সেরা প্রেমের গল্প – Sera Premer Golpo Online Read

Bongconnection Original Published
24 Min Read

 সেরা প্রেমের গল্প – Sera Premer Golpo Online Read

সেরা প্রেমের গল্প - Sera Premer Golpo Online Read
Loading...


সেরা প্রেমের গল্প

প্রাণ চায় চক্ষু না চায় 
 – শুভ্রা দত্ত
গ্র্যান্ড ভাইভার পরের ছ মাস একটা ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে মুকুলিকাদের
কলেজ। গত তিন চার বছর হঠাৎ করে যে কি হলো, বেশ কিছু চেনা সংস্থা চুপচাপ জাস্ট
অ্যাভোয়েড করে যাচ্ছে ক্যাম্পাসিং ইন্টারভিউ। নিশ্চয়ই হিডেন রিজন কিছু আছে,
কিন্তু সেই কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে কেউ চায় না। তাই এই
ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা। ঘুরিয়ে নাক দেখানো আর কি। কারণ রাজ্যের বেস্ট
স্টুডেন্টগুলোর সঙ্গে ছ মাস কাজ করে যেকোন সংস্থাই বুঝে যায় তারা কি? আর তাই
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেই সংস্থা থেকেই জব অফার পেয়ে যাচ্ছে সেখানের
ইন্টার্নরা। 

প্রেমের গল্প রোমান্টিক

Loading...
মুকুলিকা সিংহ রায়, রাজ পরিবারের রক্ত বইছে তার শরীরে, ভীষণ সাহসী,
বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু শান্ত। বাইরে থেকে দেখে কারো বোঝার উপায় নেই কি চলছে ওর
মনের ভিতর। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো তার কাজল কালো দুটো চোখ, ঠিক যেন গভীর
দিঘি। বেশির ভাগ সময় চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখলেও মাঝে মাঝেই ওই চোখ দুটোই ওকে
বিপদে ফেলে। হাজার চেষ্টার পরেও কিছু ছেলে চলেই আসে সামনে। আর এবারেও ঠিক
সেইরকমই এক ঘটনায় বিরক্ত হয়ে গ্র্যান্ড ভাইভার দিনই পরীক্ষা হয়ে যেতেই দুপুরের
বাস ধরে মুকুলিকা। ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করতে গেলে বিকেল হয়ে যাবে, পৌঁছতে
পৌঁছতে রাত। 


কিছুদিন ধরেই সৌমাল্যর হাবভাব ঠিক সুবিধের লাগছিলো না মুকুলিকার। তাই গম্ভীর
হয়ে গিয়েছিলো আরেকটু বেশি, কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হলো না। গ্র্যান্ড ভাইভা শেষ
হয়েছে কি হয়নি, একটা আর্চির গ্রিটিংস কার্ড, একটা গ্রিন কালারের ফাউনটেন পেন
দিয়ে প্রোপোজ করেই দিলো ও। আর যে দেরি করা যায়না, এবার তো সব এক এক জনের এক
একটা আলাদা আলাদা পৃথিবী হয়ে যাবে আর সেখানে যদি হারিয়ে যায় মুকুলিকা! 
আরো পড়ুন,
বন্ধুর সঙ্গে তো খারাপ ব্যবহার করা যায়না, তাই ঠান্ডা মাথায় ভালো করে সৌমাল্যকে
বোঝাতে শেষ পর্যন্ত সক্ষম হলেও মুকুলিকা দেখে ওর কপালের দু দিকের রগ দপদপ করছে।
কেন জানেনা প্রেম, বিয়ে এই ব্যাপারগুলোকে মুকুলিকার মনে হয় খুব আর্টিফিসিয়াল,
খুব অযৌক্তিক। শুধু যেন কিছু সমঝোতা, কিছু মানিয়ে চলা, কিছু মেনে নেওয়া। তাই এই
প্রেম প্রেম অনুভূতিকে কখনো নিজের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয়নি ও। আর তাই আজ
গ্র্যান্ড ভাইভার পরেই বাড়ি ফেরার বাসে ক্লাস টপার মুকুলিকা। 
ওহ্, বাড়ির বিছানার মজাই আলাদা, এদিক ওদিক করতে করতে ঘড়ির কাঁটা ন টা ছুঁয়ে
ফেলেছে। যদিও মুকুলিকার ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেকক্ষণ, কিন্তু কিছুতেই বিছানা ছেড়ে
উঠতে ইচ্ছে করছে না। অদ্ভূত এক কুঁড়েমি আজ পেয়ে বসেছে তাকে। এর মধ্যে মা দুবার
ডেকে গেছেন। টিফিন খাওয়ার টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে, এবার আর কখন টিফিন খাবে কখন
দুপুরের খাবার। বাবা উঁকি মেরে দুবার দেখে গেছেন, কিন্তু আজ অফিস আছে তাই
ওনাকেও তো রেডি হতে হবে। এই সময় ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো টেলিফোন। 
 মিষ্টু তোর ফোন, মায়ের ডাকে এক ছুটে ড্রইং রুমে মুকুলিকা। ল্যান্ড লাইনে
আবার কে ফোন করলো? ভাবতে ভাবতে ফোনটা শুধু ধরার অপেক্ষা, ওদিক থেকে তিন চারটে
ঝড় একসঙ্গে আছড়ে পড়লো। প্রিয়া, বনানী, সৌমি, নন্দিনী ।
তোর কি সাধারণ বোধ বুদ্ধি সব হাওয়া হয়ে গেছে? 
কেন রে? আমি কি করলাম? বেশ অবাক মুকুলিকা। 
ফোনটা নিয়ে দেখ, ক টা মিস কল আছে? 

এতক্ষণে মনে পড়ছে মুকুলিকার। কলেজে ঢোকার আগে সাইলেন্ট করে রেখেছিলো ফোনটা, আর
তারপর ওই ঘটনা। তালে গোলে একেবারে ভুলে গেছে ঠিক করতে। 

সরি , এক্সট্রিমলি সরি রে। খুব ভুল হয়ে গেছে। বলতে বলতেই মুকুলিকা শুনতে পায়
নন্দিনীর গলা। 
সরি পরে বলবি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়, আজকেই সিলেকশন ডেট, কোথায় তুই
ইন্টার্নশিপ করতে চাস তার। সংস্থাগুলো তো আগে থেকেই লিস্ট পাঠিয়ে দিয়েছে, কে
কজন নেবে, তার মধ্যে সবাই তো প্রথমেই ভালোগুলো বেছে নেবে, বুঝতে পারছিস তো কি
বলছি? নে এখন ফোন রাখ, আর রেডি হয়ে বেরিয়ে আয়, বলে ফোন কেটে দেয় ওরা। 
মা, তাড়াতাড়ি কিছু খেতে দাও, আমায় কলেজে আজ যেতেই হবে, বলতে বলতে ছুটে ওয়াশরুমে
ঢোকে মুকুলিকা। কী করে যে এতো বড়ো কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো? নিজের ওপর
নিজের রাগ হচ্ছে এখন। আর তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে মায়ের প্রশ্ন। কেন, কি, কখন,
কোথায়, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে ডাইনিং
টেবিলে এসে বসলো মুকুলিকা। খেতে খেতেই যতোটা সম্ভব মাকে বুঝিয়ে বেরিয়ে এলো
ও। 

খুব রোমান্টিক গল্প

এই মুহূর্তে ট্রেন নেই, বাসও নেই ডিরেক্ট। ব্রেক করে করে যেতে হবে। তেমনি চড়া
রোদ। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই, যেতেই হবে। কী ভীমরতি যে ধরেছিলো কালকে। নিজেকে
নিজে বকতে বকতেই যে বাসটা এলো তাতে চেপে বসলো মুকুলিকা, ঠিকঠাক গেলে দুপুর
একটার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবে। 
কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয় আর কি, ঠিক শহরে ঢোকার আগে বাসের একটা চাকা হয়ে গেলো
পাংচার। আর এমন জায়গায় যেখান থেকে আর কিচ্ছু পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। ও
যখন ভয়ানক অস্থির হয়ে উঠেছে তখন হঠাৎ করেই যেন ঈশ্বরের দূত হয়ে এলেন এক অটোর
দাদা। ওদের কলেজের রুটেই ওনার যাতায়াত তাই মুখ চেনা চেনে মুকুলিকার, বহুবার ওর
অটো করে ওরা হস্টেল থেকে কলেজ বা কলেজ থেকে হস্টেল এসেছে। কিন্তু ওর বাড়ি
এদিকে হওয়ায় এখন এদিক থেকে যাচ্ছে।
মুকুলিকা তো যেন হাতে চাঁদ পেলো। চুপ করে উঠে বসে পড়লো অটোতে। সকাল থেকে দৌড়
ঝাঁপ, ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবে কিনা তার টেনশন, বেরোবার সময়ে তাড়াতাড়িতে প্রায়
কিছু না খেতে পারায় প্রায় খালি পেট, সবকিছু মিলিয়ে বেশ কাবু করে ফেলেছে ওকে।
মাথাটা মাঝে মধ্যেই হালকা টাল মাটাল হয়ে যাচ্ছে, এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করলো
মুকুলিকা। 
দিদিভাই চলে এসেছি, অটো দাদার ডাকে চোখ খুলে মুকুলিকা দেখে ওরা কলেজের সামনে
দাঁড়িয়ে, ঘড়ি বলছে তখন প্রায় দেড়টা। অটো দাদাকে ভাড়া মিটিয়ে অনেক ধন্যবাদ
জানিয়ে প্রায় দৌড়ে অফিসে এসে দেখে টিফিন টাইম শুরু হয়ে গিয়েছে। সবাই এক একটা
গ্রুপ করে করে ভাগাভাগি করে এ ওর টিফিন খাচ্ছেন, সবার মুখেই এক শান্তির হাসি।
ঠিক এই সময়টাতে সবাই প্রায় সাংসারিক জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়, তাই এই
সময়টায় আর কাওকে বিরক্ত করতে মন চাইলো না মুকুলিকার। 
কিন্তু ও না চাইলে কী হবে, দু মিনিটের মধ্যেই সবাই প্রায় দেখে ফেললো ওকে, কারণ
যখন থেকে অফিসের কাজ শুরু হয়েছে তখন থেকে তো সবার চোখ ওকেই খুঁজছে। একটার পর
একটা ভালো ভালো সংস্থার সিট যখন ভর্তি হয়ে যাচ্ছে, তখন তো গুঞ্জনে কান পাতলে
একটা কথাই শোনা যাচ্ছে, মুকুলিকা কোথায়? কারণ সবাই চায় একটা ভালো জায়গায় যেন
যেতে পারে ও। আর তাই সুধীর দা তাড়াতাড়ি করে টিফিন বক্স গুছিয়ে ওকে ডাকেন ওনার
টেবিলে। 
প্রথমে তো এক প্রস্থ বকুনি খেতেই হবে, জানাই ছিলো মুকুলিকার। আর তাই হলো
।কিন্তু তার সঙ্গে জুটলো একটা মিষ্টি আর এক গ্লাস জল, যেটা এই মুহূর্তে সত্যিই
খুব দরকার ছিলো ওর। 
শোনো মুকুলিকা, নাম করা চেনা সংস্থা গুলোতে একটাও সিট আর খালি নেই। কিন্তু তাতে
মনে হয় তোমার শাপে বর হয়েছে। একটা নতুন সংস্থা, নাম জানেনা তোমাদের মতো
স্টুডেন্টরা। কিন্তু যারা এই লাইনে আছে তারাই জানে, কীভাবে তড়তড় করে উঠছে ওর
গ্রাফ। ওরা একজনকেই নেবে, তাই তোমার কথা ভেবেই কাওকে কিছু বলিনি ওর সম্বন্ধে।
তুমি যাও, দেখবে খারাপ লাগবে না। 
আর তো কিছু করারও নেই, অগত্যা সব ফরমালিটিস পূর্ণ করে হস্টেলে ফিরে আসে
মুকুলিকা সৌমি, বনানীদের সঙ্গে, যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো এতক্ষণ ধরে ওর
জন্যে অফিসের বাইরে । 
অফিসিয়ালি হস্টেল ছেড়ে দেওয়ার কথা ওদের, কিন্তু আরো ছ টা মাস ওদের থাকতে দেবে
কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ইন্টার্নশিপের জন্য। তাই আরও ছ মাস রাতটুকু তো পাবে একে
অপরের সঙ্গ, এই ভেবেই বেশ খুশি ওদের মন ।

সুন্দর রোমান্টিক গল্প

ওরে বাবা, একি হাই ফাই ব্যাপার, নিজের ঠিকানায় পৌঁছে রীতিমত ঘাবড়েই গেছে
মুকুলিকা, তাও যদি সঙ্গে আরেক জন থাকতো। দশতরলাতে যেতে হবে ওকে। লিফ্টে ঢুকে
বোতাম টিপতেই যাবে, সেই সময় ঢুকে এলো একটি ছেলে। আর কিছু করার আগেই মুকুলিকা
দেখলো নয় নম্বরের সুইচে হাত রেখেছে ও। 
মনে হয় আমার মতোই ইন্টার্ন। নিজের চরিত্রের বিপরীতে গিয়ে চোখের কোণে একবার দেখে
নেয় মুকুলিকা। কী ভয়ানক লম্বা রে বাবা, ওর পাশে দাঁড়িয়ে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে
মুকুলিকার, তাই ধীরে ধীরে একটু সামনে এগিয়ে দাঁড়ায়। আর অন্তত দেখতে তো
পাবেনা। 
বেশ ভয়ে ভয়ে দরজা ঠেলে ঢুকলো কোনোদিন ভয় না পাওয়া মুকুলিকা। আসলে এতদিন ছিলো
বই খাতার জগত যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো ওর। কিন্তু এই পৃথিবীটা যে একেবারে
অচেনা। হাতে কলমে কাজ করতে হবে। তাই কিছুটা দুরুদুরু বুকে প্রাথমিক সব
ফরমালিটিস পূর্ণ করে, দেখিয়ে দেওয়া নিজের বরাদ্দ টেবিলে এসে বসলো মুকুলিকা।
এতক্ষণে একটু স্বস্তি লাগছে, তাই চারিদিকে চোখ বোলাতে থাকে ও। 

চারিদিক একেবারে ঝকঝকে তকেতকে। তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়, আর সেখানে এক মনে কাজ
করে যাচ্ছে ওর মতোই সব ছেলেমেয়েরা, খুব বেশি বয়েস কারো নয়, আর তারই শেষের দিকে
একটা রুমের দরজায় লেখা এস চক্রবর্তী। চারিদিকে খুব ভালো করে দেখেও সকালের
লিফ্টের সেই ছেলেটাকে দেখতে পেলো না মুকুলিকা। যাই হোক, ভালোই হয়েছে, যা
লম্বা, ধারে পাশে ঘুর ঘুর করলেই অস্বস্তি, মনে মনে ভাবতে ভাবতে আরেকবার চারদিকে
দেখে নিয়ে চুপ করে নিজের চেয়ারে বসে পড়ে ও। 
এই অসসিলেটরটা ওয়ার্কিং কন্ডিশনে আনতে পারলেই আজকের মতো তোমার ছুটি, এটাই আজ
তোমার কাজ, কিছু হেল্প প্রয়োজন হলে ওই কোণের মিস্টার আকাশের সঙ্গে কথা বলতে
পারো, বলতে বলতে একটা অসসিলেটর মুকুলিকার টেবিলে নামিয়ে দেয়, মিষ্টি একটি
মেয়ে। 
আমি কণিকা দি, সবাই এখানে কণি বলে ডাকে, তুমিও তাই বলেই ডেকো মুকুলিকা, বলে
হেসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় কণিকা। 
আরো পড়ুন,
আমার নাম জানো? 
এবছর মাত্র চারজন ইন্টার্ন আমরা নিয়েছি, আর তাদের বায়োডাটা আমাদের প্রায়
মুখস্থ। আজ বাইরে কোথাও তোমায় দেখলেও ঠিক চিনতে পারতাম। হেসে মুকুলিকার কাঁধে
হাত রাখে কণিকা। 
একটু পরে তোমাদের চারজনের হয়তো বসের ঘরে ডাক পড়বে। খুব পাংচুয়াল, খুব
ডেডিকেটেড । যদি তুমি তোমার কাজ পুরো মন দিয়ে করো, আর ঠিকঠাক সময় মেনটেন করো,
তাহলে তোমার ভয়ের কিছু নেই, তখন ওনার মতো ভালো মানুষ আর দুজন পাবেনা, কিন্তু
উল্টোটা হলে, ওনার মতো খারাপও বোধহয় কেউ হতে পারে না। তাই কাজ শুরু করে দাও।
আকাশ তো আছে, কিছু বুঝতে না পারলে ওকে জিজ্ঞেস করো। 
আচ্ছা কণিদি, এস চক্রবর্তী, ওনার কথাই বলছো তো? 
যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ে কণিকা। সোমনাথ চক্রবর্তী। কিন্তু ওনার কথা মতো আমরা
সবাই ওনাকে সোম বলে ডাকি। 
নাম ধরে? 
ইয়েস, মাই ডারলিং। বলে এবার মুকুলিকার গাল টিপে একটু আদর করে দিয়ে চলে যায়
কণিকা, কেন জানে না, প্রথম দেখাতেই বেশ ভালো লেগে গেছে ওকে, তাই সবরকম সাহায্য
ওকে করবে বলে মনে মনে ঠিকই করে নিয়েছে ও। 
কোথা থেকে শুরু করবে, কিছুতেই বুঝতে পারছে না মুকুলিকা। পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা
করা, প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করা এক জিনিস, কিন্তু সেই পড়াকে যখন বাস্তবে রূপ
দিতে যাওয়া হয়, তখন প্রথম প্রথম তো একটু অসুবিধে হবেই । তবুও নিজেকে স্থির করে
কাজে মন দিলো ও। প্রথমে ইউটিউব দেখে কিছুটা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তারপর গেলো
আকাশের কাছে। নিজের পরিচয় দিয়ে প্রথমে ও কি বুঝেছে সেটা আকাশকে বলতেই কিছু
রেকটিফিকেশন করে দিলো আকাশ। মোটামুটি একটা ছবি মনে মনে তৈরি করে এবার পুরোপুরি
নিজেকে ডুবিয়ে দিলো মুকুলিকা নিজের কাজে। 
এক ঘন্টা টিফিন ব্রেক, দুপুর একটা থেকে দুটো। কণিকা এসে দাঁড়ায় আবার মুকুলিকার
সামনে। এখন ব্রেক মুকুলিকা। বস কিন্তু রেগে যান রিসেসের সময় কেউ কাজ
করলে। 
তোমাদের বস আর কিসে কিসে রেগে যান কণি দি? হাসছে মুকুলিকা। কাজ অনেকটাই এগিয়ে
গেছে, তাই কিছুটা হলেও এখন ভয় কেটেছে ওর। 
এই, তোমাদের বস কি? তোর নয়? মুকুলিকার মাথায় আস্তে করে টোকা মারে কণিকা। এই
তোকে আমি তুই বলছি কেমন। 
একটু হাসে মুকুলিকা।তারপর বলে উঁহু, আমার সোমনাথ দাদু। তোমরা সোম বলে ডেকো, আমি
ডাকবো সোমনাথ দাদু বলে। 
ওরে মেয়ে, তোর তো সাহস খুব, ঠিক আছে যেদিন তুই সবার সামনে সোমনাথ দাদু বলতে
পারবি সেদিন আমার তরফ থেকে তোর জন্যে থাকবে একটা দারুণ ট্রিট। দেখি কেমন তুই
বলতে পারিস, বলে হাসতে হাসতে চলে যায় কণিকা। আর মুকুলিকা এতক্ষণে মাথা তুলতে
পেরে আলাপ করে নেয় আরও তিনজন ইন্টার্নের সঙ্গে, যাদের সবাইকেই ওর মতোই কিছু না
কিছু কাজ দেওয়া হয়েছে। 
বিকেল চারটে নাগাদ টেস্ট করে মুকুলিকার মনে হলো ঠিকঠাক কাজ করছে অসসিলেটর।
কিন্তু কাকে যে রিপোর্ট করবে তাই তো জানেনা। তাই সেই অগতির গতি আকাশ ।
আকাশকে গিয়ে বলতেই ইন্টারকমে কারো সাথে কথা বলে মুকুলিকার দিকে তাকায় ও। 

Sera Premer Golpo

সোমের সঙ্গে কথা হয়নি তো? যাও এটা নিয়েই চলে যাও সোজা ওই রুমে। তবে প্রথম দিন
তো, একটু বুঝে কথা বলো। আকাশ, মুকুলিকাকে পাঠিয়ে দেয় বসের ঘরে। নিমাইদা কে
ডেকে অসসিলেটর টা নিয়ে যেতে বলে মুকুলিকার পেছনে। 
সবাই এতো ভয় দেখাচ্ছে, এ কোনো খিটকেল বুড়ো না হয়ে যায়না। আমি তো কোনো দোষই
করিনি, তাও যদি বকে, আমি কাল থেকে আর আসবোই না, তাতে যা হবার হবে, ভাবতে ভাবতে
এসে এস চক্রবর্তীর দরজায় নক করে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চায় মুকুলিকা। 
ঢুকে তো একেবারে হতভম্ব মুকুলিকা। আরে এ তো সেই…, ভেবেই থেমে যায় ও, কারণ
ততক্ষণে ও দেখে নিয়েছে সোমের ঠোঁটের কোণের হাসি। সবার সাবধান বাণী তখন মায়ের
ভোগে, সব তালগোল পাকিয়ে গেছে মাথার মধ্যে। নিমাইদা অসসিলেটরটা রেখে চলে গেছে
টেবিলের ওপর। 
তারমানে আপনি সকালে তখন আমায় চিনতেন, তাই তো স্যার? 
তোমায় কণিকা বলেনি, যে আমায় সবাই সোম বলে ডাকে? অবশ্য তুমি অন্য নামটায় ডাকতেই
পারো ।
গম্ভীর ভাবে বললেও, খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে দুটো চোখ সমানে হেসে যাচ্ছে
সোমের। 
না, মানে স্যার, আমি সত্যিই ভেবেছিলাম আপনি কোনো খিটখিটে দাদু হবেন। আসলে আসার
পর থেকে আপনার রেগে যাওয়ার কারণের লম্বা লিস্ট শুনে শুনে ওরকম মনে হয়েছিলো।
সরি স্যার। 
আর এখন? এখন কি মনে হচ্ছে? বলে এবার সত্যিই হাসে সোম। ওরা যা যা বলেছে সব
সত্যি। কিন্তু তোমার ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই, সব কাজ তো ঠিকঠাক করেই করেছো মনে
হচ্ছে, বলতে বলতে অসসিলেটরটা চেক করতে লাগলেন সোম। 
খুব ভালো, যাও আজ ছুটি ।কাল আবার ঠিক সময়ে চলে আসবে, বলেই নিজের ফাইলের মধ্যে
মুখ ডুবিয়ে দেয় সোম। 
সবাইকে টা টা করে বাইরে বেরিয়ে মুকুলিকা দেখে কালো মেঘে ঢেকে গেছে চারদিক।
একটু একটু হাওয়া দিতেও শুরু হয়ে গেছে। কালবৈশাখী। যা গরম পড়েছে, এটাই তো
স্বাভাবিক। ভাবতে ভাবতেই ঝড় শুরু হয়ে গেলো, তার সঙ্গে বৃষ্টি। আবার ছুটে ঢুকে
যায় ও। এবার শুরু হলো বাজ পড়া। আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত যেন
চিরে দিচ্ছে কেউ। ভয়ংকর সুন্দর বোধহয় একেই বলে। প্রতিবারই কেমন যেন একটা
সম্মহিত হয়ে যায় মুকুলিকা। আর তাই আজকেও একেবারে ভেতরে না ঢুকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
দেখতে থাকে প্রকৃতির এই ভয়ানক রূপ। খেয়াল নেই বৃষ্টির কণা হাওয়ায় উড়ে এসে এসে
ভিজিয়ে দিচ্ছে ওকে ।ঠিক সেই সময় একটা গম্ভীর গলার স্বরে কেঁপে উঠলো মুকুলিকা।
এক্ষুনি ওপরে চলো। একদিন এসেই কি শরীর খারাপের অজুহাতে তিনদিন না আসার চেষ্টা
করছো? 
এই রে সোমনাথ দাদু এখানে কি করছেন? ভাবতে ভাবতেই একটু ছোট্ট করে হাসে
মুকুলিকা। 
আমি তো বৃষ্টি দেখে দাঁড়িয়েই আছি স্যার। 
একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো, রাস্তায় থাকলে এর থেকে কি কম ভিজতে? 
আবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, কী লম্বা রে বাবা, ভেবেই আবার একটু সামনে এগিয়ে যায়
মুকুলিকা। 
মুকুল । কথা কানে যাচ্ছে না? আরো বেশি করে বৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাচ্ছো? আমার কথা
না শুনলেও কিন্তু আমি রেগে যাই। 
আমি বৃষ্টির দিকে কোথায় এগোচ্ছি, আমি তো…., বলেই থেমে যায় মুকুলিকা। কারণ
ততক্ষণে ওর একটা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলেছে সোম লিফ্টের দিকে। 
লিফ্টের মধ্যে একটাও কথা বলেনি কেউ। ওপরে এসেই কণিকাকে ডাকে নিজের কেবিনে
সোম। 
মুকুলিকাকে একটু দেখো, মনে হচ্ছে বেশ ভিজে গেছে। একেবারে ম্যাচিওর নয়, আমি
দেখলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ মজাসে বৃষ্টিতে ভিজছে। তাই বকে ওপরে নিয়ে এসেছি বলে
বোধহয় রাগ হয়েছে, বলতে বলতে হাসতে থাকে সোম। সকালেই সেই চোখের কোণ দিয়ে
তাকিয়ে, কিছু ভেবেই দু পা এগিয়ে যাওয়া থেকেই একটা অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি
মনের মধ্যে টের পাচ্ছে সোম। তার ওপর ওই গন্ধ। কিসের গন্ধ ওটা? চন্দন?
ল্যাভেন্ডার? না, দুটোর মিক্সড? 
 সকালে লিফ্টে উঠেই প্রথম ওই অনুভূতিটা শুরু হলো ওই গন্ধটার হাত
ধরে। 
তারপর আবার আমার কেবিনে , তারপর আবার এখন। এখন আবার সেই একবার তাকিয়ে সামনে
এগিয়ে যাওয়া, এইটুকু একটা মেয়ে কি পাগল করে দেবে আমায়? আর ওই দুটো চোখ… লিফ্টে
উঠে একবার যখন চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে তখন তো আমাকে পর্যন্ত নাড়িয়ে
দিয়েছিলো, সোমনাথ চক্রবর্তীকে, সোমকে। ভাবতে ভাবতে বেল বাজিয়ে কফির অর্ডার দেয়
সোম। সবার টেবিলে যেন পৌঁছে দেওয়া হয় গরম গরম কফি। 
তাড়াতাড়ি মাথা মুছে নে, বলে একটা শুকনো টাওয়েল এগিয়ে দেয় কণিকা। 
থ্যাংকস কণিদি। অল্প করে একটু হাসে মুকুলিকা। ভেতরের সবকিছু যেন কেমন ওলোট পালট
হয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত ওর হাত ধরার ক্ষমতা কারো হয়নি। ওর ওপর জোর খাটাতে কেউ
পারেনি। কারণ ও আপন মর্জির মালিক। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো কাজ মা বাবা পর্যন্ত
পারেনা করাতে, সেখানে… 
কিন্তু কই রাগ হচ্ছে না তো। উল্টে একটা কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে। আগে কখনো
অনুভবই করিনি এই রকম অনুভূতি। বসে বসে এইসব হাবিজাবি ভাবছে, সেই সময় নিমাইদা
নিয়ে এলো গরম ধোঁয়া ওঠা কফি। সোম দাদাবাবু আজকের জন্যে স্পেশাল কফি ব্রেক
দিয়েছে সবাইকে দশ মিনিট, নাও খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি। নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। কফিতে
চুমুক দিয়েই বুঝতে পারে মুকুলিকা, ঠিক কতটা দরকার ছিলো এই মুহূর্তে এটার।
থ্যাঙ্ক ইউ সোমনাথ দাদু, বলে কেবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে মুকুলিকা, যে হাসি
ওর অজান্তেই ধরা পড়ে যায় সোমের চোখে। পুরো অফিসটাই যে ওর চোখের সামনে আছে,
সেটা তো জানেনা কেউ। 

Bengali Love Story

দেখতে দেখতে কেটে গেছে ছ মাস। মুকুলিকা এখন সোমের অফিসের পার্মানেন্ট স্টাফ।
সবার সঙ্গে সহজ হয়ে গেছে সম্পর্ক। এমনকি সোমের সঙ্গেও। শুধু দুটো ব্যাপার এখনও
করতে পারেনা ও। এক সোম কে নাম ধরে ডাকা আর দুই সোমের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু
ওপরে ওঠা নামার পথে টুকটাক গল্প এখন দুজনেই করে, দুজনের পছন্দ অপছন্দ এখন
দুজনেই জানে কিছুটা। দুজনের বাড়িতে কে কে আছে, তাও জানে দুজনে। আর জানে দুজনের
মনের না বলা কথা কিছুকিছু দুজনেই। 
আজ সোমনাথ দাদুর কাছে ঝাড় খাওয়া থেকে আমায় কেউ বাঁচাতে পারবে না। রাস্তায় এতো
জ্যাম, এতো আগে বেরিয়েও দশ মিনিট দেরি হয়ে গেছে, নিজের মনে বকতে বকতে ছুটে এসে
লিফ্টের দরজায় হাত দেয় মুকুলিকা, আর একটু হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। 
ঢুকেই দেখে সোম। 
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। মনে মনে বলে আবার চোখের কোণে তাকিয়ে
সামনে এগিয়ে আসে মুকুলিকা। 
ওহ্ কী লম্বা রে বাবা, ভাবতে ভাবতেই একটু হেসে বলে গুড মর্নিং স্যার। 
আচ্ছা মুকুল, একটা কথার সত্যি সত্যি উত্তর দেবে? তুমি আমার পাশে থাকলেই একটু
এগিয়ে যাও কেন বলোতো? আজ জানতেই হবে কারণটা, মনে মনে ভাবে সোম। 
বলতে পারি, কিন্তু কথা দিতে হবে রাগ করা চলবে না। 
মুকুলিকার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। মুকুল ডাকটা শুনতে আজকাল বেশ ভালো
লাগে। 
রাগ করবো না, বলো। বলে আবার পাশেই এসে দাঁড়ায় সোম। 
একবার পাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কেমন লাগছে? চারিদিকে আয়নায় মোড়া লিফ্টের
পাশের দেওয়ালের দিকে আঙুল তুলে দেখায় মুকুলিকা। আমি আপনার একেবারে বুকের কাছে,
কতো লম্বা আপনি, তাই খুব অস্বস্তি হয়, আর তাইই এগিয়ে যাই, তখন তো আর দেখতে পাবো
না। বলতে বলতে মাথা নিচু করে হাসতে থাকে মুকুলিকা। 
এবার থেকে এটাই দেখা অভ্যেস করে নাও মুকুল, বলে এই প্রথম এক হাতে মুকুলিকাকে
জড়িয়ে নেয় সোম। তুমি তো আমার বুকের মাঝেই আছো, বুকের কাছেই। বুঝতে পারো না?
এখন থেকে সব সময় পাশেই থাকবে, এগিয়েও যাবেনা, পিছিয়েও না, বুঝলে? 
আর কিছু বলার আগেই থেমে যায় লিফ্ট। গন্তব্য চলে এসেছে, কিন্তু মুকুলিকা অবাক
হয়ে দেখে পঁচিশ নম্বর সুইচে হাত রাখে সোম। 
এতো অবাক হবার কিছু নেই ম্যাডাম। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। তো সবার সামনে দাদু
বলো, কাকু বলো, জেঠু বলো, যা খুশি বলো, আমরা যখন একা থাকবো তখন আমি শুধুই সোম,
মনে থাকবে তো? আর তুমি তো ভালো করেই জানো কথা না শুনলে কি রকম রাগ করি আমি, আর
এবার কথা না শুনলে কিন্তু চরম শাস্তি পাবে, বলে হাসতে থাকে সোম। 
তা কেমন শাস্তি একটু শুনি সোমনাথ দাদু, বলে হাসতে হাসতে আবার ভুলেই একটু এগিয়ে
আসে মুকুলিকা। আর ঠিক তখনই একটা হেঁচকা টান। কিছু বোঝার আগেই দুটো শক্ত হাতে
বন্দি হতে হতে দু চোখ বন্ধ অবস্থায় ও বুঝতে পারে আজ থেকে ওর দুটো ঠোঁটও বন্দি
হলো অন্য কারো ঠোঁটে। ওর অবাধ্য মনও বন্দি হলো অন্য একটা মনে। ওর সম্পূর্ণ
স্বত্বা সানন্দে বন্দি হয়ে গেলো অন্য এক স্বত্বার কাছে যার কোনো অস্তিত্ব এক
বছর আগেও ওর জীবনে কোথাও একটুখানিও ছিলো না……… 
                     
       সমাপ্ত

Share This Article