একটি ভিন্ন প্রেমের গল্প – Bangla Premer Golpo 2023 – প্রেমের গল্প

Bongconnection Original Published
5 Min Read

 একটি ভিন্ন প্রেমের গল্প – Bangla Premer Golpo 2023 – প্রেমের গল্প

একটি ভিন্ন প্রেমের গল্প - Bangla Premer Golpo 2023 - প্রেমের গল্প
Loading...

Bangla Premer Golpo

একটি ভিন্ন প্রেমের গল্প


প্রেম শব্দটার সাথে আমার পরিচয় নেই বললেই হয়। এই প্রেম হলো নারী পুরুষের
প্রেম। আগে আমি আমার পরিচয় দিই। আমি রমলা সেন। বয়েস প্রায় পঞ্চান্ন। আমার
দুই সন্তান। একটি মেয়ে আর একটি ছেলে।দুজনেই বিবাহিত এবং দুজনেই বিদেশে
থাকে।আমার স্বামী মিস্টার সেন মারা গেছেন বছর কুড়ি। শ্রীরামপুরের এই শরিকি
বাড়িতে আমাদের অংশটা নিয়ে আমি একাই থাকি। না,ভুল বললাম।আমার সাথে থাকে আমার
সর্বক্ষণের সঙ্গী রিতা। আমার ঘরের বাইরের সব কাজের সঙ্গী ও।কোন ছোটবেলা থেকে
এই সংসারে থাকে। গ্রামে নিজের বাড়িতে যেতেই চায়না কোনোদিন। গেলেও ওই
একবেলা।
  প্রথমেই বলেছিলাম প্রেম ব্যাপারটার সাথে আমার সেরকম পরিচয় নেই। তবে
খুব ইচ্ছে করে,সামনের জন্মে একটা চুটিয়ে প্রেম করে দেখবো,কেমন অনুভূতি হয়।
আমার বিয়ে হয় ষোলো বছর বয়সে।মাধ্যমিক পাশ করার পর ,বাপ মা মরা এই ভাগ্নিকে
মামা মামী কিছুতেই আর রাখতে চাইছিলেন না। তাই কোনোদিন না দেখেই দ্বিগুণ
বয়েসের এক পাত্রের সাথেই আমার বিয়ে দিয়ে,আমাকে বিদায় করে তারা স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন।

সেরা প্রেমের গল্প

Loading...
      বিয়ে,বর সংসার ,প্রেম ভালোবাসা…. এগুলো ভালোভাবে
বোঝার আগেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো। স্বামী লোকটাকে ভীষণ ভয় পেতাম।খুব গম্ভীর
রাশভারী একজন মানুষ। অ্যাডভোকেট ছিলেন। বাড়ি থাকলে বইয়ের মধ্যে ডুবে
থাকতেন। মনে পড়েনা কোনোদিনও কোনো ভালোবাসার কথা ওনার মুখ থেকে শুনেছি কিনা।
আমার সাথে দেখা হতো সেই রাতের বেলায়।এত বড় সংসারের এক কোনায় পরে থাকতাম ।
সারাদিন কাজকর্ম করতাম, জায়েদের সাথে হয়তো সিনেমা দেখতে যেতাম। অথবা পুজোয়
ঠাকুর দেখতে।আমার স্বামীর কোনো সময় ছিলনা আমাকে দেবার।সময় কেনো, কথাই হতনা
আমাদের। রাতে একমাত্র শুতে যেতাম। সব কাজ সেরে যখন ভয়ে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে
বিছানায় যেতাম,উনি হয়তো তখন বইতে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতেন । বলতেন,তুমি
ঘুমিয়ে পরো।আমার দেরী আছে।
 হ্যা,প্রকৃতির নিয়মেই কাছে আসতেন। দুই সন্তান দিয়েছেন আমাকে। বাস্,ওই
পর্যন্তই। ছেলে মেয়ে হওয়ার পর বিছানা আলাদা হয়েছে। আমি ছেলে মেয়ে নিয়ে
পাশের ঘরে শুতাম। বিবাহিত জীবন এই পর্যন্তই।
   উনি মারা যাবার পর ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।ওরা যে যে যার
যার জীবনে প্রতিষ্ঠিত। ছেলে অনেকবার বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।ওর সাথে
থাকতে বলেছিল।কিন্তু আমি যাইনি। যতদিন পারি থাকি। তারপর তো যেতেই হবে একটা
সময়।

Premer Golpo In Bengali

    আমার সময় কাটে ছেলে মেয়ে নাতি দের সাথে ফোনে ভিডিও কলে কথা
বলে।বাগান করে।আর আমার পুজোআর্চা নিয়ে।
আরো পড়ুন,
    কিছু মাস আগে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই।এক ভদ্রলোকের।
সাধারণত আমি এরকম কোনো রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করিনা। কিন্তু প্রোফাইল পিকচারটা
এত সুন্দর ছিল,শ্রী রামকৃষ্ণ দেব ,মায়ের ছবি।আর বেলুড় মঠ। কি ভেবে একসেপ্ট
করে ফেললাম।
 ভাবলাম প্রোফাইল টা একটু দেখি তো। দেখলাম ভদ্রলোক আমার শহরেই
থাকেন।বয়েস 62 . অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। বিপত্নীক। একটি ছেলে।প্রচুর ছবি ছেলে
বৌমা নাতনির সাথে। খুব ভালো লাগলো দেখে।
পরদিন সকাল বেলায় দেখলাম মেসেঞ্জারে একটা স্বামীজির ছবি পাঠিয়েছেন নিচে
সুপ্রভাত লেখা।আমিও সুপ্রভাত লিখলাম। এরকম চলতেই থাকলো। আস্তে আস্তে মাস
দুয়েকের মধ্যেই আমরা মেসেজে অনেক কথা বলতে লাগলাম। কথার বেশিরভাগটাই জুড়ে
থাকতো শ্রী রামকৃষ্ণের কথা,শ্রী মায়ের কথা। আর সন্তানদের কথাতো থাকতই।
   একটা ভীষণ ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হলো।সবই ফোনের মাধ্যমে।
ইম্পর্ট্যান্ট ওষুধ খাওয়ার কথা উনি মনে করিয়ে দিতেন। আমার একটু
অসুস্থতায়  উনি বার বার খোঁজ নিতেন,কেমন আছি।আমিও ওনার খোঁজ নিতাম।যদিও
উনি কোনো সময় বলতেন না যে উনি খারাপ আছেন।সবসময় বলতেন উনি একদম ফিট।
   প্রত্যেকদিন সকালে একটু দেরীতে ওনার সুপ্রভাত মেসেজ আসলে মনটা
কেমন যেন করতো। বার বার ফোনটা দেখি।এই বোধ হয় মেসেজ এলো। তারপর যখন মেসেজ
করতেন,খুব অভিমান  করতাম। কেমন একটা নেশার মত হয়ে গেল। নিজেকে কেমন খুব
ভালো লাগতে শুরু করলো। মনে হলো আমি সেই কৈশোরে ফিরে গেছি ।জানিনা এটাকে কি
বলে। এটাকেই কি প্রেম বলে? কি জানি। এই অনুভূতি তো আমার এত বছরের জীবনে
কোনদিন হয়নি। এটাই আমার জীবনের হয়তো প্রথম প্রেমের ছোঁয়া।

ভালো প্রেমের গল্প

     এতক্ষণ আপনারা ভাবছেন তো,সব কিছু ছিল ছিল বলছি কেনো।তবে
কি এখন আর নেই? সত্যিই আমার জীবনে সেই ছোঁয়া লাগানো মানুষটা আর নেই।
আমাকে কোনোদিন জানতে দেননি যে উনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। ওনার আয়ু
খুব কম। কিছুদিন পর হটাৎই ওনার মেসেজ আসা বন্ধ হলো। পাগলের মত আমি মেসেজ করে
গেলাম।কেউ সিন করলনা মেসেজ। বাধ্য হয়ে ফোন করলাম। ওনার ছেলে বললো বাবা মারা
গেছেন তিনদিন আগে।ক্যান্সারের শেষ স্টেজে ছিলেন। এবার বুঝলাম,একবার দেখা করতে
চেয়েছিলাম,উনি রাজি হননি কেনো। উনি তো শয্যাশায়ী ছিলেন। আমার সেই আক্ষেপটা
উনি মিটিয়ে দিয়ে গেছেন। বলতে লজ্জা নেই আমার প্রথম প্রেম ওই মানুষটাই।

আরো পড়ুন,

Share This Article