রথযাত্রার ইতিহাস – রথযাত্রা 2024 – পুরীর রথযাত্রার ইতিহাস – History of Rath Yatra of Puri

sudiproy877
5 Min Read

রথযাত্রার ইতিহাস

পুরান থেকে আমরা জানতে পারি রথ যাত্রার ইতিকথা । স্কন্দ পুরানে আমরা পাই যে ইন্দ্রদ্যম্ন নামে এক রাজা ছিলেন উত্কল রাজ্যে (বর্তমান উড়িষ্যা) তিনি ছিলেন পরম ভক্ত । তিনি একদিন স্বপ্নাদিষ্ট হন একটি মন্দির নির্মানের জন্যে ।
পরে দেবর্ষী নারদ এসে জানন স্বয়ং ব্রহ্মার ও তাই ইচ্ছা ,তিনি নিজে সেটা উদ্বোধন করবেন । এভাবে কাজ হল এবং নারদ বললেন বহ্মাকে আপনি নিমন্ত্রন করুন । পরে রাজা ব্রহ্মলোকে গেলেন এবং নিমন্ত্রন করলেন ।কিন্তু ব্রহ্ম লোকের সময় এর
সাথে তো পৃথিবীর মিল নাই ।পৃথীবিতে কয়েক শত বছর পার হয়ে গেছে । ফিরে এসে রাজা দেখলেন তাকে কেউ চেনে না ।

রথযাত্রা কি ও কেন ?

Loading...
 যা হোক তিনি আবার সব করলেন । দৈবভাবে রাজা জানতে পারলেন সমুদ্র সৈকতে একটি নিম কাঠ ভেষে আসবে ,সেটা দিয়েই হবে তৈরি দেব বিগ্রহ ।  পরের দিন পাওয়া গেল সেই নিম কাঠের গুল বা দারুব্রহ্ম । সেটাকে নিয়ে আসা হল প্রাসাদে ।
আরো পড়ুন, রথযাত্রার ছবি
এদিকে মূর্তি তৈরি শুরুর কিছু দিন পর রাজা কৌতুহল সংবরন করতে না পেরে মন্দিরে যান এবং দেখেন কেউ নেই ভিতরে আর আমরা যে রূপে এখন জগন্নাথ দেব কে দেখি সেই মূর্তিটি পড়ে রয়েছে । পরে ঐ ভাবেই স্থাপিত হয় মূর্তি । ইন্দ্রদুম্ন রাজা জগনাথ দেবের মূর্তিতেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পরবর্তিতে শ্রীকৃষ্ন এবং জগনাথ দেব একই সত্ত্বা চিন্তা করে একই আদলে তার পাশে ভাই বললাম এবং আদরের বোন সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয় । আমাদের এখানে এক রথ যাত্রা হলেও পুরিতে তিনটি রথে হয় । প্রথমে বলরাম তার পর সুভদ্রা এবং শেষে জগন্নাথ । ১১৯৯ খ্রীষ্টাব্দে
রাজা অনঙ্গভীমদেব তিন রথের রথ যাত্রা প্রচলন করেন ।
জগন্নাথদেব :
জগন্নাথ দেবের মূর্তির রুপ নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন আছে ।কেন এই রূপ তার । এখন তারই কিছু বিশ্লেষন দেখা যাক । কঠোপনিষদে বলা হয়েছে না আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেবতু । এই দেহই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী । আর ঈশ্বর থাকেন অন্তরে । রথ যাত্রার রুপক কিন্তু এমনই ।যাহোক তিনি আমাদের অন্তরে থাকেন । তার কোন রুপ
নেই । তিনি সর্বত্র বিরাজিত অর্থাত্ ঈশাব্যাসমিদং । বেদ বলছে আবাঙমানষগোচর মানে মানুষের বাক্য এবং মনের অতিত । আমরা মানুষ তাই তাকে মানব ভাবে সাজাই । এবিষয়ে কৃষ্ন যজুর্বেদিয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে –
অপাণিপাদো জাবানো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্নঃ ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্ ।।
অনুবাদ :
তার লৌকিক হস্ত নাই ,অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্রহন করেন । তার পদ নাই অথচ সর্বত্রই চলেন । তার চোখ নাই অথচ সবই দেখন ।কান নাই কিন্তু সবই শোনেন ।তাকে জানা কঠিন ,তিনি জগতের আদিপুরুষ ।এই বামনদেব ই বিশ্মাত্মা ,তার রূপ নেই আকার নেই ।উপনিষদের এই বর্নানার প্রতিকি রুপই হল পুরীর জগন্নাথদেব ।তার পুরো বিগ্রহ তৈরি
সম্ভব হয়নি .কারন তার রুপ তৈরিতে আমরা অক্ষম ।শুধু প্রতিককে দেখান হয়েছে মাত্র ।তাছাড়া ও আর একটি পৌরানিক কাহিনী আছে সেটা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ন ১২ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করেন ,তারপর তিনি আর বৃন্দাবনে আসেন নি । কিন্তু একবার রথে করে পার্শ্ববর্তী গ্রামে এসেছিলেন বৃন্দাবনবাসি দের সাথে দেখা করতে । বৃন্দাবনবাসিরা কৃষ্নকে প্রানাধিক ভালবাসত তাই তার বিরহে তার প্রিয় জনদের অবস্থা দেখে কিছুক্ষনের জন্যে কৃষ্ন বলরাম সুভদ্রা তিন জন নির্বাক হয়ে যান এই ভালবাসা দেখে ।তখন তাদের অমূর্ত রুপ ফুটে ওঠে । এই রূপই বর্তমান জগন্নাথ দেবের রুপ ।

রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম

রথযাত্রা এবং সামাজিক ঐক্য :
পুরীকে পুরুষত্তোম ক্ষেত্র বলা হয় ।এখানকার রথ যাত্রায় দিন কোন ভেদা ভেদ থাকে না । ধনী ,দরিদ্র ,উচু , নিচু ,সৃষ্প ,অসৃষ্প সবাই এক কাতারে ভগবানকে নিয়ে রাজ পথে নামে ।আর আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভগবান সবার এবং সবাই কে একত্রিত হতে ।কারন ভগবান সকলের ,ভগবানে সবার সমান অধিকার ।গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সবাইকে নিয়ে কীর্তন করতে রথযাত্রা অংশ নিতেন । তাছাড়া প্রভাষখন্ড থেকে জানা যায় যে পুরিতে অভক্তু থেকে বিগ্রহ দর্শন করা যাবে না । আগে প্রসাদ থেতে হবে পরে দেব বিগ্রহ দর্শন ।এখন ও এ নিয়ম চলে আসছে ।পুরীকে শঙ্খক্ষেত্র ও বলা হয় কারন মানচিত্রে এক শঙ্খের মত দেখতে লাগে ।
এটা অতি সংক্ষেপে বর্ননা করলাম ।সকলে ভাল থাকুক জগন্নাথ দেবের কৃপা প্রাপ্ত হোক ,এই
প্রার্থনা ।সবাই কে আবার ও রথযাত্রার শুভেচ্ছা ।
জয় জগন্নাথ ,জয় সুভদ্রা ,জয় বলরাম ।

Share This Article