দন,
হবে না শস্যের মাঠে শ্রাবণের ব্যাপক বর্ষণ
হৃদয়ে হৃদয়ে আর অঙ্কুরিত হবে না কবিতা, বাজবে না গান।
তুমি যদি আমাকে না ভালোবাসো আর
প্রকৃতই আমি আগের মতন পারবো না লিখতে কবিতা
আমার আঙুলে আর খেলবে না জাদুর ঝিলিক,
এই শাদা পৃষ্ঠা জুড়ে ফুটবে না জুঁই আর চাঁপা।
একবার ভালোবেসে দেখো, একবার কাছে ডেকে দেখো
আবার আগের মতো কীভাবে ফুটাই এক লক্ষ একটি গোলাপ
অনায়াসে কীভাবে আবার অনুভূতি করি সঞ্চারিত,
একবার ভালোসেবে দেখো আবার কীভাবে লিখি দুহাতে কবিতা।
প্রেমিক জনের চিঠি
– শ্রীজাত
ওই কথা কি এভাবে কেউ বলতে পারে?
হঠাৎ করে, সিড়ির বাঁকে, অন্ধকারে
নিশ্বাস নাক গন্ধ পোহায়, চনমিয়া…
ঘুপচি মতাে মুঠোর ভেতর একলা টিয়া
ছটফটাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। চাই না উড়ান?
ঠাকুর ঘরের চাল থেকে পাহাড়চূড়া?
ঠোটের উপর ঘাম মুছে নাও। ডাকছে নীচে।
নখের ঘরে কেটেছে হাত, ওষুধ মিছে।
বুকটুকুনির ওঠানামায় ধুকপুকুনি
জড়িয়ে নেওয়ার মন হলে কে ছাড়ত শুনি?
কিন্তু এখন সবটা ইচ্ছে করছে না যে
হয়তো হঠাৎ উড়ে টিয়া, ভিড়ের মাঝে…
এইটুকু তো অতৃপ্তি দাও প্রেমিক জনে,
একটা চুমু না-খাওয়া থাক, এই জীবনে!
একটি মেয়ের জন্য
– রুদ্র গোস্বামী
একা ফুটপাথ
আলো ককটেল
ভিজে নাগরিক রাত পদ্য।
তুই হেঁটে যাস
কাঁচ কুয়াশায়
জল ভ্রূণ ভাঙা চাঁদ সদ্য।
আমি প্রশ্ন
তুই বিস্ময়
চোখ চশমার নীচে বন্ধ।
ঠোঁট নির্বাক
চাওয়া বন্য
আমি ভুলে যাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব।
জাগা রাত্রি
ঘুম পস্তায়
মোড়া রূপকথা পিচ রাস্তা
পোষা স্বপ্ন
ছিঁড়ে ছারখার
প্রিয় রিংটোন লাগে সস্তা।
তুই সত্যি
আরও সত্যি
তুই শিশিরের কুঁড়ি পদ্ম।
বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
চেনা চার দেয়ালের গদ্য।
গোপন প্রিয়া
– কাজী নজরুল ইসলাম
পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।
নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার ক’রলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক’ জানার অবসর।
গানের পাখী ব’সেছিলাম দু’দিন শাখার’ পর।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক’-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক’ কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হ’তে
একটি পালক প’ড়লে পথে
ভুলে’ প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক’ তাই ভ’রে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য ব’লে উঠবে বাঁশীর বোল।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্ হ’য়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় ল’য়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে র’বে, সেই তো চরম সুখ!
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক’, পরান ভ’রে ক’রে যাব দান।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!
হৃদয়ের ঋণ
– হেলাল হাফিজ
আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর
বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,
একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।
দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।
তুই কি আমার দুঃখ হবি
– আনিসুল হক
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
তোকে নিয়ে এলোমেলো
– হাবীব কাশফ
নিঃসঙ্গতার সাথে সখ্য গড়েছিলাম ভালোই,
তারপর…
চোখে মোটা গ্লাসের চশমা
রুক্ষ চুলের লুকোচুরি
আর তার বন্য হাসির উচ্ছলতা,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো কবিতা,
এলোমেলো বন্য কবিতা।
আগুনঝরা ফাগুনে ঝাপসা চোখে
বাসন্তি শাড়ি জড়িয়ে খুজেছিলি আমাকে
হাজারো ভীড়ের মাঝে,
রঙ্গিন বৈশাখের তপ্ত রৌদ্দুরের নিঃস্বঙ্গতায়
হারিয়ে ফেলেছি তোকে
হাজারো রঙের ভীড়ে,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো আরো একটি কবিতা
এলোমেলো রঙ্গিন কবিতা।
তোর আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল জড়িয়ে
ইচ্ছে ছিলো কাটাবো কতো অলস দুপুর,
তুই চেয়েরবি আমার চোখে
মোটা গ্লাসের চশমার ফাকে,
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো একটি কবিতা
এলোমেলো অলস দুপুরের কবিতা।
একটি বর্ষা পেরিয়ে যায়
অঝোর বর্ষনে বিষন্নতার চাদর হয়ে,
শরতের স্নিগ্ধ বিকেলে
হাটবো কি দুজন আবারো একই ধারে?
অচেনা পথের ধুলো মাড়িয়ে
আঙ্গুলের ফাকে আঙ্গুল জড়িয়ে,
সেই মোটা গ্লাসের চশমা চোখে
পাড় হবে কতো শত গোধূলী বেলা।
ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো গোধুলি মাখা একটি কবিতা,
শত শত কবিতা
এলোমেলো কবিতা
কিছু তুচ্ছ কবিতা।
ভালোবাসি, ভালোবাসি
– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ধরো কাল তোমার পরীক্ষা,
রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাত করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম-
ভালবাসো?
তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো ক্লান্ত তুমি,
অফিস থেকে সবে ফিরেছ,
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত পীড়িত,
খাওয়ার টেবিলে কিছুই তৈরি নেই,
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে
ঘর্মাক্ত আমি তোমার
হাত ধরে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো দুজনে শুয়ে আছি পাশাপাশি,
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শতব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দুজনে,
মাথার উপর তপ্ত রোদ,
বাহন পাওয়া যাচ্ছেনা এমন সময়
হঠাত দাঁড়িয়ে পথ
রোধ করে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার
দিকে তাকিয়ে
কাঁধে হাত দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো শেভ করছ তুমি,
গাল কেটে রক্ত পড়ছে,
এমন সময় তোমার এক ফোঁটা রক্ত হাতে নিয়ে যদি বলি- ভালবাসো?
তুমি কি বকা দেবে?
নাকি জড়িয়ে তোমার গালের রক্ত আমার
গালে লাগিয়ে দিয়ে খুশিয়াল গলায় বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
ধরো খুব অসুস্থ তুমি,
জ্বরে কপাল পুড়েযায়,
মুখে নেই রুচি,
নেই কথা বলার অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে তোমার মুখের
দিকে তাকিয়ে যদি বলি-ভালবাসো?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম শ্বাস আমার শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..
ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,
প্রচন্ড যুদ্ধে তুমিও অংশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি তোমায়
জিজ্ঞেস করলাম-
ভালবাসো?
ক্রুদ্ধস্বরে তুমি কি বলবে যাও….
নাকি চিন্তিত আমায় আশ্বাস দেবে, বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…….
ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ
তুমি,
দেরি হয়ে যাচ্ছে,বেরুতে যাবে,
হঠাত বাধা দিয়ে বললাম-ভালবাসো?
কটাক্ষ করবে?
নাকি সুটকেস ফেলে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি
ধরো প্রচন্ড ঝড়,উড়ে গেছে ঘরবাড়ি,
আশ্রয় নেই
বিধাতার দান এই পৃথিবীতে,
বাস করছি দুজনে চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার
বুকে মাথা রেখে যদি বলি ভালবাসো?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি আমার মাথায় হাত রেখে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি..
ধরো সব ছেড়ে চলে গেছ কত দুরে,
আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে আছ
হতভম্ব আমি যদি চিতকার করে বলি-
ভালবাসো?
চুপ করে থাকবে?
নাকি সেখান থেকেই
আমাকে বলবে,
ভালোবাসি, ভালোবাসি…..
যেখানেই যাও,যেভাবেই থাক,
না থাকলেও দূর
থেকে ধ্বনি তুলো,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি..
দূর থেকে শুনব তোমার কন্ঠস্বর,
বুঝব তুমি আছ, তুমি আছ
ভালোবাসি,ভালোবাসি……..!
তোমার চোখ এতো লাল কেন?
– নির্মলেন্দু গুণ
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।
আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’
আমি খুব অল্প কিছু চাই
– হুমায়ুন আহমেদ
আমাকে ভালবাসতে হবে না,
ভালবাসি বলতে হবে না.
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ
নিয়ে আমার ঠোঁট
দুটো ছুয়ে দিতে হবে না.
কিংবা আমার জন্য রাত
জাগা পাখিও
হতে হবে না.
অন্য সবার মত আমার
সাথে রুটিন মেনে দেখা
করতে হবে না. কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও
খেতে হবে না. এত
অসীম সংখ্যক “না”এর ভিড়ে
শুধু মাত্র একটা কাজ
করতে হবে আমি যখন
প্রতিদিন এক বার “ভালবাসি” বলব
তুমি প্রতিবার
একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে একটু
খানি আদর মাখা
গলায় বলবে “পাগলি”
একবার তুমি
– শক্তি চট্টোপাধ্যায়
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর–
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর ।
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল–ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি ।
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই–পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল–
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় ।
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার । আমরা ঘরবাড়ি গড়বো–সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো ।
রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে-ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো ।
যদি বাসোই
– তসলিমা নাসরিন
তুমি যদি ভালোই বাসো আমাকে, ভালোই যদি বাসো,
তবে বলছো না কেন যে ভালো বাসো! কেন সব্বাইকে জানিয়ে দিচ্ছ না যে ভালোবাসো!
আমার কানের কাছেই যত তোমার দুঃসাহস!
যদি ভালোবাসো, ওই জুঁইফুলটি কেন জানে না যে ভালোবাসো!
ফুলটির দিকে এত যে চেয়ে রইলাম, আমাকে একবারও তো বললো না যে ভালোবাসো!
এ কীরকম ভালোবাসা গো! কেবল আমার সামনেই নাচো!
এরকম তো দুয়োর বন্ধ করে চুপি চুপি তুমি যে কারও সামনেই নাচতে পারো।
আমি আর বিশ্বাস করছি না, যতই বলো।
আগে আমাকে পাখিরা বলুক, গাছেরা গাছের পাতারা ফুলেরা বলুক,
আকাশ বলুক, মেঘ বৃষ্টি বলুক, রোদ বলুক চাঁদের আলো বলুক, নক্ষত্ররা বলুক,
পাড়া পড়শি বলুক, হাট বাজারের লোক বলুক, পুকুরঘাট বলুক, পুকুরের জল বলুক যে
তুমি ভালোবাসো আমাকে!
শুনতে শুনতে যখন আর তিষ্ঠোতে না পারবো তখন তোমাকে ওই চৌরাস্তায় তুলে একশ
লোককে দেখিয়ে চুমু খাবো, যা হয় হবে।
ভালোবাসা কি গোপন করার জিনিস! দেখিয়ে দেখিয়েই তো
শুনিয়ে শুনিয়েই তো ভালোবাসতে হয়।
ভালোবাসা নিয়ে আমরা জাঁকালো উৎসব করবো, ধেই ধেই নাচবো, নাচাবো,
সুখবর বুঝি আমরা চারদিকে ঢোল বাজিয়ে জানিয়ে দিই না!
জুইঁফুলটি যেদিন বলবে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, সেদিনই কিন্তু তোমাকে বলবো যে
তোমাকেও বাসি, তার আগে একটুও নয় !
আকাশলীনা
– জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে – আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস –
আকাশের ওপারে আকাশ।
তুমি
– রাজদ্বীপ দত্ত
যখন আঁধারেরা নামে,
তোমার প্রতিক্ষার শোকগাথায়-
তখন আমি অর্ধনিমগ্ন ।
গলা চিপা ঘুপচি আঁধারে
স্মৃতির জাবর কাটি ।
ওই জনাকীর্ণ নিস্তব্ধতায়
তুমি মনে রেখো আমায় ।
আলোময় ওই বিশাল গোলকধাধায় হয়তো হারাবো
কিন্তু তুমি মনে রেখো আমায় ।
আবার যখন নিভে যাবে আলো ;
যখন ওই অলস আলোটাকে-
বুভুক্ষের মতো গিলবে আঁধার
“রাতজাগা পাখি”,
তুমি ভুলে যেয়ো না আমায় ।
যেদিন তোমার মনের চাতক পাখিটা
মুক্ত হয়ে উড়বে,
ওই সাদা মেঘেদের দলে-
তুমি মনে রাখবে তো আমায়!
গুটিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত
শামুকের মতো
হয়তো খোলসবন্দি হবো শীঘ্রই!
সেদিন
তুমি ভুলে যাবে নাতো আমায়?
ভালবাসার সময় তো নেই
– রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।
ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।
কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।
নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।
তোমার দিকে ফিরবো কখন
বন্দী আমার চোখ
পাহারা দেয় খল সামাজিক নখ।
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা
– শহীদ কাদরী
শুধু একটি বার বল ভালবাসি
তোমাকে আর কোনদিন ভালবাসতে হবে না।
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না।
আমার জন্য তোমকে নিশি রাতে পা ভিজাতে হবে না।
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি।
সবাই জানুক কেউ আমাকে ভালবেসেছিল।
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিলো।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
কাছে আস বা না আস, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটি বার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউতো অন্তত একটি বার হলেও প্রাণের ছোয়া দিয়েছিল।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য হলেও শুকিয়ে যাওয়া নদীতে
আবার ঝড়ের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
এর জন্য তুমি কি চাও?
হয়তোবা আমি তোমাকে আকাশের চাঁদটি এনে দিতে পারবোনা
পূর্ব দিকে উঠা সূর্যটিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা।
কিন্তু পারবো তোমার জন্য আমি রজনীর পর রজনী জেগে থাকতে
পারবো আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
হয়তো আমার এই শুন্য হৃদয়ে এক সময় কেউ স্থান করে নিবে
কিন্তু তুমিতো আর আমার হলে না।
কি হবে ভরে এই শুন্য হৃদয় ?
আমি তো চাইনি অন্য কেউ এসে আমার হৃদয়ে গোলাপ ফুটাক
পোড়া মন আবার সতেজ হয়ে উঠুক।
আমি চেয়েছি শুধু তোমার মুখ থেকে একটি বার হলেও
প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠুক একটি শব্দ “ভালবাসি”
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
বউ
– নির্মলেন্দু গুণ
কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে ।
একদিন আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
বাজে কথা। আজ বলি, হবে, বউ থেকে হবে ।
বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম, মাটি,লোহা,
সোনার কবিতা, —কী সে নয়?
গোলাপ, শেফালি, যুঁই, ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
ভালোবাসা, ভাগ্য, ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, দুইজন্ম এবার মিশেছে, দেখা যাক ।
হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম, গাঁজা, মদ, নৈঃসঙ্গ আমার
ভালোবেসে হে তরুণ, তোমাকে দিলাম, তুমি নাও ।
যদি কোনদিন বড় কবি হও, আমার সাফল্য
কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে ।
আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে ।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে ।
তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান, মুখোমুখি,
অনায়াসে আমি তা বলি না, বলে যারা জানে দূর থেকে ।
আমি কাছে থেকে জানি, বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি, তার হাতে তুলে ।
অনায়াসে আমিও পারিনি । ক্রমে ক্রমে, বিভিন্ন কিস্তিতে
আমি তা দিয়েছি, ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক ।
প্রথমে আত্মার দ্যুতি, তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা ।
স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে, তারপর
পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি ।
সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার ।
বনলতা সেন
– জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
যদি ভালবাসা পাই
– রফিক আজাদ
যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাব
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।
অনেক সুন্দর কালেকশন ☺